• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আমচাষীর মুনাফা নিশ্চিতের উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার


নিজস্ব প্রতিবেদক মার্চ ৩০, ২০১৬, ০৩:১৯ পিএম
আমচাষীর মুনাফা নিশ্চিতের উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার

সোনালীনিউজ রিপোর্ট

আম রফতানির মাধ্যমে চাষিদের মুনাফা নিশ্চিত করার উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। এজন্য দেশে বাণিজ্যিকভাবে আমের উৎপাদন, কেমিক্যালমুক্ত পরিচর্যা এবং রফতানি বাড়াতে সরকার বিশেষ পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে। 

সে লক্ষ্যে গাছে মুকুল আসা থেকে শুরু করে ফল পরিপক্বতা অর্জন, আহরণ, গুদামজাত, পরিবহন এবং সারাদেশে বাজারজাতের পাশাপাশি উদ্বৃত্ত আম রফতানি কার্যক্রমেও নিবিড় তদারকিতে থাকবে সরকারের।

মূলত ভোক্তার সুরক্ষা নিশ্চিত, রফতানি মান ধরে রাখা এবং চাষীর মুনাফা নিশ্চিত করতেই এই উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এজন্য মৌসুম চলাকালীন সারাদেশে আমবাগানগুলো স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারিতে রাখা হবে। তবে বাগান করবেন চাষীরাই। এর মালিকানায়ও থাকবেন তারা।

তবে বাগানে গাছ ও মুকুলের সুষ্ঠু পরিচর্যা, সর্বোত্তম ফলন এবং বিষাক্ত কেমিক্যাল প্রয়োগ প্রতিরোধেই এই সময়ে বাগানগুলো স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তারা তদারকি করবেন। একই সঙ্গে বিষাক্ত কেমিক্যাল প্রয়োগ ঠেকাতে প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ আদালতও পরিচালনা করা হবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্র এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যে উদ্যোগী হয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ নিয়ে এই ব্যাপারে একটি গাইডলাইন জারি করেছে। তাতে বলা হয়─ কোনো অবস্থাতেই আমের মুকুলে বিষাক্ত কেমিক্যাল প্রয়োগ করা যাবে না। তবে ক্ষেত্রবিশেষে প্রয়োজন হলে কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ নিয়ে মানবদেহে সহনীয় মাত্রার ওষুধ প্রয়োগ করা যাবে।

সেক্ষেত্রে তা প্রয়োগের কমপক্ষে সাত দিনের মধ্যে ফলন খাওয়ার জন্য বাজারজাত করা যাবে না। নির্দেশনায় একটি নির্দিষ্ট সময় নিয়ে পরিপক্ব না হওয়া পর্যন্ত গাছ থেকে চাইলেই আম আহরণ করা যাবে না।

বাগান পর্যায়ে স্থানীয় সরকারের এসব তদারকি নিশ্চিত করতে ইতিমধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং কৃষি মন্ত্রণালয় জেলা প্রশাসক, থানা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং স্থানীয় কৃষি অধিদফতরের কর্মকর্তাদের সাথে দফায় দফায় যৌথ সভা করেছে। ওসব সভার মাধ্যমেই প্রত্যন্ত এলাকার আমচাষীদের কাছে এই সব বার্তা পৌঁছে দেয়া হয়েছে। একই সাথে চাষীদের এই বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং ভালো ফলন পাওয়ার লক্ষ্যে প্রশিক্ষণ দেয়ার কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।

সূত্র জানায়, আম উৎপাদনকারী দেশের তালিকায় বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ১২তম। বর্তমানে এদেশে বার্ষিক উৎপাদিত আমের পরিমাণ ৭ লাখ ৬৬ হাজার ৯৩০ টন। আর দেশে উৎপাদিত আমের চাহিদা মেটানোর পরও ৭০ শতাংশ উদ্বৃত্ত আম রফতানির সুযোগ রয়েছে। সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার মাধ্যমে এসব আম রফতানি করে খুব সহজেই ভারত, পাকিস্তান, ফিলিপাইন, থাইল্যান্ডের মতো আম রফতানিকারক দেশগুলোর সাথে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা করতে পারবে।

আধুনিক উৎপাদন ব্যবস্থা, উন্নত প্যাকিং ও বিপণন ব্যবস্থার আধুনিকায়নের মাধ্যমে রফতানির কাক্সিক্ষত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনও সম্ভব। কিন্তু বিপুল সম্ভাবনা থাকার পরও নানা সমস্যার কারণে এই খাত থেকে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব হচ্ছে না।

সূত্র আরো জানায়, গতবছর পরীক্ষামূলকভাবে রফতানি করার পর ইউরোপ-আমেরিকার বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের আম নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয়েছে। ফলে বিশ্বের সবচেয়ে বড় খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃত চেইন শপ ওয়ালমার্ট এ বছরও বাংলাদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ আম আমদানির আগ্রহ দেখিয়েছে। ইতিমধ্যে সরকারের তারা উচ্চপর্যায়েও বিষয়টি জানিয়েছে।

প্রতিষ্ঠানটির এই আগ্রহ এবং জনস্বাস্থ্যের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে দেশের আমবাগানগুলো পর্যবেক্ষণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কারণ  জাতীয় অর্থনীতিতে ফলের অবদান কম নয়। তবে ফলের আওতায় মোট আবাদি-চাষভুক্ত জমির পরিমাণ ১ দশমিক ৬৬ ভাগ। কিন্তু জাতীয় অর্থনীতিতে মোট ফসলভিত্তিক আয়ের প্রায় ১০ ভাগই আসে ফল থেকে।

এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন বলেন, সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা অনুসারে রফতানি বহুমুখীকরণের ক্ষেত্রে সুস্বাদু ও রসালো আমকে গুরুত্বপূর্ণ রফতানি পণ্য হিসেবে বিবেচনা করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। দেশের সীমিতসংখ্যক বাগানে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে আম উৎপাদন হলেও এই উৎপাদিত আমই চাহিদা পূরণ কওে দেশের বাইরে স্বল্প পরিসরে রফতানি হচ্ছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় মনে করে একটি সুনির্দিষ্ট গাইডলাইনে চাষীরা পরিচালিত হলে এবং তাদের প্রশিক্ষণ ও প্রয়োজনীয় ঋণ সহায়তা দেয়ার পাশাপাশি প্রশাসনিক নজরদারি থাকলে তাতে সবদিক থেকেই লাভবান হওয়া সম্ভব। আর তা নিশ্চিত করতে ইতিমধ্যে সারাদেশে আমবাগানগুলোর তদারকি কাজ শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ও চলতি মাসের প্রথম দিকে সাতক্ষীরা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহীসহ বিভিন্ন এলকার আমবাগান পরিদর্শন করেছে। মৌসুমের বাকি সময়েও আমের জন্য প্রসিদ্ধ জেলাগুলোর আমবাগান নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা হবে।

সোনালীনিউজ/আমা

Wordbridge School
Link copied!