• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আ.লীগের চেয়ারম্যান, নিজ দলের নেতাকর্মীদের পাত্তাই দিচ্ছেন না


নিজস্ব প্রতিবেদক মে ২, ২০২০, ০৬:১৫ পিএম
আ.লীগের চেয়ারম্যান, নিজ দলের নেতাকর্মীদের পাত্তাই দিচ্ছেন না

চট্টগ্রাম : চট্টগ্রামের আনোয়ারায় বরুমচড়া ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অধিকাংশ পরিষদের সদস্যরা দুর্নীতি, অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তুলেছেন। সবচেয়ে বড় অভিযোগ নৌকা প্রতীকে নির্বাচিত হয়ে তিনি স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের পাত্তা না দিয়ে বরাদ্দে নয়-ছয় করে চলেছেন। 

এমনকি সরকার দলীয় স্থানীয় সংসদ সদস্য ও ভূমিমন্ত্রীর দেয়া ত্রাণ, কম্বল ও খাদ্য বরাদ্দ নিয়ে বিএনপি নেতাদের মাধ্যমে বিতরণ করে ফটোসেশন করছেন। তা নিয়ে তৃণমূল আ’লীগে চাঞ্চল্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। 

এ বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একাধিক ইউপি সদস্য তাঁদের মতামত জানিয়ে স্ট্যাটাস দিলে তা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় উঠে। জানা যায়, ইউপি সদস্যরা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দেয়ারও প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

বরুমচড়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য দরপ আলী, মো. আবু জাফর চৌধূরী মিজান, সংরক্ষিত মহিলা সদস্য শামসুন্নাহার, ইউপি সদস্য মো. ইয়াছিন সিকদার জানান, ‘পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহাদত হোসেন চৌধুরী আমাদের কোনো কাজ দেন না এবং মূল্যায়ন করেন না। বরং চেয়ারম্যানের কিছু বিএনপি সমর্থিত অনুসারীরা ইউপি সদস্যদের একাধিকবার অপমান-অপদস্থ করেছেন। এমনকি মাসিক সভা না করে, প্রতিবেদন না লিখে তাঁদের স্বাক্ষর করতে বলা হয়। কোন খাতে কী বরাদ্দ আসে, তাও জানানো হয় না।’ 

মেম্বারেরা আরো জানান, বিগত ৪ বছর পর পরিষদের মিটিং ডেকে চিঠি ইস্যু  করে গত কয়েকদিন আগে। আমরা চিঠি পেয়ে মেম্বাররা পরিষদ কার্যালয়ে গিয়ে তালা দেখতে পাই। পরে সবাইকে ফিরে আসতে হয়। আমরা স্থানীয় সংসদ সদস্য ও ইউএনও মহোদয়কে বিষয়টি লিখিত আকারে জানাব।’

স্থানীয় সাধারণ মানুষের অভিযোগ, তাঁরা সেবা পাচ্ছেন না কেননা বিগত ৪ বছরে বেশির ভাগ সময় পরিষদ বন্ধ ছিল। এমনকি শাহাদত হোসেন নৌকা প্রতীকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ায় পর  ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে ‘প্রকাশ্যে’ আওয়ামী লীগের বিরোধিতা করছেন। আড়ালে বিএনপি প্রীতি ও ‘তোষণ- তৈলমর্দনে’ ব্যস্ত রয়েছেন।

বরুমচড়ার স্থানীয় যুবক শফিক, কাদের ও কেফায়াত উল্লাহ জানান, ‘এই চেয়ারম্যান এখন আওয়ামী লীগের চেয়ে বিএনপি মদদপুষ্ট হয়ে পদে থাকা বিএনপি নেতাদের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক রেখে চলেছেন।’ স্বয়ং বরুমচড়া ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন আমজাদী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নেতারা চেয়ারম্যানের কাছে পাত্তা পাচ্ছে না আর বিএনপি নেতাদের নিয়ে তিনি ত্রাণ বিতরণ করে ফটোসেশন করছেন। সবচেয়ে বড় কথা উনি আমাকে জবাব দিতে বাধ্য নয় বলে আমিও এ ব্যাপারে নীরব।’ 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক ইউপি সদস্য বলেন, ‘ভোটের আগে ও পরে তাঁকে দেখা গেছে আওয়ামী লীগের সঙ্গে গভীর সখ্যতা গড়ে তুলতে। এখন আওয়ামী লীগের চেয়ে বেশী প্রীতি বিএনপির।’

স্থানীয় একাধিক সূত্র বলছে , বরুমচড়া ইউনিয়ন পরিষদে সরকারি বরাদ্দ পাওয়া এলজিএসপি, টিআর, কাবিকা, ভূমি হস্তান্তর কর ১%, এডিপি, হাঁট বাজার ইজারা, রাজস্ব আয়, ভিজিএফ কার্ড, ভিজিডি কার্ড, চাষী খরিদ মোশম-১, খাদ্য বান্ধব কর্মসূচি, প্রতিবন্ধী ভাতা, বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, মাতৃত্বকালীন ভাতাসহ সরকারের উন্নয়নমূলক প্রকল্পে বাস্তবায়নে ব্যাপক অনিয়ম হচ্ছে। দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতায় সরকারের উন্নয়নের টাকা নয়-ছয় করা হচ্ছে। যা দুদকের তদন্তের প্রয়োজন।

এছাড়াও অভিযোগ, বিগত ৪ বছরে পরিষদে কোনদিন মিটিং না হওয়া, পরিষদের সদস্যদের উপস্থিত বিহীন রেজুলেশন পাশ করিয়ে একাই বরাদ্দের সিদ্ধান্ত নেয়াকে স্থানীয় সরকার বিধিবহির্ভুত বলে সচেতন নাগরিকদের অভিমত। 

স্থানীয়রা আরো জানান, চেয়ারম্যান শাহাদাত মন্ত্রীর দেয়া ত্রাণ বিতরণ করেছেন বরুমচড়া ৭নং ওয়ার্ড যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবছারের নেতৃৃত্বে, কম্বল বিতরণ করেছেন বরুমচড়া ৫নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি ফকির মোহাম্মদের নেতৃৃত্বে, এমনকি গ্রামের নবনির্মিত রাস্তা পরিদর্শনে বিএনপি নেতাকর্মীদের নিয়ে উদ্বোধন করিয়ে ফটোসেশন করছেন। যা ফেসবুকে ভাইরাল। চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অভিযোগ, নিজ বাড়িতে ঘরোয়া পরিবেশে বিএনপি নেতাকর্মী পরিবেষ্টিত রেখে পরিষদের কার্যক্রম পরিচালনা করে সুযোগ সুবিধা নেয়ার।

স্থানীয় আওয়ামী লীগের তৃণমূল সূত্র জানায়, বরুমচড়ার চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনজুর আলম চেয়ারম্যানের আপন খালাতো ভাই। বেশির ভাগ সময় চেয়ারম্যান তাকে নিয়েই পরিষদের সুযোগ সুবিধা ভাগ ভাটোয়ারা করেন বলে বরুমচড়াবাসীর অভিযোগ। জাতীয় নির্বাচনে নৌকায় ভোট না দিলে কিছু যায় আসে না। কিন্তু ইউপি নির্বাচনে শাহাদাতকে ভোট দেয়ার শর্তে বিএনপি নেতাদের শেল্টার দেয়া এমন অভিযোগও বিরুদ্ধে।

বিষয়টি সত্য কিনা জানতে চাইলে আনোয়ারা উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি আলী আকবর বলেন, ‘হ্যা ফেসবুকে যা লেখালেখি হচ্ছে সব সত্য। চেয়ারম্যান বিএনপি নেতাদের নেতৃত্বে ভূমিমন্ত্রীর ত্রাণ বিতরণ করিয়ে ফটোসেশন করছেন। যা অত্যন্ত দুঃখজনক।’

বরুমচড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান সেলিম বলেন, ‘আমরা পদে আছি তাই তেমন কিছু বলতে পারছি না। চেয়ারম্যানও নৌকার লোক। তবে একাধিকবার দল থেকে তাঁকে সর্তক করা হয়েছে। স্থানীয় আ’লীগ নেতাদের সাথে সমন্বয় রেখে কাজ করার জন্য কিন্তু তিনি কোন কর্নপাত করছেন না।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ৫নং বরুমচড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহাদত হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘এসব অভিযোগ উদ্দেশ্য প্রণোদিত ও বানোয়াট। আমি ২৪ বছর মেম্বারী করে এখন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছি। মেম্বারেরা বরাদ্দ নিয়ে জনগণকে তা বিলি করে না। নিজেরা ভোগ করতে চায় তাই অভিযোগ তুলেছে। গত ৪ বছর আমি অফিস না করলে পরিষদের বরাদ্দ নিয়ে কাজ করছি কি করে। অন্যান্য মেম্বারেরা কি রেজুলেশনে স্বাক্ষর করেনি। তাহলে মিজান মেম্বার পরিষদে আসেনি। আমি এখন তার বিরুদ্ধে পরিষদে ব্যবস্থা নেবো।’

ভূমিমন্ত্রীর ত্রাণ নিয়ে বিএনপি নেতাদের মাধ্যমে বিতরণ করেছেন কিনা জানতে চাইলে চেয়ারম্যান বলেন, ‘এটা সত্য নয়। আপনারা এলাকায় এসে দেখে যান। প্রশ্ন করা হয়-তাহলে ভাইরাল হওয়া ছবি গুলো কী মিথ্যা? এমন প্রশ্নে তিনি কোন সদুত্তর না দিয়ে পরে ছবি দেখে জানাবেন বলে ফোন লাইন কেটে দেন।’

জানতে চাইলে আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ জোবায়ের আহমেদ বলেন, ‘বরুমচড়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতার বিষয়ে কেউ এখনো অভিযোগ করেনি। লিখিত অভিযোগ পেলে অবশ্যই তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

সোনালীনিউজ/এমকে/এএস

Wordbridge School
Link copied!