• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
আরপিও সংশোধনী প্রস্তাব আইনমন্ত্রণালয়ে

ইভিএম ব্যবহারে পিছু হটছে ইসি!


বিশেষ প্রতিনিধি সেপ্টেম্বর ৩, ২০১৮, ০৭:৫১ পিএম
ইভিএম ব্যবহারে পিছু হটছে ইসি!

ঢাকা : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারে কিছুটা পিছু হটছে নির্বাচন কমিশন। বিশেষ করে রোববার (২ সেপ্টেম্বর) গণভবনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া বক্তব্যের পরই নমনীয় হয়েছে নির্বাচন কমিশন। প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বক্তব্যেও নমনীয়তা দেখা গেছে।

ইলেকট্রিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) যুক্ত করে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধনীর খসড়া বিল নির্বাচন কমিশন (ইসি) চূড়ান্ত করার পর থেকেই এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে ওঠে বিরোধী দলগুলো।

অন্যদিকে আওয়ামী লীগ বলছে ‘ভোটে কারচুপি হয়েছে এমন অভিযোগ আনতে পারবে না ভেবেই বিএনপি ইভিএম এর বিরোধীতা করছে’।  

প্রধানমন্ত্রী যা বলেছেন : রোববার (২ সেপ্টেম্বর) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) নিয়ে কথা বলেন। সাংবাদিকদের প্রশ্নে জবাবে তিনি বলেন, তাড়াহুড়া করে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) চাপিয়ে দেয়া যাবে না। এটা নিয়ে আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হোক।

এদিকে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার মেশিন না, জনগণের ওপর ভর করে ক্ষমতায় আসে বলে মন্তব্য করেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। শুক্রবার (৩১ আগস্ট) সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় স্থানীয় জনগণের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়ের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আনিসুল হক এ কথা বলেন। আওয়ামী লীগ ইভিএম মেশিনের মাধ্যমে ভোট জালিয়াতি করে ক্ষমতায় আসবে বলে মন্তব্য করেছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তারই জবাবে আইনমন্ত্রী এসব কথা বললেন।

আনিসুল হক বলেন, ‘আমি একটা কথা বলি, উনারা, বিশেষ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম যেসব কথা বলেন যেগুলোর সঙ্গে তথ্যের, সত্যের কোনো মিল নাই। উনি বলছেন যে, আমরা মেশিনের ওপরে ভর করেছি। আমি উনাকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, আওয়ামী লীগ সব সময় জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েছে। এবং জনগণ প্রত্যক্ষভাবে ভোট দিয়েছে। কোনো মেশিন দ্বারা ভোট দেয় নাই। আর বিএনপি সব সময়ই প্যালেস কন্সপেরেসি (প্রাসাদ ষড়যন্ত্র) করে ক্ষমতায় এসেছে। তো কথা হচ্ছে, আমরা জনগণের ওপরে ভর করি। আমরা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হব ইনশাল্লাহ।’

সিইসি যা বললেন : সোমবার (৩ সেপ্টেম্বর) সকালে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা বলেছেন- আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার রাজনৈতিক দলগুলোর সম্মতির ওপর নির্ভর করছে। তিনি বলেন- জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারে এখনই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নয়। কমিশনের সক্ষমতা, প্রশিক্ষণ, আইন ও রাজনৈতিক দলের সমর্থনের ওপর ভিত্তি করে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার নির্ভর করছে।

তিনি বলেন, ‘স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার শুরু হয়ে গেছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার নির্ভর করবে আইন কানুন, প্রশিক্ষণ ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সমর্থনের ওপর। এখনই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নয়।’

সোমবার (৩ সেপ্টেম্বর) ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার সংক্রান্ত দুই দিনব্যাপি প্রশিক্ষণ কর্মসূচির উদ্বোধনকালে তিনি এসব কথা বলেন।

সিইসি বলেন, ‘আমরা এখন প্রস্তুতিমূলক অবস্থানে রয়েছি। জাতীয় সংসদে যদি আইন পাস হয়, তখন আমাদের প্রশিক্ষিত লোকজনের যদি সক্ষমতা অর্জন হয়, এবং জনগণের কাছে যদি গ্রহণযোগ্য হয়, তাহলে যতটুকু পারব ততটুকু জায়গায় ইভিএম ব্যবহার করব।’

প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার নিয়ে ভোটার ও রাজনৈতিক মহলে উৎকণ্ঠা থাকা স্বাভাবিক। কারণ আমরা এটির ব্যবহার, উপকারিতা সম্পর্কে এখনও তাদেরকে জানাতে পারিনি। পর্যায়ক্রমে তারা সব জানতে পারবেন।

সিইসি বলেন, ইভিএম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যবহার হবে কি হবে না, সেটির চিন্তা আরও পরে হবে। যদি আইন হয়, কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া যায় এবং সব মহলে এর গ্রহণযোগ্যতা পাওয়া যায় তার ওপর নির্ভর করবে। তিনি বলেন, যেকোনো উদ্যোগ নতুন আবিষ্কার বা প্রযুক্তি তা জানার উৎকণ্ঠা থাকবে এটাই স্বাভাবিক। এটা আমরা ইতিবাচক হিসেবেই দেখি।

ইভিএম কেনার বিষয়ে সিইসি বলেন, ইভিএম কেনার বিষয়ে আমাদের কোনো তহবিল থাকবে না। এটা অর্থমন্ত্রণালয় ও সরকারের দেখবে। এ বিষয়ে আমরা চিঠি দিয়ে ও অর্থমন্ত্রণালয়ে মিটিং করে জানিয়েছি।

বিএনপি বলছে ইভিএম ভোট জালিয়াতির চূড়ান্ত মাস্টার প্লান : শুক্রবার (৩১ আগস্ট) নয়াপল্টন দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ। তিনি বলেন- আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত ভোট জালিয়াতি করারই চূড়ান্ত মাস্টার প্ল্যান।

তিনি বলেন, ‘ভোটারবিহীন অবৈধ সরকারের বাকশালী বিবেকই সিইসি নিজের মধ্যে প্রথিত করেছেন। এটা দিবালোকের মতো সত্য প্রমাণিত হলো যে, সব দিক থেকে ইভিএমের ব্যাপারে বিরোধিতা থাকার পরও সিইসিসহ কয়েকজন কমিশনারের একতরফা ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত আগামী নির্বাচন জালিয়াতি করারই চূড়ান্ত মাস্টারপ্ল্যান।’

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, একটি গোপন কোড জানা থাকলেই ইভিএম ভোটিং মেশিনের গণনাপদ্ধতি সম্পূর্ণ পাল্টিয়ে ফেলা যায়। ভোটারবিহীন আওয়ামী জোটের সরকার জনগণের টাকায় জালিয়াতি করার মেশিন কিনে জালিয়াতির নির্বাচন করতে চায়।’

তবে এবার জনগণ সরকারের সব মাস্টারপ্ল্যান ডাস্টবিনে ফেলে দেবে মন্তব্য করে রিজভী আরও বলেন, ‘ভোট নিয়ে অনাচারের পুনরাবৃত্তি জনগণ রুখে দেবে। এবারে জনগণের ঐক্যে সরকারের সব পরিকল্পনা ধূলিসাৎ হয়ে যাবে।’

আরপিও সংশোধনী প্রস্তাব আইনমন্ত্রণালয়ে : ইলেকট্রিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) যুক্ত করে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধনীর খসড়া বিল ইতোমধ্যে চূড়ান্ত করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সোমবার ৩ সেপ্টেম্বও ভেটিংয়ের জন্য এটি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হচ্ছে।

ইসি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। জানা গেছে, ২ সেপ্টেম্বর রবিবার সরকারি ছুটি থাকলেও কমিশনের কর্মকর্তারা অফিস করেছেন। বৃহস্পতিবার (৩০ আগস্ট) কমিশন সভায় অনুমোদিত আরপিও সংশোধনীটি বিল আকারে তৈরিসহ যাবতীয় দাফতরিক কাজ সম্পন্ন করেছে ইসি।

প্রসঙ্গত, ইভিএমসহ কয়েকটি বিষয়ে সংশোধনীর প্রস্তাব করে বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশন আরপিও সংশোধনীর খসড়া প্রস্তাব অনুমোদন করেছে। ৫ জন নির্বাচন কমিশনারের মধ্যে মাহবুব তালুকদার ইভিএম যুক্ত করে আরপিও সংশোধনীর প্রস্তাবে বিরোধিতা করে নোট অব ডিসেন্ট দেন। একইসঙ্গে ওইদিন তিনি কমিশন সভা বর্জনও করেন। পরে বিকালে তার নোট অব ডিসেন্ট দেওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করেন।

এদিকে, সংবাদ সম্মেলনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নূরুল হুদা আরপিও সংশোধনীর প্রস্তাব অনুমোদনের কারণ ব্যাখ্যা করেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘আরপিওতে ইভিএম যুক্ত করার সিদ্ধান্ত হলেও একাদশ জাতীয় সংসদে এটি ব্যবহার হবে কিনা, সেই সিদ্ধান্ত কমিশন এখনও নেয়নি।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!