• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ঈদযাত্রায় ট্রেন ও লঞ্চে উপচে পড়া ভিড়


নিজস্ব প্রতিবেদক জুন ১৪, ২০১৮, ০১:৫১ এএম
ঈদযাত্রায় ট্রেন ও লঞ্চে উপচে পড়া ভিড়

ঢাকা : ভোগান্তি এড়াতে এবার সড়কপথে বাড়ি ফেরায় আগ্রহ কম যাত্রীদের। এ কারণে ঈদযাত্রায় ট্রেন ও লঞ্চে দেখা যাচ্ছে উপচে পড়া ভিড়। এরপরও সড়কপথের ভোগান্তি পুরোপুরি এড়াতে পারেননি বাসে যাওয়া যাত্রীরা। অন্যান্য বছরের মতো তীব্র না হলেও চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইল মহাসড়কে বুধবার (১৩ জুন) থেমে থেমে যানবাহন চলতে দেখা যায়।

পবিত্র শবেকদর উপলক্ষে বুধবার ছিল সরকারি ছুটি। ঈদের ছুটির আগে বৃহস্পতিবার (১৪ জুন) ছুটি নিয়ে অনেকেই পরিবারের সদস্যদের নিয়ে রওনা দেবে বাড়ির পথে। ফলে রেলস্টেশন, বাস ও লঞ্চ টার্মিনালমুখী মানুষের ঢল নামবে।

বুধবার (১৩ জুন) সকাল থেকেই কমলাপুর স্টেশনে ট্রেন ছাড়তে কিছু সময় দেরি হয়। নির্ধারিত সময়ের চেয়ে দেরিতে ছেড়েছে ১২টি ট্রেন। তবে স্পেশাল সার্ভিসের প্রতিটি বাস ও লঞ্চ নির্ধারিত সময়েই গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে যায়।

এদিন মহাসড়কে তীব্র যানজট ছিল না। তবে বিভিন্ন স্থানে যান চলেছে ধীরগতিতে। সকাল থেকে ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে থেমে থেমে যানজট দেখা যায়। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে কুমিল­ার দাউদকান্দির মেঘনা-গোমতী সেতুর টোল প্লাজা থেকে মেঘনা সেতু পর্যন্ত মঙ্গলবার রাত থেকে গতকাল বিকাল পর্যন্ত খুব ধীরগতিতে যানবাহন চলেছে। এতে অনেকটা ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে এই পথের যাত্রীদের।

রাজধানীর গাবতলী, মহাখালী ও সায়েদাবাদ আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল থেকে গতকাল ঠিক সময়ে ছেড়ে গেছে স্পেশাল সার্ভিসের বাসগুলো। মহাখালী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালে অপেক্ষমাণ বগুড়াগামী যাত্রী শফিক আহমেদ বলেন, ‘পরিবহনের গাড়িগুলো সময়মতো ছেড়ে যাচ্ছে। যাত্রীদের তেমন একটা অসুবিধা হচ্ছে না।’

উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় চলাচল করা শাহ ফতেহ আলী পরিবহনের ম্যানেজার তুহিন বললেন, ‘আমাদের সবগুলো গাড়িই নির্ধারিত সময়ে ছেড়ে যাচ্ছে।’

রাজধানীর গাবতলী বাস টার্মিনাল থেকে উত্তরবঙ্গের লালমনিরহাট, দিনাজপুর, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, রাজশাহীর পথে চলাচলকারী সবচেয়ে বড় বাস সার্ভিস নাবিল পরিবহন। এটির কাউন্টার ব্যবস্থাপক আবদুল আউয়াল জানান, এ বছর তাদের ৭৫ শতাংশ টিকেট অনলাইনে বিক্রি হয়েছে। তাই কাউন্টারের সামনে ঘরমুখী মানুষের চাপ তেমন বোঝা যাচ্ছে না।

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কিছু জেলা ও উত্তরবঙ্গের পথে চলা হানিফ পরিবহন, আগমনী, শ্যামলী পরিবহন, এসআর পরিবহন, মানিক এক্সপ্রেসেও একই ধরনের চিত্র দেখা গেছে। চট্টগ্রাম, সিলেট, বরিশাল ও খুলনা বিভাগের অধিকাংশ জেলার বাস ছাড়ে রাজধানীর সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে।

সেখানেও সকালে যাত্রীদের খুব বেশি চাপ ছিল না বলে জানান সায়েদাবাদ আন্তঃজেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম। তিনি বলেন, ‘এবার অনলাইনে বেশিরভাগ বাসের টিকেট বিক্রি হয়ে গেছে। তাই যাত্রীদের চাপ ও হুড়োহুড়ি দেখা যাচ্ছে না।’

বাস ছাড়ার সময়সীমা ঠিক থাকলেও অভিযোগ আছে ভাড়া নিয়ে। যাত্রীরা জানান, আগে এই দিনের অগ্রিম টিকেট না পেলেও এখন কাউন্টারে এসে তাৎক্ষণিক টিকেট পাওয়া যাচ্ছে। তবে এক্ষেত্রে অতিরিক্ত ভাড়া দিতে হচ্ছে তাদের।

অন্যদিকে এদিন কমলাপুর রেলস্টেশনে ঘরমুখো মানুষের ভিড়ে পা ফেলানোর জায়গা ছিল না। প্রতিটি ট্রেন যাত্রীতে ঠাসা অবস্থায় ছেড়ে যায় গন্তব্যের উদ্দেশে। এদিন বাড়ি গেছেন ৪ জুন অগ্রিম টিকেট কেনা যাত্রীরা।

সকালে রাজশাহী, দেওয়ানগঞ্জ, পার্বতীপুর, লালমনিরহাট ও খুলনার উদ্দেশে পাঁচটি বিশেষ ট্রেন ছেড়ে যায়। সারা দিনে মোট ৫৯টি ট্রেন ছাড়ে কমলাপুর থেকে। এ সময় ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটের ১০টি লোকাল ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছেন কমলাপুর স্টেশনের ব্যবস্থাপক সিতাংশু চক্রবর্তী।

তিনি বলেন, ‘বুধবার সকাল ১০টা পর্যন্ত কমলাপুর থেকে ২১টি ট্রেন ছেড়ে যায়। সকালে কয়েকটি ট্রেন নির্ধারিত সময়ের পর কমলাপুর স্টেশন ছেড়েছে।’ এর মধ্যে দুটি বিশেষ ট্রেনের দুটিই ছাড়তে দেরি হয়। দেওয়ানগঞ্জ ঈদ স্পেশাল ট্রেনের ছাড়ার সময় ছিল সকাল পৌনে ৯টায়, তা ছেড়েছে নির্ধারিত সময়ের পৌনে এক ঘণ্টা পর।

লালমনি এক্সপ্রেস সকাল সোয়া ৯টায় ছেড়ে যাওয়ার কথা; এটি ছাড়ে বেলা ১১টায়। রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেন সকাল ৯টায় ছাড়ার কথা থাকলেও তা সকাল ১০টা ১০ মিনিটে ছাড়ে। এভাবে প্রতিটি ট্রেনই ২০ থেকে ৩০ মিনিট দেরি করে ছেড়ে যায়।

এ ব্যাপারে সিতাংশু চক্রবর্তী বলেন, ‘বিভিন্ন কারণে কয়েকটি ট্রেন দেরি করে গেছে। তবে ঈদের সময় ১৫-২০ মিনিট দেরি করে যাওয়া বড় কিছু নয়। এটা ঠিক হয় যাবে।’

এদিন সকাল থেকেই ঢাকা থেকে দক্ষিণাঞ্চলগামী ঘরমুখী মানুষের ঢল নামে সদরঘাটের দিকে। নিয়মিত ও বিশেষ সার্ভিসসহ সদরঘাট থেকে দৈনিক ১৫০টি লঞ্চ ছেড়ে যাচ্ছে। অতিরিক্ত যাত্রীর চাপে পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্ক মোড় থেকে অসংখ্য মানুষ মাথায় কিংবা হাতে ব্যাগ নিয়ে ছুটতে থাকে সদরঘাটের দিকে। তবে নির্ধারিত ভাড়ার দোহাই দিয়ে লঞ্চে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ করেন যাত্রীরা। ডেকের টিকেট আগে কাটা না হলেও কেবিনের টিকেটে নেওয়া হচ্ছে বাড়তি টাকা। বছরের অন্য সময় একজনের (সিঙ্গেল) কেবিন ভাড়া ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা।

গতকাল দেখা যায় ওই কেবিনে নেওয়া হচ্ছে ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা। দুজনের (ডাবল) কেবিন ১৫০০ থেকে ১৮০০ টাকার স্থলে নেওয়া হয় ২৬০০ টাকা পর্যন্ত।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) সদরঘাট বন্দরের যুগ্ম পরিচালক আলমগীর কবির বলেন, ‘নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের প্রমাণ পেলে আমরা লঞ্চ মালিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। এজন্য আমাদের তদারকি দল কাজ করছে।’

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!