• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

‘আমাকে জাহাজটা উদ্ধার করার আগেই সমুদ্রে ডুবে গেল ভাইপো’


আন্তর্জাতিক ডেস্ক জুলাই ১৫, ২০১৯, ০১:১৫ পিএম
‘আমাকে জাহাজটা উদ্ধার করার আগেই সমুদ্রে ডুবে গেল ভাইপো’

ঢাকা : ভারতের বিএসএফ পাখির মতো গুলি করে বাংলাদেশিদের মারছে। গত এক দশকে ২৯৪ জন বাংলাদেশিকে গুলি করে হত্যা করেছে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষাকারী বাহিনী। ঠিক এই অবস্থাতেই বাংলাদেশের নাবিকরা এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন গভীর সমুদ্রে ভাসতে থাকা ভারতীয় এক জেলে উদ্ধার করে। শুধু উদ্ধারই করেননি তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে সুস্থও করে তুলেছেন। এখন সেই জেলা কলকাতায় চিকিৎসা নিচ্ছেন।

তিনি সেখানে ভারতের এনডিটিভিকে এক সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। সেই সাক্ষাৎকারে উঠে এসেছে সমুদ্রে ভাসতে ভাসতে বেঁচে থাকার করুণ কাহিনী। খাবার নেই, এমনকি পানিতে ভেসে থাকতে হলে আবশ্যিক যে লাইফ জ্যাকেট- তাও নেই! বাঁশের খুঁটি ধরে উত্তাল বঙ্গোপসাগরে পাঁচ দিন ধরে ভেসে থাকার এ এক রূপকথা! গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে গিয়ে ট্রলার ডুবে নিখোঁজ জেলেদেরই একজনের গল্প এটি। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কাকদ্বীপের জেলে রবীন্দ্রনাথ দাসকে শেষমেশ সমুদ্র থেকে উদ্ধার করে চট্টগ্রামের উপকূলের একটি বাংলাদেশি জাহাজ। তারা তাকে প্রাথামি চিকিৎসা দিয়ে সুস্থও করে তোলে।

চিকিৎসার জন্য কলকাতায় আনা হয়েছে রবীন্দ্রনাথকে। গত ৬ জুলাই মাঝ সমুদ্রে তুমুল ঝড়ের সময় ডুবে যায় তাঁর ট্রলার। একে একে মারা যায় অন্য সঙ্গীরাও। কেবল বৃষ্টির পানি খেয়ে টানা ৫ দিন সমুদ্রেই ভেসেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। এমভি জাওয়াদের সদস্যদের চোখে পড়ায় তাঁকে অবশেষে জীবন্ত উদ্ধার করা হয়।

দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার কাকদ্বীপের নারায়ণপুর থেকে ট্রলারে রওনা হন রবীন্দ্রনাথ। এফবি নয়ন-১ এর মাস্টার ছিলেন তিনি। ৪ জুলাই ১৪ জন জেলেসহ গভীর সমুদ্রে মাছ ধরার জন্য যাত্রা শুরু করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। মাঝসমুদ্রে ট্রলারটি ভেঙে ডুবতে শুরু করলে ওর মধ্যেই আটকা পড়েন তিনজন জেলে। রবীন্দ্রনাথ এবং অন্য ১১ জন সমুদ্রেই লাফ মারেন।

সমুদ্রের মধ্যে জ্বালানি নিয়ে আসা ড্রামগুলোকে খালি করে বাঁশ এবং দড়ি দিয়ে একসাথে বেঁধে ভেসে থাকেন তাঁরা। যদিও এই খড়কুটো বাঁচিয়ে রাখতে পারেনি সবাইকে। দিন কয়েক যেতে না যেতেই একে একে তাঁর ১১ জন সহকর্মীই পানিতে ডুবে যান। অবিশ্বাস্যভাবে তখনও ভেসে থাকেন রবীন্দ্রনাথ। উত্তাল সমুদ্রে, একা অভুক্ত দিন রাত ভেসে থাকেন তিনি।

অবশেষে, ১০ জুলাই চট্টগ্রামের কাছে একটি বাংলাদেশি ভেসেলের চোখ পড়ে তাঁর উপর। দুই ঘণ্টার টানা প্রচেষ্টার পর শেষমেশ উদ্ধার করা হয় রবীন্দ্রনাথকে। কলকাতায় পৌঁছনোর একদিন পরে তিনি তাঁর এই অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে জানান, ‘যতটুকু আমার যা মনে পড়ছে, আমার ট্রলারটি ডুবে যেতে শুরু করে এবং আমরা পানিতে লাফিয়ে পড়ি। পানিতেই ভেসেছিলাম আমি। এই এতটা সময় আমি কিছুই খাইনি। প্রচণ্ড বৃষ্টি হচ্ছিল এবং বিশাল বড় বড় ঢেউ ছিল সমুদ্রে। একমাত্র বৃষ্টি হলে সেই পানি খেতাম।’

অবিশ্বাস্যভাবে তিনি প্রাণে বেঁচে গিয়েছেন ঠিকই, কিন্তু নিজের বেঁচে ফেরার আনন্দ ম্লান হয়ে গিয়েছে ওই পানিতে ভেসে থাকা অবস্থায় একটি ঘটনাতেই। রবীন্দ্রনাথকে যখন উদ্ধার করা হয়, তার কয়েক ঘণ্টা আগেই ভেসে থাকতে থাকতে একসময় ডুবে যায় তাঁর ভাইপো। ভাইপোর এই মর্মান্তিক মৃত্যুতে শোকাচ্ছন্ন তিনি।

সেই দিনের কথা বলতে গিয়ে রবীন্দ্রনাথ বলেন, ‘আমরা একসঙ্গেই ভাসছিলাম, ওর লাইফ জ্যাকেটও ছিল। কিন্তু ও প্রচণ্ড ভয় পেয়েছিল। তাই দিন কয়েক ধরে আমিই ওকে পানির মধ্যেই কাঁধে নিয়ে ভেসেছিলাম। কিন্তু আমাকে যখন ওই জাহাজটা উদ্ধার করে বাঁচাল, তার ঘণ্টা খানেক আগেই ভাইপো ডুবে যায়।’

সোনালীনিউজ/আরআইবি/

 

Wordbridge School

আন্তর্জাতিক বিভাগের আরো খবর

Link copied!