• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
শুনানিতে সাড়া মেলেনি আমন্ত্রিত দল ও প্রার্থীদের

আস্থা সঙ্কটে ঐক্যফ্রন্ট


বিশেষ প্রতিনিধি ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০১৯, ০২:১৯ পিএম
আস্থা সঙ্কটে ঐক্যফ্রন্ট

ঢাকা : প্রত্যাশা পূরণে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে না পারায় আস্থার সঙ্কটে পড়েছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। রাজনৈতিক এই জোটের সবচেয়ে বড় দল বিএনপিতে ফ্রন্ট টিকিয়ে রাখার যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এ জন্যই ঐক্যফ্রন্টের সবশেষ কর্মসূচি গণশুনানিতেও তেমন সাড়া মেলেনি।

ফ্রন্টের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, নির্বাচনের পর থেকে ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের সঙ্গে বিএনপির দূরত্ব বাড়তে থাকে। স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠকগুলোতেও বিএনপির নেতাদের সরব উপস্থিতি দেখা যায়নি। একটি বৈঠকে বিএনপির কোনো প্রতিনিধিই ছিলেন না। আরেকটি  বৈঠকে বিএনপির পক্ষে উপস্থিত ছিলেন শুধু ড. আবদুল মঈন খান। এছাড়া কিছুদিন আগে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ঐক্যফ্রন্টের মানববন্ধনে বিএনপির প্রতিনিধি হিসেবে কেবল তাকেই দেখা যায়।

ওই সূত্রের দাবি, বিরাগভাজন হয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটি থেকে নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছেন দলের স্থায়ী কমিটির প্রভাবশালী দুই সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। পরে স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও ড. আবদুল মঈন খানকে যুক্ত করা হয় স্টিয়ারিং কমিটিতে। কিন্তু ড. মঈন খানকে ঐক্যফ্রন্টের কর্মসূচিতে দেখা গেলেও গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এখনো কোনো বৈঠকে যোগ দেননি।

এদিকে গত শুক্রবার ঐক্যফ্রন্টের গণশুনানির কর্মসূচিতেও সাড়া মেলেনি বললেই চলে। সব আসনের প্রার্থীদের গণশুনানিতে অংশ নেওয়ার জন্য বলা হলেও বিএনপির অনেক সিনিয়র নেতার পাশাপাশি অধিকাংশ প্রার্থীই শুনানিতে যাননি। ধানের শীষের প্রার্থীদের বাইরে নির্বাচনে অংশ নেওয়া আরো ১৮টি দলের নেতাদের গণশুনানিতে আমন্ত্রণ জানানো হয়। এর মধ্যে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বাম গণতান্ত্রিক জোট,বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টি, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগ, গণসংহতি আন্দোলন এবং সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। ২০-দলীয় জোটের চারটি দল ছাড়া কেউই যোগ দেয়নি।

নির্বাচনে ঐক্যফন্টের কিছু ভূমিকার কারণে অনেকে যোগ দেয়নি গণশুনানির কর্মসূচিতে। আর যোগ দেওয়া অনেকের মধ্যেও ছিল ক্ষোভ। নির্বাচনে অনিয়মের শুনানির চেয়ে নিজেদের কী দুর্বলতা ছিল তার শুনানির প্রয়োজন বলেও দলের অনেকে মত দিয়েছেন।

ঐক্যফ্রন্টের ভবিষ্যৎ নিয়ে বিএনপির সিনিয়র একাধিক নেতা বলেন, তারা ঐক্যফ্রন্টের ভবিষ্যৎ নিয়ে সন্দিহান। তাদের অভিযোগ, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনের অংশ হিসেবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গেলেও ঐক্যফ্রন্ট নেতারা শুধু ভোটেই মনোযোগী ছিলেন। ফ্রন্টের অনেক প্রার্থী খালেদা জিয়ার মুক্তি নিয়ে কোনো কথা বলেননি। এমনকি খালেদা জিয়ার মুক্তিসংবলিত লিফলেটও তারা বিতরণ করেননি। এ নিয়ে বিএনপির মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে অনেক প্রশ্ন ছিল। কোথাও কোথাও বিএনপি নেতাকর্মীরা ফ্রন্ট নেতাদের প্রচারণায় পাশে পাননি। নির্বাচনের পর এই ফ্রন্টের কোনো যৌক্তিকতা আছে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন দলের অধিকাংশ নেতাকর্মীর। পক্ষান্তরে বিএনপির যেকোনো পরামর্শই রাখতে নানা প্রশ্ন তুলেছেন ফ্রন্ট নেতারা।

এদিকে খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলন বেগবান করার বিষয়ে আন্তরিকতা দেখায়নি ঐক্যফ্রন্ট। নির্বাচনের আগে হরতাল, নির্বাচন কমিশন ঘেরাওসহ কয়েকটি আন্দোলনের প্রস্তাব দিলেও কর্মসূচিতে যেতে রাজি হয়নি তারা। আর নির্বাচনের পরও কোনো কর্মসূচিতে যেতে চায়নি। শুরুতে ট্রাইব্যুনালে মামলা এবং নাগরিক সংলাপের কর্মসূচি দিলেও তা বাস্তবায়নে আন্তরিকতা দেখায়নি। আর কর্মসূচিগুলোর জন্য একের পর এক তারিখ পরিবর্তন করে পুরো বিষয়টিকে সাধারণ পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। এছাড়া বিতর্কিত একটি নির্বাচন হওয়ার পরও সংসদে যাওয়া নিয়ে ফ্রন্টের সিদ্ধান্ত মানতে চাচ্ছেন না গণফোরামের দুই প্রার্থী।

ঐক্যফ্রন্টের এই সূত্রের দাবি, মূলত দুটি কারণে নির্বাচনের আগেই বিএনপির সঙ্গে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেনের ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি হয়। জামায়াতের ২২ প্রার্থীর হাতে ধানের শীষ প্রতীক তুলে দেওয়া এবং আন্দোলনের কোনো বিষয়ে বিএনপির আন্তরিকতা না দেখানো। আর নির্বাচনের পর দুটি কারণে বিএনপির সঙ্গে  টানাপড়েন সৃষ্টি হয়।

এগুলো হচ্ছে- জোটের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে গণফোরামের দুই বিজয়ী প্রার্থীর সংসদে শপথ নেওয়ার ইচ্ছা এবং ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর তারেক রহমানকে নেতৃত্ব থেকে সরানোর প্রকাশ্যে পরামর্শ দেওয়া। নির্বাচনের আগে ও পরের এই চারটি কারণ ছাড়া অন্য কোনো বিষয়ে বিএনপির সঙ্গে ঐক্যফ্রন্ট শীর্ষ নেতাদের মনোমালিন্য হয়নি। অথচ ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতাদের অনিচ্ছার কারণে আন্দোলন হচ্ছে না বলে প্রচার করা হচ্ছে।

এদিকে ঐক্যফ্রন্টের অভ্যন্তরে নির্বাচন বিপর্যয়ের জন্য একে অপরকে ঘায়েলের জন্য দোষারোপের রাজনীতি করছেন বলেও অনেকে অভিযোগ করছেন। ফ্রন্টের হাইকমান্ডের কাছে নানা জবাবদিহিতা চাওয়া হচ্ছে। গণশুনানি শেষে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মনিরুল হক চৌধুরী বাংলাদেশেরে খবরকে বলেন, নির্বাচনে ঐক্যফ্রন্টের জনসমর্থন ছিল শতভাগ। কিন্তু কেন্দ্রীয় নেতারা কিছু করতে পারেননি কেন, তা জানা দরকার। এর জন্য আরেকটি গণশুনানি বা সমাবেশ দরকার। কেন কিছু করা গেল না তার জন্য ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতাদের কাছে জবাব চান তিনি।

শুধু উচ্চপর্যায়েই নয়, বিএনপির অধিকাংশ পর্যায়েই ঐক্যফ্রন্টের ওপর আর আস্থা রাখা যাচ্ছে না বলে মত।

এ বিষয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান বলেন, নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্তে ঐক্যফ্রন্টেরই ভূমিকা ছিল। শীর্ষ নেতাদের কাছে নির্বাচনের বিষয়ে যে তথ্য ছিল, তার কোনোটিই সঠিক হয়নি। তাহলে কারা নেতাদের বিভ্রান্ত করল, কাদের স্বার্থে নির্বাচনে অংশ নিল- এসব প্রশ্ন এখন সবার। সব মিলে ঐক্যফ্রন্টের কর্মকাণ্ডে এখন আর আস্থা রাখা যাচ্ছে না বলেও মত দেন তিনি।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!