• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
মূল টার্গেট অনুপ্রবেশকারীরা

ঈদের পর আ.লীগে শুদ্ধি অভিযান


বিশেষ প্রতিনিধি মে ৭, ২০১৯, ০১:৪৯ পিএম
ঈদের পর আ.লীগে শুদ্ধি অভিযান

ঢাকা : আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতরের পর দলে অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে জোরালো শুদ্ধি অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগ। অভিযানের লক্ষ্যে সারা দেশে সাংগঠনিক সফরের জন্য দলের গঠিত আটটি বিভাগীয় টিম ঈদের পর পুরোদমে কার্যক্রম শুরু করবে। ক্ষমতাসীন দলে ঠাঁই নেওয়া বহিরাগত ও নানা অপকর্মে জড়িতদের চিহ্নিত করে তখন দল থেকে বের করে দেওয়ার পাশাপাশি শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

একই সঙ্গে অনুপ্রবেশকারীদের দলীয় পদ থেকে সরিয়ে জনপ্রিয়, ত্যাগী ও সৎ নেতাদের দায়িত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। আগামী জাতীয় সম্মেলনের আগ পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে সারা দেশে দলকে চাঙা ও শক্তিশালী করে গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়ে ঈদের পর থেকে মাঠে নামছে ক্ষমতাসীন দল।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের সূত্র জানায়, দলের আটটি বিভাগীয় টিমের লক্ষ্য সারা দেশের বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিগুলোর সম্মেলন করা, পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন। একই সঙ্গে বিএনপি ও জামায়াতসহ অন্যান্য দল থেকে আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া। অবশ্য অন্য দল থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়া অনেক নেতার বিষয়ে ইতোমধ্যে তদন্ত শুরু করেছে দল। কারো কারো বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা দৃশ্যমান না হলেও কোনো না কোনোভাবে শাস্তির আওতায় আসবেন অনুপ্রবেশকারীরা। তৃণমূল পর্যায় থেকে দলের নেতাকর্মীদের তথ্যভান্ডার তৈরিতেও কাজ চলছে। ঈদের পর শুদ্ধি অভিযান শুরু হলেও দলের আগামী জাতীয় সম্মেলনের আগেই অভিযান শেষ করার পরিকল্পনা করছেন নেতারা।

আওয়ামী লীগের সভাপতি, বঙ্গবন্ধুতনয়া ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ অনুযায়ী দলকে চাঙা করতে চলতি বছরের অক্টোবরেই জাতীয় সম্মেলনের প্রস্তুতি চলছে। ওই মাসেই শেষ হবে আওয়ামী লীগের বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির মেয়াদ।

আওয়ামী লীগের শীর্ষ কয়েক নেতা জানান, টানা ১০ বছরের বেশি ক্ষমতায় থাকায় দলে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী অনেক দলে অনুপ্রবেশ করেছে যারা বিভিন্ন সময়ে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে। অনেক সুবিধাবাদী দলে ঢুকেছে আর এ বাস্তবতা মেনে নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বিভিন্ন গণমাধ্যমকেও জানান।

রোববার (৫ মে) সিলেটে আওয়ামী লীগের বিভাগীয় প্রতিনিধি সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘আগামী অক্টোবরে আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন। এ সম্মেলনের আগে সারা দেশে ওয়ার্ড, ইউনিয়ন তথা তৃণমূল পর্যায়ে আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত করার কাজ শুরু হয়েছে। তৃণমূল থেকে জেলা-উপজেলার সম্মেলনের মাধ্যমে দলকে সংগঠিত করে জাতীয় সম্মেলন আয়োজন করা হবে।’

অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে শুদ্ধি অভিযান চলবে বলে দলটির অন্যান্য কেন্দ্রীয় নেতাও জানিয়েছেন। অনুপ্রবেশকারীদের যারা দলে জায়গা করে দিয়েছেন, সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে তাদের বিরুদ্ধেও। পাশাপাশি দায়িত্বশীল কেউ জামায়াতিদের সঙ্গে আঁতাত করেছেন বলে প্রমাণ হলে তার বা তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দলে এসে ঠাঁই নিলেও সাবেক জামায়াতির বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের দলীয় রাজনীতিতে গত কয়েক বছর ধরে মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে অনুপ্রবেশকারীরা। এবারের উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় কোন্দল প্রকট হয়ে দেখা দেয়। বেশির ভাগ উপজেলাতেই নৌকার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অবস্থান নেন দলের নেতাকর্মীরা। নির্বাচনে দেশের বিভিন্ন এলাকায় আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী অনেক নেতার বিরুদ্ধে নানাভাবে দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ ওঠে। এসবের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৫ এপ্রিল এসব নেতাকে কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে কারণ দর্শানোর চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় দল। এ সিদ্ধান্ত থেকেও সরে এসেছেন দলটির দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতারা। আপাতত কারণ দর্শানোর চিঠি না পাঠিয়ে অভিযোগগুলো পুনরায় খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

কারো বিরুদ্ধে ঢালাও অভিযোগ এসেছে কি না, দলীয় কোন্দলের রেশ ধরে এক পক্ষ অন্যপক্ষের নেতার বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ করেছে কি না বা অভিযোগগুলোর পেছনে দলে অনুপ্রবেশকারীদের কোনো চক্রান্ত আছে কি না— সেসবও খতিয়ে দেখছে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। ঢালাও অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিলে তৃণমূলে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলেও শীর্ষ নেতাদের আশঙ্কা।

দলীয় সূত্রমতে, সম্প্রতি ফেনীতে মাদরাসা শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতির নাম উঠে আসে। হত্যা ঘটনার সন্দেহভাজন আরো কয়েকজনের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সংশ্লিষ্টতা থাকা নিয়ে সমালোচনা ও বিতর্ক শুরু হয়। এর আগে নারায়ণগঞ্জের বহুল আলোচিত সাতজন খুনের ঘটনায়ও আওয়ামী লীগ বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে বলে দলটির অনেকে মনে করেন।

দেশের আরো কয়েকটি এলাকায় আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে হত্যাকাণ্ড, চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজির জেরে সংঘর্ষের খবর উঠে আসে গণমাধ্যমে। এসব ঘটনা সরকার ও আওয়ামী লীগকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে। তাই দলে শুদ্ধি অভিযানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

তবে টানা প্রায় সাড়ে দশ বছর ক্ষমতায় থাকার কারণে দেশের কোনো কোনো এলাকায় দলের মধ্যে বিভেদ, দ্বন্দ্ব, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে। এসব দূর করতে তৃণমূল থেকে দলকে ঢেলে সাজানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগ। এরই মধ্যে দলের এক যৌথসভায় সভাপতি শেখ হাসিনা দলকে তৃণমূল থেকে ঢেলে সাজানোর নির্দেশ দেন। গত ১৯ এপ্রিল তিনি দলকে তৃণমূল থেকে ঢেলে সাজাতে পরিকল্পনার কথা জানান।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!