• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
উপজেলা নির্বাচন

আ.লীগের উচ্ছ্বাস শরিকদের দীর্ঘশ্বাস


বিশেস প্রতিনিধি ফেব্রুয়ারি ৫, ২০১৯, ০২:০৬ পিএম
আ.লীগের উচ্ছ্বাস শরিকদের দীর্ঘশ্বাস

ঢাকা : উপজেলা পরিষদের নির্বাচন উপলক্ষে সরব হয়ে উঠেছে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরাও। তৃণমূল থেকে কেন্দ্রীয় পর্যায়ে প্রার্থীর নাম প্রস্তাব, প্রার্থী বাছাইয়ে নানা প্রক্রিয়া অনুসরণ, জনপ্রিয় প্রার্থীদের প্রাধান্য দিতে কেন্দ্রের জরিপ পরিচালনা, দলের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সভা ও একাদশ সংসদ নির্বাচনের মতো উপজেলা পর্যায়েও ভূমিধস বিজয়ের প্রত্যাশায় কর্মকৌশল নির্ধারণে ব্যস্ত ক্ষমতাসীন দল।

সর্বশেষ উপজেলা নির্বাচন নির্দলীয় হলেও এবার হবে দলীয় প্রতীকে। তবে আওয়ামী লীগের শরিক দলগুলোর মধ্যে এই নির্বাচন নিয়ে তেমন তৎপরতা নেই। শরিকদের পক্ষ থেকে আলাদা অংশ নেওয়ার  সার্বিক প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে বলা হলেও নির্বাচন নিয়ে দলগুলোর উচ্ছ্বাসে যেন ভাটা পড়েছে।

মহাজোটের অন্যতম শরিক জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের মধ্যেও নির্বাচনকে ঘিরে তেমন কোনো উচ্ছ্বাস দেখা যাচ্ছে না। ১৪ দলের শরিক কয়েকটি দলের কিছু উপজেলায় সেভাবে সাংগঠনিক কার্যক্রম না থাকায় সেসব এলাকায় নির্বাচনে তাদের আগ্রহও নেই। বিভিন্ন উপজেলায় নির্বাচনী হাওয়া বইতে থাকলেও সেসব এলাকায় শরিক দলগুলোর মধ্যে কেউ মনোনয়নপ্রত্যাশী এমন কথাও জানা যাচ্ছে না। গত দশ বছর ধরে টানা ক্ষমতায় থাকলেও রাজধানী ঢাকা ও বিভাগীয় শহর ছাড়া কয়েকটি দলের তেমন সাংগঠনিক অস্তিত্ব নেই বলেও অভিযোগ আছে। এ কারণে দলগুলোয় নির্বাচনকে ঘিরে দীর্ঘশ্বাসও রয়েছে।

কোনো কোনো উপজেলায় শরিক দলগুলোর সাংগঠনিক অবস্থা চাঙ্গা হলেও  নির্বাচন নিয়ে তাদের তেমন উৎসাহ নেই। দলগুলো থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশীরা নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে আছেন। ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত হবে, মাঠে নামলে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের সঙ্গে সংঘাত হবে না- এমন কোনো  আশ্বাস তারা পাচ্ছেন না। এ কারণে তারা তৎপর হচ্ছেন না।

আওয়ামী লীগের উচ্চপর্যায়ের সূত্র জানায়, ভোটের মাঠের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি ও দলটির নেতৃত্বাধীন ঐক্যফ্রন্ট উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে। এ পরিস্থিতিতে নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন হয়ে পড়ুক, আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতত্ব তা চায় না। ঐক্যফ্রন্টের অনুপস্থিতিতে নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে জোটের শরিক দলগুলোকে আলাদা অংশ নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তারা আলাদা নির্বাচনের প্রস্তুতির কথা জানালেও যোগ্য প্রার্থী না থাকায় অনেক উপজেলায় নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করা চ্যালেঞ্জ হয়ে পড়েছে। যেসব উপজেলায় দলগুলোর রাজনৈতিক কার্যক্রম নেই সেখানে প্রার্থী পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে দলগুলোও অনেকটা বেকায়দায় পড়েছে।

সাধারণত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীদের বসিয়ে দেওয়ার জন্য কেন্দ্র থেকে উদ্যোগ নেওয়া হয়। বিএনপি অংশ না নেওয়ায় নতুন প্রেক্ষাপটে নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে অনেক জায়গায় স্বতন্ত্র প্রার্থিতার বিষয়টি উন্মুক্তও করে দেওয়া হতে পারে। এবার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান- এ তিন পদে দলীয় প্রতীকে আগামী মার্চ মাস থেকে ধাপে ধাপে নির্বাচন হবে।

চেয়ারম্যান ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগ। প্রথমে তিনটি পদে তৃণমূল থেকে প্রার্থীর নাম চাইলেও এখন দলটি দুটি পদ বাদ দিয়ে শুধু চেয়ারম্যান পদে একক প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাকি দুটি পদে উন্মুক্ত প্রার্থী দিয়ে সেগুলো প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করার লক্ষ্যে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র গতকাল সোমবার থেকে বিক্রি শুরু হয়েছে। আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি বিকাল ৫টা পর্যন্ত মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা ও জমা দেওয়া যাবে।

এবারের উপজেলা নির্বাচনের প্রথম ধাপে আগামী ১০ মার্চ দেশের চারটি বিভাগের ৮৭টি উপজেলায় ভোট অনুষ্ঠিত হবে। এসব উপজেলায় দলীয় মনোনয়নে প্রার্থী হতে ব্যাপক প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। ব্যানার, ফেস্টুন ও পোস্টার সাঁটানোর পাশাপাশি অনলাইনকেন্দ্রিক ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগের অন্যান্য মাধ্যমেও ভোটদাতাদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা চালাচ্ছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। অনেকে নেতাকর্মীসহ এলাকার বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষকে নিয়ে শোভাযাত্রার আয়োজন করছেন। তবে এসব আওয়ামী লীগ ছাড়া জোটের শরিক কোনো দলের প্রার্থীদের তৎপরতা তেমন চোখে পড়ছে না।

নীতিনির্ধারক পর্যায়ের কয়েকজন নেতার দেওয়া তথ্যমতে, সদ্য শেষ হওয়া একাদশ সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় উৎসবের আমেজ কাটতে না কাটতেই আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচনের জোরালো প্রস্তুতি নেয়। এ নিয়ে গত ১২ জানুয়ারি দলের উপদেষ্টা পরিষদ ও কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্যদের যৌথসভা অনুষ্ঠিত। নির্বাচনের কৌশল চূড়ান্ত করতে আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি গণভবনে দলের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সভা হবে।

১৪ দলের শরিক কয়েকটি দল নির্বাচনী কার্যক্রম এখনো শুরু করেনি। মনোনয়নপত্র বিক্রি শুরুর তারিখও তারা ঘোষণা করেনি। এমনকি দলীয়ভাবে আলাপ-আলোচনার জন্যও দলগুলো এখন পর্যন্ত কোনো সভার আয়োজন করেনি। সব উপজেলায় প্রার্থী দেওয়ার মতো সাংগঠনিক অবস্থা কোনো দলেরই নেই। এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করলে জোটের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাসদের (ইনু) নেতারা জানান, তারা পৃথকভাবে নির্বাচনে অংশ নেবেন। প্রার্থীদের প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে। দলীয়ভাবেও প্রস্তুতিও শুরু হয়েছে। ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, ‘উপজেলা নির্বাচনে জোটগতভাবে অংশ নেওয়া হবে না। দলগতভাবেই অংশ নেব। দলীয়ভাবেই আমারা প্রার্থী দেব।

সাতক্ষীরায় উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছেন জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। তবে ১৪ দলসহ মহাজোটের শরিক দলগুলো নীরব রয়েছে। নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ হয় কি না এ নিয়ে দ্বন্দ্বে থাকায় সরব হচ্ছে না জাতীয় পার্টি। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম মুঠোফোনে এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ভোটের জন্য উৎসাহী। তারা সবাই মাঠে আছেন।’

নির্বাচন ঘিরে দলীয় তৎপরতা উল্লেখযোগ্য রকমের না হলেও ১৪ দলের শরিক জাসদের সাতক্ষীরা জেলা শাখার সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ আশেক-ই-এলাহি মুঠোফোনে বলেন, ‘মৌলবাদীদের রুখতে উপজেলা নির্বাচনেও জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেবে। আমরা একটি সমাজতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে চাই। নির্বাচনের মাধ্যমে মানুষের সঙ্গে যুক্ত থাকতে চাই।’

তবে ‘নির্বাচন করার মতো পরিবেশ নেই’ বলে অভিযোগ করেন জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি শেখ আজহার হোসেন। তিনি বলেন, ‘যদি নির্বাচনের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি হয়, তাহলে জয়ের জন্য আমরা সাতটি উপজেলাতেই পুরোদমে প্রস্তুতি নেব।’

মুন্সীগঞ্জের ছয়টি উপজেলায়ও বইছে নির্বাচনের হাওয়া। প্রতিটি উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে প্রচারে ব্যস্ত আওয়ামী লীগের একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। উন্নয়নের নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটদাতাদের মন জয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন তারা। ২০১৪ সালের উপজেলা নির্বাচনে মুন্সীগঞ্জের ছয়টি উপজেলার মধ্যে পাঁচটিতে জয়ী হয় আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!