• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
কেন্দ্রীয় সম্মেলন শুক্রবার

আরো আসছে নারী নেতৃত্ব


বিশেষ প্রতিনিধি ডিসেম্বর ১৯, ২০১৯, ০৩:২১ পিএম
আরো আসছে নারী নেতৃত্ব

ঢাকা : আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটিতে নারীর সংখ্যা বাড়ছে। আগামীকাল শুক্রবার থেকে শুরু হতে যাওয়া দুদিনের ২১তম কেন্দ্রীয় সম্মেলনের মধ্য দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রীয় পদে নতুন নারী নেতৃত্ব বাড়ানোর নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ নেতৃত্ব।

নারীরা দায়িত্ব পেতে যাওয়ায় প্রভাবশালী ও নানা কারণে অভিযুক্ত বেশ কয়েক নেতা এবার দলের কেন্দ্রীয় পদ থেকে বাদ পড়তে যাচ্ছেন। নানা কারণে বাদ পড়তে যাওয়া নেতাদের সংখ্যা দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের মোট সংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি হতে পারে।

তবে কেন্দ্রীয় কমিটিতে বর্তমানে থাকা নারীদের মধ্যে বেশিরভাগই পরবর্তী কমিটিতেও দায়িত্বে দেখা যেতে পারে বলে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের সূত্র বাংলাদেশের খবরকে জানায়।

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) বাস্তবায়ন, দলে নারীদের প্রতিনিধিত্ব বাড়ানো, দলীয় কার্যক্রম আরো গতিশীল করা ও নারী নেতৃত্বকে আরো এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করে এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছেন ক্ষমতাসীনরা।

দলের সহযোগী সংগঠনগুলোসহ জেলা ও উপজেলায় ইতোমধ্যে অনুষ্ঠিত সম্মেলনের মধ্য দিয়ে কমিটিগুলোর বিভিন্ন পদে নতুন নারী নেতৃত্ব আগের তুলনায় বেড়েছে।

সব পর্যায়ের কমিটিতে শর্ত অনুযায়ী নারী নেতৃত্ব প্রায় ৩৩ শতাংশে উন্নীত করতে চায় সরকারি দল। বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটিতে ১৫ জন নারীনেত্রী থাকলেও আসন্ন কমিটিতে তা বাড়ছে।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘সম্মেলনে আওয়ামী লীগ সব সময়ই নতুনদের অগ্রাধিকার দেয়। দলের বিগত সম্মেলনগুলোর মধ্য দিয়ে গঠিত কমিটি বিশ্লেষণ করলে তা প্রমাণিত হয়। এবারের সম্মেলনেও এর ব্যত্যয় ঘটবে না।’

দলীয় সূত্রমতে, আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের অনেক নারী নেত্রীর মাঠে রাজনৈতিক অর্জন, নেতাকর্মীদের কাছে জনপ্রিয়তা, স্বচ্ছ ভাবমূর্তি ও বিশেষ করে গত প্রায় এগারো বছর ধরে দল টানা সরকারে থাকা অবস্থায় কর্মকাণ্ড ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত খোঁজ নেওয়া হয়েছে।
সরকারি দলের শীর্ষ নেতা ও গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের মাধ্যমে তাদের সম্পর্কে এসব ‘আমলনামা’ বা প্রতিবেদন সংগ্রহ করছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। দলের শীর্ষ পদে জায়গা করে দিতে তিনি তাদের বিস্তারিত খোঁজ নিচ্ছেন।

আওয়ামী লীগের শীর্ষ কয়েক নেতা জানান, দশম জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত আসনে যারা আওয়ামী লীগের কোটায় সংসদে ছিলেন, তাদের মধ্যে কয়েকজনকে যোগ্যতা ও দলের জন্য ত্যাগ বিবেচনায় আসন্ন জাতীয় সম্মেলনের মধ্য দিয়ে কেন্দ্রীয় কমিটিতে আনা হতে পারে।

নবম বা অন্য সংসদে যারা ছিলেন, তাদের মধ্যেও কেউ কেউ এবার দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে ঠাঁই পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

কেন্দ্রীয় কমিটিতে যারা ঠাঁই পাবেন না, তাদেরকে পরে নিজ জেলা ও উপজেলার কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদের দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। ইতোমধ্যে অনুষ্ঠিত সম্মেলনের মধ্য দিয়ে কেউ কেউ গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পেয়েছেনও।

একাদশ সংসদে দলের জন্য সংরক্ষিত আসনে যারা সংসদ সদস্য আছেন, তাদের মধ্যেও কেউ কেউ কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদ পেতে পারেন। একাদশ সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনে পুরনো দুজন ছাড়া নতুনদের মনোনয়ন দেয় দল।

দলের সহযোগী সংগঠন কৃষক লীগের জন্মের পর প্রায় পাঁচ দশক পর এবারই প্রথমবারের মতো শীর্ষ দুই পদের (সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক) একটিতে নারীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।

আওয়ামী লীগের ১৭ সদস্যের সভাপতিমণ্ডলী ও বর্তমান ৪৪ সদস্যের উপদেষ্টা পরিষদে এবার নারীর সংখ্যা বাড়তে পারে বলে দলে আলোচনা আছে।

দলটির গত কেন্দ্রীয় সম্মেলনের মধ্য দিয়ে সম্পাদকমণ্ডলীতে শাম্মী আহমেদ, রোকেয়া সুলতানা ও শামসুন নাহার চাপার স্থান পাওয়া ছিল অনেকটাই চমক। এবারো তেমন চমক দেখাবে বলে আভাস দেন নীতিনির্ধারকরা।

কেন্দ্রীয় কমিটির বিষয়ভিত্তিক সম্পাদকদের ১৯টি পদের মধ্যে প্রায় ৮ থেকে ১০টিতে পরিবর্তনের সম্ভাবনা আছে। এসব পদে নতুন মুখসহ বর্তমান কমিটির সদস্য ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের কেউ কেউ কেউ দায়িত্ব পেতে পারেন।

নারীদের মধ্যে গাজীপুর-৫ আসনের সংসদ সদস্য মেহের আফরোজ চুমকি, মুন্সীগঞ্জ-২ আসনের সাগুপ্তা ইয়াসমিন, মানিকগঞ্জ-২ আসনের মমতাজ বেগম, গাইবান্ধা-২ আসনের মাহবুব আরা গিনি, সংরক্ষিত আসনের আওয়ামী লীগের কোটায় সংসদ সদস্য সুবর্ণা মোস্তফা, সংরক্ষিত আসনের সাবেক সদস্য মাহজাবিন খালেদ, ফজিলাতুন্নেছা বাপ্পী ও নূরজাহান বেগম মুক্তা প্রমুখকে নিয়ে ওই পদগুলোকে ঘিরে আলোচনা আছে।

সুনামগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য জয়া সেনগুপ্তা, জাতীয় চার নেতার অন্যতম সৈয়দ নজরুল ইসলামের মেয়ে সংসদ সদস্য সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপি, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী, দলের সাবেক সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য প্রয়াত আতাউর রহমান খান কায়সারের মেয়ে ওয়াসিকা আয়েশা খান, শহীদ বুদ্ধিজীবী শহীদুল্লা কায়সারের মেয়ে শমী কায়সার, ভাষাসৈনিক গাজীউল হকের মেয়ে সুজাতা হক ও মহিলা শ্রমিক লীগের সাবেক সভাপতি রওশন জাহান সাথীও কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদ পেতে পারেন বলে আলোচনা আছে।

তথ্যমতে, আগামী ২০২০ সালের মধ্যে যে কোনো রাজনৈতিক দলের সর্বস্তরের কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী নেতৃত্ব নিশ্চিত করতে দেশের সব দলের প্রতি নির্বাচন কমিশনের (ইসি) বাধ্যবাধকতা আছে।

২০২০ সালের মধ্যে সব পর্যায়ের কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা হবে- এ প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২০০৮ সালে ইসিতে নিবন্ধিত হয় রাজনৈতিক দলগুলো।

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) ৯০-এর খ-এর খ (২) অনুচ্ছেদে যে কোনো রাজনৈতিক দলের কেন্দ্রীয় কমিটিসহ সব পর্যায়ের কমিটিতে অন্তত ৩৩ শতাংশ পদ নারী সদস্যদের জন্য সংরক্ষণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ আর সেই লক্ষ্য ২০২০ সালের মধ্যে অর্জনের কথা উল্লেখ আছে। আগামী বছরের মধ্যে এ লক্ষ্যে পৌঁছাতে চায় আওয়ামী লীগ।

কেন্দ্রীয় থেকে তৃণমূলের সব কমিটিতে নারীর প্রতিনিধিত্ব বাড়লেও গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে বেঁধে দেওয়া লক্ষ্য পূরণের পথে এখনো অনেকটা পিছিয়ে আছে দলটি।

অবশ্য এখন পর্যন্ত প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আওয়ামী লীগের কমিটিতে নারী প্রতিনিধিত্ব সবচেয়ে বেশি। ভোটের মাঠের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির তুলনায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয়সহ অন্য কমিটিগুলো নারীদের উপস্থিতিতে কয়েকগুণ বেশি এগিয়ে আছে।

২০০৮ সালের পর থেকে আওয়ামী লীগে নারী নেতৃত্ব প্রায় ৮ শতাংশ বাড়লেও বিএনপিতে বেড়েছে মাত্র ১ শতাংশ। আওয়ামী লীগে এবার আরো বাড়ছে।

এক্ষেত্রে আরো এগিয়ে থাকতে চায় সরকারি দল। তবে লক্ষ্যে পৌঁছাতে আর মাত্র এক বছর বাকি থাকলেও দেশের কোনো দলই এখনো পর্যন্ত ৩৩ শতাংশ সংখ্যার কাছাকাছি যেতে পারেনি।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!