• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

উত্তরাঞ্চলে কফি চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা


রংপুর প্রতিনিধি অক্টোবর ১০, ২০২০, ১২:৫৭ পিএম
উত্তরাঞ্চলে কফি চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা

রংপুর: সারাদিনের কর্মব্যস্ততা শেষে এক কাপ গরম চা কিংবা কফি শরীর ও মনকে নিমিষেই চাঙা করে তোলে। দেশে চায়ের পাশাপাশি কফির প্রতি মানুষের দুর্বলতা অনেক বেড়েছে। সে কারণে দেশেও কফির জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, উত্তরাঞ্চলে এখন ব্যাপকভাবে চা চাষ হচ্ছে। রংপুরের মাটি তুলনামূলক কম খরা সম্পন্ন মাটি হওয়ায় কফি চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। 

কৃষি বিশেষজ্ঞরা জানান, এদেশে চা চাষের ইতিহাস সুদীর্ঘ হলেও কফি চাষ খুব বেশি দিনের নয়। গত কয়েক বছরে উত্তরাঞ্চলে বেশ কিছু জেলায় চা চাষ সম্প্রসারিত হয়েছে। সেখানে বেশ উৎকৃষ্টমানের চা উৎপাদিত হচ্ছে। উত্তরাঞ্চলে চা চাষের সফলতার পর এবার কফি চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। দেশের পার্বত্য জেলাগুলোয় বেশকিছু কফি বাগান গড়ে উঠলেও উত্তরবঙ্গে এই প্রথম কফির চাষ হচ্ছে। ইতোমধ্যে, কিছু উদ্যোমী ও আগ্রহী কৃষকের হাত ধরে উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় কফি চাষ সম্প্রসারিত হচ্ছে। এদেরই একজন রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার সয়ার ইউনিয়নের গোয়ালবাড়ি গ্রামের মোখলেছুর রহমান। তিনি ২০১৭ সালে কক্সবাজারের একটি নার্সারি থেকে ৮০০টি কফি গাছের চারা নিয়ে এসে নিজের ২৮ শতাংশ জমিতে কফি চাষ শুরু করেন। প্রায় দেড় বছরের মাথায় গত বছর বাগানের অল্প কিছু গাছে প্রথম কফির ফুল আসে এবং ৫ কেজি শুকনো কফি বীজ সংগ্রহ করেন। প্রথমে পরিপক্ক বীজগুলোকে চটের বস্তায় নিয়ে হাত দিয়ে ঘঁষে খোসা ছাড়ানো হয়। এরপর পানি দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করে রোদে শুকানো হয়। শুকনা বীজগুলোকে এরপর আবার চটের বস্তায় নিয়ে লাঠি দিয়ে আঘাত করে বীজের ওপরের পাতলা শক্ত আবরণটি ভেঙে ফেলা হয়। তারপর বীজগুলোকে চুলায় ভেজে আটা ভাঙানো মিলে ভাঙেয়ে গুড়ো করে নেওয়া হয়। গুড়ো করা কফি বীজের কিছু নিজেদের ব্যবহারের জন্য রেখে বাকিটা আত্মীয়-স্বজনদের দিয়েছিলেন।

মোখলেছুর রহমান জানান, অনেকটা শখের বশেই তিনি কফি গাছগুলো রোপণ করেছিলেন। কিন্তু গতবছর গাছে ফুল ও ফল আসার পর থেকে তিনি বেশ উৎফুল্ল। এবছরের ব্যাপক উৎপাদন দেখে কফির বাণিজ্যিক চাষাবাদের ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। এবছর তার বাগানের প্রায় ৪৫০টি গাছে ফল ধরেছে এবং সবকটি গাছ মিলিয়ে তিনি ফলন হিসেবে ২৫-৩০ কেজি শুকনো কফি বীজ পাবেন বলে আশা করছেন। এবছরের সংগৃহীত বীজ থেকে তিনি নিজেই বাণিজ্যিকভাবে চারা উৎপাদন করে আরও প্রায় দেড় একর জায়গায় বাগান সম্প্রসারণ করার পাশাপাশি উৎপাদিত চারা এলাকায় আগ্রহী কৃষকসহ কফি উদ্যোক্তাদের দ্বারা দেশব্যাপী সরবরাহের মাধ্যমে কফি চাষকে সম্প্রসারিত করার ইচ্ছে রাখেন। তার কফি চাষের সাফল্য দেখে এলাকার অনেকেই অনুপ্রাণিত হচ্ছেন।

তিনি  বলেন, শুরুতে কফি চাষ সম্পর্কে সঠিক জ্ঞানের অভাবে কৃষক যথাযথ পরিচর্যা নিতে পারছিলেন না। পরবর্তীতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তারা নিয়মিত বাগান পরিদর্শন করে গাছে সার প্রয়োগ, মাটির আংশিক অম্লত্ব ধরে রাখার জন্য চুন প্রয়োগ, পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখা, বিভিন্ন রোগবালাই (লিফ রাস্ট, এনথ্রাকনোজ, ফল ছিদ্রকারী পোকা প্রভৃতি) দমনে ব্যবস্থাপত্র প্রদান, বাগানে আংশিক ছায়া প্রদানকারী বৃক্ষরোপণসহ নানা প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করেছেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা।

উপজেলা কৃষি দফতর সূত্রে জানা গেছে, কফি চাষের জন্য উষ্ণ (২০-৩০ ডিগ্রি সে. তাপমাত্রা) ও আর্দ্র জলবায়ু এবং বার্ষিক ১৫০-২০০ সেন্টিমিটার বৃষ্টিপাত উপযুক্ত। তবে ফল পাকার সময় শুষ্ক আবহাওয়া প্রয়োজন। মৃদু অম্লধর্মী এবং লৌহ, পটাশ, নাইট্রোজেন ও জৈবসমৃদ্ধ উর্বর লালচে দোআঁশ মাটি কফি চাষের পক্ষে আদর্শ। এছাড়াও তীব্র সূর্যালোকের হাত থেকে কফি গাছকে রক্ষার জন্য বাগানের মধ্যে ছায়া প্রদানকারী যেমন- ইপিল-ইপিল, একাশিয়া, কলা প্রভৃতি গাছ লাগানো প্রয়োজন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি অফিসার উর্মি তাবাস্সুম বলেন, তারাগঞ্জ উপজেলার মাটি এবং জলবায়ু চা ও কফি চাষের উপযোগী। ফলে ইতোমধ্যেই বেশ কয়েকটি চা বাগান গড়ে উঠেছে। বর্তমানে এখানে কফি চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। কৃষক নায্যমূল্যে বাজারজাত করতে পারলে তারাগঞ্জে কফি চাষ আরও সম্প্রসারিত হবে এবং কফি বীজের প্রক্রিয়া জাত করণ ও বাণিজ্যিকী করণের সুযোগ সৃষ্টি করা গেলে তারাগঞ্জ উপজেলার কফি দেশের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি আমদানি নির্ভরতা কমাতে বিশেষ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে। 

সার্বিক বিষয়ে জানতে রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরে উপ-পরিচালক সরোয়ারুল আলম জানান, রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলাসহ আশেপাশের বেশ কয়েকটি উপজেলার মাটি জলবায়ুর কারণে কফি চাষের উপযোগী। সে কারণে এখানে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে কফি চাষের সম্ভাবনা রয়েছে।

সোনালীনিউজ/টিআই

Wordbridge School
Link copied!