• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১
ঢাকার দুই সিটি নির্বাচন

আ.লীগ-বিএনপির ৪ মেয়র প্রার্থীর ইশতেহার


নিউজ ডেস্ক জানুয়ারি ২৯, ২০২০, ০৮:৩৫ পিএম
আ.লীগ-বিএনপির ৪ মেয়র প্রার্থীর ইশতেহার

ঢাকা: আসন্ন ঢাকার দুই সিটিতে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী চার প্রার্থীর মধ্যে সবার আগে ইশতেহার ঘোষণা করেন ঢাকা উত্তর সিটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম। গত রোববার (২৬ জানুয়ারি) রাজধানীর গুলশানের হোটেল লেকশোরে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি তুলে ধরেন ঢাকাকে নিয়ে তার আগামী দিনের পরিকল্পনা। 

তিনি জানান, সুস্থ ঢাকা ও সচল ঢাকার পাশাপাশি আধুনিক ঢাকা গড়ে তুলতে চান তিনি।  সুস্থ, সচল ও আধুনিক ঢাকা; বিশ্বমানের অত্যাধুনিক বাসযোগ্য ঢাকা; দুর্নীতিমুক্ত ও বিশ্বমানের মহানগর ঢাকা; এবং ঐতিহ্যের ঢাকা, সুন্দর ঢাকা, সচল ঢাকা, সুশাসিত ঢাকা ও উন্নত ঢাকা— রাজধানী ঢাকাকে ঘিরে এমন সব রূপকল্প নিয়ে সিটি নির্বাচনে ইশতেহার ঘোষণা করেছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও রাজপথের বিরোধী দল বিএনপির প্রতিদ্বন্দ্বী মেয়র প্রার্থীরা। একজন মেয়রের পক্ষে কতটা বাস্তবায়নযোগ্য— সে বিবেচনা সরিয়ে নিলে এসব ইশতেহার যেন ঢাকাকে তিলোত্তমা হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যেই প্রণীত।

আতিকুল ইসলামের পূর্ণাঙ্গ ইশতেহার: 

সুস্থ ঢাকা গড়তে আতিকুল ইসলামের ইশতেহারে যে প্রস্তাবনাগুলো উল্লেখ করা হয়েছে সেগুলো হলো:

১. উন্নত বিশ্বের মত আইভিএম পদ্ধদিতে ঢাকার দুই সিটি, ওয়াসা, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, পাশের শহরের সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট সব সংস্থাকে সঙ্গে নিয়ে বছরব্যাপী মশা নিধন কার্যক্রম বাস্তবায়ন।

২. টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আমিনবাজারে রিসোর্স রিকভারি ফ্যাসিলিটিজ স্থাপনের মাধ্যমে পরিকল্পিতভাবে বর্জ্য অপসারন ও জ্বালানি শক্তিতে রূপান্তর।

৩. তারুণ্যকে অনুপ্রাণিত করতে ও প্রতিবেশিদের মধ্যে সম্প্রীতি বাড়াতে শহরের ওয়ার্ডগুলোতে পাড়া উৎসবের আয়োজন।

৪. বস্তিবাসীর জন্য নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করা।

৫. জলাশয় দখলমুক্ত ও পরিচ্ছন্ন করে নগরবাসীর কাছে ফিরিয়ে দেওয়া।

৬. সিটি করপোরেশনের বর্ধিত এলাকায় নারীবান্ধব স্বাস্থ্যকেন্দ্র তৈরি।

৭. মিরপুরে করপোরেশনের জমিতে বৃক্ষ ক্লিনিক ও পোষা প্রাণীর জন্য ক্লিনিক নির্মাণ

৮. এলাকাভিত্তিক দৃষ্টিনন্দন পার্ক ও আধুনিক খেলার মাঠ তৈরি

৯. বিভিন্ন এলাকায় আধুনিক পশু জবাইকেন্দ্র স্থাপন।

১০. উত্তর সিটির প্রতিটি স্থাপনারয় মাতৃদুগ্ধ পানের জন্য আলাদা কক্ষ তৈরি।

১১. বিশেষভাবে সক্ষম মানুষের জন্য পর্যাপ্ত আধুনিক পাবলিক টয়লেট নির্মাণ।

১২. ঢাকা উত্তরের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পসহ বিভিন্ন স্থানে মিস্ট ব্লোয়ার ও অন্যান্য অত্যাধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে বায়ু দূষণ কমানো এবং

১৩. প্রতিটি ওয়ার্ডে নানান সুযোগসুবিধা সম্বলিত ওয়ার্ড কমপ্লেক্ট তৈরি।

নিজের ইশতেহারে সচল ঢাকার জন্য সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার কথা জানালেন আতিকুল ইসলাম। তার পরিকল্পনাগুলো হলো:

ফুটপাথ দখলমুক্ত করে এলাকাভিত্তিক পথচারীবান্ধব ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষের জন্য ফুটপাথ নেটওয়ার্ক তৈরি করা।
হকারদের পুনর্বাসন ও কর্মসংস্থান

যানজট নিরসনে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ, দক্ষিণ সিটি, পরিবহন মালিক সমিতিসহ অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ে সমন্বিত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন।
প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের অসমাপ্ত পরিকল্পনা অনুযায়ী সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সকলকে নিয়ে ঢাকা বাস রুট র‌্যাশনালাইজেশনের কাজ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শেষ করা।

নিরাপদ পথচারী পারাপারের জন্য ঢাকায় জেব্রা ক্রসিংগুলোতে ডিজিটাল পুশ বাটন সিগন্যাল স্থাপন।

নিরাপদ সড়ক বাস্তবায়নের প্রয়োজনে বিভিন্ন স্থানে এস্কেলেটরসহ নতুন ফুটওভারব্রিজ নির্মাণ।

আধুনিক নগর ব্যবস্থার জন্য ই-টিকেটিং এর ব্যবস্থা। অ্যাপভিত্তিক সময়সূচি প্রবর্তন ও নারীবান্ধব গণপরিবহন নিশ্চিত করা।

সাইকেলের জন্য যেখানে সম্ভব আলাদা লেন তৈরি ও পার্কি এর ব্যবস্থা করা।

স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য পরিবহন ব্যবস্থা প্রবর্তন।

স্মার্ট বাস স্টপ ও বাস ট্রাক টার্নিমাল তৈরি।

বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষদের জন্য গণ স্থাপনা ও গণপরিবহন নিশ্চিত করা।

প্রতি মহল্লার ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন, জলাবদ্ধতা নিরসন এবং ব্যবস্ততম এলাকাগুলোতে বহুদল ও আন্ডারগ্রাউন্ড পার্কিং কমপ্লেক্স তৈরি।

সুস্থ ও সচল ঢাকার পাশাপাশি আধুনিক ঢাকা গড়ে তুলেতেও বদ্ধ পরিকর আতিকুল ইসলাম। আর এজন্যও তার রয়েছে আলাদা পরিকল্পনা। 

যেমন: সবার ঢাকা অ্যাপ এর মাধ্যমে নাগরিক সমস্যার অভিযোগ গ্রহণ, সার্বক্ষণিক তদারকিসহ নাগরিকদের সুবিধা নিশ্চিত করা। এখানে মেয়রের সেঙ্গ নাগরিকদের সরাসরি যোগাযোগের ব্যবস্থা থাকবে।

বায়দূষণ রোধে ইলেকট্রিক বাস সার্ভিস চালু

ডিজিটাল পদ্ধতিতে অনলাইনে হোল্ডিং ট্যাক্স, জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন, ট্রেড লঅইসেন্সসহ অন্যান্য নাগরিক সুবিধা প্রদান।

ব্যবসায়ীদের ভোগান্তি কমাতে ডিএনসিসির আঞ্চলিক নির্বাহি কর্মকর্তার কার্যালয়ে হেল্প ডেস্ক তৈরি।

ব্যবসায়ীদের কোনো সমস্যা না করেই ডিএনসিসির কা৭চা বাজার ও মার্কেটগুলোর আধুনিকায়ন।

উত্তর ঢাকাকে স্মার্ট সিটি হিসেবে গড়ে তুলতে শুরুতে কয়েকটি এলাকাকে স্মার্ট নেইবারহুড হিসেবে গড়ে তোলা।

ডিজিটাল কমান্ড সেন্টার তৈরি, যার মাধ্যমে শহরের নিরাপত্তা, দুর্যোগ ব্যবস্থানার মতো কাজগুলো পরিচালনা।

তারুণ্যকে অনুপ্রাণিত করতে প্রতিটি এলাকায় সাংস্কৃতিব ও সেবাকেন্দ্র গঠন। যেখানে থাকবে হেল্প ডেস্ক, ট্রেনিং সেন্টার, লাইব্রেরি ইত্যাদি।

নগরের সার্বিক উন্নয়নে নগর পরিকল্পনাবিদ, স্থপতিসহ বিশেষজ্ঞদের নিয়ে সার্বিক উন্নয়নের পরিকল্পনা গ্রহণ।

প্রতিটি এলাকার কমিউনিটি সেন্টারগুলোর আধুনিকায়ন ও এগুলোর বহুমখি ব্যবহার। যেমন ইয়োগা, আত্মরক্ষার বা গানের ক্লাস নিশ্চিত করা।

সকল লেক খাল সংষ্কার, উন্নয়ন ও সৌন্দর্যবর্ধনের মাধ্যমে জলাবদ্ধতা নিরসন, মশা নিয়ন্ত্রণ,পাবলিক স্পেস বাড়ানো, টেকসই পরিবেশবান্ধব উন্নয়ন নিশ্চিত করা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে জনতার মুখোমুখি মেয়র শীর্ষক নিয়মিত মতবিনিময় এর মাধ্যমে ওয়ার্ডভিত্তিক সমস্যার সমাধান।

তাবিথ আউয়ালের পূর্ণাঙ্গ ইশতেহার: 

এদিকে, পরদিন সোমবার (২৭ জানুয়ারি) ইশতেহার ঘোষণা করেন একই সিটিতে বিএনপির প্রার্থী তাবিথ আউয়াল। রাজধানীর গুলশানে ইমানুয়্যেলস ব্যাংকুয়েট হলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তাবিথ তার ১৯ দফার ইশতেহার তুলে ধরেন সবার সামনে। 

পরিবেশ দূষণ, মশা নিয়ন্ত্রণ, যানজট ও গণপরিবহন ব্যবস্থাপনা, জননিরাপত্তা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, নারী ও শিশুবান্ধব নগরী গড়ে তোলাসহ তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর একটি ঢাকা গড়ে তোলার অঙ্গীকার করেন তিনি। 

১৯ দফা ইশতেহারের বিস্তারিত তুলে ধরা হলো:

দূষণ: নগরীর দূষণ রোধে রাসায়নিক কারখানা স্থানান্তর, যথাযথ সবুজায়ন, ভার্টিক্যাল গার্ডেন প্রকল্প চালু, শব্দ দূষণ রোধে আইনের প্রয়োগ, হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ, পরিবেশবান্ধব দালালের সার্টিফিকেট ও নগর কৃষি ব্যবস্থা চালু করা হবে।

মশক নিয়ন্ত্রণ: বছরব্যাপী কার্যক্রম, লার্ভা ও মশা নিয়ন্ত্রণে উপযুক্ত কীটনাশক প্রয়োগ, মশা প্রতিরোধক গাছ লাগানো, মশার প্রবলতা নিয়মিত পরীক্ষা, সচেতনতা বৃদ্ধিতে সাপ্তাহিক কার্যক্রম ও জলাশয় পরিষ্কার করা হবে।

পরিচ্ছন্ন ঢাকা: সর্বত্র সার্বক্ষণিক পরিছন্নতা, সেপারেশন ও সাটিং পদ্ধতি, ই-বর্জ্য ও মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, ডোর টু ডোর ওয়েস্ট কালেকশন, কমপ্যাকটারসহ কাভার্ড ট্রাক, ২টা থেকে ভোর ৫টার মধ্যে আবর্জনা অপসারণ, রিসাইক্লিং সেন্টার স্থাপন এবং আধুনিক স্লাটার হাউস নির্মাণ করা হবে।

যানজট ব্যবস্থাপনা: এর মধ্যে রয়েছে আন্ডারগ্রাউন্ড টানেল রোড নির্মাণ, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, ইউ লুপ, আন্ডারপাস নির্মাণ, রাস্তা যান চলাচলের উপযোগী করা, সড়কে যানবাহনের বর্তমান গতিবিধি, আন্ডারপাস ও ওভারপাস নির্মাণ, পূর্ব-পশ্চিমমুখী সড়ক নির্মাণ, ট্রাফিক বাতিগুলো সচল করা, কার্যকর গণপরিবহন ব্যবস্থা এবং ভাঙাচোরা সড়ক মেরামত।

গণপরিবহন: এর মধ্যে রয়েছে রুটগুলোকে ঢেলে সাজানো, ইলেকট্রনিক ও হাইড্রোজেন চালিত বাস চালু, ক্যামেরা ও জিপিএস ট্র্যাকার স্থাপন, সমন্বিত পরিবহন ব্যবস্থা, যাত্রী ওঠানামার জন্য বাস বে নির্মাণ, রাত্রিকালীন নিরাপদ বাস সার্ভিস, বাস রুটগুলোর ফ্রাঞ্চাইজি মডেল।

সড়ক নিরাপত্তা: ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ, স্কাইওয়াকের প্রবর্তন, গাড়িচালকদের প্রশিক্ষণ, যথাযথ স্থানে আন্ডারপাস নির্মাণ এবং ফুটপাত নির্মাণ ও সংস্কার করা হবে।

অবকাঠামো: পার্কিং ব্যবস্থার উন্নয়ন, প্রস্তাবিত রিংরোড তৈরি, কমল ইউটিলিটি পাইপস ও টানেল নির্মাণ এবং রাস্তা নির্দেশক ওভার-হেড ডিজিটাল বোর্ড।

স্বাস্থ্য সেবা: মাদকাসক্তি নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্র স্থাপন, ফ্যামিলির কাউন্সেলিং সেবা, মোবাইল মেডিকেল ইউনিট, রিমোট এবং ভার্চুয়াল মেডিকেল সেবা।

নারী ও শিশু প্রতিবন্ধী বান্ধব ঢাকা: নারীদের জন্য পৃথক বাস সার্ভিস, আধুনিক ডে কেয়ার সেন্টার, নারীদের মাতৃত্বকালীন ও পাঁচ বছর পর্যন্ত সব শিশুর বিনা খরচে চিকিৎসা, প্রতিবন্ধীবান্ধব আইন প্রয়োগ, বিশেষ নারী সেল গঠন, বিশেষ ওয়ান স্টপ বাস সার্ভিস চালু এবং রাত্রিকালীন আশ্রয় কেন্দ্র স্থাপন।

অগ্নি নিরাপত্তা ও দূষণ ব্যবস্থাপনা: অত্যাধুনিক ও দক্ষ জরুরি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ইউনিট, নারী ও শিশুদের জন্য মানসিক পরিচর্যা কেন্দ্র স্থাপন।

নিরাপদ পানি: পার্ক রেলস্টেশন ও বাস স্টপে ডিসপেন্সার স্থাপন, এলাকাভিত্তিক পানির বিশুদ্ধতা পরীক্ষা করা হবে এবং ওয়াসার সঙ্গে সমন্বয় করে পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থাপনা।

নিরাপদ খাদ্য: ভেজাল মুক্ত খাবারের ব্যবস্থা করতে কৃষক মার্কেট ও নাইট মার্কেট এবং প্রতিটি বাজারে ভেজাল খাবার পরীক্ষা কেন্দ্র স্থাপন।

পাবলিক টয়লেট: নারী, পুরুষ ও প্রতিবন্ধীদের জন্য পৃথক ব্যবস্থা সম্বলিত পাবলিক টয়লেট নির্মাণ।

ক্ষুদ্র ব্যবসা: চাঁদাবাজি বন্ধ ও দ্রুত ওয়ানস্টপ সেবার মাধ্যমে ট্রেড লাইসেন্স প্রদান এবং সুবিধাজনক স্থানে স্থায়ী মার্কেটের ব্যবস্থা।

ইন্টেলিজেন্ট সিটি: ফ্রি অ্যান্ড সেফ ওয়াইফাই, ওভারহেড ডিজিটাল ডিসপ্লে বোর্ড, অ্যাপের মাধ্যমে নাগরিক সেবা, ডাটা এনালিটিকস ডিপার্টমেন্ট, কার্যক্রমগুলোতে কিউআর কোডের ব্যবস্থা, গুণমান পরিচালন ব্যবস্থা (কিউএমএস), সার্ভিস কোয়ালিটি ট্র্যাকিং সিসটেম এবং অনলাইনে ট্যাক্স আদায়ের ব্যবস্থা করা।

অপরাধ দমন: ক্লোজ সার্কিট সিসি ক্যামেরা স্থাপন, ইমারজেন্সি পোর্টাল স্থাপন, ক্রাইম ম্যাপিং চালু এবং এলইডি লাইট স্থাপন।

পার্ক ও বিনোদন: ওয়ার্ড ভিত্তিক বিনোদন কেন্দ্র, উন্মুক্ত স্থানে গড়ে তোলা, লাইব্রেরি ও জাদুঘর সমৃদ্ধকরণ, স্বাস্থ্যসম্মত ফুড কোর্ট, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং শিশু বিনোদন কেন্দ্র আধুনিকায়ন।

আবাসন: হোল্ডিং ট্যাক্স নির্ধারণ ও অনলাইন সার্ভিস চালু, স্বল্প ভাড়ায় আবাসন প্রকল্প, রেন্ট কন্ট্রোলার নিয়োগ, সার্ভিস হোস্টেল প্রকল্প এবং নারী শ্রমিকদের আবাসন ও যাতায়াত ব্যবস্থা।

নগর প্রশাসন: নাগরিক সেবা ওয়ার্ড পর্যায়ের বিকেন্দ্রীকরণ, ঢাকা ট্রান্সপোর্ট কো-অর্ডিনেশন অথরিটিকে মেট্রোপলিটন ট্রান্সপোর্ট অথরিটিতে রূপান্তর, কর্মীদের পে রোল ও কর্মকর্তাদের ক্যারিয়ার সার্ভিসের আওতায় আনা হবে, নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি এবং নগর সরকার ধারণার বাস্তবায়ন।

ইশরাক হোসেনের পূর্ণাঙ্গ ইশতেহার:

এরপর ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রধান দুই প্রার্থীর মধ্যে বিএনপির প্রার্থী প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন ইশতেহার ঘোষণা করেন মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি)। জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক অনুষ্ঠানে ঘোষিত ইশতেহারে ঢাকাকে দুর্নীতিমুক্ত ও বিশ্বমানের মহানগর হিসেবে গড়ে তোলার অঙ্গীকার করেন তিনি। 

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনকে নান্দনিকভাবে সাজাতে ইশরাক হোসেন তার ইশতেহারে প্রায় ১৫ দফা প্রতিশ্রুতি তুলে ধরেন। সেগুলো হলো—

নাগরিক সেবা: ঐতিহ্য এবং আধুনিকতার সম্মিলনে সবার জন্য বাসযোগ্য একটি বিশ্বমানের মহানগর হিসেবে ঢাকাকে গড়ে তোলার অঙ্গীকার করেন ইশরাক হোসেন। তিনি বলেন, `গণশুনানির মাধ্যমে নগরবাসীর সাথে আলোচনা সাপেক্ষে তাদের মতামতের ভিত্তিতে সিটি করপোরেশন হোল্ডিং ট্যাক্স নির্ধারণ করা হবে। হোল্ডিং ট্যাক্স সেক্টরকে সকল প্রকার দুর্নীতিমুক্ত করা হবে।‘

ইশরাক বলেন, ‘নাগরিকদের নিকট থেকে আদায় করা ট্যাক্সের টাকা কোন কোন খাতে ব্যয় করা হবে, তা বছরে কমপক্ষে দুইবার করদাতাদের সামনে উপস্থাপন করা হবে। নগরের আয়-ব্যয়ের হিসাবরক্ষণে স্বচ্ছতা প্রণয়ন করা হবে। মেয়র নির্বাচিত হলে  আমার সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ সার্বক্ষণিক উন্মুক্ত থাকবে।’

এ ছাড়া যাত্রাবাড়ি-ড্যামরা এলাকায় ‘ডিএনডি’ বাঁধের কারণে সৃষ্ট জলাবদ্ধতা দূর, নগরবাসীকে সস্তাদামে ভেজাল ও বিষমুক্ত খাবার, আধুনিক শিশু দিবাযত্নকেন্দ্র, অধিক সংখ্যক কমিউনিটি সেন্টার তৈরি, কবরস্থান ও শ্মশান ঘাটের উন্নয়ন, দৃষ্টিনন্দন ও আধুনিক সড়ক বাতি, সর্বোপরি প্রতিটি নাগরিকসেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার অঙ্গীকার করেন ইশরাক হোসেন।

যানজট নিরসন: ঢাকা শহরের যানজট দূর করার জন্য বেশ কয়েকটি উদ্যোগের প্রতিশ্রুতি রয়েছে ইশরাক হোসেনের ইশতেহারে। তিনি বলেন, ‘ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও ওয়ার্ডের অলিগলির উন্নয়ন নিশ্চিত করা হবে। রাস্তা পারাপারে প্রয়োজনীয়য় স্থানে অধিক সংখ্যক আধুনিক ও দৃষ্টিনন্দন ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করা হবে। ব্রিজে পর্যায়ক্রমে এলিভেটর/এস্কেলেটর স্থাপন ও সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা জোরদার করা হবে। নগরীতে ওয়ান স্টপ বাস সার্ভিস চালু করা হবে। যাত্রী বিশ্রামাগার এবং পরিচ্ছন্ন বাস টার্মিনাল উপহার দেওয়া হবে।

নাগরিক বিনোদন: নাগরিক বিনোদন নিশ্চিত করে বুড়িগঙ্গা দূষণমুক্ত করা, নদীর তীর রক্ষা ও ওয়াকওয়ে নির্মাণ, সৌন্দর্য বর্ধন প্রকল্প গ্রহণ এবং নদীভিত্তিক বিনোদন কেন্দ্র, ওয়াটার ট্যুরিজম গড়ে তোলার  অঙ্গীকার করেন ইশরাক হোসেন। 

তিনি বলেন, ‘শিশু পার্কসহ বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রের উন্নয়ন, আধুনিকায়ন ও দুর্নীতিমুক্ত দক্ষ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা হবে। পুরান ঢাকার ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলোর ঐতিহ্য স্থাপত্যশৈলি অক্ষুন্ন রেখে সংস্কার ও আধুনিক পর্যটন সুবিধা নিশ্চিত করা হবে।

সিটি করপোরেশনের অধীনে থাকা উন্মুক্ত উদ্যানগুলোর পরিছন্নতা নিশ্চিত করা এবং যে সকল উন্মুক্ত উদ্যান, নদী  ও খাল বেদখলে আছে সেগুলো দখলমুক্ত করা হবে। ঢাকার ঐতিহ্যের সাথে মিল রেখে সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে বিভিন্ন নাগরিক উৎসব- যেমন ঘোড়ার গাড়ির উৎসব, সাকরাইন (ঘুড়ি উৎসব), পিঠা উৎসব, নৌকা বাইচ ইত্যাদি আয়োজন করা হবে এবং বেসরকারি পর্যায়ে এসব উৎসব আয়োজনকে উৎসাহিত করা হবে।

স্বাস্থ্যসেবা: পার্ক ও ব্যায়ামাগারে অত্যাধুনিক ‘প্রাইমারি হেলথ চেকআপ সেন্টার’ স্থাপনের অঙ্গীকার করে ইশরাক হোসেন বলেন, ‘প্রাত ও সান্ধ্যকালীন ওয়াকারদের সুবিধার্থে পার্ক ও উন্মুক্ত স্থানে অধিকতর পরিকল্পিত, আধুনিক ও পরিছন্ন ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হবে। বিষ ও ফরমালিনমুক্ত খাদ্য সামগ্রী নিশ্চিত করতে প্রতিটি বাজারে পরীক্ষাকেন্দ্র স্থাপন করা হবে। সিটি হেলথ ডাটাবেজ গঠন ও সেবার মান নিশ্চিত করা হবে। নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো যুগোপযোগী ও আধুনিকায়ন করা হবে।

ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়াসহ মশার সংক্রমণ থেকে নগরবাসীকে বাঁচাতে নিয়মিত মশক নিধনে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ‘দেশব্যাপী মশক নিধন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে। যুবসমাজকে বাঁচাতে ধর্মীয় মূল্যবোধের চর্চা, নৈতিকতা ও মূল্যবোধের অবক্ষয় প্রতিরোধে ইতিবাচক সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলাসহ কার্যকর মাদক নির্মূল কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে। কোনো পক্ষকে ক্ষতিগ্রস্ত না করে জনবহুল এলাকার রাসায়নিক কারখানাগুলো নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হবে।’

নগর পরিকল্পনা ও প্রশাসন: নগরীর সমস্যার গুরুত্ব অনুসারে স্বল্প, মধ্যম এবং দীর্ঘমেয়াদী কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ  করে তা বাস্তবায়ন করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন ইশরাক হোসেন। তিনি বলেন, ‘পরিকল্পিত নগর গড়ে তুলতে বিশ্বের বিশিষ্ট নগর পরিকল্পনাবিদসহ দেশে বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশি নগর পরিকল্পনাবিদদের পরামর্শ গ্রহণ করা হবে। নগরের সমস্যা চিহ্নিত করতে এবং কার্যকর সমাধানে পরিকল্পনাবিদদের কাজের পরিধি বৃদ্ধি এবং অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হবে। বিশেষজ্ঞ অর্থনীতিবিদদের মতামতের ভিত্তিতে ওয়ার্ডভিত্তিক বাজেট প্রণয়ন করা হবে। যাতে এই বিকেন্দ্রীকরণের সুফল দ্রুত তৃণমূল পর্যায়ে পৌঁছানো যায়।’

নগর ব্যবস্থাপনায় সুশাসন নিশ্চিত করে সেবার মান উন্নয়নেরও অঙ্গীকার করেন ইশরাক হোসেন। তিনি বলেন, ‘মন্বিত ও কার্যকর ‘নগর সরকার’ ধারণার বাস্তবায়নে সক্রিয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। নাগরিক সুবিধা বৃদ্ধির জন্য অঞ্চলভিত্তিক  ‘অ্যাকশন এরিয়া প্ল্যান’ গ্রহণ করে রাজউকের মাস্টার প্ল্যানের সাথে সমন্বয় করা হবে।’

প্রথম ১০০ দিনের কর্মসূচি: নির্বাচিত হলে স্বল্প মেয়াদে প্রথম ১০০ দিনের অগ্রাধিকার কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে বলে জানান ইশরাক হোসেন। তিনি বলেন, ‘জরুরি জনগুরুত্বপূর্ণ অগ্রাধিকার বিষয়গুলো চিহ্নিত করে সমন্বিত কার্যক্রমের মাধ্যমে ত্বরিৎ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা হবে।’

দুর্নীতিমুক্ত ঢাকা সিটি কর্পোরেশন: ইশরাক বলেন, ‘দুর্নীতি সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করে আমাদের নৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করছে। আমি প্রতিজ্ঞা করছি আপনাদের সকলের আন্তরিক সহযোগিতায় আমরা ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সর্বস্তরে দুর্নীতিমুক্ত সেবা প্রদান নিশ্চিত করব। যাবতীয় সেবাপ্রাপ্তির জন্য এবং সকল অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ কর্তৃপক্ষকে সরাসরি অবহিত করার সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে মহানগর ও আঞ্চলিক কার্যালয়ে হট-লাইন চালু করা হবে। অভিযোগ পাওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সমস্যার সমাধানে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

শেখ ফজলে নূর তাপসের পূর্ণাঙ্গ ইশতেহার: 

সবশেষে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী চার প্রার্থীর মধ্যে সবার শেষে ইশতেহার ঘোষণা করেন ঢাকা দক্ষিণে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। আজ বুধবার (২৯ জানুয়ারি) বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে নির্বাচনি ইশতেহার ঘোষণা করেন তিনি। ঢাকাকে ঘিরে তিনি তুলে ধরেন পাঁচ রূপরেখা— ঐতিহ্যের ঢাকা, সুন্দর ঢাকা, সচল ঢাকা, সুশাসিত ঢাকা ও উন্নত ঢাকা। 

৫টি রুপরেখা সম্পর্কে যা জানালেন মেয়র প্রার্থী তাপস:

ঐতিহ্যের ঢাকা: চারশ বছরের পুরনো আমাদের এই ঢাকার রয়েছে নিজস্ব ঐতিহ্যের উজ্জ্বল ছবি, ঐতিহ্যের গভীর শেকড় ও প্রত্নতাত্ত্বিক গুরুত্ব। পর্যটনের জন্য ঢাকা হতে পারে অপার সম্ভাবনার ক্ষেত্র। এখানে ঐতিহ্যবাহী খাবারের স্বাদ অনন্য। সাংস্কৃতিক ধারায় রয়েছে ঈদুল ফিতর, ঈদুল আজহা, পহেলা বৈশাখ, ঘুড়ি উৎসব, চৈত্র-সংক্রান্তিসহ অজস্র উৎসব। ‘আমি নির্বাচিত হলে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার এলাকাকে ‘ঐতিহ্য প্রাঙ্গণ’ হিসেবে গড়ে তুলবো। 

সবাইকে নিয়ে সমন্বিত প্রয়াসে জাদুঘর ও আর্ট গ্যালারি নির্মাণ ও প্রদর্শনীসহ নগরীর ঐতিহাসিক স্থাপনা সংরক্ষণে মহাপরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পুরান ঢাকার ঐতিহ্য পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণ করে ঢাকাকে তার স্বীয় গৌরবে সাজিয়ে তুলে ধরবো বিশ্ব দরবারে।’

সুন্দর ঢাকা: বুড়িগঙ্গা ও শীতলক্ষ্যা—দুই নদীর অববাহিকায় পত্তন হওয়া আমাদের এই ঢাকা। এমন শহর পৃথিবীতে বিরল! ‘সুন্দর ঢাকা’ গড়ে তুলতে প্রয়োজনীয় উদ্যান নির্মাণ, সবুজায়ন, ছাদবাগানে উৎসাহ, পরিবেশবান্ধব স্থাপনা বৃদ্ধি, বায়ু ও শব্দ দূষণরোধসহ শরীর ও চিত্তবিনোদনের জন্য প্রতিটি ওয়ার্ডে খেলার মাঠ, শরীর চর্চা কেন্দ্র এবং নারী-শিশু ও প্রবীণদের জন্য হাঁটার উন্মুক্ত স্থান, আধুনিক মানের কমিউনিটি সেন্টারের ব্যবস্থা। সর্বসাধারণের সুবিধার্থে সাধারণ ও ভ্রাম্যমাণ পাঠাগারের ব্যবস্থা, দুস্থ-অসহায়দের কল্যাণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া।

বস্তি উন্নয়নকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী অন্তর্ভুক্ত করা হবে। পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের নিবাসগুলোর নির্মাণ কাজ দ্রুত সম্পন্ন করা, তাদের জন্য নতুন নিবাস নির্মাণ ও তাদের নাগরিক সুবিধা প্রাপ্তির ব্যবস্থা করা হবে। খালগুলোর অবৈধ দখল উচ্ছেদ-খনন ও সৌন্দর্যবর্ধন। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন, প্রয়োজনীয় নর্দমা নির্মাণ, রক্ষণাবেক্ষণ ও জলাধার সংরক্ষণ এবং জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া। 

সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দৈনন্দিন ভিত্তিতে সড়কের ওপর থেকে আবর্জনার স্তূপ অপসারণ করা হবে। সড়ক থাকবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার এলাকাটিকে সবুজায়ন, শিশুপার্ক থিয়েটার হলসহ পরিকল্পিত সৌন্দর্যবর্ধন করা হবে। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় বুড়িগঙ্গা ও শীতলক্ষ্যার পাড় ঘিরে বনায়ন, বিনোদন কেন্দ্র স্থাপনসহ ব্যাপক সৌন্দর্য বর্ধনের মাধ্যমে সুন্দর ঢাকা গড়ে তোলা হবে।

সচল চাকা: যানজটের কারণে রাস্তায় চলাচল হয়ে উঠেছে দুর্বিষহ। সকালে বাসা থেকে বেরিয়ে গন্তব্যে পৌঁছানো ও ফিরে আসতে নিরন্তর সংগ্রাম করতে হয়। বিশেষ করে কর্মজীবী নারীদের বিড়ম্বনা অপরিসীম। গণপরিবহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কিছু রাস্তায় দ্রুতগতির যানবাহন, কিছু রাস্তায় ধীরগতির যানবাহন, আবার কিছু রাস্তায় শুধু মানুষের হাঁটার ব্যবস্থা করবো। নদীর পাড় থাকবে প্রশস্ত, সেখানে হেঁটে চলা যাবে, চালানো যাবে সাইকেল, চলবে রিকশা। 

এছাড়া, দ্রুতগামী যানবাহনের জন্য থাকবে আলাদা পথ, থাকবে নিরাপদ সড়ক ব্যবস্থা। রাস্তা পারাপারের সুব্যবস্থাসহ নগর ঘুরে দেখার ব্যবস্থা থাকবে। থাকবে প্রয়োজনীয় সড়ক বাতি। আর এভাবেই গড়ে তোলা হবে সচল ঢাকা।

সুশাসিত চাকা: ঢাকায় একসময় পঞ্চায়েত ব্যবস্থা ছিল। মাদক, কিশোর অপরাধসহ নৈতিক ও সামাজিক অবক্ষয়জনিত বিভিন্ন অপরাধ রোধের ব্যবস্থা ছিল। মাদক নির্মূল, জুয়া, কিশোর অপরাধসহ নৈতিক ও সামাজিক অবক্ষয়জনিত বিভিন্ন অপরাধ রোধসহ এলাকাভিত্তিক সুশাসন প্রতিষ্ঠায় পঞ্চায়েত ব্যবস্থা কার্যকর ও সংশোধনকেন্দ্র নির্মাণ করা হবে।

ঢাকা দক্ষিণ হবে বাংলাদেশে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রথম দুর্নীতিমুক্ত সংস্থা। বছরের ৩৬৫ দিন, সপ্তাহের ৭ দিন, ২৪ ঘণ্টা নাগরিক সেবা দেওয়ার জন্য খোলা থাকবে। ব্যবসায়িক লাইসেন্স ৫ কর্মদিবসের মধ্যে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। গৃহকর (হোল্ডিং ট্যাক্স) বাড়ানো হবে না।

মশকের প্রজনন ক্ষেত্র ধ্বংস, মশক নিধনে দৈনন্দিন ভিত্তিতে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ, হাসপাতাল-ডিসপেনসারি ও প্রতিটি ওয়ার্ডে প্রাথমিক চিকিৎসা কেন্দ্র স্থাপনসহ মাতৃসদন, পরিবার পরিকল্পনা ও জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে কর্মসূচি নেওয়া হবে। শিক্ষার মানোন্নয়ন ও দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার জন্য সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় কারিগরি-ভোকেশনাল প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এবং উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হবে। 

হতদরিদ্র মানুষের সন্তান-সন্ততির শিক্ষায় বিশেষ ব্যবস্থা থাকবে। অটিস্টিক ও প্রতিবন্ধী শিশু-কিশোরদের শিক্ষা, বিনোদন ও চিকিৎসা সেবায় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। ডে-কেয়ার সেন্টার স্থাপন করা হবে। অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থাকে আরও কার্যকর করতে ফায়ার হাইড্রেন্ট নির্মাণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ও পাড়া-মহল্লায় অগ্নিনির্বাপণ গাড়ি প্রবেশের কার্যকর পদক্ষেপসহ প্রয়োজনে নিজস্ব দমকল বাহিনী গঠন করা হবে।

প্রতিবছর পহেলা বৈশাখের আগেই ঢাকার উন্নয়ন ও সেবার সঙ্গে জড়িত সংস্থার কাছে তাদের বাৎসরিক কাজের চাহিদাপত্র দেওয়ার আহ্বান করা হবে। করপোরেশন কোনও রাস্তা নির্মাণের পর অন্তত ৩ বছরের মধ্যে অন্য কোনও সংস্থা ওই রাস্তা খনন করতে পারবে না। আইন, বিধি ও নীতিমালা কঠোর প্রয়োগের মাধ্যমে ঢাকার উন্নয়ন ও সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে সিটি করপোরেশনের কাছে সমন্বিতভাবে দায়বদ্ধ করা হবে। সপ্তাহে এক দিন নগরবাসীর সঙ্গে তাদের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে আলোচনা করা হবে।

ওয়ান স্টপ সার্ভিস ডেস্ক স্থাপন করা হবে। ‘দায়িত্ব গ্রহণের ৯০ দিনের মধ্যেই মৌলিক সব নাগরিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করবো ইনশাআল্লাহ।’

উন্নত ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত সুখী-সমৃদ্ধ উন্নত বাংলাদেশ-এর ‘রূপকল্প ২০৪১’ বাস্তবায়নে উন্নত রাজধানী তথা উন্নত ঢাকা গড়ে তোলার কোনও বিকল্প নাই। অনেক সময় হয়তো পেরিয়ে গেছে, কিন্তু সময় এখনও শেষ হয়ে যায়নি। পাঁচ বছর মেয়াদি বিভিন্ন প্রকল্পসহ দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে ৩০ বছর মেয়াদি মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের মাধ্যমে নগরীর উন্নতি সাধন, ইমারত নির্মাণ, ভূমি ব্যবস্থাপনা, ভূমি অধিগ্রহণ, নগর পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা হবে।

নতুন ১৮টি ওয়ার্ডের জনগণের আধুনিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতে নতুন প্রকল্প নেওয়াসহ প্রত্যেকটি সড়ক ও নর্দমার উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের মান নিরূপণ করে অন্তত ১০ বছরের স্থায়িত্ব নিশ্চিত করা হবে। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপ বিবেচনায় নিয়ে জমির যুক্তিসঙ্গত ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে। জলবায়ু সংক্রান্ত উদ্বাস্তুদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। ছাত্র ও কর্মজীবী নারীদের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক হোস্টেল গড়ে তোলা হবে। জনগণকে প্রদেয় করপোরেশনের সব সেবা যেমন, বাণিজ্য লাইসেন্স, জন্ম নিবন্ধন সনদ, প্রত্যয়নপত্র, গৃহ কর, পৌর কর, অন্যান্য কর তথ্য প্রযুক্তিগত সেবার আওতায় আনা হবে। সব ক্ষেত্রে অনলাইন সুবিধা সম্প্রসারণ করা হবে। 

নগরবাসী ঘরে বসেই কর এবং নির্ধারিত ক্ষেত্রে ফি পরিশোধ সংক্রান্ত সেবা নিতে পারবেন। করপোরেশন পরিচালনায় তথ্য প্রযুক্তিগত ব্যবস্থাপনার প্রচলন করা এবং প্রতিটি ওয়ার্ডের আওতাভুক্ত করা হবে। ২৪ ঘণ্টা হেল্পলাইন এবং নাগরিক সেবা ও সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় তথ্য সমৃদ্ধ নগর অ্যাপ চালু করা হবে। সিটি করপোরেশনের ব্যবস্থাপনায় ই-লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করা হবে। নগর ভবনে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ রেখে বিভিন্ন স্থানে সিসি ক্যামেরা ও ফ্রি ওয়াইফাই জোন স্থাপন করা হবে। সর্বোপরি সিটি করপোরেশনের কার্যপরিধির আওতায় সততা, নিষ্ঠা, দক্ষতা ও দায়িত্বশীলতার সঙ্গে সমন্বিত প্রয়াসে উন্নত ঢাকা গড়ে তোলা হবে।

সোনালীনিউজ/এমএএইচ

Wordbridge School
Link copied!