• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

আসাম আমার, পশ্চিমবঙ্গ আমার, ত্রিপুরাও আমার


সোনালীনিউজ ডেস্ক নভেম্বর ১৭, ২০১৯, ১০:৪৭ এএম
আসাম আমার, পশ্চিমবঙ্গ আমার, ত্রিপুরাও আমার

ঢাকা: ‘সভা আরম্ভ হবার সাথে সাথেই ১৪৪ ধারা জারি করা হলো। পুলিশ এসে মওলানা সাহেবকে (আব্দুল হামিদ খান ভাসানী) একটা কাগজ দিলো। 

আমি বললাম, "মানি না ১৪৪ ধারা, আমি বক্তৃতা করবো।" মওলানা সাহেব দাঁড়িয়ে বললেন, ‘‘১৪৪ ধারা জারি হয়েছে। আমাদের সভা করতে দেবে না। আমি বক্তৃতা করতে চাই না, তবে আসুন, আপনারা মোনাজাত করুন। আল্লাহু আমিন।’’ মওলানা সাহেব মোনাজাত শুরু করলেন। মাইক্রোফোন সামনেই আছে। আধঘন্টা পর্যন্ত চিৎকার করে মোনাজাত করলেন, কিছুই বাকি রাখলেন না, যা বলার সবই বলে ফেললেন। পুলিশ অফিসার ও সেপাইরা হাত তুলে মোনাজাত করতে লাগলো। আধঘন্টা মোনাজাতে পুরো বক্তৃতা করে মওলানা সাহেব সভা শেষ করলেন। পুলিশ ও মুসলিম লীগ ওয়ালারা পুরো বেয়াকুফ হয়ে গেলো।’ অসমাপ্ত আত্মজীবনী (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান)

‘আসাম আমার , পশ্চিমবঙ্গ আমার , ত্রিপুরাও আমার। এগুলো ভারতের কবল থেকে ফিরে না পাওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মানচিত্র পূর্ণতা পাবে না’ বলেছিলেন মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী

মজলুম জননেতা মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ৪৩ তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ রোববার। ১৯৭৬ সালের ১৭ নভেম্বর ঢাকার পিজি হাসপাতালে (বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। পরে টাঙ্গাইলের সন্তোষে তাকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়।

মজলুম নেতা মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ১৮৮০ সালে সিরাজগঞ্জ ধানগড়া গ্রামে জম্ম গ্রহণ করেন । আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর পিতার নাম শরাফত আলী । তার পিতা অনেক উদার ও আদর্শ মনের একজন ভদ্রলোক ছিলেন । আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর বয়স যখন ছয় তখন তার পিতা মৃত্যু বরণ করেন

আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর বয়স এগার হলো তখন তার মা মৃত্যু বরণ করেন ।তার পর থেকে সে তার চাচার অনুগ্রহে মাদ্রাসায় ভর্তি হলেও লেখা পড়ার পাশাপাশি খেলাধুলা, গান গাওয়া, বক্তৃতা নকল করা তার এইসব বিভিন্ন গুণের কারনে খুব দ্রুত কিছুগুণগ্রাহী জুটে যায়।

আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর সাংগঠনিক প্রতিভা ও ব্রিটিশ রাজত্বের বিরুদ্ধে মনোভাবে শষ্কিত হয়ে জমিদারদের অত্যাচার হতে রক্ষা পাওয়ার জন্য তার স্নেহশীল শিক্ষক মাওলানা আব্দুল বাকী আব্দুল হামিদ খান ভাসানীকে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটে পাঠিয়ে দেন, পীর সৈয়দ নাসির উদ্দিন বোগদাদীর কাছে আধ্যাত্মিক জীবনের শিক্ষার জন্য। সেখান থেকে তার আধ্যাত্মিক জীবনে পাঠ্য শুরু হয়।

আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর বাল্য নাম ছিল চেগা মিয়া । আব্দুল হামিদ খান ভাসানী বিংশশতকী ব্রিটিশ ভারতের অন্যতম তৃণমূল রাজনীতিবিদ ও গণআন্দোলনের অন্যতম নায়ক ছিলেন। এবং আব্দুল হামিদ খান ভাসানী জীবদ্দশায় ১৯৪৭সালে সৃষ্ট পাকিস্তান এবং ১৯৭১সালে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।

তিনি ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট গঠনকারী প্রধান নেতাদের মধ্যে অন্যতম একজন ছিলেন। এবং স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় বিশিষ্ট ভূমিকাও পালন করেন মাওলানা ভাসানী।

তিনি রাজনৈতিক জীবনের বেশীরভাগ সময় মাওপন্থী কম্যুনিস্ট তথা বামধারা রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। তার অনুসারীদের অনেকে সেজন্য তাকে লাল মওলানা নামেও ডাকতেন।

মওলানা ভাসানী ছিলেন একজন দূরদর্শী নেতা এবং পঞ্চাশের দশকেই নিশ্চিত হয়েছিলেন যে পাকিস্তানের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ একটি অচল রাষ্ট্রকাঠামো।

১৯৫৭ সালে কাগমারী সম্মেলনে তিনি পাকিস্তানের পশ্চিমা শাসকদের ওয়ালাকুমুসসালাম বলে সর্বপ্রথম পূর্ব পাকিস্তানের বিচ্ছিন্নতার ঐতিহাসিক ঘণ্টা বাজিয়েছিলেন।

তিনি ইসালামিক শিক্ষার জন্য ১৯০৭ সালে দেওবন্দ যান। এবং সেখানে তিনি দুই বছর অধ্যয়ন করে আসামে ফিরে আসেন । ১৯১৭ সালে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস ময়মনসিংহ সফরে গেলে তার ভাষণ শুনে ভাসানী অনুপ্রাণিত হন। ১৯১৯ সালে কংগ্রেসে যোগদান করে অসহযোগ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে দশ মাস কারাদণ্ড ভোগ করেন মওলানা ভাসানী।

এর পর ১৯২৩ সালে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন স্বরাজ্য পার্টি গঠন করলে ভাসানী সেই দল সংগঠিত করার ব্যাপারেও ভূমিকা পালন করেন । ১৯২৬সালে আসামে প্রথম কৃষক প্রজা আন্দোলনের সুত্রপাতও ঘটান মওলানা ভাসানী।

তার পরে তিনি ১৯২৯ সালে আসামের ধুবড়ী জেলার ব্রহ্মপুত্র ভাসান চরে প্রথম কৃষক সম্মেলন আয়োজন করেন। তখন থেকে তার নাম রাখা হয় ভাসানীর মাওলানা। তারপর থেকে তার নামের শেষে ভাসানী শব্দ যুক্ত হয়।

তিনি ১৯৭৬ সালে ১৭ই নভেম্বর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। তাকে টাংগাইল জেলার সদর উপজেলার উত্তর পশ্চিমে সন্তোষ নামক স্থানে পীর শাহজামান দীঘির পাশে সমাধিস্থ করা হয় । সারা দেশ থেকে আগত হাজার হাজার মানুষ তার জানাযায় অংশ গ্রহণ করেছেন।

সোনালীনিউজ/এইচএন

Wordbridge School
Link copied!