• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

একতরফা তফসিল ঘোষণা হলেই আন্দোলন


বিশেষ প্রতিনিধি অক্টোবর ২৬, ২০১৮, ১২:০৫ পিএম
একতরফা তফসিল ঘোষণা হলেই আন্দোলন

ঢাকা : আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতায় না এসে একতরফাভাবে তফসিল ঘোষণা করা হলে সাত দফা দাবি আদায়ে রাজপথে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। তবে চূড়ান্ত আন্দোলনে যাওয়ার আগে সমঝোতার সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাবে দলটি। সরকারকে আলোচনায় বসতে রাষ্ট্রপতিকে উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানাবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।

এ লক্ষ্যে শিগগিরই রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করতে পারেন ঐক্যফ্রন্টের নেতারা। ১ নভেম্বর রাষ্ট্রপতির সঙ্গে প্রধান নির্বাচন কমিশনের সাক্ষাতের আগেই ঐক্যফ্রন্টের নেতারা দেখা করতে পারেন। বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে এসব তথ্য।

জানা গেছে, এবার সরকারকে বিনা চ্যালেঞ্জে ছেড়ে দেয়া হবে না। কোনো মতেই ২০১৪ সালের মতো খালি মাঠে গোল করতে দেয়া হবে না। সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকারকে নানা মাধ্যমে আলোচনায় বসতে চাপ সৃষ্টি করা হবে। কোনো চাপে সরকার আলোচনায় না বসলে দাবি আদায়ে রাজপথকেই বেছে নেয়ার প্রস্তুতি চলছে। আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায় করেই নির্বাচনে যাবে তারা। নির্বাচন ও আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে তৃণমূলে বার্তা পাঠানো হচ্ছে।

সূত্র জানায়, শেষ পর্যন্ত সরকার দাবি মেনে না নিয়ে একতরফাভাবে তফসিল ঘোষণা করলে করণীয় কী হবে, তা নিয়ে দ্রতই বৈঠকে বসবেন ঐক্যফ্রন্টের নেতারা। চট্টগ্রাম বিভাগীয় সমাবেশ শেষ করার পরপরই এ বৈঠক হতে পারে। দাবি না মানলে কী ধরনের কর্মসূচি দেয়া যায়, সেই ব্যাপারে বিভিন্ন স্তরের নেতকর্মীসহ পেশজীবীদের মতামত নেয়া হচ্ছে।

সূত্র জানায়, শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দাবি আদায়ে চেষ্টা চালাবে দলটি। দাবি আদায়ে সরকারের ওপর দেশি-বিদেশি চাপ অব্যাহত রাখা হবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সরকার দাবি না মানলে বিকল্পও ভাবা হচ্ছে। সরকার হয়তো ভাবছে দাবি না মানলে শেষ পর্যন্ত বিএনপি নির্বাচন বর্জন করবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত বিএনপির নির্বাচন বর্জন করার মতো কোনো চিন্তাভাবনা নেই। এবার বিনা চ্যালেঞ্জে সরকারকে ছেড়ে দেয়া হবে না।

আলোচনার মাধ্যমে না হলে, আন্দোলনের মধ্য দিয়ে দাবি আদায় করেই নির্বাচনে যাবে তারা। বিএনপির বেশির ভাগ নেতাকর্মী মনে করেন, ২০১৪ সালের মতো আবার একটি একতরফা নির্বাচন করা সরকারের পক্ষে সম্ভব হবে না। তাই বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে সরকার কিছু না কিছু ছাড় দেবে। তবে কঠোর চাপ প্রয়োগ করা সম্ভব না হলে সরকার সে পথে হাঁটবে না বলে মনে করছে তারা।

সূত্র জানায়, সরকার যদি সাত দফার কয়েকটি দাবি মেনে নেয় এবং সেখানে যদি সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত হয়, সেক্ষেত্রে ভোটে যাওয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক বিএনপি নীতিনির্ধারকরা। এমন চিন্তা মাথায় রেখে প্রার্থী বাছাই, ইশতেহার তৈরিসহ প্রাসঙ্গিক কাজগুলোও গুছিয়ে আনা হচ্ছে। ২০ দলীয় জোটের সঙ্গে আসন ভাগাভাগির বিষয়টি প্রায় চূড়ান্ত। ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি বিষয়েও চলছে অলোচনা।

জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলগমীর বলেন, আমরা দেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতা চাই। এজন্য একটা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের বিকল্প নেই। যার মধ্য দিয়ে দেশে একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা হবে। এজন্যই আমরা ফ্রন্টের পক্ষ থেকে সাত দফা দাবি জানিয়েছি। আমরা এখনও আশা করি, সরকার দাবি মেনে নিয়ে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজন করবে।

তিনি বলেন, আমাদের দাবিগুলো জনসম্পৃক্ত। দাবির প্রতি সবাই আজ ঐক্যবদ্ধ। সরকার শেষ পর্যন্ত আলোচনায় না বসলে দাবি আদায়ে যা করা প্রয়োজন, জনগণ তা-ই করবে। আর আমরা তো এখনও আন্দোলনের মধ্যে আছি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, আমাদের দাবির প্রতি দেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। আশা করি, সরকারের বোধোদয় হবে। এরপর সরকার যদি একগুঁয়েমি করে, তবে আন্দোলন ছাড়া আমাদের বিকল্প থাকবে না। জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যথাসময়ে কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে।

সূত্র জানায়, রাজপথে নামার আগে দলের ঐক্য জোরদারে নানা উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। কথিত সংস্কারপন্থীদের দলে সক্রিয় করার পাশাপাশি বিগত সময়ে যাদের বহিষ্কার করা হয়েছিল, তাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার সংস্কারপন্থীদের একটি অংশ আনুষ্ঠানিকভাবে দলে সক্রিয় হওয়ার ঘোষণা দেয়। বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটে ঐক্য আরও অটুট রাখতে শরিকদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানো হয়েছে।

বিএনপির পাশাপাশি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পরিধি বাড়াতে নেয়া হচ্ছে নানা উদ্যোগ। ক্ষমতাসীন দলের বাইরে থাকা দলগুলোকে ঐক্যফ্রন্টে ভেড়ানোর চেষ্টা চলছে। রাজনৈতিক দল ছাড়াও বিভিন্ন পেশাজীবীর মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠারও চেষ্টা চলছে। সাত দফা দাবির প্রতি জনসম্পৃক্তা বাড়াতে বিভিন্ন কর্মসূচি নেয়া হচ্ছে। বিভাগীয় সমাবেশের পাশাপাশি সুশীলসমাজসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার সঙ্গে করা হবে মতবিনিময়। সিলেটে ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে প্রথম সমাবেশ সফল হওয়ায় দলটির নীতিনির্ধারকরা বেশ উজ্জীবিত। সিলেটের পর চট্টগ্রাম ও রাজশাহীর সমাবেশ সফলে জোর প্রস্তুতি শুরু হয়েছে।

জানতে চাইলে ২০ দলীয় জোটের শরিক বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে ২০ দল ও ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে কিছু দাবি জানানো হয়েছে। সরকার যদি দাবি মেনে না নেয়, তাহলে আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায় করা হবে। ২০ দল ও ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে শিগগিরই এ আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। গণতন্ত্রের স্বার্থে সরকারকে সুষ্ঠু নির্বাচন করাতেই হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

জানতে চাইলে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে সাত দফা দাবি জানিয়েছি। তফসিল ঘোষণার আগে আমাদের সঙ্গে কথা বলে দাবিগুলো মেনে নিতে সরকারকে আহ্বান জানাচ্ছি।

এরপরও সরকার যদি দাবি মেনে না নেয়, তাহলে দাবি মানাতে যা করতে হয়, তা-ই করব। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের মতো এবার কাউকে কোনো ‘ওয়াকওভার’ দেয়া হবে না।

সূত্র জানায়, আন্দোলনের পাশাপাশি নির্বাচনের প্রস্তুতিও নিচ্ছে বিএনপি। দুই ধরনের প্রস্তুতি নিতে তৃণমূলে বার্তা পাঠানো হয়েছে। নির্বাচনে অংশ নেয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না হলেও নির্বাচনী ইশতেহার তৈরির পাশাপাশি দলের সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকার খসড়াও করে রেখেছে দলটি। শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হলে ইশতেহার তৈরি ও প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করতে যাতে হিমশিম খেতে না হয়, সেজনই এসব প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হচ্ছে।

জানতে চাইলে বরিশাল উত্তর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান বলেন, আন্দোলন ও নির্বাচন দুটি ব্যাপারেই দলের কেন্দ্রীয় নির্দেশনা আছে। আমরা সে অনুযায়ী কাজ করছি।

প্রসঙ্গত, বিএনপির পক্ষ থেকে সাত দফা দাবি ঘোষণা করা হয়। পাশাপাশি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারেও একই দাবি জানানো হয়।

এগুলো হচ্ছে-

এক. সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে সরকারের পদত্যাগ, জাতীয় সংসদ বাতিল, সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার গঠন, খালেদা জিয়াসহ রাজবন্দিদের মুক্তি ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার নিশ্চিত।

দুই. যোগ্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন ও নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না করা।

তিন. নির্বাচনে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিশ্চিত করা।

চার. শিক্ষার্থী-সাংবাদিকসহ সবার বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ সব কালো আইন বাতিল।

পাঁচ. নির্বাচনের ১০ দিন আগে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিয়ে সেনাবাহিনী মোতায়েন।

ছয়. দেশি ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক নিয়োগ ও গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণ আরোপ না করা এবং

সাত. নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার তারিখ থেকে ফল চূড়ান্তভাবে প্রকাশিত না হওয়া পর্যন্ত চলমান সব রাজনৈতিক মামলা স্থগিত রাখা ও নতুন কোনো মামলা না দেয়া।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!