• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আ.লীগে নতুন মুখ ৮৫ আসনে!


বিশেষ প্রতিনিধি জুলাই ১৭, ২০১৮, ১১:২৬ এএম
আ.লীগে নতুন মুখ ৮৫ আসনে!

ঢাকা : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যে কোনো মূল্যে বিজয় অব্যাহত রাখতে চায় টানা দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। আর তাই আগামী নির্বাচনে ‘বিতর্কিত’ নেতাদের বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত অনেক আগেই নিয়েছে দলটি। তার পরিবর্তে জনসম্পৃক্ত ও ভাবমূর্তি ভালো এমন নেতাদের সামনে আনতে চায় দলটি। এ জন্য সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে রাজনীতিতে আসা তরুণ রাজনীতিবিদদের।

দলীয় প্রধানের এমন মনোভাবের কথা এরই মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে সবদিকে। তাই আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের টিকেটে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করতে আগ্রহী দুঃসময়ের অনেক ত্যাগী সাবেক ছাত্রনেতা কিংবা যুবনেতারা।

নির্বাচনের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে তাদের প্রচারণা ততই বাড়ছে। মিটিং, মিছিল, সমাবেশসহ দলীয় কর্মস‚চিতে তারা থাকছেন সক্রিয়ভাবে। এভাবে নির্বাচনকেন্দ্রিক আওয়ামী লীগের নতুন মুখের কাফেলা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। দলের বেশ কজন নীতি-নির্ধারকের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

আওয়ামী লীগের শীর্ষ একজন নীতি নির্ধারক জানান, আগামী সংসদ নির্বাচনে অন্তত ৪২ জেলায় ৮৫ আসনে নতুন মুখ দেখা যেতে পারে। যদিও শেষ মুহূর্তে দলীয় প্রার্থিতা অনেকাংশে নির্ভর করে প্রতিপক্ষের প্রার্থী মনোনয়নের উপর। নেতাকর্মীদের কাছে স্বচ্ছ ভাবম‚র্তি ও জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে, এলাকায় সুপরিচিত, মানুষের কল্যাণে কাজ করেন, দক্ষ সংগঠক, সৎ, নিষ্ঠাবান ও শিক্ষিত, এমন ব্যক্তিরাই দলীয় প্রতীক পাবেন।

সাংগঠনিক কাজে সংশ্লিষ্ট না থাকলেও দলীয় আদর্শকে ধারণ করেন এমন ব্যক্তিদের মধ্যে থেকে কাউকে কাউকে মনোনয়ন দেয়ার সম্ভাবনাও আছে। দলের হাইকমান্ড এসব যোগ্যতাসম্পন্ন নেতাদের সারা দেশ থেকে যাচাই বাছাই করছে। এবার প্রায় দুইশ’ আসনে এমন প্রার্থী দেয়া হবে যারা লড়াই করে বিজয় নিশ্চিত করতে পারবেন।

আবার ক্ষেত্রবিশেষে বিএনপির প্রার্থীর প্রভাব, গ্রহণযোগ্যতার বিপরীতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মনোনয়ন নির্ভর করবে। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় এক নেতা শুধু ঢাকার আসনগুলো নিয়ে বলেন,রাজধানী ঢাকার ২০টি আসনের মধ্যে ১৬টিই আওয়ামী লীগের। এর মধ্যে জাতীয় পার্টির একটি, ওয়ার্কাস পার্টির একটি, স্বতন্ত্র একটি ও বিএনএফ’র একটি।

সূত্র মতে, আওয়ামী লীগের ১৬টির মধ্যে চারটিতে নতুন মুখ দেখা যেতে পারে। গাজীপুরে বদল হতে পারে দুটি আসনের প্রার্থী।

নরসিংদীতে বদল হতে পারে দুটিতে। সম্প্রতি দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে দলের সাংগঠনিক সফর শেষ করে আসা কেন্দ্রীয় এক নেতা জানান, মেহেরপুর ও কুষ্টিয়ায় দুটি আসনে পরিবর্তন হতে পারে। চুয়াডাঙ্গায় বদল হচ্ছে একটি আসন। ঝিনাইদহ জেলায় নতুন প্রার্থী আসছেন তিনটি আসনে। যশোরে ৩ টি সংসদীয় আসনে ভয়ংকর ভাবে বিতর্কিত হয়ে পড়েছেন তিন এমপি।

মাগুরায় পরিবর্তন হচ্ছে একটি আসনে। খুলনায় নতুন মুখ আসছেন তিনটি আসনে। নতুনদের গুরুত্ব দেয়া প্রসঙ্গে দলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ বলেন, ‘আওয়ামী লীগের রাজনীতি যেমন দেশ গঠনের তেমনি নেতৃত্ব গঠনেরও। নতুনদের বিষয়ে আওয়ামী লীগ সবসময় উদার। নতুনদের অগ্রাধিকার দেয়া হলে প্রজন্ম রাজনীতির বিকাশ ঘটে। পাশাপাশি সিনিয়রদের গুরুত্বও কম না। কারণ তাদের ঝুলিতে রয়েছে অনেক অভিজ্ঞতা ও অর্জন।’

আসন্ন একাদশ সংসদ নির্বাচনে দলের প্রার্থী তালিকার বেশ বড় একটা অংশ থাকবে তরুণদের দখলে। নতুন মুখগুলোর বেশির ভাগই সাবেক ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ-সমর্থিত বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নেতারাও রয়েছেন মনোনয়ন দৌড়ে।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে এলাকায় মাঠপর্যায়ে তোড়জোড় শুরু করে দিয়েছেন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা।

এলাকায় জনপ্রিয় ও তারুন্য নির্ভর এ তালিকায় সম্ভাব্য চূড়ান্ত পর্যায়ে যারা রয়েছেন তাঁরা হচ্ছেন শরিয়তপুর-২ আসন থেকে দলের সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম, ফরিদপুর -১ আসন থেকে সাবেক ছাত্রনেতা লিয়াকত সিকদার, রাজবাড়ী-২ আসনে ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা শেখ সোহেল রানা টিপু, ঢাকা-১৫ আসনে স্বেচ্ছাসেবকলীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গাজী মেজবাউল হোসেন সাচ্চু ও ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া,মাগুরা-১ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহকারী একান্ত সচিব এডভোকেট সাইফুজ্জামান শিখর, ফেনী-৩ আসন (সোনাগাজী-দাগনভূঞা) অভিনেত্রী রোকেয়া প্রাচী, নেত্রকোনা-৩ আসন থেকে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, পটুয়াখালী-১ আসন থেকে আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আফজাল হোসেন এবং সচিব আবদুল মালেক, কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী (লক্ষ্মীপুর-৪), চাঁদপুর-৩ আসন থেকে ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী,

চট্টগ্রাম-১৫ আসন থেকে উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালি) আসন থেকে আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় সাংঘঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, কক্সবাজার -৩ (সদর রামু) আসন থেকে বর্তমান জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ছাত্রনেতা ইশতিয়াক আহমেদ জয়, নরসিংদী-৫ আসন থেকে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য এবিএম রিয়াজুল কবীর কাওছার, নেত্রকোনা-৫ আসন থেকে আাওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমেদ হোসেন, সিলেট-১ আসন থেকে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহউদ্দিন সিরাজ, মুন্সীগঞ্জ-২ আসনে প্রচারণায় নেমেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, বাগেরহাট -৪ আসন থেকে সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি এইচ. এম. বদিউজ্জামান সোহাগ, চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) আসনে ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটন, আলোচিত অন্যদের মধ্যে রয়েছেন কেন্দ্রীয় সদস্য মারুফা আক্তার পপি (জামালপুর-৫), নুরুল ইসলাম ঠাণ্ডু, হাসান আলী (সিরাজগঞ্জ-১), হাবিবুর রহমান স্বপন, চয়ন ইসলাম (সিরাজগঞ্জ-৫), গাইবান্ধার-৫ সাঘাটা ফুলছড়ি আসন থেকে ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাহমুদ হাসান রিপন।

সূত্রে জানা যায়, প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় দফায় দফায় সাংগঠনিক ও প্রশাসনিক জরিপ পরিচালনা করা শেষ হয়েছে। এসব জরিপ প্রতিবেদনে বর্তমান এমপিদের ভালো ও মন্দ কাজের পর্যালোচনা করেই আগামী নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে পরিচালিত একাধিক জরিপ সংস্থার রিপোর্ট দলের হাইকমান্ডের হাতে রয়েছে। প্রতিটি রিপোর্ট পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পর্যালোচনা করা হচ্ছে।

তবে এলাকায় জনপ্রিয় এমপিরা যাতে কোনো ধরনের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে বাদ না পড়েন সে দিকটিও হাইকমান্ডের বিবেচনায় রয়েছে। পাশাপাশি এলাকার অবস্থা, অন্য মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি, এলাকায় তাদের ইতিবাচক এবং নেতিবাচক দিকগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বিতর্কিত এমপিদের স্থলে এবার নতুন মুখ দেখা যেতে পারে বলে জানা গেছে।

ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বিভিন্ন সভা-সমাবেশে আগামী নির্বাচনে কোন ধরনের প্রার্থী দলের পছন্দ সেটা বারবার বলে আসছেন। কোনো ধরনের বিতর্কিত ভাবমূর্তির জনপ্রতিনিধিকে এবার মনোনয়ন দেয়া হবে না সেটাও প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েছেন।

আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড গত এক বছর ধরে প্রার্থী বাছাই নিয়ে কাজ শুরু করেছেন। সাম্প্রতিক সময়ে গনভবনে অনুষ্ঠিত তৃণমূল আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকটি মত বিনিময় সভায় বিতর্কিত সংসদ সদস্যদের সংশোধন হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা।

 যারা দলীয় প্রধানের নির্দেশের পরও সংশোধন হতে পারবেন না তাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয়া হবে বলে একটি সূত্র নিশ্চিত করেন।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!