• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

আ.লীগের ইশতেহারে তরুণদের প্রাধান্য, চূড়ান্ত হবে আজ


নিজস্ব প্রতিবেদক নভেম্বর ২১, ২০১৮, ১১:০৩ পিএম
আ.লীগের ইশতেহারে তরুণদের প্রাধান্য, চূড়ান্ত হবে আজ

ঢাকা : সামনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ নির্বাচনে নতুন দেড় কোটি ভোটারের কথা মাথায় রেখে তরুণদের প্রাধান্য দিয়ে চূড়ান্ত করা হচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইশতেহার। এতে জোর দেওয়া হয়েছে মোট ভোটারের অর্ধেক নারী ভোটারদেরও। মোট ১০টি বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে এই ইশতেহার তৈরিতে। পাশাপাশি বিভিন্ন মেয়াদে উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রাও নির্ধারণ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

আওয়ামী লীগের ইশতেহার প্রণয়ন কমিটির সদস্যরা বলছেন, বৃহস্পতিবার (২২ নভেম্বর) এই ইশতেহার চ‚ড়ান্ত হবে। ওই দিন ইশতেহার প্রণয়ন উপকমিটির বৈঠকে দলীয় সভাপতির পরামর্শে ইশতেহারে শেষ মুহূর্তের কিছু সংযোজন ও বিয়োজন করা হবে। নির্বাচনের ১০ থেকে ১৫ দিন আগে চ‚ড়ান্ত ইশতেহার জনগণের সামনে তুলে ধরবেন দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের নির্বাচনি প্রচারণা কমিটির কো-চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এইচ টি ইমাম বলেন, ‘একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেড় কোটি নতুন ভোটার হয়েছে। আমরা এই বিষয়টির ওপর জোর দিচ্ছি। তারুণ্য ও নারী ভোটারদের জন্য ইশতেহারে থাকবে উদ্যোক্তা তৈরির পরিকল্পনা।

এছাড়া সমান গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে নতুন নতুন কর্মসংস্থান তৈরি, কৃষিভিত্তিক শিল্প গড়ে তোলা, মাদ্রাসাগুলোতে কর্মমুখী শিক্ষার ব্যবস্থা করার দিকেও। পাশাপাশি পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্যও দিকনির্দেশনা থাকবে।

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ড. অনুপম সেন বলেন, ইশতেহারে উন্নয়ন পরিকল্পনার বিভিন্ন স্তর নির্ধারণ করা হয়েছে। কোন সালে দেশ কোথায় যাবে এবং কী অবস্থায় থাকবে- এসব বিষয়ে থাকবে সুস্পষ্ট পরিকল্পনা।

তিনি বলেন, ‘২০৪১ সালে যে উন্নত রাষ্ট্রের রূপকল্প দেওয়া হয়েছে, সেটা কোন অবস্থায় থাকবে, সেটা বাস্তবায়নের জন্য আমরা কী করতে পারি আর কী করা উচিতÍ এগুলোও উল্লেখ থাকছে ইশতেহারে।’ শিগগিরই ইশতেহার চ‚ড়ান্ত হবে বলে তিনি জানান।

ইশতেহার প্রণয়ন কমিটির সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের খসড়া ইশতেহারে নতুন নতুন কর্মসংস্থানের উপর জোর দেওয়া হয়েছে। এছাড়া টেকসই উন্নয়নে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির ওপর জোর দেয়া হয়েছে বেশি। বিশেষ করে তরুণদের কর্মসংস্থান ও দক্ষতা বাড়ানোর বিষয়ে বিশেষ দিকনির্দেশনা থাকবে এতে।

এছাড়া খাদ্য নিরাপত্তা এবং নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্য নিশ্চিত করা, ভারি শিল্প কারখানা নির্মাণ ও দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য বিশেষ সুবিধা, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের সাশ্রয়ী ব্যবস্থাপনা, দারিদ্র্য বিমোচনের মাধ্যমে দারিদ্র্যের হার ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা, নারী উদ্যোক্তা তৈরি, কৃষিভিত্তিক শিল্প স্থাপন, পিছিয়ে পড়া অঞ্চলগুলোর উন্নয়ন, মাদ্রাসায় কর্মমুখী শিক্ষা সংযোজন করা, সমুদ্র অর্থনীতির বাস্তবায়ন পরিকল্পনা ও দুর্নীতি-সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখাবে আওয়ামী লীগ।

আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, খসড়া ইশতেহারে উন্নয়ন ও গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতাকে গুরুত্ব দিয়ে থাকছে ২০১৯ থেকে ২১০০ সাল পর্যন্ত ৮১ বছরের পরিকল্পনা। দ্বিতীয় পদ্মা ও যমুনা সেতু, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ উৎক্ষেপণ, প্রবৃদ্ধির হার দুই অঙ্কে নিয়ে আসাসহ জনগণের সাংবিধানিক ও মৌলিক অধিকারের বিষয়টিও ইশতেহারে উল্লেখ করা হয়েছে।

জানা গেছে, প্রায় ৬০ পৃষ্ঠার খসড়ায় যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, কৃষি ও শিক্ষায় উন্নয়ন, ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের পথে অগ্রগতি, কর্মসংস্থান, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ, একশটি অর্থনৈতিক জোন স্থাপন, নারী উন্নয়ন ও নারী নীতি বাস্তবায়নের বিষয়গুলোসহ গত ১০ বছরে সরকার ও রাষ্ট্রের উল্লেখযোগ্য অর্জনগুলো তুলে ধরা হবে।

এর বিপরীতে, ২০০৮ ও ২০১৪ সালের নির্বাচনি ইশতেহারে উল্লেখ করা যে বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করা হয়নি বা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি, সেগুলো বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণও ব্যাখ্যা করে তুলে ধরা হবে ইশতেহারে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগরে ইশতেহার প্রণয়ন উপকমিটির আহ্বায়ক ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘ইশতেহারে আমরা ১০টি বিষয়কে গুরুত্ব দিয়েছি। এরই মধ্যে আমরা খসড়া তৈরি করে দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রীর কাছে জমা দিয়েছি। এখন সংযোজন-বিয়োজনের কাজ চলছে।’

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এই সদস্য বলেন, ‘২০০৮ সালে আমরা দিন বদলের সনদ দিয়েছিলাম, সে অনুযায়ী দেশের ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। এটা অব্যাহত রাখতে ২০৩১ সালের মধ্যে দারিদ্র্যমুক্ত ও ২০৪১ সালের মধ্যে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনের দিকনির্দেশনা থাকবে এবারের ইশতেহারে।’

ইশতেহার উপকমিটির আরেক সদস্য জানান, আগামীকাল বৃহস্পতিবার  ইশতেহার নিয়ে বৈঠক আছে। ওই বৈঠকেই কিছু সংযোজন-বিয়োজনের মাধ্যমে ইশতেহার চূড়ান্ত হবে বলে আশা করছেন তিনি।

আওয়ামী লীগ নেতারা জানান, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ইশতেহারের শিরোনাম কী হবে, এটা এখনও নির্ধারণ করা হয়নি। বেশ কয়েকটি শিরোনাম প্রস্তাবনা আকারে আছে। দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শিরোনাম ঠিক করবেন।

এখানে উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগের ২০০৮ সালে ইশতেহারের শিরোনাম ছিল ‘দিন বদলের সনদ’। আর ২০১৪ সালে দেওয়া ইশতেহারের শিরোনাম ছিল ‘শান্তি, গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।’

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!