• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
জন্মদিনের প্রত্যাশা

আর এক পা এগোলেই শান্তিতে নোবেল শেখ হাসিনার


আজিজুল ইসলাম ভূঁইয়া সেপ্টেম্বর ২৮, ২০১৯, ১১:৫২ এএম
আর এক পা এগোলেই শান্তিতে নোবেল শেখ হাসিনার

ঢাকা : আজ ২৮ সেপ্টেম্বর। জননেত্রী শেখ হাসিনার শুভ জন্মদিন। এই আনন্দময় ক্ষণে বঙ্গবন্ধুকন্যা আমাদের মাঝে নেই। দায়িত্ব ও কর্তব্যের মহাসিন্ধু শংখধ্বনি করে প্রতিবারই তাকে নিয়ে যায় সাত সমুদ্র তেরো নদীর ওপারে। আমাদের সফল প্রধানমন্ত্রী আজ এই মাহেন্দ্রক্ষণে সুদূর আমেরিকায়। জাতিসংঘের প্রধান দপ্তর নিউইয়র্কে তিনি কর্মব্যস্ত দিন কাটাচ্ছেন।

তিনি শুধু বাংলাদেশের সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়েই নয়, তিনি ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন সারা বিশ্বের মানুষের মঙ্গল, উন্নয়ন ও শান্তিময় বিশ্ব গড়ার কঠিন দায়িত্ব নিয়ে। এ বছর শেখ হাসিনার জন্মদিবস এসেছে একটি বিশেষ আবহ নিয়ে। এই দিনটি এসেছে বাঙালি জাতির জীবনের একটি ভিন্নমাত্রা ও সূর্য সম্ভাবনার স্বপ্ন নিয়ে। আর মাত্র ক’দিন পরেই ঘোষিত হবে ২০১৯ সালের শান্তিতে নোবেল পুরস্কার।

বিভিন্ন সূত্রমতে জানা গেছে, নরওয়ে নোবেল কমিটির কাছে শান্তিতে পুরস্কার প্রদানের জন্য ২২৩ ব্যক্তি ও ৭৮টি সংস্থা মিলিয়ে মোট যে ৩০১টি নামের তালিকা ইতোমধ্যে জমা হয়েছে, তার মধ্যে আমাদের প্রিয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম শীর্ষে রয়েছে।

শেখ হাসিনার নোবেল প্রাপ্তির আকাঙ্ক্ষা কেবল বাঙালি জাতির জন্যই নয়, গোটা শান্তিপ্রিয় বিশ্বই প্রত্যাশা করছে এবারের শান্তি পুরস্কার শেখ হাসিনার মুকুটেই শোভা পাক। আমাদের স্বপ্ন যদি সফল হয়, যদি এবারের শান্তি পুরস্কারটি শেখ হাসিনাকে প্রদান করা হয় তাহলে সেটি হবে একটি সঠিক সিদ্ধান্ত ও বাঙালি জাতির জন্য একটি অত্যুজ্জ্বল গৌরব ও গর্বের বিষয়।

শান্তিতে নোবেল পুরস্কার শেখ হাসিনার জন্য অনেক আগেই প্রাপ্য ছিল। ২৫ সেপ্টেম্বর ১৯৯৮ সালে শেখ হাসিনা পেয়েছিলেন জাতিসংঘের ইউনেস্কো প্রবর্তিত ফেলিক্স হুফে বাইনি শান্তি পুরস্কার। প্যারিসের ইউনেস্কো হেড কোয়ার্টারে এক আবেগময় ও জমকালো অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা গ্রহণ করেছিলেন এই পুরস্কার।

বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)-এর বিশেষ প্রতিনিধি ও প্রধানমন্ত্রীর তৎকালীন মিডিয়া টিমের সদস্য হিসেবে আমার সৌভাগ্য হয়েছিল সেই আনন্দঘন অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার। বর্তমান বিশ্ববরেণ্য আঁকিয়ে শিল্পী শাহাবুদ্দিনসহ শ’দুয়েক উৎফুল্ল বাঙালি ও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের অগণিত মানুষের উপস্থিতিতে সেদিন শেখ হাসিনার গুণগাথা নিয়ে রচিত গান পরিবেশন করেছিলেন আফ্রিকান শিল্পীরা। আমি ব্যক্তিগতভাবে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলাম অন্য একটি বিশেষ উপলব্ধিকে কেন্দ্র করে।

শেখ হাসিনাকে শান্তি পুরস্কার প্রদানের জন্য যে জুরিবোর্ড করা হয়েছিল, তার প্রধান অর্থাৎ চেয়ারম্যান ছিলেন এককালে আমেরিকার জাতীয় তথ্য উপদেষ্টা ড. হেনরি কিসিঞ্জার। প্রচণ্ড বাংলাদেশবিদ্বেষী এই ব্যক্তিটি শুধু আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাই করেননি, দেশ স্বাধীন হওয়ার পরেও বাংলাদেশকে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ বলে বিদ্রূপ করে বিশ্বসভায় আমাদের ছোট করতে চেয়েছিলেন। আজ সেই ব্যক্তিটি জুরিবোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে কীভাবে শেখ হাসিনার হাতে শান্তির পদক তুলে দেন তা দেখার জন্য আমি উন্মুখ হয়ে ছিলাম।

বক্তৃতা দিতে দাঁড়িয়ে হেনরি কিসিঞ্জার বললেন, ‘আমি আজ গভীরভাবে আনন্দিত এজন্য যে, এমন এক ব্যক্তির হাতে এই মর্যাদাপূর্ণ পদক তুলে দিতে পেরেছি, যার পরিবারের সঙ্গে আমার গভীর পরিচয় চার দশক ধরে।’ এরপর তিনি বলেন, ‘ফেলিক্স হুফে বাইনি, যার নামে এই বিশ্বনন্দিত পুরস্কার, তিনি ছিলেন আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু। শান্তির প্রতি তার গভীর আকুতি আমি খুব কাছ থেকে অনুভব করেছি। আমি আজ সার্থক শেখ হাসিনার হাতে পুরস্কার তুলে দিতে পেরে। আমার এই আত্মপ্রত্যয় জন্মেছে যে, সঠিক পাত্রেই এই পুরস্কার দেওয়া হয়েছে।’

অতঃপর শেখ হাসিনাকে এই পুরস্কারের জন্য মনোনীত করার যুক্তি উপস্থাপন করতে গিয়ে কিসিঞ্জার বলেন, “tribal conflict is a 'fight-to-finish game' -one side will wine and other side will be crushed. There is no middle way. In Bangladesh there was armed tribal insurgency for over a decade. Still, Sheikh Hasina has succeeded to bring the wearing groups together and successfully resolved the crisis at a negotiation table. In fact Sheikh Hasina made an anti-natural phenomenon possible by dint of her wisdom, courage and charismatic statesmanship.”

প্যারিসের রাজধানী ও ইউনেস্কোর সদর দপ্তরে সেদিন অনেক দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান, নামিদামি কূটনীতিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। সবাই একই কণ্ঠে, একই সুরে, একই কথা উচ্চারণ করেছিলেন— ফেলিক্স হুফে বাইনি পুরস্কার নয়, শেখ হাসিনার সঠিক প্রাপ্য হলো নোবেল শান্তি পুরস্কার। সেই ’৯৮ থেকে অনেক ইতিহাস সৃষ্টি হয়েছে পৃথিবীতে। পরপর তিনবার শেখ হাসিনা জনগণের নিরঙ্কুশ ম্যান্ডেট নিয়ে বাংলাদেশের সরকারপ্রধান হয়েছেন।

তিনি রূপকল্প ২০২১ ও উন্নত বাংলাদেশ ২০৪১ ঘোষণার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে পৃথিবীর মানচিত্রে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছেন। একসময় মঙ্গা-দারিদ্র্যপীড়িত বাংলাদেশ আজ মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে বিশ্বস্বীকৃত।

ইতোমধ্যে শেখ হাসিনার পরিশ্রম, মেধা, মননশীলতা, প্রজ্ঞা ও রাষ্ট্র পরিচালনার স্বীকৃতিস্বরূপ বিভিন্ন সম্মানজনক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান থেকে অন্তত ৩৭টি পদক ও মেডেল অর্জন করেছেন যা সমসাময়িক বিশ্বের অন্য কোনো রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকারপ্রধানের ভাগ্যে জোটেনি। শেখ হাসিনা বিশ্বের মহিলা সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানদের মধ্যে ইতোমধ্যে এক নম্বর স্থান দখল করে নিয়েছেন। অন্তত ১৫টি বরেণ্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেছেন যা আর কোনো রাষ্ট্রপ্রধানের বেলায় দেখা যায়নি।

শেখ হাসিনা ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। এই পুরস্কার কোনো আবেগ-উত্থিত সিদ্ধান্তের ফলে পাননি। বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা আসলেই মানবতা ও মানবসভ্যতার এক অন্যতম মশালবাহী সিপাহসালার।

আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র মিয়ানমারের স্বৈরশাসকগোষ্ঠী হঠাৎ তাদেরই নাগরিক রোহিঙ্গা মুসলিম নামে পরিচিত আরাকানের নাগরিকদের ওপর মধ্যযুগীয় কায়দায় ঝাঁপিয়ে পড়ল— নির্বিচারে গণহত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে এক নারকীয় অবস্থার সৃষ্টি করে বাংলাদেশ সীমান্তের নাফ নদীর পাড়ে তাদের জড়ো করে মৃত্যুর মুখোমুখি এনে দাঁড় করায়। বাংলাদেশ সমস্যাপীড়িত পৃথিবীর সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ একটি দেশ। এতদসত্ত্বেও শেখ হাসিনার হূদয় মর্মন্তুদ বেদনায় কেঁপে উঠেছিল। ঘরবাড়ি ও বাস্তুচ্যুত মরণ যন্ত্রণায় কাতর রোহিঙ্গাদের অবর্ণনীয় দুঃখ-দুর্দশা দেখে শেখ হাসিনার সমুদ্রের স্বপ্নের মতো ফুঁসে ওঠা দু’চোখ অশ্রুসজল হয়ে উঠেছিল।

অতঃপর তার দৃঢ়কণ্ঠ থেকে কঠিন উচ্চারণ ভেসে এলো— প্রয়োজনে আমরা ভাগ করে খাব, প্রয়োজনে আমরা না খেয়ে থাকব, তবু রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আমরা মরতে দেব না। সঙ্গে সঙ্গে ১২ লাখেরও বেশি দুর্দশাপীড়িত রোহিঙ্গা নাফ নদী পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে আশ্রয় নিল। শেখ হাসিনার বাংলাদেশ পরম আদরে, পরম বিশ্বস্ততার সঙ্গে রোহিঙ্গাদের বরণ করে নিল। এত বিশাল উদ্বাস্তু জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দেওয়া পৃথিবীর কোনো ধনী ও উন্নত রাষ্ট্রের পক্ষেও সম্ভব হতো না। এটা সম্ভব হয়েছে কেবল মানবতা, বিশ্বশান্তি ও বিশ্বভ্রাতৃত্বের প্রতি শেখ হাসিনার প্রগাঢ় শ্রদ্ধাবোধ ও অঙ্গীকারের জন্য।

শান্তির প্রতি শেখ হাসিনার গভীর বিশ্বাস ও অঙ্গীকারের ফলে এখনো তার বিশ্বাস মিয়ানমারের সঙ্গে রোহিঙ্গা সমস্যা তিনি শান্তিপূর্ণ উপায়েই সমাধান করবেন। আমাদের বৃহত্তম প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে আমাদের অনেক সমস্যা ছিল এবং আছে। ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে জটিল ছিটমহল সমস্যা প্রায় চার দশক পরে শেখ হাসিনা দ্বিপাক্ষিক শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করেছেন। এমনকি আমাদের সমুদ্র সীমানা নিয়ে, সমুদ্র সম্পদ নিয়ে ভারতের সঙ্গে যে সমস্যা ছিল, শেখ হাসিনার সরকার আন্তর্জাতিক আদালতের মাধ্যমে তারও শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তি করতে সক্ষম হয়েছেন।

সবকিছু বিচার বিশ্লেষণ করলে সকল তুল্যমূল্যে একথা নিঃসন্দেহে বলা যাবে, আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলা যাবে ২০১৯ সালের শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের প্রধান দাবিদার বাংলাদেশের গণমানুষের নেত্রী শেখ হাসিনাই। নরওয়ের রাজধানী অসলো থেকে যদি ইথার তরঙ্গে ভেসে আসে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার শেখ হাসিনার, আমরা অবশ্যই উল্লসিত হব, আনন্দিত হব। আমাদের সঙ্গে গোটা শান্তিপ্রিয় বিশ্ব সেই ঘোষণাকে স্বাগত জানাবে। আমরা সেই মাহেন্দ্রক্ষণটির অপেক্ষায় রইলাম।

একই সঙ্গে জননেত্রীর শুভ জন্মদিনে আমাদের প্রার্থনা— আপনি সুন্দর থাকুন। রেশমি বস্ত্র পড়ে নয়, সুগন্ধি মেখে নয়, সিল্কে নয়, চন্দনেও নয়- আপনি সুন্দর থাকুন আপনার অন্তরের অনন্ত ক্রান্তিতে। প্রার্থনা করি আপনি বীর হোন। সিজার-সিকান্দারের মতো নয়, চেঙ্গিস-হালাকু খানের মতো নয়, হিটলার-মুসোলিনির মতোও নয়- আপনি বীর হোন আত্মত্যাগের অপার মহিমায়। প্রার্থনা করি আপনি স্থির হোন। শবদেহের মতো নয়, নুড়ির মতোও নয়। শবদেহ, নুড়ি তারা স্থির; কিন্তু একই সঙ্গে স্থবিরও বটে। আপনি স্থির হোন অস্তাচলগামী সূর্যের মতো, নিষ্কম্প প্রদীপ শিখার মতো। আপনি হোন চন্দনের মতো ক্ষয়ে ক্ষয়ে দিতে সুশ্রী— আপনি হোন ধূপশিখার মতো দহনে দহনে দিতে তৃপ্তি। আপনি সুস্থ থাকুন, আপনি দীর্ঘজীবী হোন, আপনার চলার পথে সপ্ত আসমান থেকে ঝরে পড়ুক পরম করুণাময়ের রাশি রাশি রহমত।

লেখক : সাংবাদিক

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব ভাবনার প্রতিফলন। সোনালীনিউজ-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে লেখকের এই মতামতের অমিল থাকাটা স্বাভাবিক। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য সোনালীনিউজ কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না। এর দায় সম্পূর্ণই লেখকের।

Wordbridge School
Link copied!