• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

‘উন্মুক্ত’ আসনে মহাজোটের প্রার্থী নিয়ে তৃণমূলে বিভ্রান্তি


বিশেষ প্রতিনিধি ডিসেম্বর ১১, ২০১৮, ১১:৫৯ এএম
‘উন্মুক্ত’ আসনে মহাজোটের প্রার্থী নিয়ে তৃণমূলে বিভ্রান্তি

ঢাকা : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের প্রার্থী নিয়ে অনেক আসনে ‘জটের’ সৃষ্টি হয়েছে। মহাজোটের অন্যতম শরিক জাতীয় পার্টির (জাপা) সঙ্গে নির্বাচনী জোট থাকলেও মহাজোটের বাইরে জাপার সারা দেশে প্রায় দেড়শ আসনে প্রার্থী আছে।

এসব আসনকে জাপা ‘উন্মুক্ত’ দাবি করলেও সেগুলোয় আওয়ামী লীগ, ১৪ দল ও মহাজোটের শরিক অন্য দলের প্রার্থী আছেন। মনোনয়ন বাণিজ্য সামাল দিতে জাপা ‘উন্মুক্ত প্রার্থী’ দিয়েছে বলেও ব্যাপক অভিযোগ আছে। এসব আসনের প্রার্থী নিয়ে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মধ্যে নানা বিভ্রান্তির জন্ম হচ্ছে।
আওয়ামী লীগ ও মহাজোটের প্রার্থী থাকার পরও জাপা প্রার্থী দেওয়ায় আওয়ামী লীগসহ অন্যদলগুলোর তৃণমূল পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে দেখা দিয়েছে ক্ষোভ।

প্রতীক বরাদ্দের মধ্য দিয়ে সোমবার (১০ ডিসেম্বর) থেকে শুরু হয়েছে এবারের আনুষ্ঠানিক নির্বাচনী প্রচারণা। এরপরই প্রার্থীরা কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেন। জাপার ‘উন্মুক্ত প্রার্থী’ থাকা আসনে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের গতকাল বিভ্রান্তিতে পড়তে হয়। গত দুটি সংসদ নির্বাচনে মহাজোটের প্রার্থীর পক্ষে তারা প্রচারণায় নামলেও এবার কোন প্রার্থীর পক্ষে কাজ করবেন, এমন প্রশ্নের উত্তর খোঁজেন নেতাকর্মীরা। মহাজোট ও ১৪ দলে থাকা কোনো দলের কোনো কোনো আসনের প্রার্থীও যে এবার আওয়ামী লীগের প্রার্থী নয়, অনেকে গতকালও তা বুঝে উঠতে পারেননি।

আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র মতে, মহাজোটের বড় শরিক ও সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচএম এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাপা মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে ২৯টি আসন পেয়েছে। এসব আসনে নৌকার আলাদা প্রার্থী নেই। এর বাইরে ১৩২টি আসনে ‘উন্মুক্ত প্রার্থী’ হিসেবে জাপার প্রার্থী আছেন। গত রোববার প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষদিনে জাপা ও যুক্তফ্রন্ট দেড় শতাধিক আসনে প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করে দলের চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রেরণ করায় এ সঙ্কট তৈরি হয়েছে। সঙ্কটের পেছনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শরিক কয়েকটি দলেরও প্রার্থী রেখে দেওয়ার কারণও আছে।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের আরেক সূত্রের মতে, বিভিন্ন আসনে জাপাসহ মহাজোটের শরিক অন্য দলের প্রার্থী রেখে দেওয়া এবারের নির্বাচনে বিশেষ কৌশল। গত সংসদ নির্বাচনের মতো এবার যেন কোনো আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচন না হয়, সেজন্যই এ রাজনৈতিক কৌশলের আশ্রয় নেওয়া হয়। জোটগতভাবে আসন সমঝোতার পরও অর্ধেকের বেশি সংসদীয় আসন উন্মুক্ত রাখা হয়।

বিএনপি বা ঐক্যফ্রন্ট কোনো কারণে শেষ মুহূর্তে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেও উন্মুক্ত থাকা আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হবে। আর শেষ পর্যন্ত বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনে থাকলে উন্মুক্ত থাকা আসনগুলো থেকে একজনকে রেখে বাকিদের নিষ্ক্রিয় করে রাখা হবে। শরিকদের প্রার্থীর কারণে কোনো আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পরাজয়ের আশঙ্কা দেখা দিলে সমঝোতা করে শরিক দলের প্রার্থীকে বসিয়ে দেওয়া হবে। তখন সেসব আসনে মহাজোটের মূল প্রার্থীর জয়ের বিষয়ে জোর দেওয়া হবে। ২০০টির বেশি আসনে দলের প্রার্থীর জয়ের বিষয়ে আওয়ামী লীগ আশাবাদী। এসব আসনে বিভিন্ন জরিপের মাধ্যমে জনপ্রিয়দের প্রার্থী করা হয়েছে।

তবে সমঝোতার বাইরে এভাবে নিজস্ব প্রতীকে বিপুল প্রার্থী দেওয়ার কারণ সম্পর্কে দুই রকম ভাষ্য পাওয়া গেছে। একটি ভাষ্য হচ্ছে, আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব নিজেই শরিকদের যার যেখানে শক্তি আছে, সে সেখানে নিজেদের প্রার্থী দিতে পারবে বলে জানিয়েছেন। এমন আসনকে সবার জন্য উন্মুক্ত বলে চিহ্নিত করা হচ্ছে। যে-ই জয়ী হয়ে আসবেন, তাকে জোটের প্রার্থী হিসেবে মেনে নেওয়া হবে। তবে জাপার মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা গতকাল সোমবার দাবি করেন, ‘মহাজোট থেকে পাওয়া ২৯টি আসনে সন্তুষ্ট হতে পারেনি জাপা। তারপরও সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতেই বিষয়টি মেনে নেওয়া হয়েছে।’

তার মতে, ‘জাপার ১৩২ জন প্রার্থী ১৩২টি আসনে লড়বেন। তবে তারা মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে গণ্য হবেন না। এসব আসনে নৌকা ও লাঙ্গলের প্রার্থী থাকবেন। উন্মুক্ত নির্বাচনে মহাজোটের কোনো ক্ষতি হবে না। মহাজোটভুক্ত যে প্রার্থী শক্তিশালী, তাকেই সমর্থন দেওয়া হবে।’

মাঠের পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ ২৫৮ আসনে প্রার্থী দিয়েছে। ৪২টি আসন ছেড়েছে ১৪-দলীয় জোট, জাপা ও যুক্তফ্রন্টকে। এসব আসনে মহাজোটের একক প্রার্থী থাকবেন। জাপার ‘উন্মুক্ত রাখা’ ১৩২ আসনে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আছেন আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের প্রার্থীরা। এসব আসনে জাপার ভোট আওয়ামী লীগের সঙ্গে যোগ হওয়ার কথাই এতদিন ভেবে এসেছেন নেতাকর্মীরা। প্রার্থী জটিলতা আছে ১৪ দলীয় জোট ও মিত্র যুক্তফ্রন্টেও। এ দুই জোটের শরিকদের ১৬টি আসনে এবার ছাড় দেয় আওয়ামী লীগ। তবে রোববার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন দেখা যায়, এসব শরিক সমঝোতার বাইরে আরো অনেক আসনে নিজ দলের প্রতীকে প্রার্থী রেখেছে।

মহাজোট থেকে মনোনয়ন পাওয়া তিনজনের বাইরে দলীয় প্রতীক মশাল নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য চারজনকে এবার প্রার্থী রেখেছে ১৪ দলের শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ)। জাসদের প্রতীক মশালে ভোট করবেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ আসনে শাহ জিকরুল আহমেদ, গাইবান্ধা-৩ থেকে এসএম খাদিমুল ইসলাম খুদি, রংপুর-২ থেকে কমরেশ চন্দ্র রায় ও বরিশাল-৬ আসন থেকে মোহাম্মদ মোহসিন।

এ ছাড়া মহাজাটের বাইরে দলীয়ভাবে নিজ নিজ প্রতীকে বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বিকল্পধারার দলীয় প্রতীক ‘কুলা’ নিয়ে ২০টি আসনে, জাসদ-ইনু মশাল প্রতীকে চারটি আসনে, ওয়ার্কার্স পার্টি হাতুড়ি প্রতীকে ৫টি আসনে, জাতীয় পার্টি-জেপি বাইসাইকেল প্রতীকে ৭টি আসনে, গণতন্ত্রী পার্টি কবুতর প্রতীকে ৬টি আসনে ও সাম্যবাদী দল চাকা প্রতীকে দুটি আসনে নির্বাচন করবে।

জাপাকে ছেড়ে দেওয়া কয়েকটি আসনেও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আছেন। আবার একই আসনে মহাজোটের একাধিক প্রার্থী আছেন। কুড়িগ্রাম-৪, কুড়িগ্রাম-১ ও বরিশাল-৩-এ মহাজোটের একাধিক প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। ঠাকুরগাঁও-৩ ইমদাদুল হক, কুষ্টিয়া-১ রেজাউল হক চৌধুরী, পিরোজপুর-৩ আশরাফুর রহমান, মুন্সীগঞ্জ-৩ চৌধুরী ফাহরিয়া আফরিন, নারায়ণগঞ্জ-৩ আবদুল্লাহ আল কায়সার, চট্টগ্রাম-২ এটিএম পেয়ারুল ইসলাম, কক্সবাজার-২ আসনে ড. আনসারুল করিম আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী প্রার্থী’ হিসেবে নির্বাচন করছেন।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!