• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ঋণ বিতরণে সতর্কতা


অর্থনৈতিক প্রতিবেদক নভেম্বর ৭, ২০১৮, ০২:২৩ পিএম
ঋণ বিতরণে সতর্কতা

ঢাকা : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ভোটের আগে সতর্কতার সঙ্গে ঋণ বিতরণ করছে দেশের ব্যাংকগুলো। এক্ষেত্রে কৃষিঋণ বিতরণেও ব্যাংকগুলো সতর্কতা অবলম্বন করছে। এরফলে আগস্ট মাসের মতো সেপ্টেম্বরেও বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি কমে গেছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে এই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

এদিকে ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, গত ৩৩ মাসের মধ্যে সব চেয়ে কম ঋণ বিতরণ হয়েছে গত অক্টোবর মাসে। শুধু তাই নয়, এই বছরের নভেম্বর ও ডিসেম্বরে ঋণ বিতরণের পরিমাণ আরও কমে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা।

অবশ্য দেশের ৩০টিরও বেশি বাণিজ্যিক ব্যাংকে এখন নগদ টাকার সংকট চলছে। বাকি ব্যাংকগুলোও জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ঋণ দেওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। ফলে ব্যাংক খাতে এখন ঋণ বিতরণ কার্যক্রম প্রায় বন্ধ হয়ে পড়েছে। বড় অঙ্কের ঋণ বিতরণ হচ্ছে না। ব্যবসায়ীরাও বলছেন, তারা ব্যাংক থেকে এখন ঋণ নিতেই আগ্রহী নন। সামনে নির্বাচন। তাই নতুন করে কেউ ব্যবসা-বাণিজ্যও শুরু করছেন না। পুরনো ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রেও পর্যবেক্ষণে থাকছেন তাদের অনেকেই।  

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, কয়েক মাস ধরে ধারাবাহিকভাবে কমে সেপ্টেম্বরে বার্ষিক প্রবৃদ্ধি নেমেছে ১৪ দশমিক ৬৭ শতাংশে। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরের পর এত কম প্রবৃদ্ধি আর দেখা যায়নি। আগের মাস আগস্টে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ছিল ১৪ দশমিক ৯৫ শতাংশ।

পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত সেপ্টেম্বর শেষে বেসরকারি খাতে বিতরণ করা ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৯ লাখ ১৮ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা। গত বছরের সেপ্টেম্বর শেষে ঋণের পরিমাণ ছিল আট লাখ এক হাজার ২১৫ কোটি টাকা।

এ প্রসঙ্গে পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ হালিম চৌধুরী বলেন, ‘সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আর নির্বাচনের বছরে এমনিতেই ব্যাংকগুলো বাড়তি সতর্কতার সঙ্গে দেখেশুনে ঋণ দেয়। কিন্তু এবার ঋণ আমানত অনুপাত (এডিআর) কমানোর পর থেকে ব্যাংক খাতে বাড়তি চাপ তৈরি হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘যেসব ব্যাংকের এডিআর নির্ধারিত সীমার ওপরে রয়েছে, তারা ঋণ দিতে পারছেন না। এছাড়া, এডিআর সীমার মধ্যে থাকা ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী সর্তকতার সঙ্গে ঋণ বিতরণ করছে। ফলে ঋণ প্রবৃদ্ধি কমছে।’

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সর্বশেষ ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ছিল ১৪ দশমিক ৮২ শতাংশ। অথচ চলতি বছরের শুরুতেও বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি ছিল ১৯ শতাংশ।

একটি বেসরকারি ব্যাংকের শাখা পর্যায়ের কয়েকজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তাদের ব্যাংক বেশ কিছুদিন ধরে নতুন কোনও প্রকল্পে বিনিয়োগ করছে না। আর আগের যেসব গ্রাহক ও প্রকল্পের জন্য বিনিয়োগ অনুমোদিত হয়েছিল, সেগুলোতেও অর্থ ছাড় করার ক্ষেত্রে অধিক সর্তকতা অবলম্বন করা হচ্ছে।

তবে ব্যাংক ঋণে কমে যাওয়ার জন্য মুলত উচ্চ সুদকে দায়ী করেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন দ্য ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে বিনিয়োগ পরিস্থিতি যে খারাপ, এটা স্বীকার করতে হবে। তবে এর জন্য প্রধানত উচ্চসুদ দায়ী। চড়া সুদে ঋণ নিয়ে ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগ করতে চান না। এছাড়া ব্যাংকগুলো নিজেরাও এখন একটু রক্ষণশীল ভঙ্গিতে এগোচ্ছে। এ কারণে ঋণের প্রবৃদ্ধি কমছে।’

পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৮ সাল নির্বাচনের বছর হওয়ায় নতুন বিনিয়োগ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন বিনিয়োগকারীরা।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) প্রথম সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘দেশে নির্বাচনকেন্দ্রিক সম্ভাব্য অস্থিরতা মাথায় নিয়ে তৈরি পোশাক খাত এগিয়ে চলেছে।’ তিনি বলেন, ‘নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এবারও অস্থিরতা হবে কিনা, তা পর্যবেক্ষণ করছেন অনেকে।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত আগস্ট মাসে আমদানিতে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। ২০১৭ সালের আগস্টের তুলনায় এ বছরের আগস্টে আমদানি কমেছে ৫ দশমিক ১৭ শতাংশ।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের গবেষণা পরিচালক ও অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখত বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে ব্যবসায়ীদের অনেকেই উৎপাদনে যাচ্ছেন না। বিনিয়োগ কমায় ঋণও কমেছে।’  

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!