• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

আরও বড় হচ্ছে সোনাগাছি


ফিচার ডেস্ক জুন ২৪, ২০১৬, ১১:৩১ এএম
আরও বড় হচ্ছে সোনাগাছি

অনেকে বলেন এটাই এশিয়ার সর্ববৃহৎ নিষিদ্ধপল্লি। ভারতের তো বটেই। এখানে কমবেশি ১০ হাজার মহিলা থাকেন। যৌনতা যাদের পেশা।

সেই বাবু কলকাতার আমল থেকে এই হোয়াটস অ্যাপ আমল, সোনাগাছি আছে সোনাগাছিতেই। আজও অক্ষুন্ন ‘সুনাম’। কিন্তু দিন দিন বড় হয়ে যাচ্ছে সোনাগাছি। আর এটাই বড় দুঃখের কথা সোনাগাছির কাছে।

কিংবদন্তি বলে, বহু কাল আগে এই এলাকার মালিক ছিলেন সানাউল্লাহ বা সোনা গাজি নামে এক মুসলমান ধর্মগুরু। এখনও সেই গাজির মাজার এই এলাকায় রয়েছে। সেই ‘সোনা গাজি’ নামই কালে কালে ‘সোনাগাছি’ হয়ে যায়।

বিভিন্ন সময়ে কলকাতা শহরে আরও অনেক নিষিদ্ধপল্লি গড়ে ওঠে। মধ্য কলকাতার বউবাজার এলাকা কিংবা দক্ষিণের কালীঘাটসহ আরও অনেক জায়গায় তৈরি হয় পতিতাপল্লি। তাতেও দুঃখ ছিল না, কিন্তু এখন দুঃখ বাড়ছে সোনাগাছির।

সোনাগাছিতে এখন স্থায়ীভাবে বসবাসকারী প্রায় ৬ হাজার জন এবং বাইরে থেকে আসা নারীর সংখ্যা ৪ হাজারের মতো। সব মিলিয়ে ১০ হাজার যৌনকর্মী তাদের পেশায় যুক্ত শুধু এই পাড়াতেই। 

রাজ্যের বিভিন্ন জেলা তো বটেই, সেই সঙ্গে এই পাড়ায় যৌনকর্মীদের একটা বড় অংশ আসেন নেপাল আর বাংলাদেশ থেকে। কোনও বাড়ি ৫ কামরার তো কোনও বাড়িতে ২৫ কামরা। এমন কয়েক’শ বাড়িতে যৌন পরিষেবা চলে সোনাগাছিতে।

আবার একই ঘরে পার্টিশন দিয়েও ৪ থেকে ৬ জন যৌনকর্মী কাজ করে থাকেন। অনেক দুঃখ, অনেক কষ্ট, অনেক সমস্যা নিয়েই দিন চলে সোনাগাছির। বছরের পর বছর এইভাবেই চলে আসছে। তবু এখন সোনাগাছির চোখে জল। কারণ, সোনাগাছি বড় হয়ে যাচ্ছে।

সোনাগাছির বেশ কয়েকজন কর্মীর সঙ্গে কথা বলেই জানা গেল সেই এক আক্ষেপ— ‘সোনাগাছি দিন দিন বড় হয়ে যাচ্ছে।’ হাওড়া স্টেশন, শিয়ালদহ স্টেশন, ময়দান এলাকায় শহরের বাইরে থেকে আসা নারীরা বারবনিতার পেশায় যুক্ত থাকছেন বহুকাল থেকেই। কিন্তু এখন সমস্যা অনেক বড়।

কথা হল টিনা পান্ডের (নাম পরিবর্তিত) সঙ্গে। বললেন, ‘দিন দিন কাস্টমার কমছে। আজকাল তো পাড়ায় পাড়ায় সোনাগাছি। কটা মধুচক্র আর পুলিশ ধরে? আমরা জানি কোথায় কোথায় ওসব হচ্ছে।’

কলকাতার কিছু কিছু এলাকা এবং শহরতলিতে ইদানীংকালে বেশ কিছু মধুচক্রের সন্ধান পেয়েছে পুলিশ। ধরপাকড়ও হয়েছে। তবে এর বাইরেও যে পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে অনেক মধুচক্র চলছে বলে অভিযোগ। এটাই দুঃখের বড় কারণ সোনাগাছির।

সোনাগাছির আর এক বাসিন্দা শুভা (নাম পরিবর্তিত) বললেন, ‘এখানকার পরিবেশ ভাল না। নামও খারাপ। তাই নতুন বাবুরা ওইসব মধুচক্র, ফধুচক্র বেশি পছন্দ করে।’ 

এটুকুই নয়, শুভার আরও বক্তব্য— ‘আগে এই পাড়া থেকে হোটেলে যাওয়ার ডাক আসত, দালালরা প্রায়ই মেয়ে চাইত। এখন আর চায় না। ভদ্দর ঘরের মেয়েরা এই লাইনে এসে গিয়ে আমাদের ভাত মারছে।’

ক্ষোভ মিথ্যা নয়। শহরে যে ‘এসকর্ট সার্ভিস’, ‘মধুচক্র’ এসবের বাড়বাড়ন্ত হয়েছে এবং হচ্ছে সেই অভিযোগ অনেক আগেই বিভিন্ন মহল থেকে উঠেছে। এর সমাধান জানা নেই সোনাগাছির। তবে কি বদেল যাওয়া সময়ের চাপে পিছু হঠাই সোনাগাছির ভবিতব্য?

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এএম

Wordbridge School
Link copied!