• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

ইসি কর্মচারী জয়নাল আবেদীনের বাসাই ছিল এনআইডি উইং


নিজস্ব প্রতিবেদক সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১৯, ১১:০৩ এএম
ইসি কর্মচারী জয়নাল আবেদীনের বাসাই ছিল এনআইডি উইং

ঢাকা : রোহিঙ্গাদের ‘জাতীয় পরিচয়পত্র’ (এনআইডি) দেয়ার অভিযোগে চট্টগ্রাম নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ের অফিস সহায়ক জয়নাল আবেদীনসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।

চট্টগ্রাম ডবলমুরিং থানা নির্বাচন অফিসার পল্লবী চাকমা বাদী হয়ে মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) কোতোয়ালি থানায় মামলাটি করেন। মামলার সঙ্গে সংযুক্তি হিসেবে দেখানো হয়েছে নির্বাচন অফিস থেকে ৫ বছর আগে ২০১৪ সালে গায়েব হওয়া একটি ল্যাপটপ ও ৪টি মোবাইল সেট। জয়নাল জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, তিনি ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকার বিনিময়ে রোহিঙ্গাদের এনআইডি করে দিতেন।

মামলার অন্য আসামিরা হলেন : জয়নাল আবেদীনের দুই সহযোগী গাড়িচালক বিজয় দাশ (২৮) ও তার বোন সীমা দাশ ওরফে সুমাইয়া জাহান (৩২), সাগর (৩৭) ও সত্য সুন্দর দে (৩৮)। ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০১৯ সালের ১৬ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে রোহিঙ্গাদের ভোটার করান বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়।

ডবলমুরিং থানা নির্বাচন কার্যালয়ের অফিস সহায়ক মো. জয়নাল আবেদিন, গাড়িচালক বিজয় দাশ ও তার বোন সীমা দাশ ওরফে সুমাইয়া আক্তারকে আটক করে সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) রাতে কোতোয়ালি থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করেন নির্বাচন কর্মকর্তারা।

কোতোয়ালি থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীন বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এবং নির্বাচন কমিশন আইনে মামলাটি করা হয়েছে। মামলার ৫ আসামির মধ্যে তিনজন গ্রেফতার আছেন। বাকিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

চট্টগ্রাম কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের উপ-কমিশনার মো. শহিদুল্লাহ বলেন, মামলাটির তদন্ত করবে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট (সিটিইউ)। ইতিমধ্যে মামলার নথিপত্র গ্রহণ করা হয়েছে। সিটিইউর পরিদর্শক রাজেশ বড়ুয়াকে এ মামলার তদন্তভার দেয়া হয়েছে।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, জয়নাল আবেদীনকে আটকের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি স্বীকার করেন, ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ডবলমুরিং থানা নির্বাচন কার্যালয়ের অফিস সহায়ক হিসেবে কর্মরত থাকাকালে সাগরের মাধ্যমে তিনি ঢাকা নির্বাচন অফিস থেকে ল্যাপটপ সংগ্রহ করেন। এরপর ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করে ৫০-৬০ হাজার টাকার বিনিময়ে রোহিঙ্গাদের জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করে সরবরাহ করেন। এ ছাড়াও জয়নাল বাকি আসামিদের সহায়তায় বাংলাদেশি নাগরিকদের জাতীয় পরিচয়পত্র অবৈধভাবে টাকার বিনিময়ে ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করে পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করতেন।

জয়নাল জিজ্ঞাসাবাদে আরো জানান, চট্টগ্রাম নির্বাচন অফিস থেকে ডিএসএলআর ক্যামেরা, ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যানার, সিগনেচার প্যাড গোপনে নিয়ে প্রতি শুক্রবার ও শনিবারসহ বন্ধের দিনগুলোতে নিজ বাসায় বসে অবৈধভাবে জাতীয় পরিচয়পত্রের যাবতীয় ডাটা ক্রিয়েট করে মেইলে ঢাকায় অবস্থানরত সাগরের কাছে পাঠাতেন। সাগর জাতীয় তথ্যভাণ্ডারে আপলোডসহ যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করে জাতীয় পরিচয়পত্রের প্রিন্ট কপি এসএ পরিবহনের মাধ্যমে জয়নালের কাছে পাঠাতেন।

এ প্রসঙ্গে মামলার বাদী ও চট্টগ্রাম ডবলমুরিং থানা নির্বাচন অফিসার পল্লবী চাকমা  বলেন, জয়নালের দেয়া তথ্যে ২০১৪ সালে নির্বাচন অফিস থেকে চুরি হওয়া ল্যাপটপ বিজয় দাশ ও তার বোন সীমার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়। এ কারণে তাদের আটক করা হয়। জয়নাল সহযোগী হিসেবে সাগর ও সত্য সুন্দর দে’র কথা বলেছেন। মামলায় তাদেরও আসামি করা হয়েছে। তবে সাগর ও সত্য সুন্দর দে’ সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায়নি। আশা করছি, মামলার তদন্তে তাদের পরিচয় ও ভূমিকা উঠে আসবে।

চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. হাসানুজ্জামান জানান, সম্প্রতি কক্সবাজারে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তির সময় এক দালালসহ সাতজনকে আটক করা হয়। চট্টগ্রামে কর্মরত জয়নাল আবেদীনের সহায়তায় তারা ভোটার হওয়ার চেষ্টা করেছিল বলে তারা জিজ্ঞাসাবাদে জানায়। তাদের দেয়া তথ্যে পরে নির্বাচন কমিশনের একটি দল জয়নালকে আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদ করে।

এ সময় জয়নাল তার কাছে একটি ল্যাপটপ থাকার কথা স্বীকার করেন এবং তা তার বন্ধু বিজয়ের কাছে ওই ল্যাপটপ আছে বলে জানান। এই তথ্যের ভিত্তিতে বিজয়কে সোমবার রাতে কৌশলে চট্টগ্রাম নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে ডেকে আনা হয়। বিজয় জানান, ল্যাপটপটি তার বোন সীমার কাছে আছে। সীমা ল্যাপটপটি নিয়ে রাতে নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে এলে তাদের তিনজনকে আটক করে কোতোয়ালি থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়।

উল্লেখ্য, লাকী নামের এক নারী গত ১৮ আগস্ট স্মার্টকার্ড তুলতে জেলা নির্বাচন কার্যালয়ে গেলে তার হাতে পুরনো এনআইডিতে ১৭ ডিজিটের নম্বর দেখে কর্মকর্তাদের সন্দেহ হয়। পরে জেরার মুখে লাকী নিজের প্রকৃত নাম রমজান বিবি এবং ২০১৪ সালে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আসার পর টেকনাফের মুচনী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে থাকার কথা জানায়। ওই রোহিঙ্গা নারী ভুয়া ঠিকানা দিয়ে তৈরি করিয়েছেন জাল এনআইডি। অথচ ওই ভুয়া পরিচয়পত্রের তথ্যও নির্বাচন কমিশনের তথ্যভাণ্ডারে সংরক্ষিত আছে।

এ ঘটনার পর নির্বাচন কমিশন থেকে একটি তদন্ত কমিটি করা হয়। কমিটি তদন্তে নেমে নির্বাচন অফিসের কারও যোগসাজশে এই ঘটনা ঘটছে বলে তথ্য পায়।

সোনালীনিউজ/এএস

 

Wordbridge School
Link copied!