• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

আ.লীগে প্রার্থীর ছড়াছড়ি কোন্দলের শঙ্কায় নেতারা


বিশেষ প্রতিনিধি নভেম্বর ১৩, ২০১৮, ০২:২৮ পিএম
আ.লীগে প্রার্থীর ছড়াছড়ি কোন্দলের শঙ্কায় নেতারা

ঢাকা : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের টিকেটে প্রতি আসনে গড়ে মনোনয়ন প্রত্যাশী ১২ জনের বেশি। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তুলনায় এবার দলটির মনোনয়নপত্র বিক্রি দ্বিগুণ।

আগ্রহীদের তালিকা দেখে বিস্মিত আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বও। মনোনয়নপত্র বিক্রির প্রথম তিন দিনে প্রত্যাশীর সংখ্যা দেখে দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও দলের সংসদীয় বোর্ডের সর্বশেষ সভায় বিস্ময় প্রকাশ করেন। প্রতি আসনে একক প্রার্থী নিশ্চিত করে অন্যদের ‘ক্ষোভ’ দমিয়ে রাখার বিষয়ে দলের নীতিনির্ধারক পর্যায়ও চিন্তিত।

দলীয় সূত্রমতে, ৩০০ সংসদীয় আসন হলেও সব আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী দেওয়া সম্ভব নয়। প্রায় ৭০ আসন দলের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট ও মহাজোটের প্রার্থীদের জন্য ছেড়ে দেওয়ার পরিকল্পনা আছে। গত চার দিনে বিক্রি হয়েছে দলের তিন হাজার ৬২৭ মনোনয়নপত্র। বাকি ২৩০ আসনের জন্য এতসংখ্যক প্রার্থীর মধ্য থেকে ‘যোগ্যদের’ বেছে নিতে দলকে তেমন বেগ পোহাতে না হলেও কোন্দলের আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন না নীতিনির্ধারকরা।

বুধবার (১৪ নভেম্বর) মাত্র একদিনের মধ্যেই সাক্ষাৎকার শেষে এত প্রার্থী থেকে ‘যোগ্য ও জনপ্রিয়দের’ বেছে নেওয়ার বিষয়টাকে দলের কেউ কেউ কঠিন কাজ বলে মনে করছেন।

দলীয় সূত্র মতে, একক প্রার্থী নির্বাচিত হলে অন্য প্রার্থীর অনুসারীদের নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখানোর আশঙ্কা প্রকট হয়ে উঠছে। নির্বাচনের আগেভাগে মনোনয়নজনিত কোন্দল যেন মাথাচাড়া দিতে না পারে, সেই পরিকল্পনা নিয়ে দলের নীতিনির্ধারকরা ভাবছেন। মনোনয়নপত্র কেনাকে কেন্দ্র করে ঢাকার মোহাম্মদপুরে দলের দুই গুরুত্বপূর্ণ পদের নেতার অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় দলের মনোনয়ন বঞ্চিতদের অনেকে ক্ষোভের প্রকাশ ঘটাতে পারেন বলে মনে করেন তারা।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের সূত্র জানায়, অধিকাংশ আসনে দলের চূড়ান্ত প্রার্থী বাছাই হয়ে আছে। দলের সভাপতি প্রার্থীদের ওপর ১২টি জরিপ পরিচালনা করেন। এসব জরিপের ভিত্তিতে যেসব ব্যক্তি বেশি জনপ্রিয়, তাদের মনোনয়নের কথাই তিনি বিবেচনা করছেন।

অনেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন দলের শীর্ষ নেতৃত্বের নজরে আসার চেষ্টায়, মনোনয়নের জন্য নয়। তারা মনোনয়ন না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন না। অনেকে আসনে একাধিক প্রার্থী থাকলেও দলের শীর্ষ নেতারাই সেগুলো থেকে মনোনয়ন পাবেন। সব আসনে একাধিক প্রার্থীর কারণে কোন্দলের আশঙ্কা নেই।

শীর্ষ নেতারা বলছেন, মনোনয়নের বিষয়ে দলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। আর কোন আসন জোট ও মহাজোটের প্রার্থীকে ছাড় দেওয়া হবে, এ বিষয়েও দলের সিদ্ধান্তই শেষ কথা। মনোনয়ন বঞ্চিত হলে কেউ যেন কোন্দল ও ক্ষোভ প্রকাশ না করেন, এ বিষয়ে দল থেকে বলা হবে। দলের সভাপতি শেখ হাসিনাও মনোনয়নপ্রত্যাশী সব প্রার্থীর সঙ্গে ১৪ নভেম্বর থেকে গণভবনে সাক্ষাৎ করবেন। তিনি একক প্রার্থীর জন্য সবাই মিলে কাজ করা ও জোটের জন্য আসন ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দেবেন।

একক প্রার্থী চূড়ান্ত হবে যেভাবে: গত রোববার অনুষ্ঠিত দলের সংসদীয় বোর্ডের বৈঠকে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ১৪ নভেম্বর বেলা ১১টা থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার নেবে আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ড। দলের সভাপতির ঢাকার ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে হবে সাক্ষাৎকার। একদিনে সবার সাক্ষাৎকার নেওয়া হবে। বিভাগওয়ারী প্রার্থীদের আলাদা ডাকা হবে।

প্রধানমন্ত্রী সবার সঙ্গে কুশল বিনিময় শেষে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের প্রতিটি আসনে যেকোনো একজন দলীয় প্রার্থী ঠিক করে দেওয়ার আহ্বান জানাবেন। মনোনয়নপ্রত্যাশীরা একক প্রার্থী চূড়ান্ত করতে ব্যর্থ হলে তাদের অনুরোধে প্রার্থী ঘোষণার দায়িত্ব নেবেন শেখ হাসিনা।

তবে সাক্ষাৎকারের দিনই প্রার্থীতালিকা ঘোষণা না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। কারণ, দলের নির্বাচনী ও আদর্শিক জোটের সঙ্গে আলোচনা শেষে আগে দল ও তারপর জোটের প্রার্থী চূড়ান্ত করবেন শেখ হাসিনা। এরপরই ঘোষণা হবে মনোনীতদের নাম। এর আগে দলীয় প্রার্থী ঠিক করতে সংসদীয় বোর্ডের আরো সভা হবে।

তালিকা ঘোষণা ১৬ থেকে ২০ নভেম্বর : ১১ সদস্যের সংসদীয় বোর্ডের সবশেষ বৈঠকে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, দলের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা ও জমা দেওয়ার শেষ সময় ছিল সোমবার (১২ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। মঙ্গলবার সব ফরম যাচাই-বাছাই হবে। নির্বাচন কমিশন (ইসি) তফসিল পেছালেও দলটির মনোনয়ন ফরম বিক্রির সময় বাড়ানো হয়নি।

আগামী ১৬ থেকে ২০ নভেম্বরের মধ্যে দলীয় মনোনীত প্রার্থীর নাম ঘোষণা করবে দল। এর আগে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে দলের মনোনয়নপত্র সংগ্রহকারীদের নিয়ে বৈঠক হবে। সেই বৈঠকে দলের বাইরে গিয়ে যাতে কেউ প্রার্থী না হন, সে নির্দেশ থাকবে দলীয় সভাপতির।

জোটের আসন ভাগাভাগির অপেক্ষা : আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালিকা ঘোষণার সঙ্গে ক্ষমতাসীন ১৪ দলীয় জোট শরিকদের আসন ভাগাভাগির চূড়ান্ত ঘোষণা আসার সম্ভাবনা নেই। এর জন্য কমপক্ষে মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে।

ইসির প্রথমবার ঘোষিত তফসিলে ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত ছিল মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষদিন। গতকাল পুনঃতফসিল ঘোষিত হলেও মনোনয়নপত্র বাছাই ও প্রত্যাহারের বিষয়টি পরে জানানো হবে বলা হয় ইসির পক্ষ থেকে।

তাই ১৪ দলীয় জোট ও মহাজোটের শরিকদের আসন ভাগাভাগির চূড়ান্ত ফল জানতে আরো অপেক্ষা করতে হতে পারে সূত্র উল্লেখ করে। আসন ভাগাভাগি নিয়ে চূড়ান্ত আলোচনা না হওয়ায় জোটের অনেক নেতার মনঃক্ষুণ্ন।  

কেউ কেউ ক্ষোভও প্রকাশ করেন। আসন বণ্টনে কালক্ষেপণকে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী কৌশল হিসেবেও দেখছেন কোনো কোনো শরিক দলের নেতা।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!