• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

আ.লীগের দু’গ্রুপের দ্বন্দ্ব, সভা-সমাবেশে নিষিদ্ধ


মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি ডিসেম্বর ৩, ২০১৯, ০৬:৫৪ পিএম
আ.লীগের দু’গ্রুপের দ্বন্দ্ব, সভা-সমাবেশে নিষিদ্ধ

মুন্সীগঞ্জ: জেলার গজারিয়া উপজেলায় তৃণমূলের ত্যাগী নেতাদের অবমূল্যায়ন ও সদ্য সাবেক ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন কমিটির ত্যাগী নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে অনুপ্রবেশকারীদের নিয়ে কমিটি গঠন করা পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। মুন্সীগঞ্জে এনিয়ে ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন আ.লীগের কমিটি পদ বঞ্চিত নেতাকর্মীরা উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে বিক্ষোভ মিছিল ও সভা সমাবেশ করেছে। 

এদিকে, উপজেলার রাজনৈতিক পরিস্থিতি ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠায় সংঘাত এড়াতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া সভা-সমাবেশ আয়োজনের ওপর নিষেধজ্ঞা জারি করেছে। 

স্থানীয় রাজনৈতিকরা বলছেন, এভাবে চলতে থাকলে অদূর ভর্বিষ্যতে গজারিয়া উপজেলার আওয়ামীলীগ দলের ভেতরে ‘গৃহযুদ্ধের’ আভাস বহন করছে। এখনি উচিত দলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন ও সদ্য বর্তমান কমিটি বাতিল করে কাউন্সিলের মাধ্যমে নেতা নির্বাচনের পথ বের করা। 

গেল ২৩ অক্টোবর উপজেলার ভবেরচর বাজারে অবস্থিত আ.লীগের কার্যালয় থেকে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে গজারিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থের বিনিময়ে ওয়ার্ড কমিটি গঠন ও চাঁদাবাজির অভিযোগ এনে এবং অনুপ্রবেশকারী আখ্যা দিয়ে দেশের প্রবীণ রাজনৈতিক দল আওয়ামীলীগ থেকে বহিষ্কার ও অনুপ্রবেশকারীদের প্রতিরোধের ঘোষণা দিয়ে প্রায় প্রতিদিন উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করছে উপজেলা আওয়ামীলীগ ও সহযোগী অঙ্গ সংগঠনের নেতা কর্মীরা।

এ বিষয়ে উপজেলা আ.লীগের সহ-সভাপতি ও ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালের রক্ত সঞ্চালন বিভাগের প্রধান ডা. মাজহারুল ইসলাম তপন বলেন, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ, নাশকতা এবং দুনীতি বন্ধ করতে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামীলীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে দেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় আওয়ামীলীগে অনুপ্রবেশকারীদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। আর তার ব্যতিক্রম দেখা দিয়েছে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের কাউন্সিলে। মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন দল থেকে আসা অনুপ্রবেশকারী বিতর্কিত অযোগ্য ব্যক্তিদের দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন কমিটি। যার কারণে আওয়ামীলীগের ত্যাগী নেতাকর্মীরা হয়ে পড়েছে কোণঠাসা।

এদিকে, প্রবীণ নেতা উপজেলা আ.লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও জেলা আ.লীগের সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. শফিউল্লাহ্ (শফি চেয়ারম্যান) অভিযোগ করে বলেন, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম একজন আওয়ামীলীগে অনুপ্রবেশকারী। তিনি রাজনৈতিক দিনলিপিতে প্রথমে জাসদ রাজনীতি করতেন। তিনি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা খবর শুনে ৭দিন ধরে গজারিয়ার (ফেরিঘাট) বাজার এলাকায় খুশিতে মিষ্টি বিতরণ করেছিলেন। তখন সেই মিস্টি বিতরণের খবরটি বর্তমান উপজেলাসহ জেলা জুড়ে চাউর হয়। 

এ ঘটনাটি এখনও আমাদের অনেকের মনে দাগ কাটে। এরপর সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মরহুম কলিমউল্লাহ্ সাহেবের হাত ধরে জাতীয় পার্টি ও পরে উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক থাকা কালে মেঘনা নদীতে অবৈধ বালু উত্তোলনে বাধা দেয়ায় ১৯৯৯ সালে আওয়ামীলীগ নেতা গজারিয়া গার্লস পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক বিজয় ভল্লম রায়কে হত্যা করা হয়। ওই মামলার ১নং আসামি ছিলেন তিনি। পরে মামলা থেকে বাঁচতে টাকার বিনিময়ে সরাসরি জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক পদে অধিষ্ঠিত হন তিনি। গত ১ডিসেম্বর উপজেলা চত্তর ও গজারিয়া ফেরিঘাট বাজার এলাকায় উপজেলা আওয়ামী লীগের চলমান কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিভিন্ন দাবি তুলে ধরে আওয়ামীলীগের বিতর্কিত কমিটি ও উপজেলা আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদকের বহিষ্কারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সভা থেকে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান (সদ্য সাবেক) মো. রেফায়েত উল্লাহ্ খাঁন (তোতা) বলেন, গজারিয়া উপজেলার রাজনীতির পরিবেশ এখন উত্তপ্ত। কয়েকজন ব্যক্তির কারণে দলের ভিতরে গৃহযুদ্ধের পথ তৈরি হচ্ছে। 

এখন আন্দোলনকারীদের একটাই দাবি উপজেলা সাধারণ সম্পাদকের বহিষ্কারসহ উপজেলা আ.লীগের সব কমিটি ভেঙে দিয়ে কাউন্সিলের মাধ্যমে কমিটি দেয়ার দাবি করেন।  এ সময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য কামরুল হাসান চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য হাজী মোস্তফা খাঁন, উপজেলা আ.লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও গুয়াগাছিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আবুল খায়ের মোহাম্মদ আলী খোকন, জেলা যুবলীগ নেতা ও বালুয়াকান্দি ইউপি চেয়ারম্যান শহীদুজ্জামান জুয়েল, ভবেরচর ইউপি চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার শাহীদ মো. লিটন, জেলা পরিষদ সদস্য সাইদুর রহমান খান, উপজেলা আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মমিনুল হক টিটু, উপজেলা সেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোজাম্মেল হক, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক সারোয়ার আহম্মেদ ফরাজী, উপজেলা যুব লীগের সাধারণ সম্পাদক আওলাদ হোসেন মিম, উপজেলা কৃষকলীগের সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন মিন্টু, আ.লীগ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম ভ’ইয়া, উপজেলা আ.লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক খোকন প্রধান, আ.লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক আরিফ সরকার, উপজেলা আওয়ামীলীগের ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক মাহবুবুল আলম শাহিন, উপজেলা সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক আজিম উদ্দিন ফরাজী, উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আহম্মেদ রুবেল, ছাত্রলীগের সভাপতি (সাবেক) কামরুজ্জামান সাগর, সাবেক ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক মনিরুল হক মিঠু, ভবেরচর ইউনিয়ন আ.লীগের সভাপতি লোকমান হোসেন সরকার, আওয়ামীলীগ সদস্য বাবুল মোল্লা, আ.লীগে সদস্য ও ভবেরচর ইউপি সদস্য মমিনুর রহমান মোল্লা প্রমুখ।

অপরদিকে, রোববার সন্ধ্যায় উপজেলার সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সকল প্রকার সংঘাত ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে উপজেলাধীন যে কোন স্থানে সভা, সমাবেশ, মিছিলসহ রাজনৈতিক সভা করার পূর্বে উপজেলা প্রশাসন অনুমতি ছাড়া করা যাবে না মর্মে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার স্বাক্ষরিত প্যাডে হাসান সাদী এই নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। সার্বিক বিষয় নিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম বলেন, ওরা পরাজিত, নেতাকর্মীদের কাছ থেকে প্রত্যাখ্যাত, তাই ওরা বিএনপি-জামায়াতের আশ্রয়দাতা, তাই ঈর্ষান্বিত হয়ে আমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপপ্রচার চালাচ্ছে এবং আমাকেও উপজেলা আ.লীগের সভাপতিকে হত্যার হুমকি দিচ্ছে। হত্যার হুমকির ঘটনায় উপজেলা আ.লীগের সভাপতি সোলাইমান দেওয়ান বাদী হয়ে গজারিয়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি নং-৫৫) করেছেন।

সোনালীনিউজ/এমএএইচ

Wordbridge School
Link copied!