• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
যেনতেনভাবে ক্ষমতায় আসতে চাই না : শেখ হাসিনা

আ.লীগকে সমর্থন ব্যবসায়ীদের


নিজস্ব প্রতিবেদক ডিসেম্বর ২০, ২০১৮, ০১:৩৮ পিএম
আ.লীগকে সমর্থন ব্যবসায়ীদের

ঢাকা : আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমার এমন কোনো আকাঙ্ক্ষা নেই যে, যেনতেনভাবে ক্ষমতায় আসতে হবে। আমরা চাই জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করুক।

জনগণের ভোটে যদি নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় আসতে পারি, আলহামদুলিল্লাহ। যদি না পারি কোনো অসুবিধা নেই। কিন্তু দেশে শান্তি বজায় থাকুক। নির্বাচনে যেন শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় থাকে সেজন্য সবার সাহায্য চাই।

বুধবার (১৯ ডিসেম্বর) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ীদের সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। একই অনুষ্ঠানে ব্যবসায়ী নেতারা বলেন, তারা আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে আবারো ক্ষমতায় দেখতে চান। দেশের অর্থনীতি, বাণিজ্য, উন্নয়ন ও বিনিয়োগ পরিবেশ অব্যাহত রাখতে বর্তমান সরকারের পক্ষে তারা ভোট চান।

তারা মনে করছেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ আরো এগিয়ে যাবে। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে বিশ্বে স্বীকৃতি পাবে। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ে সম্মেলনের আয়োজন করে।

এতে প্রধান অতিথি ছিলেন শেখ হাসিনা। সংগঠনের সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিনের সভাপতিত্বে এতে দেশের ক্ষুদ্র, মাঝারি ও বৃহৎ খাতের ৩ হাজার ব্যবসায়ী অংশ নেন। যোগ দিয়েছিলেন দেশের সব চেম্বার ও সাড়ে তিনশ ব্যবসায়ী অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা।

শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানে বলেন, আমি অনেক কিছু সহ্য করেও সবার সঙ্গে বসে কথা বলেছি। প্রত্যেকটা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আলোচনা করেছি। সবাইকে বলেছি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে। এখন শান্তিপূর্ণ পরিবেশ আছে। অনেক দল নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ব্যবসা-বান্ধব পরিবেশ তৈরি করাই আওয়ামী লীগ সরকারের লক্ষ্য। দুর্নীতি করে নিজের জীবনমান উন্নয়ন করা নয়। আমি ব্যবসা বুঝি না এবং ব্যবসা করিও না কিন্তু আপনাদের জন্য ব্যবসার পরিবেশ সৃষ্টি করতে পেরেছি। আমরা বেসরকারি খাতকে উন্মুক্ত করে দিয়েছি। শেখ হাসিনা আরো বলেন, নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আমাকে আরেকবার আপনাদের সেবা করার সুযোগ দিন, যেন আমরা উন্নয়নের কাজগুলো শেষ করে যেতে পারি। যদিও এর কোনো শেষ নেই।

তিনি বলেন, আমি কী পেলাম না পেলাম সেটি নিয়ে চিন্তা করি না। আমি চিন্তা করি বাংলাদেশের মানুষের জন্য কী করে গেলাম। কী রেখে গেলাম। কীভাবে মানুষের জীবনমান উন্নত হয় সেদিকে আমার নজর।

আওয়ামী লীগ প্রধান বলেন, গত নির্বাচনে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, ক্ষমতায় যেতে পারলে আমরা ১৬ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করব। আমরা ২০ হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন করছি। বেসরকারি খাতকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সম্পৃক্ত করা হয়েছে।

ব্যবসায়ীদের মধ্যে এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মাহবুবুর রহমান, সালমান এফ রহমান, মীর নাসির হোসেন, একে আজাদ, নারী উদ্যোক্তা রোকেয়া আফজাল রহমান, মেট্রোপলিটন চেম্বারের সভাপতি নিহাদ কবির, ঢাকা চেম্বারের সভাপতি আবুল কাশেম খান, দেশের বিশিষ্ট শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান, বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, সাবেক সভাপতি আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী পারভেজ, পিএইচপি গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান সুফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, ইনসেপটা ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল মুক্তাদির, এসিআই লিমিটেডের চেয়ারম্যান আনিস-উদ-দৌলা, মোবাইল অপারেটর গ্রামীণ ফোনের প্রধান নির্বাহী, মাইক্রোসফট বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সোনিয়া বশির, সিটি গ্রুপের চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান, বেসিসের সভাপতি আলমাস কবির, চামড়াজাত পণ্য সমিতির সভাপতি সাইফুল ইসলাম, বার্জার বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রূপালি চৌধুরী, মোহাম্মদী গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রুবানা হক, বিকেএমইএ’র সভাপতি একেএম নাসিম ওসমান, বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি আতিকুল ইসলাম, এনভয় গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী কুতুব উদ্দিন, সাবেক সভাপতি আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী পারভেজ, আনোয়ার গ্রুপের ডিএমডি মনোয়ার হোসেন, মোমেন গ্রুপের ডিএমডি মাইনুদ্দিন মোমেন, বিএসআরএম গ্রুপের আলী হোসেন আকবর, ওপেক্স গ্রুপের আনিসুর রহমান সিনহা বক্তৃতা করেন।  

ব্যবসায়ীদের পক্ষে সূচনা বক্তব্যে এফবিসিসিআই সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, আজ আমরা আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করতে এখানে এসেছি। আমরা ব্যবসায়ীরা যার দরজা সব সময় খোলা তাকে চাই। রাত এগারোটা হোক, ভোর ৫টা হোক যিনি জেগে থাকেন বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য।

তিনি বলেন, এফবিসিসিআই একটি অরাজনৈতিক সংগঠন। আমরা বেসরকারি খাত। আমাদের কাজ দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করা। ব্যবসার অনুকূল পরিবেশ তৈরি করা, সরকারের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করছি। কিন্তু আমরা এখানে কেন। এটি পরিষ্কার। আমরা চাই সরকারের ধারাবাহিকতা। অব্যাহত বিনিয়োগ পরিবেশ।

মাহবুবুর রহমান বলেন, একটা সময় বাংলাদেশ অভাব অনটনের আখড়া ছিল। কিন্তু এখন আমরা গর্বিত। দেশের কী উন্নয়ন হয়েছে, গত দশ বছরে তা আমরা সবাই দেখেছি। আমি না বললেও সবাই জানেন। সরকারের জ্বালানি নীতি ব্যবসা বাণিজ্যের উন্নয়নে সহায়ক ছিল। এটি স্বীকার করতেই হবে।

রাজনৈতিক অঙ্গনে কী হচ্ছে সেটি পর্যালোচনা হতে পারে। তবে আমি প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই, বিভিন্ন জায়গায় প্রচারণাকালে গণ্ডগোল হচ্ছে। আমি চাইব এটি যাতে আর না হয়। কারণ এটি সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে। সব হিসাব নিকাশ, সরকারের পক্ষে। তাই সরকার খুব সহজে পাল তুলতে পারবে।   

বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান চেয়ারম্যান বিশিষ্ট শিল্পপতি আহমেদ আকবর সোবহান বলেন, আজকে দেশের বড় ব্যবসায়ীরা এক পতাকাতলে সমবেত হয়েছি। যেখানে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালির সন্তান উপস্থিত। বঙ্গবন্ধু সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখেছেন। আর তার সন্তান সোনার বাংলা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন। বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের মডেল। শেখ হাসিনার মানবতার উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, তিনি না চাইলে এত বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আসতে পারত না। তিনি তাদের আশ্রয় দিয়েছেন, অন্ন বস্ত্রের ব্যবস্থা করছেন।

বসুন্ধরা সিটি শপিং মলে অগ্নিকাণ্ডের প্রসঙ্গ টেনে আহমেদ আকবর সোবহান বলেন, দশ বছর আগে এখানে আগুন লাগে। প্রধানমন্ত্রী নিজে তার তদারকি করেছিলেন। সেনা পাঠিয়ে পাহারা দিয়েছেন। তা না হলে সেদিন বসুন্ধরা শেষ হয়ে যেত।

ব্যবসায়ীদের একটি কথা বলব, আমরা যদি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে থাকি, তাহলে শেখ হাসিনাকে আবার ক্ষমতায় আনতে হবে।

আবুল কাশেম খান বলেন, আজকে বাংলাদেশ গড়ছে বাংলাদেশ। এর নেতৃত্ব দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এজন্য তাকে অভিনন্দন। বিদ্যুৎ খাতে অনেক দূর এগিয়ে গেছি। ডিজিটাল বাংলাদেশের পথে এগিয়ে গেছি। আমরা চাই, আপনি আবার আসুন। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে আপনি জিতবেন- সেটিই প্রত্যাশা।

রোকেয়া আফজাল রহমান বলেন, আমার অভিনন্দন আপনার সঙ্গে রইল।

মীর আকতার হোসেন বলেন, আমরা ব্যবসা বাণিজ্যের জন্য সরকারের ধারাবাহিকতা চাই। আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে, আমরা এগিয়ে যাব, নাকি পেছনে ফিরে তাকাব। আমার মনে হয়, পেছনে ফিরে তাকানোর সময় নেই। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আমরা আজ বিশ্বে উদাহরণ। তাই এই সরকারের বিকল্প নেই।

নিহাদ কবির বলেন, বিগত দশ বছরে দেশ এগিয়ে গেছে- এর পেছনে প্রধানমন্ত্রীরই অবদান। ব্যক্তি খাতকে মূল্যায়ন করা হয়েছে। সরকার নিয়ন্ত্রক থেকে ব্যবসায় সহায়কের ভূমিকায় আসছে। সরকার ও ব্যক্তি খাত এক সঙ্গে চলছে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!