• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

আমলা ও ব্যাংকারদেরই পর্ষদে পাঠাচ্ছে সরকার


নিজস্ব প্রতিবেদক ফেব্রুয়ারি ২২, ২০১৬, ০৯:১৯ পিএম
আমলা ও ব্যাংকারদেরই পর্ষদে পাঠাচ্ছে সরকার

নিজস্ব প্রতিবেদক

সোনালী ও বেসিক ব্যাংকের আর্থিক কেলেঙ্কারিতে পরিচালনা পর্ষদকে জড়িয়ে নানা অভিযোগ ওঠার পর সরকার রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে আর রাজনৈতিক বিবেচনায় পরিচালক নিয়োগ না দিয়ে আমলা ও ব্যাংকারদেরই পর্ষদে পাঠাচ্ছে।

দেশের সবচেয়ে বড় ব্যাংক সোনালীর পরিচালনা পর্ষদে গত সপ্তাহে তিন বছরের জন্য তিনজনকে পুনঃনিয়োগ দেয়া হয়, যাদের সবাই সাবেক আমলা।

বর্তমানে সোনালী, জনতা ও রূপালী ব্যাংকের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে রয়েছেন তিনজন সাবেক আমলা। অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান অর্থনীতিবিদ জায়েদ বখত। আর আলোচিত বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন ব্যাংকার আলাউদ্দিন এ মজিদ।

ব্যাংকগুলোর ওয়েবসাইটের তথ্যানুযায়ী, এই পাঁচ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে দুই-একজন ব্যবসায়ী ছাড়া বাকি সবাই বর্তমান ও সাবেক আমলা অথবা ব্যাংকার।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সাংবাদিকদের বলেন, আমরা বিচার-বিশ্লেষণ করে দেখেছি, ব্যাংকগুলোতে রাজনৈতিক দলের লোকদের নিয়োগ দেয়ার সিদ্ধান্ত ব্যর্থ হয়েছে৷ এ জন্যই এখন অভিজ্ঞদের নিয়োগ দেয়া হচ্ছে।

সোনালী ও বেসিক ব্যাংকে আর্থিক কেলেঙ্কারির ঘটনায় যে ক্ষতি হয়েছে, তা কাটিয়ে উঠতে বেগ পেতে হচ্ছে জানিয়ে মুহিত বলেন, সোনালী ব্যাংকে বড় ধরনের ডাকাতি ও জালিয়াতি হয়েছে। বেসিক ব্যাংকে লুট করার চেষ্টা করা হয়েছে। এ দুরাবস্থা কাটিয়ে উঠতে সময় লাগবে।

২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর এক দফা এবং ২০১২ সালে আরেক দফায় ৭০ জনকে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর পর্ষদে নিয়োগ দিয়েছিল আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বিগত মহাজোট সরকার। নিয়োগ পাওয়া পরিচালকদের অধিকাংশই ছিলেন আওয়ামী লীগ বা সহযোগী কোনো সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত।

অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে সরকার ঠিক কাজটিই করছে বলে মনে করেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম।

তবে শুধু সাবেক আমলা-ব্যাংকারদের পরিচালনা পর্ষদের দায়িত্ব দিলেই হবে না। তারা তাদের দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করছেন কি না, করতে দেওয়া হচ্ছে কি না, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ হচ্ছে কি না- সে বিষয়গুলোও মনিটর করতে হবে।

হল-মার্ক কেলেঙ্কারির সমালোচনার মধ্যে ২০১২ সালের ২৭ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসা শিক্ষা অনুষদের সাবেক ডিন হাবিবুর রহমানকে তিন বছরের জন্য সোনালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান নিয়োগ দিয়েছিল সরকার। ২০১৫ সালের ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত তার মেয়াদ ছিল।

কিন্তু ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে মেয়াদপূর্তির আট মাস আগেই গত বছরের ২০ এপ্রিল ব্যাংক থেকে পদত্যাগ করেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত নীল দল-এর এই শিক্ষক।

এরপর সাবেক অর্থসচিব ফজলে কবিরকে তিন বছরের জন্য ব্যাংকটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেয়া হয়। ২০১৫ সালের ২৩ এপ্রিল থেকে তিনি দায়িত্ব পালন করছেন।

হল-মার্ক কেলেঙ্কারির সময় এ ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন সাবেক ব্যাংকার কাজী বাহারুল ইসলাম। সে সময় পরিচালনা পর্ষদে ছাত্রলীগের সাবেক নেতা সুভাস সিংহ রায়সহ কয়েকজন পরিচালক ছিলেন রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ পাওয়া।

প্রবল সমালোচনার মুখে মেয়াদ পূর্তির আগেই ওই পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেয় সরকার।

ফজলে কবিরের নেতৃত্বে বর্তমান পরিচালনা পর্ষদে আছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব রণজিৎ কুমার চক্রবর্তী, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ফজলুল হক, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী, সাবেক অতিরিক্ত সচিব এ কে এম রেজাউর রহমান, উত্তরা ব্যাংকের সাবেক ডিএমডি সাবেরা আক্তারী জামাল, বিএসআরএসের সাবেক পরিচালক আফজাল হোসেন।

গত বুধবার পুনঃনিয়োগ পেয়েছেন মাহবুব হোসেন, সাহেব আলী মৃধা এবং কাজী তরিকুল ইসলাম। তারা সবাই সাবেক যুগ্ম সচিব।

ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রদীপ কুমার দত্ত পদাধিকার বলে সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের একজন সদস্য।

২০১১ এর জুন থেকে ২০১২ এর মার্চ পর্যন্ত সময়ে সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা হোটেল (সাবেক শেরাটন) শাখার কয়েকজন কর্মকর্তার যোগসাজশে ৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে হল-মার্ক গ্রুপ, প্যারাগন গ্রুপ, নকশি নিট কম্পোজিট, খান জাহান আলী স্যুয়েটার্স, ডি এন স্পোর্টস এবং টি অ্যান্ড ব্রাদার্সের বিরুদ্ধে কয়েক ডজন মামলা হয়। এর মধ্যে কেবল হল-মার্ক গ্রুপই সরিয়েছে ২ হাজার ৬০০ কোটি টাকা।

সোনালীনিউজ/এমএইউ

Wordbridge School
Link copied!