• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

‘আমরা চাই, জাতীয় স্বার্থ নিয়ে সংলাপ হোক’


নিজস্ব প্রতিবেদক অক্টোবর ৩১, ২০১৮, ০৯:২৯ পিএম
‘আমরা চাই, জাতীয় স্বার্থ নিয়ে সংলাপ হোক’

ঢাকা: গণফোরাম সভাপতি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন বলেছেন, আমরা চাই, জাতীয় স্বার্থ নিয়ে সংলাপ হোক। জাতীয় লক্ষ্যগুলোকে সামনে রেখে, সংবিধানের মূল্যবোধকে সামনে রেখে সেই আলাপ অবশ্যই হোক- এটা আমরা সবসময় সমর্থন করেছি, আগামীকাল সেটা হবে সেটাও আমরা পুরোপুরি সমর্থন করি।

তিনি বলেন, আসুন এই ঐক্যবদ্ধ উদ্যোগ সংলাপের মধ্য দিয়ে ঐকমত্যে এসে দেশকে আমরা এগিয়ে যাব। ঐক্যবদ্ধ জনতার জয় হবেই হবে।

বুধবার (৩১ অক্টোবর) জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল- জেএসডির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন ড. কামাল।

দলীয় নয়, জাতীয় স্বার্থ নিয়ে গণভবনে সংলাপ হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, আমরা সংলাপে বিশ্বাস করি। আমরা সবসময় মনে করি জনগণ ক্ষমতার মালিক। তারা নিজেদের মধ্যে আলাপ করবে দেশের স্বার্থ নিয়ে, দলীয় স্বার্থ না।

সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি তুলে ধরে ড. কামাল বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনে জাতীয় ঐক্য হয়ে গেছে। সেটাকে সুসংহত করে শক্তিতে পরিণত করে যেভাবে একাত্তরের স্বাধীনতা অর্জন করেছিলাম, যেভাবে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে আমরা ক্ষমতা পুনরুদ্ধার করেছিলাম একটা সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে। তারপরেও দেখা যায় যে, সেই ফসল ধরে রাখতে পারি না।

তিনি বলেন, এবার অনুরোধ করব, আবেদন করব সবাই সংগঠিত হোন, ঘরে ঘরে, পাড়া-মহল্লায় গ্রামে গ্রামে। এবারে আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। কিন্তু নির্বাচনের যে ফসল সেটা যেন আমরা ধরে রাখতে পারি। সেটা যেন কেউ এবার আত্মসাৎ করতে না পারে। আসুন দেশের মালিক হিসেবে আমাদের স্বার্থ ও সম্পদকে রক্ষায় আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকি।

এ সময় সরকারের দমনীতির কঠোর সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, প্রতিদিন আমাদের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। সুতরাং প্রধানমন্ত্রী যে সংলাপের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন তা কতটা আন্তরিকতার সঙ্গে আহ্বান করেছেন এবং সেই সংলাপের পরিণতির দ্বার কোন দিকে নিয়ে যাবে, সে সম্পর্কে জনগণের মধ্যে ইতিমধ্যেই সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা আশা করব প্রধানমন্ত্রী সত্যিকার অর্থেই একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার জন্যে, মানুষের অধিকারগুলোকে ফিরিয়ে আনবার জন্য, সত্যিকার অর্থে একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ নির্মাণ করার জন্য যে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, আজকে জাতীয় সংলাপের মধ্য দিয়ে সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার তিনি করবেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা ৭ দফা দাবি দিয়েছি, তা অবশ্যই পূরণ করবেন। এছাড়া বর্তমান রাজনৈতিক সংকটের কোনো সমাধান হবে না।

নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, আমরা ৭ দফা দাবি পেশ করেছি। আগামীকাল বৃহস্পতিবার আলোচনা হবে এই দাবির ভিত্তিতে। এই তিন দিনে বিএনপির নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে একটি মামলায় ৭ বছরের সাজা দেয়া হয়েছে। আরেকটি মামলার আপিলে তার সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর করা হয়েছে। আজকে আরেকটি রায়ে বলা হয়েছে যে, বিএনপি যে তার গঠনতন্ত্র সংশোধন করেছিল, সেই সংশোধনী গ্রহণযোগ্য নয়।

তিনি বলেন, ‘আমাদের ৭ দফার মধ্যে একটি দাবিতে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে দিয়েছে, এই সরকার ওরা এটা কেয়ার করে না। মঙ্গলবার (৩০ অক্টোবর) থেকে আজকে পর্যন্ত যত আলোচনা চলছে বিভিন্ন টেলিভিশনে, বিভিন্ন কাগজে সব জায়গায় তারা (সরকার) বলছেন সংবিধানসম্মত আলোচনার জন্য তারা আমাদের ডেকেছেন।
মান্না আরো বলেন, আমরা সবার উদ্দেশে বলতে চাই, অবশ্যই আন্তরিকভাবে এই সংলাপের মাধ্যমে আমরা একটা পরিসমাপ্তি ও নিষ্পত্তি আমরা চাই। যদি আগেই কেউ দেয়াল তুলে দেন তাহলে সংলাপ হবে না, আগেই যদি এমন পরিস্থিতি তৈরি করেন যে কথা বলা যাবে না তাহলে সংলাপ হবে না, আগেই যদি সংবিধানের নামে বেড়াজাল সৃষ্টি করা হয় সংলাপ সফল হবে না।

প্রধানমন্ত্রীর ডাকা সংলাপের ফলাফল নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক বলেন, প্রধানমন্ত্রী কি আমাদের সংলাপের জন্য ডেকেছেন? নাকি আমাদের ডেকে নিয়ে গিয়ে ধাপ্পা দেবেন, আলোচনার নামে তিনি লোক দেখানো সংলাপের আয়োজন করেছেন কি না সেটাও ভাবার বিষয়।

তিনি বলেন, ঐক্যফ্রন্ট চায় ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো আর কোনো প্রহসনের নির্বাচন এদেশে যেন না হয়। সংবিধান সংশোধন করে হলেও আমরা গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন চাই।

সভাপতির বক্তব্যে জেএসডির সভাপতি আসম আবদুর রব বলেন, জাতীয় ঐকমত্যের সরকার করতে হবে, জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সে জন্যই আমরা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করেছি। এ জন্য দেশের মানুষ আজকে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে।

তিনি বলেন, সরকারকে বলব, ৭ দফা দাবি মেনে নিন। আমরা প্রত্যাশা করি সংলাপের মাধ্যমে এর সমাপ্তি আসবে। আমি প্রধানমন্ত্রীকে বলব, দেশে যদি শান্তি চান, মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন করতে চান তাহলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ৭ দফা নিয়ে আলোচনা করুন। সংলাপকে সফল করতে হবে, জনগণকে ভোট দেয়ার ব্যবস্থা করে দিতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।

সভায় সামাজিক শক্তি, গণ-সাংস্কৃতিক দল, প্রগতিশীল জাতীয়তাবাদী দল, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক দল, ভূমিবল সমাজবাদী, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি, কংগ্রেস বাংলাদেশ, বাংলাদেশ হিন্দু পরিষদ, বাংলাদেশ সাম্যবাদী দল, জাতীয় বিপ্লবী পার্টি, সমাজতান্ত্রিক মজলুর পার্টি, সোশ্যালিস্ট পার্টি, সততা পার্টি, শ্রমিক পার্টি, ইউনাইটেড প্রগ্রেসিভ পার্টি, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী সিপিবিএম) মোট ১৯টি দল এবং সংগঠনের নেতারা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেন।

জেএসডির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপনের পরিচালনায় আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য দেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, গণস্বাস্থ্য সংস্থার ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, জেএসডির সহসভাপতি তানিয়া রব, সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন, সহসভাপতি এম এ গোফরান প্রমুখ।

সোনালীনিউজ/এমএইচএম

Wordbridge School
Link copied!