• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

আলোচনায় জঙ্গি অভিযান


নিজস্ব প্রতিবেদক ডিসেম্বর ২৬, ২০১৭, ০৪:৫৫ পিএম
আলোচনায় জঙ্গি অভিযান

ঢাকা: সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশ্বজুড়েই জঙ্গি তৎপরতা চোখে পড়ার মত। বৈশ্বিক এই সমস্যার কালো থাবা থেকে ছাড় পায়নি বাংলাদেশও। তবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতায় বেশি দূর এগোতে পারেনি ওই অশুভ শক্তি। গতবছরের ১ জুলাই রাতে রাজধানীর গুলশান হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় জঙ্গি (নব্য জেএমবি) হামলার পর নড়েচড়ে বসে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। শুরু হয় জঙ্গিবিরোধী অভিযান। এই দেড় বছর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জঙ্গিদের পেছনেই ছুটতে হয়েছে সবচেয়ে বেশি। সারা দেশে ছোট-বড় ৩০টি অভিযান চালাতে হয়েছে তাদের। এ সময় পাঁচ শিশু ও ছয় নারীসহ ৭১ জঙ্গি নিহত হয়।

গণমাধ্যমে আসা সেই সময়ের আলোচিত কিছু জঙ্গি হামলা ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানগুলো তুলে ধরা হলো।

সীতাকুণ্ডে ছায়ানীড় ও সাধন কুটির:
চলতি বছর বড় ধরনের জঙ্গিবিরোধী অভিযান চালানো হয় চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের ‘ছায়ানীড়’ ও ‘সাধন কুটির’ নামক দুইটি বাড়িতে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সীতাকুণ্ড পৌরসভার আমিরাবাদ এলাকায় নামারবাজারে ‘সাধনকুটির’ জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালায় পুলিশ ও র‌্যাবের সমন্বয়ে গঠিত বিশেষ দল। অপারেশনে ওই বাড়িতে আটকেপড়া ২০ জনকে উদ্ধার করা হয়। আত্মঘাতী হামলায় নিহত হয় এক নারীসহ ৫ জঙ্গি।

এ সময় সেখান থেকে দুইজনকে আটক করা হয়। তাদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, ঘটনাস্থল থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে সীতাকুণ্ড ডিগ্রি কলেজের পেছনে প্রেমতলা চৌধুরী পাড়ার ‘ছায়ানীড়’ নামে অপর একটি আস্তানার সন্ধান পায় পুলিশ। সেখান থেকে এক জঙ্গি দম্পতিকে আটক ও তাদের চার মাস বয়সী এক শিশুকে উদ্ধার করা হয়। উভয় অভিযানে আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর বেশ কয়েকজন সদস্য আহত হন।

আশকোনায় আত্মঘাতী হামলা:
গত ১৭ মার্চ রাজধানীর আশকোনায় র‌্যাব নির্মাণাধীন কার্যালয়ে আত্মঘাতী হামলায় র‌্যাবের দুই সদস্য আহত হন। প্রাণ যায় হামলাকারীর। এই আত্মঘাতী বিস্ফোরণে নিহত জঙ্গি ফরিদপুরের জুয়েল রানা।

অপারেশন টোয়াইলাইট: 
সিলেটের দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ি এলাকার আতিয়া মহলে ২৬-২৮ মার্চ সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডোরা ‘অপারেশন টোয়াইলাইট’ পরিচালনা করেন। এতে এক নারীসহ চার জঙ্গি আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিহত হয়।

অপারেশন হিটব্যাক:
গত ২৮ মার্চ রাতে মৌলভীবাজারের নাসিরপুরে জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালানো হয়। দুদিনের এ অভিযানের নাম দেয়া হয় ‘অপারেশন হিটব্যাক’। এই আস্তানায় শিশু ও নারীসহ সাতজন নিহত হয়।

অপারেশন ম্যাক্সিমাস:
২৮ মার্চ মৌলভীবাজারের বড়হাটে আরো একটি জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পাওয়া যায়। ৩০ ও ৩১ মার্চ ‘অপারেশন ম্যাক্সিমাস’ পরিচালনা করে কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। এতে আস্তানায় থাকা তিন জঙ্গি নিহত হয়। তাদের মধ্যে দুজন পুরুষ ও একজন নারী ছিলেন।

খিলগাঁয়ে চেকপোস্টে হামলা:
আশকোনায় র‌্যাব ক্যাম্পে আত্মঘাতী হামলার এক দিন পর গত ১৮ মার্চ ভোরে খিলগাঁও নন্দীপাড়ার শেখের জায়গায় র‌্যাবের চেকপোস্টে হামলার ঘটনা ঘটে। বিস্ফোরণে র‌্যাবের দুই সদস্য আহত হন। র‌্যাবের গুলিতে নিহত হন হামলাকারী। ওই ব্যক্তি র‌্যাব সদস্যদের দিকে এগিয়ে এসে ককটেল নিক্ষেপ করে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। পরে ধাওয়া দিলে র‌্যাব সদস্যদের দিকে তিনি গুলিবর্ষণ করে। র‌্যাব পাল্টা গুলি চালালে ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়।

বিমানবন্দর গোলচত্বরে আত্মঘাতী হামলা: 
আশকোনায় র‌্যাব ক্যাম্প ও খিলগাঁওয়ে র‌্যাব চেকপোস্টে আত্মঘাতী হামলার সাত দিনের মাথায় অর্থাৎ ২৪ মার্চ হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সামনে চেকপোস্টে আত্মঘাতী হামলার ঘটনা ঘটে। এতে ঘটনাস্থলেই নিহত হয় অজ্ঞাতপরিচয় হামলাকারী।

অপারেশন স্ট্রাইক আউট:
২৯ মার্চ কুমিল্লার কোটবাড়ীতে জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালায় পুলিশ। এই অভিযানের নাম ‘অপারেশন স্ট্রাইক আউট’। তবে সেখানে কোনো জঙ্গি পাওয়া যায়নি।

অপারেশন সাউথ প:
২১ এপ্রিল ঝিনাইদহের পোড়াহাটি গ্রামে জঙ্গি আবদুল্লাহর বাড়ি ঘিরে রাখে পুলিশ। পরদিন সেখানে ‘অপারেশন সাউথ প’ শুরু হয়। অপারেশনে কোনো জঙ্গি না পেলেও ওই বাড়ি থেকে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক জব্দ করা হয়।

অপারেশন ঈগল হান্ট:
২৬ এপ্রিল চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে অভিযান চালায় কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। দুদিনের অপারেশনে ঈগল হান্টে চার জঙ্গি নিহত হয়।

অপারেশন সান ডেভিল:
১০ মে মধ্যরাতে রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালায় পুলিশ। সেখানে পাঁচ জঙ্গি নিহত হয়। জঙ্গি হামলায় এক ফায়ার সার্ভিসকর্মীও প্রাণ হারান।

অপারেশন সাটল স্পিট:
৭ মে ঝিনাইদহের মহেশপুরের বজরাপুরে জঙ্গি আস্তানায় কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের ‘অপারেশন সাটল স্পিট’ পরিচালিত হয়। এতে নব্য জেএমবির দুই জঙ্গি নিহত হয়। নিহত দুই জঙ্গি আবদুল্লাহ ও তুহিন ছিলেন ধর্মান্তরিত মুসলিম।

ঝিনাইদহে আরো দুটি অভিযান:
১৬ মে ঝিনাইদহ সদরের চুয়াডাঙ্গা গ্রামে দুটি আস্তানায় অভিযান চালায় র‌্যাব। অভিযানে ওই দুই আস্তানার পাঁচটি স্থান থেকে দুটি সুইসাইড ভেস্ট, পাঁচটি শক্তিশালী বোমা, ১৮টি ডিনামাইট স্টিক, বোমা তৈরির ১৮৬টি পিভিসি সার্কিট, চার ড্রাম রাসায়নিক দ্রব্য ও একটি অ্যান্টিমাইন জব্দ করা হয়। দুজনকে গ্রেপ্তারও করা হয়।

শোক দিবসের অনুষ্ঠান হামলার পরিকল্পনা:
ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠান কেন্দ্র করে জঙ্গি হামলার পরিকল্পনা ছিল নব্য জেএমবি। ‘আগস্ট বাইট’ অভিযানে সেই পরিকল্পনা নস্যাৎ করে দেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ওই ঘটনায় পান্থপথের হোটেল ওলিও ইন্টারন্যাশনালে আত্মঘাতী হয়ে মারা যায় জঙ্গি সাইফুল ইসলাম নিলয়। 

পরে পুলিশ জানায়, হামলার মূল পরিকল্পনাকারী ও অর্থ সরবরাহকারীর নব্য জেএমবির শীর্ষস্থানীয় নেতা আকরাম হোসেন খান নিলয়। পরে ওই আত্মঘাতী হামলার পেছনে অর্থ জোগানের অভিযোগে গুলশান থেকে নিলয়ের পরিবারের তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এই জঙ্গি নিলয়ের হাত ধরেই পুরো পরিবারটি নব্য জেএমবিতে যোগ দেয়।

মিরপুর অভিযান: 
৮ সেপ্টেম্বর রাজধানীর মিরপুর মাজার রোডে জঙ্গিবিরোধী বড় ধরনের অভিযান পরিচালিত হয়। সেখানে আত্মঘাতী হয়ে আগুনে পুড়ে জঙ্গি আবদুল্লাহ ও তার দুই সহযোগী, দুই স্ত্রী ও দুই সন্তানসহ সাতজন মারা যায়। এরপর ৯ অক্টোবর যশোরের আরেকটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে গুলশান হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী জঙ্গিনেতা মাইনুল ইসলাম মুসার (বন্দুকযুদ্ধে নিহত) বোন খাদিজাকে গ্রেপ্তার করা হয়। আর গত ২৫ অক্টোবর যশোরের একটি আস্তানা থেকে গ্রেফতার করা হয় বাড়ির মালিক ও জেএমবির আঞ্চলিক সংগঠক মোজাফফর হোসেনকে। জব্দ করা হয় বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক।

সোনালীনিউজ/এআই/জেএ

Wordbridge School
Link copied!