• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

আবারও চালের দাম বেড়েছে


নিজস্ব প্রতিবেদক সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২০, ০৩:৫৩ পিএম
আবারও চালের দাম বেড়েছে

ঢাকা: ক্রমশই বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম—ডাল, ভোজ্যতেল, রসুন, আদা, পেঁয়াজের পর নতুন করে এ তালিকায় যুক্ত হয়েছে চাল। গত কয়েকদিনে বাজারে সব ধরনের চালের দাম বেড়েছে। চালের বাজারে নতুন সংকট দেখা দিয়েছে, আর সেটি হচ্ছে—গরিব মানুষের মোটা চালের সরবরাহ কম। ফলে চাপ পড়েছে সব ধরনের চিকন চালের ওপর। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এ কারণেই নাকি বেড়েছে চালের দাম। বাজার ভেদে প্রতিকেজিতে চালের দাম বেড়েছে ৪ থেকে ৬ টাকা। ৫৪ টাকা কেজি দরের মাঝারি মানের মিনিকেট চাল এখন বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজি দরে। আর ৫৬ টাকা কেজি দরের নাজিরশাইল চাল বিক্রি হচ্ছে ৬২ টাকা করে। রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে চিত্র তথ্য পাওয়া গেছে।

ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, চালের এই মূল্য বৃদ্ধির পেছনে কোনও ধরনের কারসাজি নেই। চালের দাম বাড়ার প্রধান কারণ হচ্ছে—প্রথমত, চালের চলতি মৌসুম শেষের দিকে। দ্বিতীয়ত, এবার সারাবছর কেটেছে প্রাকৃতিক দুর্যোগে। প্রথমে হলো শিলাবৃষ্টি। এরপর ঘূর্ণিঝড় আম্পানের ছোবল। তারপর দেশের ৩৩ জেলাজুড়ে বন্যা, যা এখনও চলছে। এছাড়া বছরজুড়ে করোনার তাণ্ডবতো রয়েছেই। এর বাইরে এবছর বৃষ্টিপাতের পরিমাণও বেশি।  প্রায় প্রতিদিনই বৃষ্টি হচ্ছে। এসব কারণে বাজারে ধানের সরবরাহ কমে গেছে বিধায় দামও বেশি। ধানের দাম বেশি হলে চালের দাম বাড়বে, এটাই স্বাভাবিক—এমন দাবি ব্যবসায়ীদের।

রাজধানীর চাল ব্যবসায়ীরা বলছেন, মিনিকেট চালের দাম বাড়লে তা সব ধরনের চালের দামের ওপরে প্রভাব ফেলে। কারও কারও অভিযোগ—মিনিকেট চালের দাম বাড়ানোর পেছনে এই চালের উদ্ভাবক কুষ্টিয়ার আব্দুর রশিদ দায়ী, যিনি ‘মিনিকেট রশিদ’ নামে পরিচিত। আব্দুর রশিদ তার মিনিকেট চালের দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছেন বলে বাজারে সব ধরনের চালের দাম বেড়েছে।

এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে আব্দুর রশিদ বলেন, ‘গত ছয় মাসে আমরা  মিনিকেট চালের দাম বাড়াইনি। বাজারে যদি আমার মিনিকেট চালের দাম বেড়ে থাকে, তাহলে তা অন্য কারও কারসাজিতে বেড়েছে। যা আমি জানি না।’ তিনি বলেন, তবে বাজারে ধানের সংকট রয়েছে। কারণ, সিজন শেষ। এতে চালের বাজার কিছুটা বাড়তি হতে পারে। সরবরাহ কমে গেলে ধানের দামও বাড়ে। আর ধানের দাম বাড়লে চালের দামও বাড়বে।’    

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ-টিসিবি’র  হিসাবে, গত এক বছরে গরিব মানুষের মোটা চালের দাম বেড়েছে ২৭ শতাংশ। চিকন চালের দামও বেড়েছে ১৪ শতাংশ। মাঝারি মানের বিভিন্ন চাল বিক্রি হয়েছে প্রতিকেজি ৪৮ থেকে ৫৩ টাকা। আর প্রতিকেজি চিকন মিনিকেট চাল বিক্রি হয়েছে বাজারভেদে ৫৬ থেকে ৬০ টাকা। টিসিবির হিসাবে, গত বছরের এই সময়ের তুলনায় এখন মাঝারি মানের চালের দাম ৯ শতাংশ ও সরু চালের দাম ১৫ শতাংশ বেশি।

টিসিবির তথ্যমতে, শুধু চালই নয়, ডাল, তেলসহ সব ধরনের পণ্যের দাম এখন বাড়তি। সরকারি এই সংস্থা  জানায়, গড়ে ২০টি পণ্যের মধ্যে ১৭টি পণ্যের দামই বেশি ও বাড়তি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আড়তে চিকন চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা, যা আগে ছিল ৪৫ থেকে ৪৮ টাকা। আর মাঝারি মানের চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪২ থেকে ৪৪ টাকা, যা আগে ছিল ৪০ থেকে ৪২ টাকা।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক লায়েক আলী জানিয়েছেন, চালের বাজারে কারও কোনও কারসাজি নাই। ধানের মৌসুম শেষের দিকে। এখন বাজারে ধান নাই। এবার বছরজুড়েই একটার পর একটা দুর্যোগ লেগেই রয়েছে। প্রতিদিন বৃষ্টি হচ্ছে। কারোনার তাণ্ডব তো আছেই। এসব কারণে বাজারে ধানের সরবরাহ কম, দামও বেশি। ধানের দাম বেশি হলে তো চালের দাম বাড়বে।

এদিকে আইসিডিডিআর,বি এবং ওয়াল্টার এলিজা হল ইনস্টিটিউট-অস্ট্রেলিয়ার এক যৌথ গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় বছরজুড়ে করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে সারাদেশ লকডাউনে থাকার কারণে ৯৬ শতাংশ পরিবারের গড় আয় কমেছে। করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে গত মার্চের শেষের দিকে সাধারণ ছুটি ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়ার কারণে দেশে ৯৫ শতাংশ মানুষের আয় কমেছে বলে জানিয়েছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক।  ব্র্যাকের জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৫১ শতাংশের কোনও আয় নেই এবং কাজ হারিয়েছেন ৬২ শতাংশ নিম্ন আয়ের মানুষ। এছাড়া, ২৮ শতাংশ মানুষ মহামারির কারণে  অর্থনৈতিকভাবে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন।
 
এ প্রসঙ্গে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, ‘চালের বাজার নিয়ে কেউ কারসাজি করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দেশে পর্যাপ্ত চাল মজুত আছে। তাই চাল নিয়ে কোনও ধরনের কারসাজি সরকার বরদাশত করবে না।’ 

সোনালীনিউজ/টিআই

Wordbridge School
Link copied!