• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

এক সাকিবেই ধসে গেল আফগানিস্তান


ক্রীড়া প্রতিবেদক জুন ২৪, ২০১৯, ১১:৩০ পিএম
এক সাকিবেই ধসে গেল আফগানিস্তান

ছবি সংগৃহীত

ঢাকা: প্রথমে ব্যাট হাতে। পরে বল হাতে ছোবলটা দিলেন সাকিব আল হাসান। সেটা এমনই যে তাঁর স্পিন ফাঁদে পড়ে হাঁসফাঁস করে জীবন দিয়েছেন আফগান ব্যাটসম্যানরা। ১০ ওভার হাত ঘুরিয়ে মাত্র ২৯ রান দিয়ে সাকিব তুলে নিয়েছেন ৫ উইকেট। অবধারিতভাবেই ম্যাচসেরার পুরস্কার চলে গেছে সাকিবের পকেটে। বাংলাদেশের বিশ্বকাপ ইতিহাসে এই প্রথম কোনো বোলার ৫ উইকেট পেলেন। শুধু বাংলাদেশ নয় বিশ্বকাপ ইতিহাসেই নতুন বিশ্বরেকর্ড গড়েছেন তিনি। বিশ্বকাপে এক হাজার রান ও ৩০ উইকেট কোনো অলরাউন্ডারের নেই। সেটি কেবল আছে সাকিব আল হাসানের। 

সেমিফাইনালের স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখতে হলে জিততেই হবে বাংলাদেশকে। এমন কঠিন সমীকরণ সামনে রেখে আফগানিস্তানকে ২৬৩ রানের চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেয় বাংলাদেশ। আগে ব্যাট করতে নেমে অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম এবং সাকিব আল হাসানের অনবদ্য ব্যাটিংয়ে ৭ উইকেটে ২৬২ রান সংগ্রহ করে মাশরাফির দল।

লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে দারুন শুরু করে আফগানিস্তানের দুই ওপেনার গুলবাদিন নাইব ও রহমত শাহ। মাশরাফি মুর্তজা, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ও মোস্তাফিজুর রহমান ভাঙতে পারেননি তাদের জুটি। তবে সাকিব ১১তম ওভারে বল হাতে নিয়েই বাজিমাত করেন। সাকিবের বল তুলে মারতে গিয়ে মিডঅনে তামিম ইকবালের হাতে ক্যাচ তুলে বিদায় নেন রহমত শাহ। তার আগে ৩৫ বলে ২৪ রান করেন এই আফগান ওপেনার।

২১তম ওভারের দ্বিতীয় বলেই গুলবাদিন নাইবের নিশ্চিত রান-আউট মিস হয়ে যাওয়ায় বেজায় চটে গিয়ে বল ছুড়ে মেরেছিলেন মোসাদ্দেক হোসেন। তার করা ওই ওভারের পঞ্চম বলেই এল দ্বিতীয় সাফল্য। তবে এতে বেশিরভাগ কৃতিত্ব মুশফিকুর রহিমের। হাসমতউল্লাহ শহিদিকে (১১) দুর্দান্ত দক্ষতায় স্টাম্পিং করেছেন সাম্প্রতিক সময়ে উইকেটকিপিং নিয়ে সমালোচনার মুখে থাকা মুশি।

এরপর গুলবাদিন নাইব দলকে এগিয়ে নিচ্ছিলেন। তাকে ফেরাতে সাকিবের শরণাপন্ন হতে হলো বাংলাদেশকে। ৭৫ বলে ৪৭ রান করা আফগান অধিনায়ককে লিটন দাসের দুর্দান্ত ক্যাচে পরিণত করেন সাকিব। এক বল পরেই তৃতীয় আঘাত। এবার অহংকারি মোহাম্মদ নবীকে শূণ্য রানে সরাসরি বোল্ড করে দেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার।

পরের ওভারে আসগর আফগানকে নিজের চতুর্থ শিকার বানান সাকিব আল হাসান। বদলি ফিল্ডার সাব্বির রহমানের তালুবন্দি হওয়ার আগে ৩৮ বলে ২০ রান করেন এই আফগান ব্যাটসম্যান।  শামিউল্লাহ শেনওয়ারি আফগানিস্তান টেনে নেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু তাঁর একক প্রচেষ্টা শেষ অবধি সফল হয়নি। তিনি ৪৯ রানে অপরাজিত ছিলেন। ১০ ওভার হাত ঘুরিয়ে এক মেডেন দিয়ে ২৯ রানে ৫ উইকেট নিয়েছেন সাকিব। ৩২ রানে ২ উইকেট নিয়েছেন মোস্তাফিজ। 

সোমবার (২৪ জুন) বাংলাদেশ সময় বিকাল সাড়ে ৩টায় সাউদাম্পটনের রোজ বৌলে খেলা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বৃষ্টির কারণে নির্ধারিত সময়ের দশ মিনিট পড়ে টস করতে মাঠে নামেন দুই দলের অধিনায়ক। টস জিতে বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ে আমন্ত্রণ জানান আফগান অধিনায়ক গুলবাদিন নাইব।  

এদিন নিয়মিত ওপেনার সৌম্য সরকারের বদলে তামিম ইকবালের সঙ্গে ওপেনিং করতে নামেন লিটন দাস। ১৭ বলে ২ বাউন্ডারিতে ১৬ রান করে ভালো কিছুর জানান দিচ্ছিলেন এই তরুণ। ঠিক তখনই ছন্দপতন। মুজিব-উর-রহমানের বলে শর্ট কাভার থেকে ক্যাচ নেন হাশমতউল্লাহ শহিদি। ফিল্ড আম্পায়ার নিশ্চিত ছিলেন না আউট নিয়ে। তাই ডাকা হয় তৃতীয় আম্পায়ার।

টিভি রিপ্লেতে দেখা যায়, বলটি শহিদির হাত ছুয়ে মাটি স্পর্শ করেছে। অনেকক্ষণ ধরে দেখার পরেও টিভি আম্পায়ার নিশ্চিত হতে পারছিলেন না, এটি আউট কিনা। এক্ষেত্রে 'বেনিফিট অব ডাউট' সবসময় ব্যাটসম্যানের পক্ষেই যায়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তৃতীয় আম্পায়ার আলিম দার লিটনকে আউট ঘোষণা করেন!

২৩ রানের উদ্বোধনী জুটি গড়ে ফিরে যান লিটন। এরপর তামিম ইকবাল ও সাকিব আল হাসানের ব্যাটে যখন শুরুর ধাক্কা কাটিয়ে উঠতেছিল বাংলাদেশ। ঠিক তখনই বিদায় নেন তামিম ইকবাল। মোহাম্মদ নবীর করা ১৭তম ওভারের শেষ বলটি ব্যাকফুটে খেলতে গিয়ে বোল্ড হন তিনি। বিদায়ের আগে ৫৩ বলে ৪টি চারে ৩৬ রান করেন তামিম।

পরের ওভারে রশিদ খানের এলবিডব্লিউয়ের আবেদনে সাকিবকে আাউট দিয়েছিলেন আম্পায়ার। তবে রিভিউ নিয়ে জিতে যান বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। রিভিউয়ে বল স্ট্যাম্পের উপর দিয়ে চলে যেতে দেখা যায়। অত্যাস্ত সতর্কতার সঙ্গে ব্যাট করে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন সাকিব। সেই সাথে বিশ্বকাপে প্রথম বাংলাদেশি হিসাবে এক হাজার রানের ক্লাবে প্রবেশ করেন তিনি। তবে আর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি তিনি। মুজিব-উর-রহমানের বলে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে পা দিয়ে বিদায় নেন সাকিব।

অবশ্য আউটের আগেই সাকিব আবারও বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ রান সংগ্রহরে আসন ফিরে পান। ওয়ার্নারকে পেছনে ফেলে তার সংগ্রহ ৪৭৪ রান। ৬৯ বলে গড়া সাকিবের ৫১ রানের ধৈর্য্যশীল ইনিংসটিতে ছিল মাত্র একটি বাউন্ডারির মার। সাকিবের বিদায়ের পর মুশফিকের সঙ্গী হন সৌম্য সরকার। ভাঙে ৬১ রানের তৃতীয় উইকেট জুটি। পাঁচে নামা সৌম্য সরকার ভুমিকা রাখতে পারেননি। মুজিবের বলে এলবিডাব্লিউ হয়েছেন ৩ রানে। রিভিউ নিয়েও সিদ্ধান্ত পাল্টানো যায়নি।

ভায়রা ভাই মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে নিয়ে বাংলাদেশকে ম্যাচে ফেরান মুশফিক। ৩৭তম ওভারের দ্বিতীয় বলে সেই খরা কাটান মুশফিক। ইনিংসের প্রথম ছয় মেরে পূরণ করেন হাফসেঞ্চুরিও। ৫৬ বলে ফিফটি করার পথে দুটি চার ও একটি ছয় মারেন এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান।

মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে ৫৬ রানের জুটি গড়ে ফিরে গেছেন মাহমুদউল্লাহ। ৩৮ বলে ২৭ রান করেন তিনি। আফগান অধিনায়ক গুলবাদিন নাইবের ওভারে মিড উইকেটে মোহাম্মদ নবীর সহজ ক্যাচ হন এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান। একের পর এক সতীর্থদের বিদায়ের মাঝে এক প্রান্ত আগলে রেখে দলকে টেনে নিয়ে যান মুশফিক।

ষষ্ঠ উইকেটে মোসাদ্দেক হোসেনকে নিয়ে ৩৩ বলে ৪৪ রানের জুটি তার। সেঞ্চুরির সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু ইনিংসের ৪৯তম ওভারে এসে দৌলত জাদরানের বলে মারতে গিয়ে ক্যাচ হয়ে যান মুশফিক। ৮৭ বলে ৪ বাউন্ডারি আর ১ ছক্কায় তখন তিনি ৮৩ রানে। এরপর মোসাদ্দেক শেষের কাজটা করে দিয়েছেন। ২৪ বলে ৪ বাউন্ডারিতে ৩৫ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে একদম শেষ বলে আউট হয়েছেন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান। তবে বিদায়ের আগে মোসাদ্দেক পূরণ করেছেন তার দায়িত্ব। খেলেছেন দারুণ এক ক্যামিও ইনিংস (২৪ বলে ৩৫ রান)। আর বাংলাদেশ আফগানদের বিপক্ষে লড়াইয়ের জন্য পেয়ে গেছে ৭ উইকেটে ২৬২ রানের পুঁজি।  

আফগানিস্তানের পক্ষে মুজিব উর রহমান ৩টি আর গুলবাদিন নাইব নিয়েছেন ২টি উইকেট।

সোনালীনিউজ/আরআইবি/জেডআই

Wordbridge School
Link copied!