• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

আব্বা বাড়ি ফিরেছেন, আপনি কই লিটু ভাই?


শেখ জায়েদ জানুয়ারি ১৯, ২০১৯, ১১:২০ এএম
আব্বা বাড়ি ফিরেছেন, আপনি কই লিটু ভাই?

সাংবাদিক শেখ জায়েদ ও ডাক্তার রাকিবুল ইসলাম লিটু

আব্বার প্রচন্ড বুকে ব্যাথা। ঢাকায় আনা হলো এনজিওগ্রাম জুলাইয়ের ২৮ তারিখ। News24 এর ৩য় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ২৮ জুলাই ২০১৮। মূলমঞ্চে উপস্থাপনার দায়িত্বে আমি আর সহকর্মী Afrin Anowar। News24 এর সিইও এবং বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক Naem Nizam ভাই নানা দিক নির্দেশনা দিচ্ছিলেন সার্বক্ষণিক।

এদিকে আব্বা হাসপাতালে ভর্তি। খবরাখবর পাচ্ছি ফাঁকে ফাঁকে। আমার স্ত্রী হৃদি তখন ঢাকায়। সরৌশীও অসুস্থ, তাকে নিয়েই হাসপাতালে আব্বার কাছে সে। দিন গড়িয়ে দুপুর। খবর এলো আব্বার হার্টে ১০ টা ব্লক। ৩ টা শতভাগ। মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো।

কি হয়ে গেলো আব্বার। সার্জারির এতটাকা কই পাবো? মাথায় কিছুই আসছিলোনা। বিমর্ষ চেহারা দেখে নঈম ভাই জিজ্ঞেস করলেন কি হয়েছে? ঘটনা বললাম, বললেন, কোন ব্যপার না ডাক্তার লিটুকে বলে দিচ্ছি, উনি হার্টের ডাক্তার। আমি সবধরনের রোগী তার কাছে পাঠিয়ে দেই, সে চিকিৎসার একটা না একটা ব্যবস্থা করে ফেলে। টেনশন করোনা। ডাক্তার লিটুকে আগে থেকেই চিনি।

একবার টকশো জনতন্ত্র গনতন্ত্রে আমার অতিথি ছিলেন তিনি। বরাবরই উনার বলিষ্ঠ বক্তব্য ছিলো চিকিৎসাখাতে চলমান নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে। অনুষ্ঠানের আইসিসিবির পর্ব শেষ করে অফিসে ফিরলাম। এবার অফিসেও উপস্থাপনা। শত শত মানুষ তখনও আসছেন নিউজ টোয়েন্টিফোরকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানাতে।

আমি ঘোষণা দেই নঈম ভাই আর সূচি ভাই শুভেচ্ছা গ্রহন করেন। সন্ধ্যায় শুভেচ্ছা জানাতে রাজা বাদশাহকে নিয়ে হাজির লিটু ভাইও। নঈম ভাই রুমে ডাক দিলেন আমায়। বললেন, এবার বলো, আমি বললাম। লিটু ভাই বললেন, কাল এনজিওগ্রামের সিডি নিয়ে চলে এসো উত্তরায়। তারপর এই ছবিও তুলে দিলাম উনাদের।

উনি আবার সহকর্মী আফরিনের চাচা হন সম্পর্কে, তার কাছ থেকে চেম্বারের ঠিকানা নিয়ে পরদিন গেলাম। আধাঘণ্টা বসে থাকার পর উনি আসলেন, ঘেমে নেয়ে একাকার সবুজ পোলো শার্ট আর গ্যাবাডিন প্যান্ট পরা, পায়ে সাদা কেডস( বোঝাই যায় অনেক হেটেছেন)। উনি বললেন জায়েদ আমি নামাজটা পড়ে নিই। তারপর ৫-৬ টা রোগী দেখলেন, উনার ব্যবহারেই রোগী অর্ধেক সুস্থ। চেম্বারে মাথার উপরে বেশ কিছু ছবি আছে, তারমধ্যে একটা জেনারেল এরশাদের হাসপাতালে শোয়া ছবি। বললেন ইনার হার্টে আমি রিং পড়িয়েছি। ৩- ৪ কাপ চা খাওয়ালেন চিনি ছাড়া।

তারপর বললেন, চলো, সিডি কই? উপরে নিয়ে গেলেন। সিডি দেখে খুটিয়ে খুটিয়ে বোঝালেন। ১ ঘণ্টারও বেশি সময় তিনি আমাকে দিয়েছিলেন। কত আলাপ? হার্ট ফাউন্ডেশনের সার্জারি এক্সপার্ট ডাক্তার প্রশান্তকে কল দিয়ে আমার কথা বললেন। ফেরার সময় জোড়া সেলফিও তুলেছেন নিজের মোবাইলে।

বলেছেন আপলোড দিয়ে ট্যাগ করে দিবেন। আরও বলেছেন উনার রোগীকল্যাণ সংগঠনের একটা প্রোগ্রাম করবেন সবাইকে নিয়ে। আমাকেও যেতে বলবেন। এর মধ্যে কথাও হয়েছে বেশ কয়েকবার। আব্বার খোঁজখবর নিয়েছেন। আব্বা চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরেছেন কয়কমাস হলো। আপনি কই লিটু ভাই?

কত গরিব মানুষ যে আপনার কাছ থেকে সহায়তা পেয়েছে তার হিসেব নেই। কত মানুষ আপনার পরামর্শে চিকিৎসার সঠিক পথে হেটেছে তারও হিসেব নেই। আপনার প্রাণখোলা হাসি। ৩ ছেলেকে নিয়ে এদিক সেদিক ছুটে যাওয়া দেখে, দেখতাম একজন সুখী মানুষকে। মানুষের ভালোবাসায় দুনিয়াতে থাকাবস্থায় বেহেশতে নিজের স্থান পাকাপোক্ত করেছেন তা বোঝায় যায়। তবে এত দ্রুত না গেলেও পারতেন!!

ছবিগুলোও আর দেয়া হলোনা আপনার??। ভালো থাকুন ডাক্তার রাকিবুল ইসলাম লিটু। আল্লাহ আপনার ৩ সন্তান, তাদের মা, আপনার পরিবারকে হেফাজত করুন। দেশের চিকিৎসকরা যেনো আপনার মতো হয়। আপনি হৃদয়ের ডাক্তার থাকবেন মানুষের হৃদয়েই।

লেখক- শেখ জায়েদ, প্রতিবেদক ও সিনিয়র সংবাদ উপস্থাপক, নিউজ টুয়েন্টিফোর টিভি।


সোনালীনিউজ/ঢাকা/আকন

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব ভাবনার প্রতিফলন। সোনালীনিউজ-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে লেখকের এই মতামতের অমিল থাকাটা স্বাভাবিক। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য সোনালীনিউজ কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না। এর দায় সম্পূর্ণই লেখকের।

Wordbridge School
Link copied!