• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আ.লীগ নেতার চরম নির্মমতার শিকার এক স্বাস্থ্যকর্মী


গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি এপ্রিল ২৭, ২০২০, ০৭:৫৫ পিএম
আ.লীগ নেতার চরম নির্মমতার শিকার এক স্বাস্থ্যকর্মী

গোপালগঞ্জ : ঢাকার একটি হাসপাতালে চাকুরি করতেন এক নারী স্বাস্থ্যকর্মী (২১)। গত ২১ এপ্রিল (মঙ্গলবার) তিনি ছুটি নিয়ে বাড়িতে আসেন। বাড়িতে আসার পর স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতার নির্দেশে ওই নারী স্বাস্থ্যকর্মীকে এলাকাবাসী একটি নির্জন স্থানে শুকিয়ে যাওয়া পুকুরের মধ্যে তালপাতা দিয়ে ঝুপড়ি ঘর তৈরী করে সেখানে কোয়ারেন্টাইনে রাখে।

প্রায় ১ সপ্তাহ ধরে রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে এই নারী স্বাস্থ্যকমী ওখানেই অবস্থান করছেন।

ঘটনাটি ঘটেছে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার সাদুল্লাপুর ইউনিয়নের লখন্ডা গ্রামে। এ ঘটনাটি সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে প্রচার হওয়ার পর উপজেলাজুড়ে আলোচনার ঝড় ওঠেছে।

জানা গেছে, ঢাকার ইমপালস হাসপাতালে চাকুরি করতেন ওই নারী স্বাস্থ্যকর্মী। করোনা ভাইরাসের কারণে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে ছুটি দিয়ে দেয়। ছুটিতে তিনি বাড়িতে আসেন। বাড়িতে আসার খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে সাদুল্লাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রশান্ত বাড়ৈর নির্দেশে এলাকাবাসী ওই নারী স্বাস্থ্যকর্মীকে তার বাড়ির প্রায় ৪০০ মিটার দূরে একটি নির্জন স্থানে পুকুরের মাঝে তালপাতা দিয়ে ঝুপড়ি ঘর তৈরী করে সেখানে কোয়ারেন্টাইনে রাখে।

ভুক্তভোগী ওই নারী স্বাস্থ্যকর্মী বলেন, আজ প্রায় এক সপ্তাহ ধরে আমি এখানে রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে জীবনযাপন করছি। একজন স্বাস্থ্যকর্মী হিসেবে আমি অনেক মানুষকে স্বাস্থ সেবা দিয়েছি। আর আজ এখানে থেকে আমার স্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়েছে। মানুষ যে এতটা নিষ্ঠুর হতে পারে তা আমার আগে জানা ছিলনা।

কান্নাজড়িত কন্ঠে ওই স্বাস্থ্যকর্মীর মা বলেন, আমার স্বামী নেই। আমার এই মেয়েটার আয়ে আমার সংসার চলে। আমার মেয়েটির এখনো বিয়ে হয়নি। তাকে এভাবে একটি পুকুরের মধ্যে ঝুপড়ি ঘরে রাখা হয়েছে। আমার মেয়েটির যদি কিছু হয়ে যায় তাহলে এর দায় কে নেবে? এলাকার আওয়ামী লীগ নেতা প্রশান্ত বাড়ৈর চাপ সৃষ্টি করে আমার মেয়েটিকে এখানে রেখেছে। আমি প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগ নেতা প্রশান্ত বাড়ৈ বলেন, এলাকাবাসীর সকলের সিদ্ধান্তে ওই নারী স্বাস্থ্যকর্মীকে পুকুরের মধ্যে ঝুপড়ি ঘর তৈরি করে সেখানে রাখা হয়েছে।

কোটালীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সুশান্ত বৈদ্য বলেন, ওই স্বাস্থ্যকর্মী বাড়িতে আসার পর আমাকে তার পরিবার বিষয়টি জানায়। আমি তাকে একটি আলাদা ঘরে রাখতে বলেছিলাম। কিন্তু তাকে যে এলাকাবাসী পুকুরের মধ্যে একটি ঝুপড়ি ঘরে রেখেছে তা আমার জানা ছিলনা।

কোটালীপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ লুৎফর রহমান জানান, তারা ওই স্বাস্থ্যকর্মীকে উদ্ধার করে তার বাড়িতে দিয়ে এসেছেন। দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার এস এম মাহফুজুর রহমান সাংবাদিকদেরকে বলেন, বিষয়টি অত্যন্ত অমানবিক। এই স্বাস্থ্যকর্মীকে এলাকাবাসী এভাবে না রেখে আমাদের জানালে তাকে আমরা প্রতিষ্ঠানিক হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখতে পারতাম। আমরা এই স্বাস্থ্যকর্মীকে ওখান থেকে এনে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখার ব্যবস্থা করবো। তাকে যারা এভাবে ঝুপড়ি ঘরের ভেতর রেখেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সোনালীনিউজ/এএস

Wordbridge School
Link copied!