• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
আ.লীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলন

‘এক নেতা এক পদ’ নীতি বাস্তবায়নের পরিকল্পনা


বিশেষ প্রতিনিধি ডিসেম্বর ১৪, ২০১৯, ০৪:৫০ পিএম
‘এক নেতা এক পদ’ নীতি বাস্তবায়নের পরিকল্পনা

ঢাকা : এবারের কেন্দ্রীয় সম্মেলনের মধ্য দিয়ে ‘এক নেতা এক পদ’ নীতি বাস্তবায়নে  অনেকদূর এগিয়ে থাকার পরিকল্পনা করছে আওয়ামী লীগ। কেউ মন্ত্রিসভায় থাকলে তিনি দলের শীর্ষ পদে না থাকা ও শীর্ষ পদে থাকলে মন্ত্রিসভায় তাকে না রাখা এ নীতির বিশেষ দিক।

মন্ত্রিসভায় আছেন, এমন বেশ কয়েক নেতা আগামী ২০ ও ২১ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় ২১তম কেন্দ্রীয় সম্মেলনে দলীয় পদ থেকে বাদ পড়তে পারেন। দলীয় পদ থেকে বাদ পড়াদের কয়েকজন দায়িত্ব পেতে পারেন সরকারে।

সম্মেলন ও মন্ত্রিসভায় নতুন মুখ অন্তর্ভুক্তির মধ্য দিয়ে ক্ষমতাসীন দলের প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী ওই নীতির বাস্তবায়ন আরো স্পষ্ট করে তুলতে চান বলে নীতিনির্ধারক পর্যায়ের সূত্র জানায়।

সূত্রমতে, সরকার ও দলের কার্যক্রম আলাদা রাখতে ‘এক নেতা এক পদ’ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগ। বর্তমান মন্ত্রিসভার সদস্যদের মধ্যে কেন্দ্রীয় কমিটির পদে থাকা দশজনের মধ্যে বেশিরভাগই বাদ পড়তে পারেন আগামী সম্মেলনে।

কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে সফল ও জনপ্রিয় কয়েকজন চলতি বছরের শুরুতে গঠিত সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্য হওয়ার পর থেকে দলের সাংগঠনিক কার্যক্রমে আগের মতো সময় দিতে পারছেন না। এতে বিভিন্ন সাংগঠনিক জেলায় দলীয় কার্যক্রম গতিহীন হয়ে পড়ছে।

আলোচিত ও প্রবীণ নেতাদের মধ্যে যারা এবারের মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পাননি, দল পরিচালনায় তারা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পেলে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড গতি পাবে। এতে সরকার ও দল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সমান্তরালভাবে এগিয়ে যাবে বলে মনে করেন সরকারি দলের নীতিনির্ধারকরা।

আওয়ামী লীগের শীর্ষ চার নেতা জানান, দলকে সরকার থেকে যতটুকু সম্ভব আলাদা করার পরিকল্পনা দীর্ঘদিন ধরে বাস্তবায়নের চেষ্টা করে আসছে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব। নানা কারণে তা সম্ভব হয়ে ওঠেনি।

২০০৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত মন্ত্রিসভায় দায়িত্ব পালনকালে দলের কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে শীর্ষ নেতাদের মধ্যে অনেকে বাদ পড়েন সরকার ও দল আলাদা রাখার ভাবনা থেকে। তখন এর যথাযথ বাস্তবায়ন হয়নি।

 ২০১৪ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে মন্ত্রিসভার সদস্য হওয়ার পর দলের ২০তম সম্মেলনে কেন্দ্রীয় কমিটির পদ থেকে বাদ পড়েন সাংস্কৃতিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান নূর, অর্থ সম্পাদক আ হ ম মুস্তফা কামাল এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক ইয়াফেস ওসমানসহ কয়েকজন।

ওই চার নেতা বলেন, গত জানুয়ারিতে গঠিত সরকারের শুরু থেকেই এমন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে দলের নীতিনির্ধারক পর্যায় আগের তুলনায় দৃঢ় অবস্থানে আছে। গত একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ‘এক নেতা এক পদ’ নীতি বাস্তবায়নে দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কঠোর সিদ্ধান্ত নেন।

বিভিন্ন জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং পৌরসভার মেয়র হিসেবে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাবেন না বলে তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন।

দলকে সরকার থেকে আলাদা রাখার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে টানা তৃতীয় মেয়াদের সরকারের মন্ত্রিসভা গড়েন শেখ হাসিনা।

গত সংসদ নির্বাচনে জয়ী জনপ্রিয় ও একাধিকবার নির্বাচিত কয়েক সংসদ সদস্যকে মন্ত্রিসভায় নেওয়া হয়নি তাদের মধ্যে অনেককে কেন্দ্রীয় সম্মেলনের মধ্য দিয়ে দলের শীর্ষ পদের দায়িত্ব দেওয়ার লক্ষ্যে।

সরকার থেকে দলের ‘আলাদা সত্তা’ বজায় রাখতে এবারের মন্ত্রিসভায় আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতাদের রাখা হয়নি বলে তখন যুক্তি দেখান দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

চলমান তৃণমূল পর্যায়ের সম্মেলনে উপজেলা পর্যায়ের কমিটিতে দলীয় সংসদ সদস্যরা থাকতে পারবেন না বলে জানান সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। ‘এক নেতা এক পদ’ নীতি বাস্তবায়নের লক্ষ্যেই এসব সিদ্ধান্ত নেয় শীর্ষ নেতৃত্ব।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা সব সময়ই চেয়েছেন দল ও সরকারকে নিয়ে আলাদা করে কাজ করার। এর ফলে আওয়ামী লীগে যথেষ্ট পরিমাণে নেতৃত্ব সৃষ্টি হয়েছে। যার মাধ্যমে নেত্রী সরকার ও দলকে আলাদা দুটি ভাগে ভাগ করতে পারেন।’

নীতিনির্ধারক সূত্র জানায়, বয়সের বিয়ষটি তুলে দলীয় সভাপতির পদ থেকে বিদায় নিতে চান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কয়েকবার অবসরের ঘোষণা দিলেও নেতাকর্মীদের দাবির মুখে দীর্ঘ ৩৮ বছর ধরে তিনি দলের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন দলে তার বিকল্প নেতৃত্ব না থাকায়।

তার স্থলাভিষিক্ত হতে পারেন এমন একজনকে প্রস্তুত করে তুলতে এবারে কমিটিতে বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যদের মধ্য থেকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে অন্তত দুজনকে আনা হতে পারে। তবে এবারো শেখ হাসিনাই দলের সভাপতি থাকছেন, তা প্রায় নিশ্চিত।

বয়সজনিত কারণে শেখ হাসিনার পক্ষে আসন্ন মেয়াদের পরে আবারো দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার চ্যালেঞ্জ নেওয়া কঠিন হয়ে উঠতে পারে। তখন তার জায়গায় পরিবারটির মধ্য থেকে কাউকে আসতে হলে তারও তৈরি হতে কিছুটা সময় লাগবে।

সেদিক থেকে তিনি নেতৃত্বে থাকাবস্থাতেই তারা তৈরি হতে পারবেন। দরকারি দিক নির্দেশনাও পাবেন তার কাছ থেকে।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ মনে করেন, ‘এখনই সময় বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যদের রাজনীতিতে আসার। এবারের সম্মেলনের মধ্য দিয়ে তারা আসবেন বলে আমি মনে করি।’

সূত্র বলছে, মন্ত্রিসভায় আবারো পরিবর্তন আসতে পারে শিগগির। দায়িত্ব পাওয়ার এক বছরের মধ্যেও যথাযথ দক্ষতা প্রমাণ করতে না পারায় বাদ পড়তে পারেন কয়েকজন। তাদের পরিবর্তে সাবেক, অভিজ্ঞ ও পরীক্ষিত কয়েকজন মন্ত্রী যোগ হতে পারেন। কয়েকজন মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর দপ্তর পরিবর্তন হতে পারে।

দায়িত্ব পেয়েও ‘নিষ্ক্রিয়’ থাকা, বিভিন্ন রকমের জনদুর্ভোগ নিরসনে ভূমিকা রাখতে না পারা এবং ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকলেও মন্ত্রিসভার থাকায় দলে সময় দিতে না পারায় মন্ত্রিসভায় পরিবর্তনের পরিকল্পনা করা হয়েছে।

সরকার ও দলকে আলাদা রাখতে ও আরো গতিশীল মন্ত্রিসভা গঠনের লক্ষ্যে এবার বড় ধরনের রদবদল হতে পারে। ডিসেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে না হলে নতুন বছরের শুরুতে অর্থাৎ জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে হতে পারে মন্ত্রিসভায় রদবদল।

দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, বঙ্গবন্ধু সব সময় চাইতেন দল ও সরকার আলাদা হবে। দল ও সরকার আলাদা হলে বেশ কয়েকটি লাভ হয়। এতে দল সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে, সরকারের ভুলত্রুটি হলে ধরিয়ে দিতে পারে। ফলে রাজনৈতিক দলটি শক্তিশালী হয় আর সরকারও ভুল-ভ্রান্তি শোধরাতে পারে।

বঙ্গবন্ধু যা চাইতেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তা বাস্তবায়ন করতে চান। এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ আরো শক্তিশালী দলে পরিণত হবে বলে মনে করেন নীতিনির্ধারকরা।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!