• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

এএসপি আসাদের চেষ্টায় বদলে গেল ডাকাত সর্দারের জীবন


গাইবান্ধা প্রতিনিধি ডিসেম্বর ১১, ২০১৯, ০৮:৩৮ এএম
এএসপি আসাদের চেষ্টায় বদলে গেল ডাকাত সর্দারের জীবন

গাইবান্ধা: গাইবান্ধা জেলার পলাশবাড়ী উপজেলার একটি গ্রাম সাতারপাড়া। এটি অন্যসব গ্রামের মতোই সবুজ মাঠ আর গাছপালায় ঢাকা।

তবে, আশপাশের মানুষের কাছে ডাকাতপাড়া হিসেবেই পরিচয়। চোর ডাকাতের আতুরঘর। ফলে এখানকার মানুষরা অন্যদের চেয়ে একঘরে প্রকৃতির।

অন্য গ্রামের কেউ এ গ্রামে ছেলে বা মেয়ে বিয়ে দিতে চায় না। চোর ডাকাতের সাথে আবার কিসের আত্মীয়তা! গ্রামটিকে এই অভিশাপ থেকে মুক্তি করতে আইন-শৃখলা বাহিনী বরাবরই তৎপর। কিন্তু অনেক মামলা গ্রেপ্তার আর শাস্তি সত্ত্বেও পরিস্থিতি ছিল অপরিবর্তনীয়।

সম্প্রতি গাইবান্ধা জেলা পুলিশের সি- সার্কেলের দায়িত্বে আসেন সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মো. আসাদুজ্জামান আসাদ। তিনি এই গ্রামের বিষয়ে অবগত হন এবং স্বাভাবিক পরিবেশ ফেরাতে শুরু করেন প্রচেষ্টা।

এএসপি আসাদের কারণেই ডাকাতপাড়ায় শান্তি বিরাজ করছে। এই গ্রামের ডাকাত সর্দার আব্দুল বাকী এখন সবজি ব্যবসায়ী। বাকীর মতো অন্য ডাকারাও সুখের স্বপ্ন দেখছেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, গাইবান্ধা জেলার পলাশবাড়ী উপজেলার এই ডাকাতপাড়ার নেতা গোছের একজন মো. আঃ বাকী। তার পরিবারের সবাই পেশাগতভাবেই ডাকাত। সম্প্রতি তার একভাই বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন। এরপর থেকেই আ: বাকীর মানসিকতায় পরিবর্তন আসে। তিনি সিদ্ধান্ত নেন স্বাভাবিক জীবনে ফেরার। কিন্তু তা বাস্তবায়ন মোটেই সহজ ছিল না।

ডাকাতি ছাড়লেও মামলা তার পিছু ছাড়েনি এখনও। সেই সাথে সংসারের খরচ বহন করাও তার জন্য কঠিনতর হয়ে পড়ে। সে ডাকাত, এই বদনামের কারণে কেউ তাকে দিনমজুরের কাজও দিতে চায় না। আঃ বাকীর চোখে এই সামজটাকে বড্ড অচেনা লাগে। যেখানে সে একান্তই অনাহূত একজন। তার ভালো থাকার সংকল্প টলতে শুরু করলে হাত ধরেন তার স্ত্রী।

স্বামীকে তিনি সাহস যোগান। তার প্রচেষ্টায় বিষয়টি গাইবান্ধার সিনিয়র এএসপি (সি-সার্কেল) মো. আসাদুজ্জামানের নজরে আসে।

তিনি নিজ উদ্যোগে এলাকাবাসীকে সাথে নিয়ে আব্দুল বাকীর পুনর্বাসনের জন্য আর্থিকভাবে সহায়তা করেন। আঃ বাকী এখন পলাশবাড়ী উপজেলার বেতকাপা ইউনিয়নের ডাকঘর বটতলা বাজারের একজন সবজি বিক্রেতা।

ডাকাত আঃ বাকীর স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসায় প্রভাব পড়েছে গ্রামের সর্বত্র। নেতার পেশা বদলে যাওয়াতে অন্যরাও তাকে অনুসরণ করছেন। সাতারপাড়াসহ পাশের গ্রামগুলোতেও কমে এসেছে চুরি-ডাকাতির ঘটনা। কিন্তু স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা এই মানুষটিকে তাড়া করে ফিরছে ১২টি মামলার খরচ। অভাবের সংসারে কোনোভাবেই তিনি মামলার খরচ চালাতে পারছেন না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে গাইবান্ধার সিনিয়র এএসপি (সি-সার্কেল) মো. আসাদুজ্জামান বলেন, পুনর্বাসনের পর মামলার বিষয়টি সামনে আসে। আমরা জেলা লিগ্যাল এইড অফিসের সাথে যোগাযোগ করে মামলাগুলোর বিষয়ে তাকে আইনগত পরামর্শ ও সহায়তা দানের অনুরোধ করেছি। আশা করছি তিনি সহায়তা পাবেন এবং মামলাগুলো থেকে আইনি প্রক্রিয়ায় মুক্ত হবেন।

সোনালীনিউজ/এইচএন

Wordbridge School
Link copied!