• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আমাকে মাফ করে দাও, আমি আর বাঁচবো না


গাইবান্ধা প্রতিনিধি ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০১৭, ১০:৩৯ পিএম
আমাকে মাফ করে দাও, আমি আর বাঁচবো না

গাইবান্ধা: ‘তোমরা আমাকে মাফ করে দাও, আমি আর বাঁচবো না, তোমরা আমাকে বিদায় দাও...’ কান্না জড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) কর্নেল (অব.) ডা. আবদুল কাদের খান। যিনি একই আসনের এমপি মনজুরুল ইসলাম লিটন হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে আদালতে দায় স্বীকার করেছেন।

গত বুধবার (২২ ফেব্রুয়ারি) রাতে অস্ত্রের খোঁজে পুলিশ আবদুল কাদের খানকে সঙ্গে নিয়ে তার গ্রামের বাড়ি গাইবান্ধার পশ্চিম ছাপড়হাটি খানপাড়ায় যায়। সেখানে যাওয়ার পর ছোট ভাইয়ের স্ত্রী ফিরোজা বেগমকে দেখে কান্নায় ভেঙে পড়ে মাফ চান কাদের খান।

শনিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে স্ত্রী ফিরোজা বেগম সোনালীনিউজের প্রতিনিধিকে এসব তথ্য জানান। এর কয়েক ঘণ্টা পরেই বিকেলে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন কাদের খান।

ফিরোজা বেগমের স্বামী ইফসুফ খান ঘটনার পর থেকেই পলাতক রয়েছেন। তাই কাদের খানের বাড়িতে একাই অবস্থান করছিলেন ফিরোজা বেগম। পুলিশি তল্লাশির সময় কাদের খান আরো বলেন, ‘আমি হয়তো আর কখনো এ বাড়িতে আসবো না’।

ফিরোজা বেগম জানান, সেদিন রাতে আবদুল কাদের খান পুলিশকে অনুরোধ করে বলেছিলেন, পরিবারের কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন না। তারা কেউ কিছু জানে না।
এক প্রশ্নের জবাবে ফিরোজা বেগম বলেন, আমরা কখনো বিশ্বাস করতে পারিনা তিনি এ কাজ করতে পারেন। তিনি খুব সহজ সরল মানুষ ছিলেন।

স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি
আবদুল কাদের খানকে বুধবার দশদিনের রিমান্ডে নিয়ে এমপি লিটন হত্যাকাণ্ড নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। এরই মধ্যে শনিবার ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে সম্মত হন। নির্ধারিত দিন বিকেল তিনটায় তাকে গাইবান্ধার বিচারিক হাকিম জয়নাল আবেদীনের আদালতে হাজির করা হয়। সেখানে জবানবন্দি গ্রহণ শেষে কাদের খানকে কারাগারে পাঠানো হয়। সুন্দরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতিয়ার রহমান তার জবানবন্দি দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

পারিবারিক তথ্য
কর্নেল (অব.) কাদের খান পাঁচ ভাই পাঁচ বোনের মধ্যে তৃতীয়। বাবা এলাকায় প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তি ছিলেন। কাদের খানের প্রায় সত্তর-আশি বিঘা জমি রয়েছে বলে জানান ফিরোজা বেগম। তার স্ত্রী ডাক্তার এবং একমাত্র ছেলে ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী।

পশু বিক্রি
কাদের খান মাছ চাষ ও পশু পালন করেন। পাঁচ-ছয় মাস আগে ১৬টি গরু বিক্রি করে দেন। এর আগে প্রায় ৩০০টি ছাগল ও ভেড়া বিক্রি করেন কাদের খান।

রাজনীতি শুরু
চাকরি থেকে অবসর নেয়ার পর কাদের খান ২০০৪ সালের দিকে জাতীয় পার্টির (জাপা) রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। তখন থেকে এলাকার বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করেন নিজঅর্থে। পরে ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে এমপি নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে ওই আসনে এমপি নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের মনজুরুল ইসলাম লিটন।

তত্ত্বাবধায়ক শামীম নিখোঁজ
কর্নেল (অব.) কাদের খানের বাড়ির তত্ত্বাধায়ক শামীম মণ্ডলকে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তার বাড়ি সুন্দরগঞ্জের উত্তর রাজিবপুর গ্রামে।

শনিবার দুপুরে ওই গ্রামে সরেজমিনে গেলে শামীমের বাবা মহর আলী মণ্ডল জানান, গত ১৫ ফেব্রুয়ারি শামীম মাছ বিক্রি করতে সদর উপজেলার দারিয়াপুর বাজারে যায়। বাড়ি ফেরার পথে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে ছাপড়হাটি ইউনিয়নের মণ্ডলেরহাট এলাকা থেকে তাকে তুলে নিয়ে যায়। এরপর সুন্দরগঞ্জ থানা ও বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে গিয়েও তার কোনো খোঁজ মেলেনি। এ বিষয়ে সুন্দরগঞ্জ থানার ওসি মুহা: আতিয়ার রহমান জানান,শামীমের ব্যাপারে তারা কিছু জানেন না।

বাড়ির সামনে উৎসুক মানুষের ভিড়
শনিবার দুপুরেও কাদের খানের গ্রামের বাড়িতে ছিল উপড়ে পড়া ভিড়। বিভিন্ন স্থান থেকে উৎসুক মানুষ সেখানে ভিড় জামিয়েছে। বেলা ১১টার দিকে এলাকার শতাধিক নারী-পুরুষ বাড়ির সামনে জড়ো হতে থাকে। পরে সুন্দরগঞ্জ থেকে অতিরিক্ত পুলিশ এসে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।


সোনালীনিউজ/ঢাকা/আকন

Wordbridge School
Link copied!