• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কিছু কথা


সোনালীনিউজ ডেস্ক ডিসেম্বর ৪, ২০১৯, ১০:১৪ এএম
একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কিছু কথা

খুলনা: প্রধান ফটক দিয়ে প্রবেশ করলেই পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন এক টুকরা জায়গা। শিক্ষক মিলনায়তন পার হলে মূল বিদ্যালয় ভবন। ভবনের গেটে ঝুলছে কাপড়ের ফুল। বারান্দার গ্রিলে কুলা, বেতের তৈরি ঝাঁপি, ফুলসহ টব ঝোলানো। ছাদে ঝুলছে কারুকাজখচিত মাটির হাঁড়ি। সাজানো-গোছানো বারান্দা পার হয়ে শ্রেণিকক্ষে ঢুকলে বিস্ময় আরও বাড়বে।

শিশুশ্রেণি কক্ষের একপাশজুড়ে নানা রকম খেলনা। আর কক্ষের দেয়ালজুড়ে পাঠ্যবইয়ের ছবি। দেয়ালে বিভিন্নভাবে আঁকা হয়েছে বাংলা, ইংরেজি শব্দ। সেখানে শিশুরা গানের সুরে সুরে পড়া শিখছে। প্রতিটি কক্ষ ও সিঁড়ির দেয়ালজুড়ে পাঠ্যবইয়ের নানা ছবি।

নতুন ভবনটি দেখে বোঝার উপায় নেই, মনোমুগ্ধকর এই পরিবেশ খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার মুহাম্মদনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। খুলনা জেলার সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী লেখাপড়া করে এই বিদ্যালয়ে। অথচ সবচেয়ে কম সুযোগ-সুবিধা ভোগ করত এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই।

২০১৫ সালের ৫ মে বিদ্যালয়টি পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, শ্রেণিকক্ষের অভাবে উঠানে চলছে পাঠদান। একেকটি বেঞ্চে ৪ থেকে ৫ জন শিক্ষার্থী রোদে বসে ক্লাস করছে।

প্রায় ১ হাজার শিক্ষার্থীকে পাঠদান করছেন মাত্র ৯ জন শিক্ষক। এ নিয়ে ওই বছর ১০ মে 'শ্রেণিকক্ষের অভাবে পাঠদান চলছে বারান্দায়' শিরোনামে সচিত্র সংবাদ প্রকাশিত হয়। ওইদিনই মুহাম্মদনগর স্কুলে নতুন ভবন নির্মাণের নির্দেশ দেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক। চলতি বছর সেই ভবনে নির্মাণ কাজ শেষে পাঠদান শুরু হয়েছে।

শনিবার (৩০ নভেম্বর) বিদ্যালয়টিতে গিয়ে দেখা গেছে, তিনতলা ভবনটি সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সাজানোর এই কাজ করেছেন স্কুলের শিক্ষকরা। স্কুল পরিচালনা কমিটির পক্ষ থেকে বিদ্যালয়ের দেয়ালে পাঠ্যবইসহ বিভিন্ন দৃশ্য এঁকেছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার শিক্ষার্থী। এতে বিদ্যালয়ের সৌন্দর্য বেড়ে গেছে কয়েকগুণ। বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির কক্ষে আঁকা হয়েছে সুন্দরবনের বন্যপ্রাণী, রয়েল বেঙ্গল টাইগার, গাছপালা। নিচতলার সিঁড়ির দেয়ালে রয়েছে প্রাকৃতিক পরিবেশ। দ্বিতীয় তলায় উঠতেই ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ফুটিয়ে তোলা হয়েছে রংতুলিতে। এমনিভাবে বাংলাদেশের ছয়টি ঋতু, কৃষকের বাড়ি, সৌরজগৎ, পাটচাষ, পানিদূষণ কীভাবে হচ্ছে, বাংলাদেশ ও অন্যান্য মহাদেশের মানচিত্র, জনসংখ্যা বৃদ্ধির কুফল, ফুড পিরামিড ছবির মাধ্যমে দেখানো হয়েছে।

বিদ্যালয়টি ঘুরে দেখা গেছে, পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন প্রতিটি শ্রেণিকক্ষে ময়লা ফেলার জন্য পৃথক ঝুড়ি রয়েছে। তৃতীয় তলার একটি অংশ জাল দিয়ে ঘিরে রাখা। বাইরের পাখিরা বারান্দার ফাঁকা অংশ দিয়ে সেখানে এসে খাবার খায়। ভবনের নিচতলায় রয়েছে বিলুপ্তপ্রায় ব্যবহার্য দ্রব্যের প্রদর্শনী। সেখানে কেরোসিনের বাতি, কাঠের ছাতি, একতারা, ঢোল, তবলা, হারিকেন, মাটির কলসি ও সানকি, মাটির হাঁড়ি ও মটকা, আগের সময়ের বড় টেলিভিশন রাখা হয়েছে। দ্বিতীয় তলায় বড় পাত্রে তালগাছ লাগিয়ে কিছু বাবুইপাখির বাসা ঝোলানো হয়েছে। শহরের জীবনে গ্রামের হারিয়ে যাওয়া সৌন্দর্য তুলে ধরার সব আয়োজনই রয়েছে সেখানে। স্কুল ভবনের পাশেই ময়ূর নদের সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে কয়েকগুণ।

বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক মনিরুজ্জামান ময়না জানান, শিশুদের বিদ্যালয়মুখী করতে ভবনটি সাজানো হয়েছে। এখন শিক্ষার্থী ছুটির দিনেও স্কুলে আসে। আশপাশের উপজেলা থেকেও শিক্ষকরা বিদ্যালয়টি দেখতে আসেন। সহকারী শিক্ষক এমএম এমদাদ আলী বলেন, ছবি দেখে সহজে শেখা এবং বিলুপ্তপ্রায় জিনিস সম্পর্কে ধারণা দিতেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে শিক্ষার্থীরাও অনেক খুশি।

বিদ্যালয় থেকে জানা গেছে, স্কুলে বর্তমান শিক্ষার্থী ১ হাজার ৮৮ জন। খুলনা জেলার ১ হাজার ১৪৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। ফলাফলও ভালো। চলতি বছর এ বিদ্যালয় থেকে ২২ শিক্ষার্থী জিপিএ ৫ ও ১০ জন বৃত্তি পেয়েছে।

শিক্ষকরা জানান, ভবন হলেও বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষ, শিক্ষক ও স্থান সংকট থেকেই গেছে। সমকালে সংবাদের পর বিদ্যালয়টিতে ৬ তলা একটি ভবন এবং ১৫ জন শিক্ষক পদায়ন করা হয়। তাতেও সমস্যার সমাধান হয়নি। নদীর পাশে স্কুল হওয়ায় ৬ তলা ভবন করা যায়নি। শিক্ষার্থী অনুপাতে এখানে আরও ১০ জন শিক্ষক প্রয়োজন।

তারা জানান, ১ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী হওয়ায় দুই শিফটে ক্লাস নিতে হয়। তাদের খেলার জায়গা নেই, পিটি করার জায়গা নেই। খাওয়ার পানি ও টয়লেটের সুব্যবস্থাও নেই। স্থানীয় উদ্যোগে কয়েকটি টয়লেট তৈরি করা হলেও তা অপ্রতুল। খাবার পানি আনতে হয় পাশের বাড়ি থেকে। কয়েক বছর আগে জেলা প্রশাসক বিদ্যালয়ের পাশে ৩৩ শতক ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি অধিগ্রহণের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। বর্তমানে সেটাও বন্ধ। বিদ্যালয়সংলগ্ন জমি অধিগ্রহণ, আরও একটি ভবন, টয়লেট এবং পানি সমস্যার সমাধান করা জরুরি।সমকাল

সোনালীনিউজ/এইচএন

Wordbridge School
Link copied!