• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আনুষ্ঠানিকতা রক্ষাই রোজা নয়


নিউজ ডেস্ক এপ্রিল ২৬, ২০২০, ০৪:৫৩ পিএম
আনুষ্ঠানিকতা রক্ষাই রোজা নয়

ঢাকা : ইসলাম জীবনঘনিষ্ঠ ও স্বভাবজাত ধর্ম। মানবজীবনের সব ক্ষেত্রেই ইসলামের বিধান ও নির্দেশনা রয়েছে। সেসব বিধান উপেক্ষা করে নির্দিষ্ট কিছু আচার-অনুষ্ঠান পালন করলেই ইমানের দাবি পূর্ণ হয় না। মহান আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘হে ইমানদাররা! তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামে প্রবেশ করো, আর শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ কোরো না। নিশ্চয়ই সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ২০৮)

ইসলামে অনুষ্ঠানসর্বস্বতার স্থান ও স্বীকৃতি নেই। বিশেষ প্রথা-রেওয়াজ অবলম্বন, দৈহিক অঙ্গভঙ্গি, তীর্থ ভ্রমণ কিংবা চিত্তবিনোদনমূলক কাজও এতে ইবাদত হিসেবে গণ্য হয় না। রমজান মাস এলে দেখা যায়, ধারণাবশত অনেকেই রোজাকে সাহরি ও ইফতারের আনুষ্ঠানিকতার ভেতর সীমাবদ্ধ করে ফেলেন। অথচ কেবল সাহরি ও ইফতারের মধ্যেই রোজার তাৎপর্য সীমাবদ্ধ নয়। বরং রোজার মাহাত্ম্য ও তাৎপর্য আরও বহু গুণে বিস্তৃত।

জীবনকে পবিত্র, পরিশীলিত, ভালো কাজে ব্যস্ত ও সব ধরনের মন্দ থেকে সংযত রাখা, রোজার অন্যতম উদ্দেশ্য। মহান আল্লাহতায়ালা এ মাসের প্রতিটি মুহূর্তকে সংযম সাধনা ও সামগ্রিক ইবাদতের জন্য নির্ধারণ করেছেন।

রমজান রোজাদারকে সংযমী হওয়ার শিক্ষা দেয়। শুধু পানাহার থেকে বিরত থাকলে রোজা পূর্ণ হয় না। এটি সিয়াম সাধনার মূল উদ্দেশ্যও নয়। বরং পানাহার থেকে বিরত থাকার পাশাপাশি নিজের মুখ ও জিহ্বা সংযত রাখতে হবে। বরকতের এ পবিত্র মাসে সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার থেকে বিরত থাকা রোজাদারের মৌলিক কাজ। এর পাশাপাশি জাগতিক সব বিষয়েও সংযত জীবনাচারের তাগিদ দেওয়া হয়েছে হাদিসে। এ সম্পর্কে মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘বহু রোজাদার এমন আছে, রোজার বিনিময়ে সে উপবাস থাকা ছাড়া আর কিছুই লাভ করতে পারে না।’

সুতরাং রোজাদার ব্যক্তি অসংযমী হলে, মিথ্যা কথা বললে, অন্যের দোষ চর্চা করলে, হারাম মাল ভক্ষণ করলে, অন্যের হক নষ্ট করলে, যেকোনো ধরনের পাপ কাজে লিপ্ত হলে রোজার মাহাত্ম্য ও বরকত নষ্ট হয়ে যায়। কাজেই রোজার বরকত অক্ষুণ্ণ রাখতে হলে জীবনাচারের সব ক্ষেত্রে সংযমী  হতে হবে ও নিয়ম-বিধি রক্ষার চেষ্টা করতে হবে।

আমাদের পরিবার, সমাজ ও দেশের সর্বমহলে সংযমী রোজাদারের বড়ই অভাব। এটা সবাই অনুধাবন ও অনুসরণ করা জরুরি যে, শুধু উপবাস থাকা বা পানাহারের ক্ষেত্রে সংযম রক্ষার নামই রোজা নয়। বরং এর পাশাপাশি দৃষ্টির সংযম, জিহ্বার নিয়ন্ত্রণ, হাত-পায়ের সঠিক ব্যবহার, যৌনাঙ্গের সংযম, প্রবৃত্তির সংযম ও অন্তরেরও সংযম রয়েছে। মহানবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রোজা অবস্থায় মিথ্যাচার ও মন্দ কাজ ত্যাগ করে না, তার পানাহার ত্যাগ করা আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই।’ (বুখারি, হাদিস : ১৯০৩)

রোজার আসল উদ্দেশ্য মানুষকে সংযমী করা। মানুষের ভেতরকার মন্দ প্রবৃত্তি ও পশুশক্তিকে দমন করা। আত্মার শক্তি জাগিয়ে করা এবং হার্দিক বিশুদ্ধতা অর্জন করা। তাই সাহরি ও ইফতারে অধিক পরিমাণে ভোজন করা উচিত নয়; বরং প্রয়োজনমাফিক খাদ্য গ্রহণই কাম্য। কারণ অধিক খাদ্য গ্রহণের ফলে দেহ চাঙ্গা হয়। প্রবৃত্তি ও পশুশক্তি জোরদার হয় এবং আত্মার শক্তি দুর্বল হয়ে যায়।

অবশ্য মনে রাখা জরুরি যে, ইবাদতের জন্য শক্তি সঞ্চয়ের তাগিদে মানসম্পন্ন বা বেশি পরিমাণ খাবার গ্রহণ নিন্দনীয় নয়। প্রখ্যাত তাবেয়ি নাফে (রহ.) বর্ণনা করেন, রমজান এলে কিংবা সফরে বের হলে গোশত ছাড়া আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.)-এর খাবার হতো না। অর্থাৎ স্বাস্থ্য রক্ষা ও ইবাদতের জন্য শক্তি সঞ্চয়ের উদ্দেশ্যে তিনি রমজানে ভালো খাবার গ্রহণ করতেন। (আল আদাবুশ শারইয়্যাহ, ইবনে মুফলিহ : ৩/৬৩)

লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক

Wordbridge School
Link copied!