• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
লক্ষ্য ২০২০ সাল

আ.লীগে নারী নেতৃত্ব বাড়ছে


বিশেষ প্রতিনিধি ফেব্রুয়ারি ১০, ২০১৯, ০১:৫৯ পিএম
আ.লীগে নারী নেতৃত্ব বাড়ছে

ঢাকা : কেন্দ্র থেকে শুরু করে জেলা, উপজেলা ও তৃণমূল পর্যায়ের কমিটিতে নারীর অংশগ্রহণ আরো বাড়াতে চায় আওয়ামী লীগ। কমিটিগুলোতে নারী নেতৃত্ব প্রায় ৩৩ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যে দীর্ঘদিন ধরে নানা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে আসছে ক্ষমতাসীন দলটি।

আগামী ২০২০ সালের মধ্যে দলের সর্বস্তরের কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী নেতৃত্ব রাখতে দেশের সব রাজনৈতিক দলের প্রতি নির্বাচন কমিশনের (ইসি) বাধ্যবাধকতা আছে। তাই আগামী বছরের মধ্যে এ লক্ষ্যে পৌঁছাতে চায় আওয়ামী লীগ।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের সূত্র জানায়, একাদশ জাতীয় সংসদে দলের জন্য সংরক্ষিত নারী আসনে পুরনো দুজন ছাড়া নতুনদের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। দলে নতুন নারী নেতৃত্ব সৃষ্টি, তৃণমূল থেকে যোগ্যদের কেন্দ্রে আনা, নতুনদের জায়গা করে দেওয়া ও নারীর ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। দশম সংসদে সংরক্ষিত আসনে যারা দলের হয়ে সংসদে ছিলেন, তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনকে যোগ্যতা ও দলের জন্য ত্যাগ বিবেচনায় আগামী জাতীয় সম্মেলনের মধ্য দিয়ে কেন্দ্রীয় কমিটিতে আনা হতে পারে।

একাদশ সংসদে দলের জন্য সংরক্ষিত আসনে যারা সংসদ সদস্য হচ্ছেন, তাদের মধ্যে কেউ কেউ কেন্দ্রীয় কমিটি আর বাকিরা নিজ জেলা ও থানা কমিটিতে পদ পেতে পারেন। নবম বা অন্য সংসদে যারা ছিলেন, তাদের মধ্যেও অনেকের দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে ঠাঁই পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কেন্দ্রীয় কমিটিতে যারা ঠাঁই পাবেন না, তাদের নিজ জেলা ও উপজেলা কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়া হতে পারে।

দলীয় সূত্রমতে, চলতি বছরই শেষ হচ্ছে আওয়ামী লীগের বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটির মেয়াদ। আগামী ২৩ অক্টোবর দলটির তিন বছর মেয়াদি কমিটির মেয়াদ শেষ হবে। তখনই জাতীয় সম্মেলনের আয়োজন করার কথা এখনই ভাবছে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। সরকারের পাশাপাশি দলীয় কার্যক্রম আরো গতিশীল করা ও দলে নারীদের প্রতিনিধিত্ব বাড়াতে এ পরিকল্পনা আগেভাগেই শুরু হয়েছে। জাতীয় সম্মেলনের সময় দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা দলের শীর্ষ পদে ব্যাপক পরিবর্তন আনতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে।

তথ্যমতে, ২০২০ সালের মধ্যে সব পর্যায়ের কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা হবে- এ প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২০০৮ সালে ইসিতে নিবন্ধিত হয় রাজনৈতিক দলগুলো। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) ৯০-এর খ-এর খ (২) অনুচ্ছেদে যেকোনো রাজনৈতিক দলের কেন্দ্রীয় কমিটিসহ সব পর্যায়ের কমিটিতে অন্তত ৩৩ শতাংশ পদ নারী সদস্যদের জন্য সংরক্ষণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ আর সেই লক্ষ্য ২০২০ সালের মধ্যে অর্জনের কথা উল্লেখ আছে।

লক্ষ্যে পৌঁছাতে আর মাত্র এক বছর বাকি থাকলেও দেশের কোনো দলই এখন পর্যন্ত ৩৩ শতাংশ সংখ্যার কাছাকাছি যেতে পারেনি। তবে এখন পর্যন্ত প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আওয়ামী লীগের কমিটিতে নারী প্রতিনিধিত্ব সবচেয়ে বেশি। ভোটের মাঠের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির তুলনায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয়সহ অন্য কমিটিগুলো নারীদের উপস্থিতিতে কয়েকগুণ এগিয়ে আছে। ২০০৮ সালের পর আওয়ামী লীগে নারী নেতৃত্ব প্রায় ৮ শতাংশ বাড়লেও বিএনপিতে বেড়েছে মাত্র ১ শতাংশ। এক্ষেত্রে আরো এগিয়ে থাকতে চায় আওয়ামী লীগ।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় থেকে তৃণমূলের সব কমিটিতে নারীর প্রতিনিধিত্ব বাড়লেও গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে বেঁধে দেওয়া লক্ষ্য পূরণের পথে এখনো অনেকটা পিছিয়ে আছে দলটি।

ইসিকে ২০১৭ সালে আওয়ামী লীগ জানায়, দলটির কেন্দ্রীয় থেকে তৃণমূলের সব কমিটিতে বর্তমানে ১৫ শতাংশ নারীর প্রতিনিধিত্ব রয়েছে। দলের নীতিনির্ধারণী সর্বোচ্চ পর্ষদ কার্যনির্বাহী সংসদে এ হার প্রায় ১৯ শতাংশ। তৃণমূলের অনেক কমিটিতে নারীর প্রতিনিধিত্বই নেই। কোনো কোনো জেলা কমিটিতেও নারীর উপস্থিতি তেমন নেই বললেই চলে। সেসব জেলা কমিটিতে নারী নেতৃত্ব বাড়াতে আরপিও’র বাস্তবায়ন হচ্ছে অত্যন্ত ধীরগতিতে। অভিযোগ আছে, যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও অনেক সময় তৃণমূলের কমিটিতে নারীদের নেওয়া হয় না পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা থেকে।

তবে নির্ধারিত ২০২০ সালের মধ্যে সব স্তরের কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্বের লক্ষ্য পূরণে আওয়ামী লীগ সক্ষম হবে বলে আশা প্রকাশ করেছে দলটি। ইসিকে দলটি জানায়, ২০২০ সালের মধ্যে ৩৩ শতাংশ নারী অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে।

আওয়ামী লীগ মনে করে, নারীর ক্ষমতায়নে দলের সভাপতি ও বঙ্গবন্ধু তনয়া শেখ হাসিনার সরকার বরাবরই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই প্রথম নারীনীতি প্রণয়ন করেন। বাবার নামের পাশাপাশি মায়ের নাম লেখার আইন কার্যকর করে তার সরকার। সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনের সর্বক্ষেত্রে নারীর অংশ নেওয়া নিশ্চিত করার বহুমুখী পদক্ষেপও নেয় তার সরকার।

২০০৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত একটানা প্রায় ১০ বছর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশে নারীর অবস্থান মৌলিকভাবে পরিবর্তিত হয়েছে। শেখ হাসিনা নারীর ক্ষমতায়নে অসামান্য অবদানের জন্য ‘গ্লোবাল উইমেনস লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছেন।

অন্যদিকে একাদশ সংসদে নির্বাচনে অংশ নেওয়া ও সরাসরি জিতে আসা নারী সংসদ সদস্য সংখ্যা অতীতের যেকোনো নির্বাচনের চেয়ে বেশি হয়েছে। এর সঙ্গে ৫০টি সংরক্ষিত নারী আসন মিলিয়ে জাতীয় সংসদের ইতিহাসে এবারই প্রথম সবচেয়ে বেশি নারী প্রতিনিধি। একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হন ২২ জন নারী। তাদের মধ্যে শেখ হাসিনাসহ ১৯ জনই নৌকা প্রতীকে বিজয়ী হন। দশম সংসদেও সরাসরি ভোটে ২২ জন নারী সদস্য নির্বাচিত হন।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!