• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

একসঙ্গে ১২ জনের জানাজা, থামছে না স্বজনদের আহাজারি


ময়মনসিংহ প্রতিনিধি আগস্ট ৬, ২০২০, ০৩:৪৪ পিএম
একসঙ্গে ১২ জনের জানাজা, থামছে না স্বজনদের আহাজারি

ছবি: সংগৃহীত

ময়মনসিংহ: ঘুরতে দিয়ে নেত্রকোনার মদন উপজেলার উচিতপুর হাওড়ে নৌকাডুবিতে নিহতদের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৬ আগস্ট) সকাল সোয়া ৬টায় ময়মনসিংহ সদর উপজেলার কোণাপাড়া ঈদগাহ মাঠে ওই গ্রামের ১২ জনের জানাজা একসঙ্গে অনুষ্ঠিত হয়। পরে তাদের দাফন হয়।

নিহতদের মধ্যে ১৫ জনই ময়মনসিংহ সদর উপজেলার বাসিন্দা। বাকি দুইজনের বাড়ি ময়মনসিংহের গৌরীপুরে। একই পরিবারের সাতজনকে একসঙ্গে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। পরিবারের অবিভাবক মাদরাসায়ে মারকাজুস সুন্নাহর মুহতামিম হাফেজ মাওলানা মাহফুজুর রহমানকে মাদরাসা প্রাঙ্গণে দাফন করা হয়েছে। 

এছাড়াও নিহত অন্যদের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। সকাল ১০টায় গৌরীপুরের নিহত দুইজনকে দাফন করা হয়েছে। এর আগে নিহতদের মরদেহ বুধবার (৫ আগস্ট) রাত ১০টার দিকে অ্যাম্বুলেন্সে করে মাদরাসা প্রাঙ্গণে আনা হয়। এ সময় সেখানে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। চারদিকে শুধু কান্নার শব্দ শোনা যায়। নিহতদের পরিবার আর স্বজনদের আহাজারিতে ভারি ওঠে পরিবেশ।

 নৌকাডুবিতে  নিহতরা হলেন- মাদরাসায়ে মারকাজুস সুন্নাহর মুহতামিম হাফেজ মাওলানা মাহফুজুর রহমান (৪৫), তার দুই ছেলে হাফেজ মাহবুবুর রহমান আসিফ (১৫), মাহমুদুর রহমান (১২), ভাগ্নে রেজাউল করিম (১৫), ভাতিজা জোবায়ের (২০), জোনায়েদ (১৭), ভাতিজি লুবনা (১৩), জুলফা (৭), চরখরিচা গ্রামের কৃষক ইসা মিয়া (৪০), তার ছেলে শামীম (১০), কোনাপাড়া গ্রামের মাদরাসা শিক্ষক আজাহারুল ইসলাম (৩৮), হামিদুল (৩৫), সাইফুল ইসলাম রতন (৩০), জহিরুল ইসলাম (৩৫), চরগোবিন্দপুরের তালেব মেম্বারের ছেলে শহিদুল (৪০), গৌরীপুর উপজেলার ধোপাজাঙ্গালিয়া গ্রামের আবুল কালামের ছেলে শফিকুর রহমান (৪০) ও তার ছেলে সামাআন (১০)।

পারিবারিক ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রতি বছরের মতো ঈদের পরপরই আনন্দ ভ্রমণে যায় ময়মনসিংহ সদরের মাদরাসায়ে মারকাজুস সুন্নাহসহ স্থানীয় কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। সদরের চরভবানীপুর এলাকার সেই রীতি জারি ছিল করোনাকালেও। মাদরাসা প্রধান মাওলানা মাহফুজুর রহমানের নেতৃত্বে কোনাপাড়া গ্রামের মাদরাসা শিক্ষকদের মাধ্যমে নেত্রকোনা জেলার মদন উপজেলার ‘মিনি কক্সবাজার’ খ্যাত উচিতপুর হাওরের উদ্দেশ্যে বের হয় ৪৮ জনের একটি দল। এদের বেশিরভাগই শিশু-কিশোর। উচিতপুর পৌঁছে সেখানকার নৌ ঘাট ছেড়ে যাওয়ার কিছু পরেই হাওরে ডুবে যায় তাদের ইঞ্জিনচালিত নৌকাটি। খবর পেয়ে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করে ফায়ার সার্ভিস। একে একে উদ্ধার হয় ১৭টি মরদেহ।

জানা যায়, অতিরিক্ত যাত্রী ওঠায় এবং প্রচণ্ড ঢেউ ও বাতাসের কবলে পড়ে নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে। এতে নিহত ১৭ জনের মধ্যে ১৫ জনই ময়মনসিংহ সদর উপজেলার চরসিরতা ইউনিয়নের ভবানীপুর কোনাপাড়া, খরিচা ও গোবিন্দপুর গ্রামের বাসিন্দা। অপর দুইজন গৌরীপুর উপজেলার বাসিন্দা।

এ বিষয়ে চরসিরতা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু সাঈদ জানান, খবর পেয়েই তিনি ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহগুলা গ্রহণ করেন। পরে সবগুলো মরদেহ রাতের মধ্যেই পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছেন।

নিহত লুবনা ও জুলফার মামাতো ভাই ইমন বলেন, ফুটফুটে দুটি মেয়ে। সারাক্ষণ আরবি পড়ত। মুখটা চোখের সামনে সবসময় ভেসে উঠে। এমন মৃত্যু কখনও কল্পনাও করিনি। পরিবারকে সান্ত্বনা দেয়ার মতো ভাষা নেই।

ময়মনসিংহ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাইফুল ইসলাম বলেন, নিহত ১৭ জন ময়মনসিংহের বাসিন্দা। নিহতদের মধ্যে সদর উপজেলার ১৫ জনের প্রত্যেকের পরিবারকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২০ হাজার করে টাকা ও বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের পক্ষ থেকে পাঁচ হাজার করে টাকা দেয়া হয়েছে। এছাড়াও গৌরীপুরের দুইজনের পরিবারকে উপজেলা প্রশাসন ২০ হাজার করে টাকা দিয়েছে।

এদিকে নৌকাডুবির ঘটনায় রাকিব (২০) নামে নিখোঁজ একজনের মরদেহ পাওয়া গেছে। তার বাড়িও কোনাপাড়া গ্রামে। দুপুর পর্যন্তও তার মরদেহ বাড়িতে এসে পৌঁছায়নি।

সোনালীনিউজ/এমএএইচ

Wordbridge School
Link copied!