• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আসল প্রার্থী কে?


বিশেষ প্রতিনিধি নভেম্বর ২৮, ২০১৮, ০৯:৩৬ পিএম
আসল প্রার্থী কে?

ঢাকা : নওগাঁ-৫ আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নের চিঠি পেয়েছেন দলটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত আবদুল জলিলের ছেলে নিজাম উদ্দিন জলিল ও আবদুল মালেক। তাদের সমর্থকরা মঙ্গলবার (২৭ নভেম্বর) শহরে পৃথক পৃথক সমাবেশ করেছে। নিজেদের দল থেকে দুজনকেই মনোনয়ন দেয়ায় সেখানকার ভোটারদের প্রশ্ন- মহাজোটের মূল প্রার্থী কে?

গত সোমবার দুপুরে হবিগঞ্জ-১ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয় দেওয়ান শাহনেওয়াজ গাজীকে। ওইদিন রাতে জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন পান জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম মেম্বার ও হবিগঞ্জ জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি আতিকুর রহমান আতিক।

আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি একই রাজনৈতিক জোটে থাকায় একই আসনে দুজনকে মনোনয়ন দেওয়ায় প্রশ্ন উঠেছে, এ আসনে কে হচ্ছেন মহাজোটের প্রার্থী?

হবিগঞ্জ-২ আসন থেকেও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ও হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মজিদ খান। আবার ওই আসনে জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন হবিগঞ্জ জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক শংকর পাল। এই নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত ভোটাররা।

মৌলভীবাজার-৪ আসনে বিএনপি ও গণফোরামের প্রার্থী সংখ্যা তিন। দুজন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হাজী মুজিবুর রহমান চৌধুরী ও তার ছেলে মুঈদ আশিক চিশতি। অন্যজন হলেন ড. কামাল হোসেনের গণফোরামের প্রেসিডিয়াম সদস্য হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতা, মৌলভীবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি অ্যাডভোকেট শান্তি পদ ঘোষ। এখন এই আসন থেকে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে শেষ পর্যন্ত কে থাকছেন তা নিয়েই আলোচনায় ব্যস্ত ভোটাররা।

শুধু নওগাঁ কিংবা হবিগঞ্জ কিংবা মৌলভীবাজার নয়, আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি থেকে একই আসনে দুজন করে মনোনয়ন পেয়েছেন অন্তত ১০ সংসদীয় আসনে।

অন্যদিকে, বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্ট থেকে এখন পর্যন্ত ঘোষিত প্রায় সব আসনে মনোনয়নের চিঠি পেয়েছেন দুজন কিংবা তিনজন। তাতে ভোটাররা বুঝতে পারছেন না শেষ পর্যন্ত প্রার্থী হিসেবে কারা থাকছেন। একই আসনে দুজনকে মনোনয়ন দেওয়ায় গ্রুপিং ও রেষারেষি বাড়ছে। তবে আসনভেদে মূল প্রার্থী কে থাকছেন তা জানতে অপেক্ষা করতে হবে মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেছেন, বিএনপি কিংবা ঐক্যফ্রন্ট মামলা-হামলার কারণে হয়তো আসনভেদে একাধিক প্রার্থী রেখেছে। যাতে একজনের মনোনয়ন বাতিল হলে অন্যজনের মনোনয়ন বৈধ হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি দীর্ঘদিন ধরে এক ছাদের নিচে বাস করে প্রার্থী মনোনয়নে জটিলতা তৈরি করবে কেন? তাদের তো আগে থেকেই সিদ্ধান্ত নিয়ে রাখার কথা- কে কোন আসনে প্রার্থী হবেন।

বিএনপি বলছে, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি নিয়ে সময় বেশি গেছে। এ ছাড়া সোমবার আওয়ামী লীগ তাদের দলীয় প্রার্থীদের নাম আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করার কথা থাকলেও তা এখন পর্যন্ত করেনি। আওয়ামী লীগের প্রার্থী নিয়ে লুকোচুরির কারণে প্রার্থীদের নাম প্রত্যাহারের আগ পর্যন্ত বিএনপি তাদের প্রার্থীদের নাম গোপন রাখার চেষ্টা করছে।

বিএনপির একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সারা দেশে বিএনপির বহু নেতার নামে মামলা আছে। অনেকে ‘মিথ্যা’ মামলায় পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এ কারণে বিভিন্ন আসনে একাধিক প্রার্থীর নাম রাখা হয়েছে। একজন বাদ পড়লে যেন ওই আসনে দ্বিতীয়জন কিংবা তৃতীয়জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন। এ কারণে মূল প্রার্থীর মনোনয়নের চিঠি নিয়েও একটু বেশি সময় নেওয়া হচ্ছে।

আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, দলীয় চিঠি দেওয়া হয়েছে এমন আসনেও জোটের শরিকদের বরাদ্দ দেওয়া হতে পারে। মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন পর্যন্ত এই সুযোগ থাকছে। জাতীয় পার্টিও বলছে, আসন চূড়ান্ত হলে অন্যদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করা হবে। তবে জাতীয় পার্টি এমন কথা বললেও সোমবার বিক্ষোভের কারণে পার্টি মহাসচিব প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করতে পারেননি।

আওয়ামী লীগ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, কৌশলগত কারণে মহাজোটের প্রার্থী তালিকা প্রকাশে দেরি হচ্ছে। আর জাতীয় পার্টির প্রেসিডেন্ট এইচএম এরশাদ ও রওশন এরশাদ এসব জটিলতা থেকে রক্ষা পেতে নিজেদের সরিয়ে ফেলেছেন। এরশাদ ফের সিএমএইচে ভর্তি হয়েছেন। আর রওশন এরশাদ অসুস্থ হয়ে কারো সঙ্গে দেখা করছেন না।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, প্রায় ২ হাজার ৮শ মনোনয়নপত্র বিক্রি করে, চূড়ান্ত মনোনয়নের জন্য প্রথমে তিনশ ও পরে দুইশ প্রার্থীকে বাছাই করেছিল জাতীয় পার্টি। তবে এবার ৪৭ আসনে দলের প্রার্থীরা মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। কিন্তু মহাজোটের দিক থেকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না আসায় জাতীয় পার্টি ঠিক কতগুলো আসনে মনোনয়ন দেবে, তা এখনো নিশ্চিত নয়।

অপরদিকে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের মনোনয়নের চিঠি দেওয়ার পরপরই পরিষ্কার হয়ে যায় যে, পার্টির সিনিয়র নেতা জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু এবার কক্সবাজার-৩ আসনে মহাজোটের প্রার্থী হচ্ছেন। এরপর থেকে সেখানে বিক্ষোভ করছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। পরে ওই আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পাওয়ার দাবি করেছেন বর্তমান সাংসদ সাইমুম সারওয়ার কমল।

জিয়াউদ্দিন বাবলু গত সংসদে চট্টগ্রাম-৯ আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন, যেখানে এবার আওয়ামী লীগ তাদের সাংগঠনিক সম্পাদক চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর ছেলে নওফেল চৌধুরীকে দলীয় প্রার্থী দিয়েছে। তবে এখন ক্ষোভ-বিক্ষোভ যাই থাক জাতীয় পার্টির নেতারা আশা করছেন, মহাজোটের প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পর এসব সমস্যার অবসান হবে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!