• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

‘এ বাজেটে শিক্ষা খাতে ভালো কিছু আশা করা যাবে না’


নিজস্ব প্রতিবেদক জুন ১৫, ২০১৯, ০৩:৪৬ পিএম
‘এ বাজেটে শিক্ষা খাতে ভালো কিছু আশা করা যাবে না’

ঢাকা : শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বাজেটের সর্বোচ্চ বরাদ্দ এবার এই খাতেই। মোট বাজেটের অংশ হিসেবে ও টাকার অংশে শিক্ষা খাতে দুইভাবেই এবার বরাদ্দ বেড়েছে বলে বাজেট বিশ্লেষণে দেখা গেছে। তবে এ বরাদ্দ অপর্যাপ্ত ও গতানুগতিক বলে মনে করছেন অনেক শিক্ষাবিদ। শিক্ষা খাতে যে পরিমাণ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, তা দিয়ে মানসম্মত শিক্ষা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না বলে মনে করেন তারা।

গত বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য বাজেট উত্থাপন করা হয়। প্রস্তাবিত বাজেটে দেখা গেছে, শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে গতবারের চেয়ে শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ বরাদ্দ বেড়েছে। টাকার অঙ্কে তা ৭৯ হাজার ৪৮৬ কোটি টাকা। গতবারের সংশোধিত বাজেটের তুলনায় তা বেড়েছে ১৩ হাজার ২৩১ কোটি টাকা। মোট বাজেটের ১৫ দশমিক ২ ভাগ অর্থ এবার এই খাতে ব্যয়ের পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার।

শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতের সংশ্লিষ্ট চার মন্ত্রণালয়েরই বরাদ্দ বেড়েছে এবার। বেসরকারি শিক্ষকদের বহুল প্রত্যাশিত এমপিওভুক্তি খাতে ৯ বছর পর নতুন বরাদ্দ এ বছর দেওয়া হয়েছে। শিগগিরই নতুন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হতে পারে বলে জানা গেছে।

প্রস্তাবিত বাজেট বিশ্লেষণে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও শিক্ষাবিদ রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, ২০১৯-২০ সালের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটে শিক্ষা খাতে ১১ দশমিক ৮ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। গত ৭-৮ বছর ধরে আমরা ১১ থেকে সাড়ে ১১ শতাংশের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছি। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে শিক্ষা খাতে এটি নিম্নতম বাজেট। উন্নত শিক্ষার আমরা যে স্বপ্ন দেখছি, এ বাজেট দিয়ে তা বাস্তবায়ন কীভাবে সম্ভব? বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নতুন প্রজন্মকে বিনির্মাণ করতে হলে বিনিয়োগ ছাড়া কোনোভাবে তা সম্ভব নয়।

রাশেদা কে চৌধুরী আরো বলেন, সরকার বলছে বাজেটের সংখ্যা কম হলেও টাকার পরিমাণ বৃদ্ধি করা হয়েছে, তাই যদি হয় তবে প্রতি বছর শিক্ষার্থীর সংখ্যাও তো হু হু করে বাড়ছে, সেটিও তো বিবেচনা করতে হবে। ছাত্রছাত্রীর প্রতি বিনিয়োগ বাড়েনি। এবার নতুন দুটি বিষয় আনা হয়েছে। তার মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি করা ও উচ্চশিক্ষায় গবেষণায় বরাদ্দ বাড়ানো বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। এমপিওভুক্তি করলে যে শিক্ষার মান বাড়বে সেটি নিশ্চিত নয়, তবে এটি ব্যবস্থাপনায় ত্রুটি থেকেই যাচ্ছে, কাদের এমপিওভুক্তি করা হবে সেটিও সুনির্দিষ্ট করা দরকার।

অন্যদিকে কীভাবে গবেষণা বাড়ানো হবে, সে বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়নি মন্তব্য করে এই শিক্ষাবিদ বলেন, কীভাবে গবেষণা কার্যক্রম বাড়ানো হবে, সেটিও স্পষ্ট করে উল্লেখ করা দরকার। বেসরকারি খাতের গবেষণা না বাড়ালে বাংলাদেশের গবেষণায় কাঙ্ক্ষিত সফলতা সম্ভব নয়। এর জন্য রাষ্ট্রীয় প্রণোদনা দরকার। কৃষি খাতে যেমন বরাদ্দ বাড়িয়ে সফল হয়েছে। সিঙ্গাপুর, চীন ও শ্রীলঙ্কা শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ বাড়িয়ে অনেক ওপরে উঠে গেছে। শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ না বাড়ালে বৈষম্য কমানোর সরকারের যে অঙ্গীকার তা বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না।

রাশেদা কে চৌধুরী আরো বলেন, গতানুগতিক বাজেট দিয়ে মানসম্মত শিক্ষা বাস্তবায়ন সম্ভব নয়, টেকসই লক্ষ্যমাত্রা তো দূরের কথা। শিক্ষা খাতে যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, তা দিয়ে ভালো কিছু আশা করা যাবে না। শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর বিষয়টি বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইশতেহার রয়েছে। মোট বাজেটে ২০ শতাংশ না হলেও প্রতি বছর শিক্ষা খাতে কিছু কিছু করে আকার বাড়ানো দরকার, নতুবা আমরা কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছতে সক্ষম হব না।

বাজেট বিষয়ে শিক্ষাবিদ সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, শিক্ষা খাতে অপর্যাপ্ত বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে; যা বরাদ্দ দেওয়া হয় তা সঠিকভাবে ব্যয় হয় না। শিক্ষা খাত দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। তাই শুধু বরাদ্দ বাড়ালেই হবে না, সঠিক বণ্টন করা জরুরি বলে মনে করেন।

তিনি বলেন, শিক্ষা প্রশাসনের অধিকাংশ কর্তাব্যক্তিকে রাজনৈতিকভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাদের দিয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত শিক্ষা প্রশাসনের পরিবর্তন আনা সম্ভব নয়। তাই মানসম্মত শিক্ষা বাস্তবায়ন করতে হলে পর্যাপ্ত বরাদ্দ ও তার সঠিকভাবে বণ্টন জরুরি বলে মনে করেন এই শিক্ষাবিদ।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!