• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০
আ.লীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলন

আলোচনায় এখন রেহানা জয় পুতুল


বিশেষ প্রতিনিধি ডিসেম্বর ১২, ২০১৯, ০৪:৪২ পিএম
আলোচনায় এখন রেহানা জয় পুতুল

ঢাকা : আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলন সামনে রেখে নানা কিছু ছাপিয়ে এখন বিশেষ আলোচনায় স্থান করে নিয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর পরিবার।

বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ তনয়া শেখ হাসিনা ছাড়া দেশের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ ওই পরিবারের অন্য কে কে আসছেন আওয়ামী লীগের আগামী কেন্দ্রীয় কমিটিতে, এমন আলোচনা এখন জোরেশোরে চলছে। একই সঙ্গে নানা সমীকরণও চলছে।

ক্ষমতাসীন দলের কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে শুরু করে ভ্রাতৃপ্রতিম ও সহযোগী সংগঠন হয়ে তৃণমূলের নেতাকর্মী পর্যন্ত চলছে একই আলোচনা। দেশের রাজনীতিসচেতন মানুষের মধ্যেও এমন আলোচনা নানা ডালপালা ছড়াচ্ছে।

আগামী ২০ ও ২১ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় আওয়ামী লীগের ২১তম কেন্দ্রীয় সম্মেলনকে ঘিরে আলোচনায় আছেন শেখ রেহানা, সজীব ওয়াজেদ জয় ও সায়মা ওয়াজেদ পুতুল।

দলের নীতিনির্ধারক সূত্র জানায়, বঙ্গবন্ধু পরিবারের অন্তত দুজন সদস্য এবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে আসতে পারেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ তনয়া শেখ রেহানা, দৌহিত্র সজীব ওয়াজেদ জয় ও সায়মা ওয়াজেদ পুতুল— এ তিনজনের মধ্যে দুজন কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদ পেতে যাচ্ছেন বলে আলোচনা চলছে দলের ভেতরে।

অন্যান্য বার আলোচনায় থেকেও শেষ পর্যন্ত তারা কেন্দ্রীয় নেতৃতের দায়িত্ব না নিলেও এবারের বিদ্যমান বাস্তবতা ভিন্ন বলে মনে করছেন দলের নীতিনির্ধারকরা।

তাদের মতে, এ দফায় তাদের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে আনা না হলে অনেক পিছিয়ে যেতে হবে। বয়সের বিষয়টি তুলে ধরে দলীয় সভাপতির পদ থেকে বিদায় নিতে চান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

কয়েকবার অবসরের ঘোষণা দিলেও নেতাকর্মীদের দাবির মুখে দীর্ঘ ৩৮ বছর ধরে তিনি দলের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন দলে তার বিকল্প নেতৃত্ব না থাকায়।

তার স্থলাভিষিক্ত হতে পারেন এমন একজনকে প্রস্তুত করে তুলতেই এবারে কমিটিতে বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যদের ভেতর থেকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে আনা হতে পারে দুজনকে।

তবে এবারো শেখ হাসিনাই দলের সভাপতি থাকছেন, তা প্রায় নিশ্চিত।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, বয়সের কারণেই শেখ হাসিনার পক্ষে আসন্ন মেয়াদের পরে আবারো দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার চ্যালেঞ্জ নেওয়া কঠিন হয়ে উঠতে পারে। তখন তার জায়গায় বঙ্গবন্ধু পরিবারের মধ্য থেকে কাউকে আসতে হলে তারও তৈরি হতে কিছুটা সময় লাগবে।

সেদিক থেকে শেখ হাসিনা নেতৃত্বে থাকাবস্থাতেই তারা তৈরি হতে পারবেন। দরকারি দিকনির্দেশনাও পাবেন তার কাছ থেকে। মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মী ও সাধারণ জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরির জন্যও নতুন কারো কিছুটা সময় প্রয়োজন।

এসব কিছু বিবেচনায় নিয়ে এবারই নেতা হচ্ছেন বঙ্গবন্ধু পরিবারের কেউ— এটা অনেকটাই নিশ্চিত বলে শীর্ষ নেতারা ধরে নিলেও প্রকাশ্যে কেউ মুখ খুলছেন না।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ বলেন, ‘এখনই সময় বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যদের রাজনীতিতে আসার। এবারের সম্মেলনের মধ্য দিয়ে তারা আসবেন বলে আমি মনে করি।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য বলেন, ‘সাধারণত আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন মঞ্চ ও এর আশপাশে বঙ্গবন্ধু, দলের প্রধান শেখ হাসিনা, জাতীয় চার নেতা ও অতীতের বড় নেতাদের ছবি থাকে।

গতবারের সম্মেলনে সেখানে রেহানা, জয়সহ বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যদের ছবি স্থান পেয়েছিল। তাদের আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে এটা কিছুটা হলেও ইঙ্গিতবহ।’

গঠনতন্ত্রের কারণে আওয়ামী লীগে নেতা হওয়া ও কেন্দ্রীয় কমিটিতে ঠাঁই পাওয়ার একমাত্র উপায় সম্মেলন। অন্য কোনো উপায়ে উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন এ দলে নেতা হওয়ার সুযোগ নেই। বঙ্গবন্ধু পরিবারের কেউ দলের কমিটিতে এলেও কেন্দ্রীয় সম্মেলনের মধ্য দিয়ে আসতে হবে।

গত কয়েক বছর ধরে অনুষ্ঠিত দলের সম্মেলনের আগে এজন্যই নেতাকর্মী, নাগরিকসমাজ ও শুভানুধ্যায়ীরা বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আলোচনা করেন।

নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, জয় ও পুতুল দলের কোনো গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হলে দলের নেতৃত্ব আরো সংগঠিত হবে। এর সুফল ভোগ করবে আওয়ামী লীগই।

বিশ্বায়নের সঙ্গে তাল মিলিয়ে রাজনীতি করতে হলে বিশ্বের রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজনীতি ও কূটনৈতিক বিষয়ে স্পষ্ট ধারণাসম্পন্ন মানুষের নেতৃত্বে আসা জরুরি। এসব বিষয়ে জয় ও পুতুল দুজনেই যথেষ্ট যোগ্যতাসম্পন্ন। দেশের তরুণদের স্বপ্নের প্রতীক হয়ে উঠেছেন জয়।

বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করা জয় ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে অভাবনীয় ভূমিকা রাখছেন। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারাও চান বঙ্গবন্ধুর উত্তরসূরিরা দলের নেতৃত্বে আসুক।  দলের পরবর্তী কেন্দ্রীয় কমিটিতে তাদের অন্তর্ভুক্তি চান তৃণমূলের নেতারাও।

সূত্রমতে, ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের ২০তম সম্মেলনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানা ও শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় কেন্দ্রীয় কমিটিতে আসতে পারেন— এমন একটা আলোচনা ছিল। শেষ পর্যন্ত তা হয়নি।
গতবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের নাম আলোচনায় সেভাবে না থাকলেও এবারের সম্মেলনের তারিখ ঘোষিত হওয়ার পর থেকেই তার নাম জোরেশোরে আলেচিত হচ্ছে।

দলের শীর্ষ কোনো পূর্ণ পদে অটিজম বিশেষজ্ঞ পুতুলকে দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর দুজন সদস্য বাংলাদেশের খবরকে জানান।

শেখ রেহানা, জয় ও পুতুলকে নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে যেসব প্রশ্ন  ঘুরপাক খাচ্ছে, এর সুনির্দিষ্ট উত্তর আছে একমাত্র দলের সভাপতির কাছে।

এ বিষয়ে দলের কোনো নীতিনির্ধারক এখনো পরিষ্কার করে কিছুই বলছেন না গণমাধ্যমের কাছে। শীর্ষ পর্যায়ের অনেক নেতা এ বিষয়ে এখনো পর্যন্ত কিছু জানেনও না।

বঙ্গবন্ধু পরিবারের ওই চারজন সদস্যের কেউ দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে আসার বিষয়ে আগ্রহের কথা এখনো প্রকাশ্যে বলেননি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এ বিষয়ে কোনো কিছু বলেননি।

প্রধানমন্ত্রীর তথ্যবিষয়ক উপদেষ্টা ও প্রযুক্তিবিদ জয়কে নিয়ে আলোচনা বেশি থাকায় এবার আওয়ামী লীগের কোনো পদে তার থাকা, না-থাকা নিয়ে সম্প্রতি জানতে চাওয়া হয় দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের কাছে।

এ প্রসঙ্গে তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘কমিটিতে কে থাকবেন আর কে থাকবেন না তা নির্ধারণ করার মালিক শেখ হাসিনা।

তবে জয়কে এর আগেও বলা হয়েছিল, তিনি কমিটিতে থাকতে রাজি হননি। পীরগঞ্জে মনোনয়ন দেওয়ার কথাও বলা হয়েছিল, তাতেও তিনি অনাগ্রহ প্রকাশ করেছেন।

প্রধানমন্ত্রী নিজেই বলেছেন— জয় কোনোটাতেই আগ্রহী নয়। যে অবস্থায় কাজ করছে, সে অবস্থাতেই থাকতে চায় জয়।’

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!