• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে প্রধানমন্ত্রী

আমি মরলে খালেদা জিয়া শোকবার্তা দেবে, সেটাও তৈরি ছিল


নিজস্ব প্রতিবেদক আগস্ট ২১, ২০১৯, ০৮:৫৬ পিএম
আমি মরলে খালেদা জিয়া শোকবার্তা দেবে, সেটাও তৈরি ছিল

ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমি মরলে (তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি প্রধান) খালেদা জিয়া শোক দেবে। সেটাও নাকি তার তৈরি করা ছিল। বিএনপি-জামায়াত সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া এই ধরনের ঘটনা ঘটা কোনোদিনই সম্ভব না। এটা আজকে প্রমাণিত সত্য।’

বুধবার (২১ আগস্ট) বিকেলে রাজধানীর ফার্মগেটের কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ মিলনায়তনে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় আহত ও নিহতদের স্মরণে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনাসভায় প্রধানমন্ত্রী একথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আরজেস গ্রেনেড, যেটা যুদ্ধ ময়দানে ব্যবহৃত হয়। সেটা জনসভায় ব্যবহৃত হল। গ্রেনেডের স্প্লিন্টার এসে হানিফ (মেয়র মোহাম্মদ হানিফ) ভাইয়ের গায়ে ঢুকছে আর সেখান থেকে রক্ত বেয়ে আমার গায়ে পড়ছে। তিনটা গ্রেনেড মারার পর একটু বিরতি। ’

তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের মদতে একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলা হয়েছে মন্তব্য করে  তিনি বলেন, ‘তারপর আবার গ্রেনেড হামলা একটার পর একটা গ্রেনেড মারতে শুরু করলো। এই ধরনের একটা পরিস্থিতি দিনে দুপুরে কীভাবে ঘটতে পারে? বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ছিল, তাদের মদত ছাড়া এটা হতে পারে না।’

শেখ হাসিনা আরো বলেন, ‘এই ঘটনার পর তাদের ধারণা ছিল আমি মারাই গেছি। কিন্তু যখন নেমে গাড়িতে উঠতে যাবো ঠিক তখনই আবার হামলা করা হলো। সেখানে মাহবুব (আওয়ামী লীগ সভাপতির নিরাপত্তারক্ষী) ছিল তার গায়ে গুলিটা লাগলো। গাড়িতেও গুলি লেগেছিল।’

তিনি বলেন, ‘গ্রেনেড ট্রাকের ভেতরে পড়তে পারতো কিন্তু সেটা ট্রাকের ঢালার সঙ্গে বাড়ি খেয়ে ভেতরে না পড়ে বাইরে পড়ে যায়। গ্রেনেডট‍া যদি ট্রাকের ভেতরে পড়ে তবে সবাই কিন্তু আমরা সেখানে শেষ হয়ে যাই।’

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় আহত ও নিহতদের স্মরণে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনাসভাআক্রমণকারীদের পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছিল মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সেখানে আহতদের যারা সাহায্য করতে গেছে, তাদের ওপর লাঠিচার্জ আর টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ; কোথাও যদি এ ধরনের ঘটনা ঘটে সেখানে পুলিশের দায়িত্ব থাকে আহতদের সাহায্য করা এবং দোষীদের ধরা। এখানে ঘটলো উল্টো ঘটনা।’

‘সেখান থেকে ওই আক্রমণকারীরা যাতে সহজে বেরিয়ে যেতে পারে সেই সুযোগটা সৃষ্টি করার জন্যই কিন্তু এই ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছিল।’

গ্রেনেড হামলা চালানোর জন্য কারাগার থেকেও অপরাধী আনা হয়েছিল অভিযোগ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আরেকটা ঘটনা, জেলখানায় একটা গ্রেনেড পাওয়া গেল। যাদের দিয়ে আক্রমণ আক্রমণ করিয়েছিল সেই ক্রিমিনাল কিছু তারা জেলখানা থেকেও সংগ্রহ করেছিল। তাদের অ্যাম্বুলেন্সে করে নিয়ে আসে আবার তাদের ফেরত নিয়ে যায়। সেখানে একটা গ্রেনেড কোনোভাবে চলে গিয়েছিল, যেটা সেখানে তারা ফেলেছিল। কত গ্রেনেড ছিল তাদের কাছে?’

তৎকালীন সরকারের পক্ষ থেকে আলামত সংরক্ষণ না করে তা নষ্ট করার চেষ্টা হয়েছিল মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘এটা (গ্রেনেড হামলা) সরকারের পক্ষ থেকে করা। এই ঘটনার পরদিনই সিটি করপোরেশন থেকে পানি এনে ধোয়া শুরু করে। আমি সঙ্গে সঙ্গে নানককে (আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানক) ফোন করে বলি আলামত মুছে ফেলছে তোমরা ব্যবস্থা করো। ওখানে গিয়ে তারা যেখানে যেখানে গ্রেনেড বিস্ফোরণ হয় সেখানে লাল চিহ্ন দেয়; আমরাই আলামত রক্ষা করার চেষ্টা করি।’

‘সেখানে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। অথচ এত বড় একটা ঘটনা ঘটার পর সেখানে সরকারের পক্ষ থেকে আলামত সংগ্রহ করার ব্যবস্থা নেওয়ার কথা। সেখানে যে অবিস্ফোরিত গ্রেনেড পাওয়া যায় সেটা রাখতে চাওয়া সেই অফিসারের চাকরি চলে যায়। এই ঘটনার কোনো আলামতই যেন না থ‍াকে সেই চেষ্টাটাই তারা করেছে।’

গ্রেনেড হামলার ঘটনায় বহুল আলোচিত ‘জজ মিয়া নাটকের’ কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘জনগণের চাপে একজন বিচারককে দিয়ে একটা তদন্ত কমিটি করা হয়। সেই তদন্ত কমিটির যে রিপোর্ট সেটাতো তাদের ফরমায়েশি রিপোর্ট।’

‘আর সেখানে একটা সাধারণ মানুষ ধরে নিয়ে আসে, তার নাম জজ মিয়া, তাকে আসামি করা হয়। জজ মিয়ার নাটক সাজানো হয়। কীভাবে জজ মিয়াকে নিয়ে আসে। সাধারণ গ্রামের মানুষ সে এত গ্রেনেড কোথা থেকে কিনবে?’ আলোচনাসভায় উপস্থিতির একাংশপ্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া এই ধরনের ঘটনা ঘটা কোনোদিনই সম্ভব না। এটা আজকে প্রমাণিত সত্য।’ 

খালেদা জিয়ার সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই ঘটনা, কোটালিপাড়ায় ৭৬ কেজি বোমা পুঁতে রাখা, প্রতিটি আক্রমণের আগে খালেদা বলতো আওয়ামী লীগ ১০০ বছরেও ক্ষমতায় যেতে পারবে না। এই ঘটনার আগে বলতো শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী তো দূরের কথা, জীবনে বিরোধী দলের নেতাও হতে পারবে না। ওরা তো আমাকে মেরেই ফেলবে।’

‘আল্লাহর মাইর দুনিয়ার বাইরে বলে একটা কথা আছে। যে অভিশাপ সে আমার জন্য দিয়েছিল, সেটা এখন তার কপালে জুটে গেছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘তদন্ত হয়েছে এবং সে তদন্তের মধ্য যারা আসামি তাদের শাস্তি হয়েছে। তবে এখানে এটা ঠিক খালেদা জিয়াকে আসামি করা হয়নি। কিন্তু তার যে এখানে সহযোগিতা রয়েছে, সে তো প্রধানমন্ত্রী ছিল। তার যে সম্পূর্ণ দায়-দায়িত্ব ছিল এটাতো অস্বীকার করা যায় না।’

‘খালেদা জিয়াই কিন্তু স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিল, আর বাবর (লুৎফুজ্জামান বাবর) ছিল প্রতিমন্ত্রী। সেখানে সে দায়িত্ব তো কেউ অস্বীকার করতে পারে না।’

যতক্ষণ জীবন আছে ততক্ষণ দেশের জন্য কাজ করে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, বারবার মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছি কখনো ভয়ে ভীত হইনি, হবো না। নিজের জীবনের কখনো মায়া করিনি। কখনো ভয়ে ভীত হইনি। যতক্ষণ জীবন আছে আমি কাজ করে যাবো।

সোনালীনিউজ/এমএএইচ

Wordbridge School
Link copied!