• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

আবারো সক্রিয় জঙ্গিরা


বিশেষ প্রতিনিধি জানুয়ারি ২৭, ২০১৯, ০২:০৬ পিএম
আবারো সক্রিয় জঙ্গিরা

ঢাকা : হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার পর একের পর এক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে পর্যুদস্ত জঙ্গিরা আবারো সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হামলার পরিকল্পনা নস্যাৎ করে দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এরপর হলি আর্টিজানে হামলার আসামিদের জেল থেকে আদালতে আনার পথে ছিনিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনাও নস্যাৎ হয়ে গেছে। এরপরও বসে নেই তারা।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা নেটওয়ার্কের বাইরে অবস্থান নিয়ে সংগঠিত হচ্ছে তারা। সুযোগ পেলেই নাশকতায় লিপ্ত হবে এমন তথ্য রয়েছে গোয়েন্দাদের হাতে। তুরস্ক লিবিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে অবস্থিত আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠী এনজিওর মাধ্যমে বাংলাদেশে জঙ্গিদের অর্থায়ন করছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে এসবের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ব্লগার হত্যার নেপথ্য নায়ক মাস্টার মাইন্ড জঙ্গি মেজর জিয়া। হলি আর্টিজানে হামলার সময়ও এই মেজর জিয়া দেশে ছিল। ২০১৬ সালের ১ জুলাই হলি আর্টিজানে হামলার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জঙ্গিবিরোধী ‘ড্রাস্টিক অ্যাকশন’-এ গেলে মেজর জিয়া আত্মগোপনে চলে যায়। সে সীমান্তের ফোকর গলে পাশের দেশে অবস্থান নেয়। এরপর ২০১৭ সালে আবার দেশে ফিরে আসে। সাভারে ও চট্টগ্রামে তার অস্তিত্ব টের পায় গোয়েন্দারা। কিন্তু সেখানে গোয়েন্দারা পৌঁছার আগেই ধূর্ত জিয়া পালাতে সক্ষম হয়।

সম্প্রতি মোস্তাক হোসেন নামে এক জঙ্গি অর্থায়নকারীকে গ্রেফতার করে সিআইডি পুলিশ। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে মোস্তাক হোসেন জানিয়েছেন— জামায়াত সমর্থিত এনজিও ‘বাংলাদেশ চাষী কল্যাণ সমিতি’র মাধ্যমে তুরস্ক থেকে অর্থ সংগ্রহ করা হয়। এর বাইরে জামায়াত পরিচালিত ‘নব কৃষি প্রাইভেট লিমিটেড’ এবং ‘নবধারা কল্যাণ ফাউন্ডেশন’ জঙ্গিবাদ বিস্তারে কাজ করে। জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেলের নির্দেশে তিনটি এনজিওর কার্যক্রম পরিচালনা করার কথা স্বীকার করে মোস্তাক।

জিজ্ঞাসাবাদে মোস্তাক আরো জানায়, কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তে তিনি সরকার ও রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন। তুরস্কে তার পরিচিত উগ্রপন্থি অনেক দাতা রয়েছেন। ‘বাংলাদেশ চাষী কল্যাণ সমিতি’র মাধ্যমে তাদের কাছ থেকে তিনি অর্থ সংগ্রহ করে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় অবস্থানরত জঙ্গিদের অর্থ সহায়তা দিতেন। গত ১১ বছরে ‘বাংলাদেশ চাষী কল্যাণ সমিতি’র মাধ্যমে তুরস্ক ও মধ্যপ্রাচ্য থেকে সাড়ে ৬২ কোটি টাকা বিদেশি অনুদান এনেছেন। এসব টাকা নাশকতা ও জঙ্গিবাদের বিস্তারে ব্যয় করা হয়েছে। কৃষিবিদ মোস্তাকের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী পুলিশ আরো ৮ জনকে গ্রেফতার করে। তারাও প্রত্যেকেই এ ব্যাপারে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।

জঙ্গি তৎপরতা প্রসঙ্গে অ্যান্টি-টেররিজম ইউনিটের সাবেক প্রধান বর্তমান পুলিশ সদর দফতরের অ্যাডিশনাল আইজিপি (এইচআরএম) মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘জঙ্গিরা নির্মূল হয়েছে, এটা আমরা কখনো বলিনি। পুলিশের অব্যাহত অভিযানে তারা কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। এখন আগের মতো সক্ষমতা নেই তাদের। অবশ্য এ আত্মতুষ্টিতে ভুগলেও ভুল হবে। কারণ তারা স্বল্পসংখ্যক হলেও এখনো সচেষ্ট রয়েছে। সুযোগ পেলেই নাশকতায় লিপ্ত হবে।’

তিনি বলেন, ‘সমস্যা হচ্ছে জঙ্গিবাদকে তারা চেতনা মনে করে। শীর্ষ জঙ্গিরা সমমনা তরুণ ও কিশোরদের ইসলামী হুকুমতের কথা বলে দলে ভেড়ায়। এরপর তারা দিন দিন জঙ্গিবাদের আদর্শ তাদের মননে মগজে ঢুকিয়ে দেয়। জেহাদ করার কথা বলে। আর এই জেহাদে মৃত্যুবরণ করলে সরাসরি আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ করা যাবে বলে জানায়। তাই মননে-মগজে ঢুকে থাকা চেতনা শুধু পুলিশি অভিযান দিয়ে শেষ করা যাবে না।’

‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের নেটওয়ার্ক গুঁড়িয়ে দিতে পারে। বিলীন করে দিতে পারে আস্তানা। কিন্তু মন থেকে জঙ্গিবাদের ভূত তাড়াতে সামাজিক ও রাজনৈতিক পদক্ষেপ নিতে হবে। জঙ্গিবাদের কুফল সম্পর্কে আরো জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।’

একটি গোয়েন্দা সূত্র জানায়, একসময় হরকাতুল জেহাদ, আনসারুল্লাহ বাংলা টিম, জেএমবি ও হিজবুত তাহরিরসহ বিভিন্ন সংগঠন নিজ নিজ ব্যানারে অপতৎপরতা চালাত। এখন কোণঠাসা হয়ে সবাই নব্য জেএমবির কাতারে শামিল হয়েছে। সবার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য একটাই। আর সেটা হচ্ছে নাশকতা চালানো। একের পর এক এসব নাশকতার পরিকল্পনা তারা করেই যাচ্ছে। গত ১ বছরে কমপক্ষে ১০টি নাশকতার পরিকল্পনা আগাম জেনে গিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছে দেশের গোয়েন্দা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

এ ব্যাপারে সাবেক নির্বাচন কমিশনার ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘জঙ্গিবাদ নির্মূল করার প্রধান উপায় হলো অভিযান চালানোর পাশাপাশি আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা। একই সঙ্গে এই অপশক্তির বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ঐকমত্য সৃষ্টি করা, সমস্যাটি মোকাবেলা করতে হবে সার্বিক নিরাপত্তার দৃষ্টিতে, দলীয়ভাবে দেখলে হবে না।

মনে রাখতে হবে, এটি আওয়ামী লীগ বা বিএনপির সমস্যা নয়; জাতীয় সমস্যা। এ জাতীয় সমস্যা মোকাবিলা করতে হলে সংকীর্ণ দলীয় রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠেই সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে।’

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!