• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
ইবি ছাত্রীর মৃত্যু

আমার তো সব শেষ, আর বেঁচে থেকে কী লাভ?


শৈলকুপা (ঝিনাইদহ) প্রতিনিধি অক্টোবর ৪, ২০২০, ০২:০৪ পিএম
আমার তো সব শেষ, আর বেঁচে থেকে কী লাভ?

ঝিনাইদহ : বোনের সাবেক স্বামীর হাতে লাঞ্চিত হওয়ার পর মায়ের সঙ্গে শেষ কথা ছিল, ‘বাইরের লোক কেন আসবে আমার রুমে? আমারতো সব শেষ, বেঁচে থেকে কী লাভ?’

এরপর রাত ১২টার দিকে ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার হয় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সদ্য স্নাতোকোত্তর উলফাত আরা তিন্নির। ওই রাতে তিন্নির সঙ্গে যা ঘটে, তা উঠে এসেছে তার মা ও বোনের কথায়। গণমাধ্যমকে শনিবার সেসব কথা জানান তারা। ঝিনাইদহের শৈলকুপার শেখপাড়া গ্রামে তিন্নির বাড়ি। বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে নিজের ঘর থেকেই তার মরদেহ উদ্ধার হয়।

মা হালিমা বেগম বলেন, ‘বৃহম্পতিবার তিন্নি এক বান্ধবীর বিয়ের অনুষ্ঠানে কুষ্টিয়া গিয়েছিল। অনুষ্ঠান শেষে বাড়ি ফেরে রাত ৮টার দিকে। এর কিছু সময় পর মেজো মেয়ে মিন্নির তালাকপ্রাপ্ত স্বামী জামিরুল গোপনে তিন্নির রুমে ঢোকে এবং খাটের নিচে লুকিয়ে থাকে। তিন্নি বাইরে থেকে এসে পোশাক বদল করে বাসার নিচ তলায় তার সঙ্গে দেখা করে, একটু বসে। এরপর ঘুমাতে তার রুমে যায়।’

তিন্নির মা ঘটনার বর্ণনা দিয়ে আরও বলেন, ‘এরপর তিন্নি বুঝতে পারে তার খাটের নিচে কেউ লুকিয়ে আছে। লোকটি খাটের নিচ থেকে বের হয়ে এক পর্যায়ে তিন্নিকে জাপটে ধরে। শুরু হয় ধস্তাধস্তি, এসময় চিৎকার দেয় তিন্নি। লোকটি ছিল জামিরুল।’

হালিমা বেগম বলেন, ‘আমরা তখন বুঝতে পারি বাসার চারপাশে জামিরুলের অনেক সহযোগী এবং তারা আমাদের বলতে থাকে- কোনও হৈ-চৈ করবি না। আজ সবাইকে মেরে ফেলবো।’

এর পরের ঘটনার বর্ণনা দেন তিন্নির মেজো বোন মিন্নি। তিনি জানান, বোনের চিৎকারে তিনি ছুঁটে যান তিন্নির রুমের সামনে। কিন্তু রুম ছিল ভেতর থেকে আটকানো। মিন্নি বলেন, ‘অনেক চেষ্টা করে দরজার লক ভেঙে ভেতরে ঢুকে দেখি সেখানে জামিরুল। তখনো তারা ধস্তাধস্তি করছে। বাধা দিতে গেলে সে আমাকে মারতে আসে। আমি অন্য রুমে গিয়ে আত্মরক্ষা করি। এরপর অনেক সময় চলে তিন্নির রুমে তাণ্ডব। পরে রুম থেকে বের হয়ে আমাকে ও আমার মাকে খুঁজতে থাকে সে। এক পর্যায়ে প্রতিবেশীদের উপস্থিতি টের পেয়ে রাত ১১টার দিকে জামিরুল পালিয়ে যায়।

’মা হালিমা বেগম জানান, জামিরুল বাড়ি থেকে চলে যাওয়ার পর তিন্নি নিচে তার রুমে আসে। ‘আমাকে সে প্রশ্ন করে- বাইরের লোক কেন আমার রুমে প্রবেশ করল মা? আমার তো সব শেষ! আমার আর বেঁচে থেকে কী লাভ? এই বলে সে দৌড়ে নিজের রুমে চলে যায়। এরপর পর রাত ১২টার দিকে টের পাই তিন্নি রুমে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলছে’- বলেন মা হালিমা বেগম।

এক প্রশ্নের জবাবে মিন্নি জানান, জামিরুল যখন তার স্বামী ছিলেন তখন এই বাড়িতে এলে ওই রুমেই থাকতেন এবং জামিরুল হয়তো ভেবেছিলেন এখনও তিনি (মিন্নি) ওই রুমেই থাকেন। মিন্নি বলেন, ‘আমাকে তুলে নিতে বা মেরে ফেলতে সে এ রুমে লুকিয়ে ছিল। তালাকের পর সে বিশ্বাস করেনি- আমার আবার বিয়ে হয়েছে। সে আমাকে ফিরিয়ে নিতে চেষ্টা চালাতে থাকে। আমার কাছ থেকে মেয়েকে সে জোর করে তার কাছে নিয়ে যায়। এ নিয়ে কয়েকবার তিন্নির সঙ্গে তার কথা কাটাকাটি হয়।’

পরিবারের হাল ধরতে চেয়েছিলেন তিন্নি। তিন্নিদের ভাই না থাকায় চাকরি পেয়ে পরিবারের হাল ধরতে চেয়েছিলেন তিন্নি। কাঁদতে কাঁদতে তিন্নির মা বলেন, ‘আমি আর কী নিয়ে থাকব। অনেক চেষ্টা করেছি তাকে বিয়ে দিতে। কিন্তু সে কোনো সময় রাজি হয়নি। শুধু বলতো, মা দোয়া করো আমি চাকরি পেয়ে সংসারের যেন হাল ধরতে পারি।’

ঝিনাইদহের শৈলকুপার শেখপাড়া গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা মৃত স্বজনদের অভিযোগ, তার বোনের সাবেক স্বামী শেখপাড়া গ্রামের কুনুরুদ্দীনের ছেলে জামিরুল ও তার তিন সহযোগী জোর করে তিন্নিদের বাড়িতে ঢুকে ভাঙচুর চালায়। এসময় তিন্নির শোবার ঘরে ঢুকে তার শ্লীলতাহানি করায় আত্মহত্যার পথ বেছে নেন তিনি। এ ঘটনার পর থেকেই পলাতক জামিরুল। গ্রেফতার হয়েছে আমিরুল, নজরুল, লাবিব ও তন্ময় নামের চারজন।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!