• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

একনজরে এরশাদ


সোনালীনিউজ ডেস্ক জুলাই ১৪, ২০১৯, ১০:০১ এএম
একনজরে এরশাদ

ঢাকা : কর্মজীবন জীবন শুরু হয়েছিল ১৯৫১ সালে তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অফিসার্স ট্রেনিং স্কুলে (কোহাটে অবস্থিত) যোগ দেন এবং ১৯৫২ সালে কমিশনপ্রাপ্ত হন। ১৯৬০ - ১৯৬২ সালে তিনি চট্টগ্রাম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের কেন্দ্রে অ্যাডজুট্যান্ট হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ১৯৬৭ সালে তিনি কোয়েটার স্টাফ কলেজ থেকে স্টাফ কোর্স সম্পন্ন করেন। ১৯৬৮ সালে তিনি শিয়ালকোটে ৫৪ ব্রিগেডের মেজর ছিলেন। ১৯৬৯ সালে লেফটেন্যান্ট কর্নেল হিসেবে পদোন্নতি লাভের পর ১৯৬৯ - ১৯৭০ সালে ৩য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট এর অধিনায়ক ও ১৯৭১ - ১৯৭২ সালে ৭ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অধিনায়ক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

আর মৃত্যুর আগে তার বড় পরিচয় ছিল তিনি একজন রাজনীতিবিদ। সাবেক রাষ্ট্রপ্রধান, সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেছেন, সর্বশেষ ছিলেন একাদশ সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা। বর্তমানে তার ভাই গোলাম মোহাম্মদ কাদের জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

তার জীবন বৃত্তান্তে বলা হয়েছে, ১৯৩০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি তারিখে তিনি রংপুর জেলায় দিনহাটায় জন্মগ্রহণ করেন।  এরশাদের বাবা রংপুরের আইনজীবী মকবুল হোসেন ও মাতা মাজিদা খাতুন। তিনি রংপুর জেলায় শিক্ষাগ্রহণ করেন এবং ১৯৫০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। যদিও কোনও কোনও তথ্য মাধ্যম বলছে, ‘এরশাদের জন্ম ভারতের কুচবিহার জেলার দিনহাটায়। তবে নিজের আত্মজীবনীতে এরশাদ লিখেছেন- তার জন্ম কুড়িগ্রামে মামা বাড়িতে।

ব্যক্তি জীবনে এরশাদ দুটি বিয়ে করেন। তার প্রথম স্ত্রী রওশন এরশাদ, যিনি এখন সংসদে বিরোধী দলীয় উপনেতার দায়িত্ব পালন করছেন। এরশাদ দ্বিতীয়বার বিয়ে করেন বিদিশাকে। পরে তাদের বিচ্ছেদ ঘটে। বিদিশা ও এরশাদের সংসারে রয়েছে একমাত্র ছেলে এরিক এরশাদ। এছাড়া, নিজের আত্মজীবনীতে এরশাদ জানিয়েছেন, এরিক ছাড়াও জেবিন, সাধ ও আলম  নামে সন্তান রয়েছে।

রাজনীতির বাইরে ব্যক্তি জীবনে এরশাদ অসংখ্য কবিতা ও গান লিখেছেন। জীবন সন্ধ্যার সন্ধ্যাতারা, নবান্নে সুখের ঘ্রাণ, কবিতা সমগ্র, যুদ্ধ ও অন্যান্য কবিতা, নির্বাচিত কবিতা (ইংরেজি ভাষান্তরসহ), এক পৃথিবী আগামীকালের জন্যে শীর্ষক কবিতা গ্রন্থ রয়েছে তার। কবি ফজল শাহাবুদ্দিন এরশাদের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন।

কবিতা ছাড়াও এরশাদ নিজের আত্মজীবনী গ্রন্থ লিখেছেন। আকাশ প্রকাশনী থেকে ‘আমার কর্ম, আমার জীবন’ শীর্ষক এই গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়েছে ২০১৬ সালে।

জাতীয় পার্টির ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, ১৯৫০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক শেষ করেন এরশাদ। এরপর ১৯৫২ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে অফিসার পদে নিয়োগ লাভ করেন তিনি। ১৯৬৯ সালে লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদে পদোন্নতি লাভের পর ১৯৬৯-৭০ সালে তৃতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে এবং ১৯৭১-৭২ সালে সপ্তম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন।

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে এরশাদ পশ্চিম পাকিস্তানে আটকা পড়েন। স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে তিনি পাকিস্তান থেকে দেশে আসেন। এসময় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অ্যাডজুট্যান্ট জেনারেল পদে তাকে নিয়োগ করা হয়। ১৯৭৩ সালে কর্নেল এবং ১৯৭৫ সালের ব্রিগেডিয়ার পদে পদোন্নতি লাভ করেন। ওই বছরই আগস্ট মাসে মেজর জেনারেল পদে পদোন্নতি দিয়ে তাকে সেনাবাহিনীর উপপ্রধান নিয়োগ করা হয়। ১৯৭৮ সালের ডিসেম্বর মাসে এরশাদকে সেনাবাহিনীর প্রধান করা হয় এবং ১৯৭৯ সালে তিনি লেফটেন্যান্ট জেনারেল পদে পদোন্নতি লাভ করেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,  ‘১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় আট মাস বাড়িতে থেকে ছুটি কাটিয়েছেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। ছুটি শেষে তিনি পাকিস্তানে ফিরে গেছেন। কারণ, তিনি নিশ্চিত ছিলেন না যে মুক্তিযোদ্ধারা সফল হবেন কিনা। বরং যারা ক্ষমতাবান তাদের সঙ্গেই ফিরে গেছেন। বাঙালিদের মধ্যে যারা বাংলাদেশ মনস্ক সৈনিকরা ছিলেন, তাদের বিচারের জন্য যে ট্রাইবুনাল হয়েছিল তার প্রধান ছিলেন এরশাদ।’

১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীর কিছু সদস্যের হাতে নিহত হন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। এর প্রায় ১০ মাস পর ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ রাষ্ট্রপতি আবদুস সাত্তারের সরকারকে উৎখাত করে এরশাদ ক্ষমতা গ্রহণ করেন। একই সঙ্গে দেশে সামরিক শাসন জারি এবং নিজেকে প্রধান সামরিক শাসক হিসেবে ঘোষণা দেন। এরপর ১৯৮৩ সালের ১১ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতি বিচারপতি এ.এফ.এম আহসানউদ্দিন চৌধুরীকে অপসারণ করে তিনি রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

ক্ষমতায় থাকাকালে অবকাঠামো উন্নয়ন, ধর্মীয় প্রণোদনা, ঢাকার বিভিন্ন সড়ক নির্মাণ, সড়কের নামকরণসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রেখেছেন এরশাদ। রাজধানীর পান্থপথ, পান্থকুঞ্জ, বিজয় স্মরণীসহ ঢাকার অনেকগুলো সড়কের নামকরণে সরাসরি এরশাদের ভূমিকা ছিল জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির একাধিক নেতা।

জাতীয় পার্টির ওয়েবসাইটের তথ্যানুযায়ী, ১৯৮৬ সালের পহেলা জানুয়ারি এক সংবাদ সম্মেলনে পাঁচটি রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে জাতীয় পার্টি গঠনের ঘোষণা দেন এরশাদ। ১৯৮৬ সালের অক্টোবরে অনুষ্ঠিত রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে এরশাদ পাঁচ বছরের জন্য রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। ক্ষমতায় থাকাকালে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর গণঅভ্যুত্থানের মুখে তিনি পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।

যদিও পরবর্তীতে বাংলাদেশের জোটগত রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে চলে আসেন এরশাদ। ২০১৪ সালে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচনের সময় অনেকটা নাটকীয় ঘটনার মধ্যদিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন তিনি ও তার দল। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ওই নির্বাচন বয়কট করায় একমাত্র এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টিই ছিল ক্ষমতাসীনদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। দশম জাতীয় সংসদে জাতীয় পার্টি বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করে।

গণঅভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতা ছাড়ার পর ১৯৯১ সালে এরশাদ গ্রেফতার হন। কারাগারে থাকা অবস্থায় ওই বছরই ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এরশাদ রংপুরের পাঁচটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিজয়ী হন। ওই নির্বাচনে জিতে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসে বিএনপি। তৎকালীন সরকার এরশাদের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি দুর্নীতির মামলা দায়ের করে। একাধিক মামলায়  দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত তিনি কারাগারে ছিলেন।

১৯৯৬ সালের ১২ জানুয়ারি সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এরশাদ আবারও পাঁচটি আসনে বিজয়ী হন। এই নির্বাচনে রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। ছয় বছর জেলে থাকার পর ১৯৯৭ সালের ৯ জানুয়ারি তিনি জামিনে মুক্ত হন। তবে আদালতের রায়ে দণ্ডিত হওয়ার কারণে সংসদে তার আসন বাতিল হয়ে যায়।

জোটগত রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করতে গিয়ে ২০০০ সালে জাতীয় পার্টিতে ভাঙন ধরে। দলটি তিন ভাগ হয়ে যায়। তবে জাপার মূল অংশটি সব সময় এরশাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি ছিলেন পার্টির সভাপতি। ২০০১ সালের অক্টোবরে অনুষ্ঠিত অষ্টম জাতীয়সংসদ নির্বাচনে এরশাদের জাতীয় পার্টি ১৪টি আসনে জয়ী হয়। ২০০৬ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের সঙ্গে মহাজোট গঠন করেন তিনি। 

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তার দল ২৭টি আসনে জয় লাভ করে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির  নির্বাচনে জাতীয় পার্টি  আসন  পায় ৩৪টি। এবার এরশাদ প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হন। ২০১৮ সালের ৩০ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রংপুর-৩ আসন থেকে নির্বাচিত হন তিনি। 

সোনালীনিউজ/এএস

Wordbridge School
Link copied!