• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আ.লীগের বিশেষ বিবেচনায় বগুড়া-৬ উপনির্বাচন


বিশেষ প্রতিনিধি মে ১৩, ২০১৯, ০৮:০৭ পিএম
আ.লীগের বিশেষ বিবেচনায় বগুড়া-৬ উপনির্বাচন

ঢাকা : বগুড়া-৬ সংসদীয় আসনে আসন্ন উপনির্বাচনকে বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে আওয়ামী লীগ। প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপির দুর্গ হিসেবে পরিচিত ও ভিআইপিখ্যাত এ আসনের উপনির্বাচন নিয়ে ক্ষমতাসীন দলে ভিন্ন চিন্তা কাজ করছে। দলটির নেতৃত্বের টানা তৃতীয় মেয়াদের সরকারের আমলে আরেকটি সংসদীয় আসনে পুনর্নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও বগুড়ার ওই আসনের মতো গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। একাদশ সংসদ নির্বাচনে বগুড়ার আসনটি মহাজোটের অন্যতম শরিক দল জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রার্থীর জন্য ছেড়ে দিলেও এবার শরিক দলকে দেওয়ার বিষয়ে এখন পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের সূত্র জানায়, গত সংসদ নির্বাচনে বিএনপি থেকে জয়ী পাঁচজন সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেওয়ার পর দলটি আর নির্বাচন বর্জনের মতো দিকে যাবে কি না, সেদিকেও তীক্ষ নজর রাখছে আওয়ামী লীগ। বিএনপি এখন সংসদে থেকেও বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অধীনে আর কোনো নির্বাচন বয়কট করলে তা হবে দলটির জন্য সাংঘর্ষিক। একাদশ সংসদে দল থাকবে আর সেই সংসদের উপনির্বাচন দলটি বর্জন করবে, এটা হবে পরস্পরবিরোধী।

বিএনপি এখন থেকে অন্য নির্বাচনে অংশ নেবে বলে মনে করছে আওয়ামী লীগ। তাই বিএনপিসহ সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর অংশ নেওয়ার মধ্য দিয়ে বগুড়া-৬ আসনের নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়ে ওঠে কি না, সেই অনুযায়ী দলীয় কৌশল নির্ধারণ করতে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা। তবে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিক, তা চায় সরকারি দল।

সূত্রমতে, আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ-১ আসনে জয়ী হয়ে হলেও তার মৃত্যুতে আসনটি শূন্য হয়। সরকার গঠনের দুই মাসের মাথায় ওই আসনে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি পুনর্নির্বাচন হলেও তা নিয়ে আওয়ামী লীগের তেমন ভাবনা ছিল না একাধিককারণে। প্রথমত, জনপ্রিয় রাজনীতিবিদ সৈয়দ আশরাফের কিশোরগঞ্জের ওই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর জয়ের বিষয়ে দল আশাবাদী ছিল। এছাড়া পুনর্নির্বাচনে বিএনপির নেতৃত্বের ২০ দলীয় জোট ও ঐক্যফ্রন্টসহ বামদলের জোট ও কয়েকটি ইসলামী দল অংশ নেয়নি।

তবে বগুড়া-৬ আসনের উপনির্বাচন হচ্ছে কিছুটা হলেও ভিন্ন রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও বাস্তবতায়। একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপি থেকে নির্বাচিত ছয় সংসদ সদস্যের মধ্যে পাঁঁচজন নানা নাটকীয়তা শেষে শপথ নেন আর দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বগুড়া-৬ থেকে নির্বাচিত হয়েও শেষ পর্যন্ত শপথ নেননি। সংবিধান অনুযায়ী সংসদের প্রথম বৈঠক থেকে নির্ধারিত পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে তিনি শপথ না নেওয়ায় নির্বাচন কমিশন (ইসি) আসনটিকে শূন্য ঘোষণা করে। একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর ইসির অধীনে আর কোনো নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার  ঘোষণা দেয় বিএনপি। দলটি ও এর নেতৃত্বের জোট ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) উপনির্বাচন, ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন নির্বাচন (মসিক) ও উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে অংশ নেয়নি।

এখন শপথ নেওয়ার পরও অন্য নির্বাচন বর্জনের দিকে গেলে বিএনপি সমালোচনার শিকার হওয়ার পাশাপাশি সাংগঠনিকভাবে দলটি আরো দুর্বল হয়ে পড়তে পারে। এছাড়া বগুড়া-৬ আসনটি বিএনপির দুর্গ হিসেবে পরিচিত। এ আসনে নির্বাচন করতেন দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। আইনগত কারণে গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনে তিনি প্রার্থী হতে পারেননি। পরে প্রার্থী হন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল। শূন্য ঘোষিত এ আসনে আগামী ২৪ জুন ভোট নেওয়ার তারিখ ঘোষণা করে ইসি। আসনটি যেন আওয়ামী লীগ বা মহাজোটের দখলে থাকে, এমনটা চান আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।

সূত্র জানায়, আসনটি শূন্য ঘোষণার পরই উপনির্বাচন নিয়ে চলছে নানা আলোচনা। কে কোন দল থেকে প্রার্থী হচ্ছেন, তা নিয়ে আলোচনা চলছে। কয়েকটি দলের প্রার্থী ও তাদের সমর্থক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারণা চালাচ্ছেন। মহাজোটের নাকি, আওয়ামী লীগের প্রার্থী দেওয়া হবে— এ বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত না হলেও ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী কয়েকজন মাঠে আছেন। যুক্তরাজ্যে দশ দিনের সরকারি সফর শেষে শনিবার (১১ মে) দেশে ফিরেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনিই শিগগির প্রার্থীর বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবেন বলে জানা যায়।

দলের মনোনয়ন পাওয়ার আশায় বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের তিনজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক যথাক্রমে রাগেবুল আহসান রিপু, টি জামান নিকেতা ও মঞ্জুরুল আলম মোহন, জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক শাহাদৎ আলম ঝুনু, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি প্রয়াত মমতাজ উদ্দিনের ছেলে ও বগুড়া চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মাসুদুর রহমান মিলন, দলের কেন্দ্রীয় উপকমিটির সহসম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন শফিক মাঠে আছেন।

দলীয় সূত্র জানায়, একাদশ সংসদ নির্বাচনে বগুড়া-৬ আসনে মহাজোটের প্রার্থী ছিলেন জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম ওমর। তিনি ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোটের প্রার্থী ও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কাছে হেরে যান। ২০১৪ সালে দশম সংসদ নির্বাচনে বিএনপির নেতত্বের জোট অংশ না নেওয়ায় ওই আসন থেকে নূরুল ইসলাম বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। আবারও মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন চাইবেন তিনি।

ওমর মোবাইল ফোনে বলেন, ‘সবশেষ নির্বাচনে আমি মহাজোটের প্রার্থী ছিলাম। এ কারণে আসন্ন উপনির্বাচনেও আমি মনোনয়ন চাইব। দল ও জোটগতভাবে মনোনয়ন পেলে আমি প্রার্থী হব।’

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!