• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ইতেকাফ ঈমান বৃদ্ধির সুযোগ


 ধর্মচিন্তা ডেস্ক মে ২৫, ২০১৯, ১১:৩৭ এএম
ইতেকাফ ঈমান বৃদ্ধির সুযোগ

ঢাকা: ইতেকাফ একটি মহান ইবাদত। এটি ঈমান বৃদ্ধির প্রধান সুযোগ। ইতেকাফ অবস্থায় বান্দা নিজেকে আল্লাহর ইবাদতের জন্য দুনিয়ার অন্যান্য সব বিষয় থেকে আলাদা করে নেয়। আল্লাহর নৈকট্য লাভের নিরন্তর সাধনায় মশগুল হয়ে পড়ে। সবার উচিত এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে নিজের ঈমানি চেতনাকে প্রাণিত করে তোলা। ইতেকাফকারীর অন্তরে আল্লাহর ভালোবাসা বৃদ্ধি পায়। দুনিয়ার প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি করে। ইতেকাফের কারণে প্রবৃত্তির চাহিদা লোপ পায়। ফলে কোরআন তেলাওয়াত ও দ্বীনি কথাবার্তা নিজের কাছে অত্যন্ত প্রিয় হয়ে ওঠে। অন্তর হয় কলুষমুক্ত। এভাবে ইতেকাফ একজন মোমিনের ঈমানকে সতেজরূপে গড়ে তোলে। 

ইতেকাফের পরিচয় : ইতেকাফ অর্থ কোনো স্থানে নিজেকে আবদ্ধ রাখা। শরিয়তের পরিভাষায় বিশেষ নিয়তে বিশেষ অবস্থায় আল্লাহ তায়ালার আনুগত্যের উদ্দেশ্যে মসজিদে অবস্থান করাকে ইতেকাফ বলা হয়। ইতেকাফ তিন প্রকার। ১. ওয়াজিব : ইতেকাফ করার জন্য মান্নত বা নজর করা হলে তা পূর্ণ করা ওয়াজিব। এই ইতেকাফের জন্য রোজা রাখা শর্ত। রোজাবিহীন ওয়াজিব ইতেকাফ আদায় হবে না। ২. সুন্নতে মুয়াক্কাদা কেফায়া : রমজানের শেষ দশ দিন ইতেকাফ করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা কেফায়া। অর্থাৎ মসজিদের অধিবাসীদের মধ্যে কোনো একজন ইতেকাফ করলে, অন্য লোকরা গোনাহ থেকে বেঁচে যাবে। আর যদি কেউ না করে, তখন সবাই গোনাহগার হবে। এই ইতেকাফের জন্যও রোজা শর্ত। এটি বিশ রমজানের সূর্যাস্ত থেকে ঊনত্রিশ বা ত্রিশ রমজানে ঈদুল ফিতরের চাঁদ উদয় হওয়া পর্যন্ত বাকি থাকে। ৩. মুস্তাহাব : ওয়াজিব ও সুন্নত ইতেকাফ ছাড়া অপর ইতেকাফ মুস্তাহাব। এর জন্য রোজা শর্ত নয়। আর এ ইতেকাফের জন্য কোনো নির্দিষ্ট সময়ও নেই। (হেদায়া : ১/২২৯; ফতোয়া শামি : ২/১৭৮)।

কোরআনে ইতেকাফের গুরুত্ব : পবিত্র কোরআন মানবজাতির সব বিষয়ের পথপ্রদর্শক। কোরআন ছাড়া মোমিনের জীবন অচল। সে হিসেবে ইতেকাফের আলোচনাও মহাগ্রন্থ আল কোরআনে উল্লেখিত হয়েছে, যা একজন মোমিনের অন্তরে ইতেকাফ করার প্রতি অধিক আগ্রহ সৃষ্টি করবে এবং ঈমানকে বলবান করবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, আমি ইবরাহিম ও ইসমাইলের কাছে অঙ্গীকার নিয়েছিলাম যে, তোমরা আমার গৃহকে তাওয়াফকারী ও ইতেকাফকারী এবং রুকু ও সিজদাকারীদের জন্য পবিত্র রাখো। (সূরা বাকারা : ১২৫)।

হাদিসে ইতেকাফের ফজিলত : মহানবী (সা.) মদিনায় অবস্থানকালে প্রতি বছর ইতেকাফ পালন করেছেন। দ্বীনি দাওয়াত, তালিম-তরবিয়ত ও জিহাদে ব্যস্ত থাকা সত্ত্বেও তিনি রমজানে ইতেকাফ ছাড়েননি। তবে ইসলামের ইতিহাসে শুধু একবার ইতেকাফ ছাড়ার কথা রয়েছে। এছাড়া প্রতি বছর ইতেকাফ পালন করেছেন মহানবী (সা.)। ইতেকাফের ফজিলতের জন্য রাসুল (সা.) এর এ ধারাবাহিকতাই যথেষ্ট। 

একজন মুসলমান ইতেকাফ পালন করার কারণে দুনিয়ার যাবতীয় গোনাহ থেকে মুক্ত থাকে। সাধারণত লোকরা চোখের কুদৃষ্টির কারণেই ছোট-বড় অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। কিন্তু ইতেকাফের দরুন চোখের দৃষ্টি হেফাজত হয়। সেই সঙ্গে অন্তরও পরিশুদ্ধ হয়ে যায়। আর ইতেকাফকারীর সওয়াব বৃদ্ধি করে দেওয়া হয়। এ প্রসঙ্গে রাসুল (সা.) বলেন, ‘সে গোনাহগুলো থেকে বেঁচে থাকে এবং তার জন্য সওয়াব লেখা হয় ওই ব্যক্তির মতো, যে বাইরে অবস্থান করে যাবতীয় ভালো কাজ করে।’ (ইবনে মাজাহ : ১৮৫৩)।

ইসলামে নারীদের ইতেকাফ : ইসলাম মোমিন নারীদের পুরুষের মতো ইতেকাফ পালন করার অনুমতি দিয়েছে। তবে পুরুষরা মসজিদে ইতেকাফ পালন করবে। আর নারীরা আপন ঘরের নির্জন স্থানে ইতেকাফ করবে। যাতে একজন মোমিন নারী রমজান মাসে ইতেকাফ করার মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি লাভ করতে পারে। মেয়েদের ইতেকাফের কথা হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। যেমন হজরত আয়েশা (রা) বলেন, নবী করিম (সা.) ইন্তেকাল পর্যন্ত রমজানের শেষ দশকে ইতেকাফ করেছেন। অতঃপর তার স্ত্রীরাও ইতেকাফ করেছেন। (বোখারি : ২০৬৫; মুসলিম : ২৮৪১)।

ইতেকাফের আমল : সাধারণত একজন মুসলমান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করার লক্ষ্যে ইতেকাফ করে। ইতেকাফকারী সবসময় ইবাদতে লিপ্ত থাকে। দুনিয়ার সমুদয় ব্যস্ততাকে বাদ দিয়ে শুধু আল্লাহর নৈকট্য লাভের সাধনায় থাকে। তাই ইতেকাফকারীকে কোরআন তেলাওয়াত, জিকির, দরুদ পাঠে মশগুল থাকা চাই। এ ছাড়াও পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পাশাপাশি তাহাজ্জুদ, আওয়াবিন, এশরাক, চাশত ইত্যাদি সুন্নত নামাজও বেশি পরিমাণে নিয়মিত আদায় করতে পারে। ইতেকাফ অবস্থায় রাসুল (সা.) বেশি পরিমাণে কোরআন তেলাওয়াত করতেন। যেমনÑ হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ছিলেন মানুষের মধ্যে সর্বাপেক্ষা উদার মনের। আর তার এ উদারতা রমজান মাসে অধিক পরিমাণে বেড়ে যেত। রমজান মাসে প্রত্যেক রাতেই হজরত জিবরাইল (আ.) তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন এবং নবী করিম (সা.) তাকে কোরআন শোনাতেন। (বোখারি : ১৯৩৬)।

সোনালীনউজ/ঢাকা/এসআই

Wordbridge School
Link copied!