• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
বিস্ফোরক তথ্য

ইভিএম কারচুপি করেই ক্ষমতায় মোদি!


আন্তর্জাতিক ডেস্ক জানুয়ারি ২২, ২০১৯, ০১:২০ পিএম
ইভিএম কারচুপি করেই ক্ষমতায় মোদি!

ঢাকা : ভারতের ২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনে গোপন প্রযুক্তির মাধ্যমে ইভিএমে কারচুপি করা হয়েছিল। ইভিএমে ‘হ্যাক’ করে বদলে দেওয়া হয়েছিল নির্বাচনের ফলাফল। প্রযুক্তির মাধ্যমে নির্বাচনের ফল বদলে দেওয়ার গোপন ঘটনা জেনে যাওয়াতেই খুন করা হয়েছিল বিজেপি নেতা গোপীনাথ মুন্ডেকে।
সোমবার (২১ জানুয়ারি) লন্ডনে এক সাংবাদিক বৈঠকে এই চাঞ্চল্যকর দাবি করলেন মার্কিন সাইবার বিশেষজ্ঞ সৈয়দ সুজা।

ইভিএম দুর্নীতি নিয়ে এর আগেও বিরোধীদের তরফে উঠেছে নানান অভিযোগ। গত শনিবার কলকাতায় ব্রিগেড সমাবেশেও জোর গলায় ইভিএম ব্যবস্থার মাধ্যমে নির্বাচন পরিচালনার বিরুদ্ধে মুখ খুলেছিলেন ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা ফারুক আবদুল্লাহ। ইভিএমকে ‘চোর মেশিন’ বলেও ব্রিগেড সমাবেশে আওয়াজ তুলেছিলেন ফারুক।

দেশের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস থেকে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আমআদমি পার্টি হয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেস-- দেশের বিরোধ রাজনীতিকরা ইভিএম নিয়ে যে অভিযোগ বারবার করছেন, এমনকী নির্বাচন কমিশনের দরবারও করেছেন, সোমবার তাতেই সিলমোহর দিলেন মার্কিন সাইবার বিশেষজ্ঞ সৈয়দ সুজা। জোর গলাতেই তিনি দাবি করেছেন ভারতের বৈদ্যুতিন ভোটিং মেশিন, ইভিএমে কারচুপি সম্ভব।

কী ভাবে এতটা দৃঢ়তার সঙ্গে এই দাবি করছেন সুজা? কারণ, হাতের তালুর মতোই এই ভোটিং মেশিন তার চেনা। ভারতে ব্যবহৃত ভোটিং মেশিনের নকশা যারা করেছেন, সেই দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন মার্কিন এই সাইবার বিশেষজ্ঞ।

যে বিশেষজ্ঞ দলটি ২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনে ভারতের নির্বাচন কমিশনকে ইভিএম (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন) সরবরাহ করেছিল, সৈয়দ সুজা সেই দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন বলে জানান এই সাংবাদিক সম্মেলনে।

শুধু তাই নয়, প্রযুক্তির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনের ব্যবহার করা ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে কী ভাবে কারচুপি করা যায়, তা-ও করে দেখিয়েছেন সৈয়জ সুজা। লন্ডনে এই সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করে ইউরোপের ইন্ডিয়ান জার্নালিস্টস অ্যাসোসিয়েশন। এই সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কংগ্রেস নেতা কপিল সিব্বল। যদিও এই অভিযোগ ‘উস্কানিমূলক’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে ভারতের নির্বাচন কমিশন।

২০১৪ সালের ২৬ মে মোদি সরকারের পঞ্চায়েত এবং গ্রামোন্নয়নমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন গোপীনাথ মুন্ডে। এক সপ্তাহ পরেই, ৩ জুন নয়া দিল্লির কাছে পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় তার। সৈয়দ সুজার দাবি, ‘এটি দুর্ঘটনা নয়, পরিকল্পিত খুন। ইভিএমে কারচুপির ঘটনা ‘ফাঁস’ করার কথা ভাবছিলেন গোপীনাথ। সেই কারণেই সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল তাকে।’

শুধু গোপীনাথ মুন্ডে নয়, সৈয়দ সুজার কাছ থেকে ইভিএম দুর্নীতির বিষয়টি জেনেছিলেন সাংবাদিক গৌরী লঙ্কেশ। তিনিও বিষয়টি ফাঁস করে দেওয়ার কথা ভাবছিলেন। সেই রিপোর্ট প্রকাশের আগেই অজ্ঞাতপরিচয় আততায়ীর গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছিল তার দেহ। এই হত্যাও পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র বলে দাবি করেছেন এই মার্কিন সাইবার বিশেষজ্ঞ।

শুধু ২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনই নয়, ইভিএমে কারচুপি করা হয়েছিল উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র এবং গুজরাত বিধানসভার নির্বাচনেও। লন্ডন থেকে সরাসরি লাইভ সম্প্রচারে সাংবাদিক বৈঠক করে এই দাবি করেন সৈয়দ সুজা। নিম্ন কম্পাঙ্কের তরঙ্গের মাধ্যমে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে কারচুপি করতে বিজেপির তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি) সেলকে সাহায্য করেছিল রিলায়েন্স কমিউনিকেশনস।

ইভিএমে কারচুপি করা যায় কি না তা জানতে চেয়ে আম আদমি পার্টি, সমাজবাদী পার্টি এবং বহুজন সমাজ পার্টির তরফে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল বলে দাবি করেছেন সুজা।

কী ভাবে ভারতের নির্বাচন কমিশনের ব্যবহার করা ইভিএমের তথ্য বদলে দেওয়া যায়, লন্ডন থেকে সাংবাদিক সম্মেলনের সরাসরি সম্প্রচারে তা হাতেকলমে করে দেখিয়েছেন এই তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ। তার দাবি, ব্লু টুথ প্রযুক্তির মাধ্যমে ইভিএমের তথ্য বদলানো সম্ভব নয়। কিন্তু গ্রাফাইট দিয়ে তৈরি ‘ট্রান্সমিটার’-এর মাধ্যমে ইভিএমের তথ্যভাণ্ডার বা ডেটাবেস-এ ঢুকে পড়া সম্ভব। ২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনে এই ট্রান্সমিটারই ব্যবহার করা হয়েছিল বলে সুজার দাবি।

ভারতের একের পর এক মুখ্য নির্বাচনী কমিশনার দাবি করেছেন, কোনো তার বা ওয়্যার ছাড়া ইভিএমের ডেটাবেস-এ অদলবদল ঘটানো সম্ভব নয়। কিন্তু সৈয়দ সুজার দাবি, প্রায় সাত হার্টজের নিম্ন কম্পাঙ্কের তরঙ্গ ব্যবহার করে ইভিএম ডেটাবেস-এ ঢুকে পড়া সম্ভব। একমাত্র বিশেষ সামরিক প্রকল্পের ক্ষেত্রেই এই নিম্ন কম্পাঙ্কের তরঙ্গ ব্যবহার করা হয়ে থাকে বলে মন্তব্য করেছেন সৈয়দ সুজা। কিন্তু বিজেপির তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের কাছে এই যন্ত্র ছিল বলেই দাবি সুজার। সারা দেশের ন’টি জায়গা থেকে এই নিম্ন কম্পাঙ্কের তরঙ্গ পাঠিয়ে বদলে দেওয়া হয়েছিল ইভিএমের সমস্ত তথ্য। যাঁরা এই কাজ করেছিলেন, তারা নিজেরাও জানতেন না যে তাদের কাজে বদলে যাচ্ছে সমস্ত নির্বাচনী ডেটাবেস।

সৈয়দ সুজার এই চাঞ্চল্যকর সাংবাদিক বৈঠকের পরই বিবৃতি দিয়েছে ভারতের নির্বাচন কমিশন। সেই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আমরা জানতে পেরেছি, লন্ডনে বলা হয়েছে আমাদের ব্যবহার করা ইভিএমে কারচুপি করা যায়। এই বক্তব্য উস্কানিমূলক এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গে আমাদের ইভিএম বানায় ভারত ইলেকট্রনিকস লিমিটেড এবং ইলেকট্রনিক কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়া লিমিটেড। এ জন্য ২০১০ সালেই বিশেষজ্ঞ কমিটি তৈরি করেছি আমরা। আমাদের বিরুদ্ধে এই মন্তব্য করার জন্য আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যায় কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’

বিজেপির তরফে মুক্তার আব্বাস নকভির মন্তব্য : ‘ নরেন্দ্র মোদিকে সরানোর জন্য সব কিছুই করতে পারে কংগ্রেস। এই সাংবাদিক সম্মেলন তারই প্রমাণ। কপিল সিব্বলের মদতেই এই সব চক্রান্ত করা হয়েছে।’ আগামী লোকসভা নির্বাচনে নিজেদের পরাজয় আঁচ করতে পেরেই এই ‘হরর শো’- আয়োজন করেছে কংগ্রেস, এমন মন্তব্যও করেছেন তিনি।

ইভিএম দুর্নীতি নিয়ে এই খবর সামনে আসার পর টুইট করেছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। বলেছেন, গণতন্ত্র রক্ষার স্বার্থে বিরোধী দলগুলির তরফে নির্বাচন কমিশনের কাছে পুরো বিষয়টি তুলে ধরা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। আমাদের গণতন্ত্র রক্ষা করতেই হবে। আপনাদের প্রতিটি ভোট মূল্যবান। #UnitedIndiaAtBrigade এর পর সকল বিরোধী দল ইভিএমের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছি। আমরা সকলে একসঙ্গে কাজ করছি। ১৯ জানুয়ারি আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি এই বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের সামনে তুলে ধরব। হ্যাঁ, প্রতিটি ভোট মুল্যবান। সূত্র : সংবাদসংস্থা

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!