• ঢাকা
  • বুধবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

আশ্রয়শিবিরে তৎপর সশস্ত্র রোহিঙ্গারা


টেকনাফ (কক্সবাজার) প্রতিনিধি আগস্ট ২৫, ২০১৯, ০১:৩৭ পিএম
আশ্রয়শিবিরে তৎপর সশস্ত্র রোহিঙ্গারা

কক্সবাজার : বাংলাদেশে গড়ে ওঠা রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে সশস্ত্র রোহিঙ্গারা সংগঠিত হয়ে তৎপরতা বাড়াচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় এলাকাবাসী ও সাধারণ রোহিঙ্গারা। তারা পাহাড়ি এলাকায় গড়ে তুলেছে একাধিক আস্তানা। সেখানে সশস্ত্র প্রশিক্ষণও দেওয়া হচ্ছে বলে দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদের।

জানা গেছে, রাতের বেলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আশ্রয়শিবিরের প্রধান সড়কগুলোতে তৎপর হলেও রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা অভ্যন্তরীণ সড়কে অবস্থান নেন। এতে তাদের কৌশল বা কর্মকাণ্ডগুলো সবার অজানা থেকে যায়।

ফলে এসব সশস্ত্র রোহিঙ্গারা শিবিরগুলোতে আধিপত্য বিরাজ করছে। আধিপত্য বিস্তার করা গ্রুপগুলো শিবিরে আরসা বা আল-অ্যাকিন নামে ডাকা হয়। এদের অবস্থা দেখলেই বোঝা যায় এরা সুসংগঠিত ও প্রশিক্ষিত।

রোহিঙ্গা শিবিরের প্রতিটি ব্লকে রাত্রিকালীন পাহারাও চালু করেছে এই গ্রুপগুলো। মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসার পর প্রথম দিকে আরসা নেতা ও সদস্যরা আত্মগোপনে ছিল। আবার কেউ কেউ স্থান পরিবর্তন করে শিবিরেও অবস্থান নিয়েছিল।

কিন্তু সম্প্রতি কয়েক মাসের মধ্যে শিবিরের প্রতিটি ব্লকে মিয়ানমারের মতো কমিটি গঠন করা হয়েছে। এরা ধর্ম প্রচারের নামে এক মসজিদ থেকে অন্য মসজিদে অবস্থান নিয়ে থাকে। মসজিদে বসেই প্রয়োজনীয় সলাপরার্মশ করে থাকে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের সংঘবদ্ধ ছিল। সেখান থেকে পালিয়ে আসার পর প্রথম দিকে কৌশলী আশ্রয় নিলেও ধীরে ধীরে শিবিরে আধিপত্য গ্রহণ করে।

 শিবিরের হেড মাঝি, ব্লক মাঝি ও সাব-মাঝির ৯০ ভাগই আরসা সমর্থক বা সদস্য। শিবিরের বিচার সালিশ থেকে শুরু করে যাবতীয় কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ করছে এসব রোহিঙ্গা নেতা।

২০১৭ সালের ১ নভেম্বর কুতুপালং শিবিরে গড়ে তোলা হয়েছে আরকান রোহিঙ্গা সোসাইটি পিস অ্যান্ড হিউম্যানরাইট্স (এআরএসপিএইচ) নামের সংগঠন। এই সংগঠনের প্রধান হলেন মুহিব উল্লাহ। তিনি ইতোমধ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা বলে এসেছেন। এরপর রোহিঙ্গারা ‘ভয়েস অব রোহিঙ্গা’ নামে আরো একটি সংগঠন গড়ে তোলে।

প্রথম দিকে এটির সভাপতি হিসেবে রোহিঙ্গা নেতা মো. শামসু দায়িত্বে থাকলেও বর্তমানে মো. রিদোয়ান সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। এ দুটি সংগঠনের নেতৃত্বে এখানে সব রোহিঙ্গা ঐক্যবদ্ধ।

এ প্রসঙ্গে ত্রাণ ও শরণার্থী প্রত্যাবাসন কমিশনার (অতিরিক্ত সচিব) মো. আবুল কালাম  বলেছেন, শিবিরে যাতে আইনশৃঙ্খলা ঠিক থাকে সেজন্য পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর রয়েছে।

এ ছাড়া শিবিরভিত্তিক মোটিভেশন ওয়ার্কও চলছে। যাতে রোহিঙ্গাদের মধ্যে অপরাধী তৈরি না হতে পারে।

এদিকে ২৫ আগস্টকে রোহিঙ্গারা গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন করে আসছে গত বছর থেকে। এ বছরও এ দুটি সংগঠন শিবিরে র্যালি ও জমায়েত করার কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

এআরএসপিএইচ সদস্য হাফেজ ছৈয়দ উল্লাহ এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, উখিয়ার কুতুপালং শিবিরের ডি-ফোর মাঠে সকাল ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত অবস্থান নেবে কয়েক লাখ রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ। এ সময় তারা ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অত্যাচার ও গণহত্যার চিত্র তুলে ধরবেন।

এ প্রসঙ্গে ভয়েস অব রোহিঙ্গা সভাপতি মো. রিদোয়ান বলেন, তারা টেকনাফের ৯টি স্পটে সকাল ৮টা থেকে হাজির হয়ে দ্বিতীয় গণহত্যা স্মরণ দিবস পালন করবে।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ২৪ আগস্ট দিবাগত রাতে মিয়ানমারের রাখাইনে সেনাঘাঁটির ওপর সশস্ত্র হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গা সংগঠন আরসা বা আল অ্যাকিনকে দায়ী করে ও মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রাখাইনে অভিযান শুরু করে।

মিয়ানমারের সেনা সদস্যরা সেখানে গণধর্ষণ ও গণহত্যার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধ শুরু করে। এতে লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে।

বর্তমানে টেকনাফের ৩২ রোহিঙ্গা শিবিরে ১১ লাখের অধিক রোহিঙ্গা অবস্থান করছে। এদের মধ্যে প্রায় পাঁচ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা বায়োম্যাট্রিক নিবন্ধনের আওতায় এসেছে বলে জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা এক বিজ্ঞপ্তিতে নিশ্চিত করেছে।

অন্যদিকে একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে গড়ে ওঠা রোহিঙ্গা সশস্ত্র গ্রুপগুলো বেশিরভাগই ইয়াবা পাচারে জড়িত। রোহিঙ্গা শিবিরভিত্তিক একাধিক গ্রুপ সক্রিয়ভাবে এ কাজ করছে। তবে কেউ এদের বিরুদ্ধে মুখ খোলার সাহস পায় না। এমনকি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এদের বিরুদ্ধে কোনো অ্যাকশনে যায় না। এ

 গ্রুপগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো-আবদুল হাকিম গ্রুপ, কুতুপালং’র ওসমান গ্রুপ, বালুখালীর ইউনুছ প্রুপ, শালবাগান শিবিরে নুর মোহাম্মদ গ্রুপ, লেদা’র রফিক, ছাদেক বেলাল  গ্রুপ।

এ বিষয়ে টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী বলেন, রোহিঙ্গারা দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।

শিবিরগুলোতে দিনে এনজিও ও রাতে রোহিঙ্গারা নিয়ন্ত্রণ করছে। স্থানীয়রা অসহায় হয়ে পড়েছে। তাই রোহিঙ্গাদের নির্দিষ্ট জায়গায় সীমাবদ্ধ রাখা জরুরি। বিশেষ করে পাহাড়ে এদের সশস্ত্র অবস্থান উদ্বেগজনক।

ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের দুজন স্থানীয় নেতাকে খুন করেছে রোহিঙ্গারা সন্ত্রাসীরা। এদের আসল খুনিকে এখনো আটক করা সম্ভব হয়নি।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!