• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
ফের নির্বাচন দাবি

একাট্টা সরকার বিরোধীরা


বিশেষ প্রতিনিধি জানুয়ারি ১৩, ২০১৯, ০১:৩৬ পিএম
একাট্টা সরকার বিরোধীরা

ঢাকা : একাট্টা হচ্ছে সরকারের বিরোধীরা। দাবি আদায়ে রাজনৈতিক শক্তি সঞ্চয় করতে বাড়ছে বিরোধী জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পরিধি। তবে যোগ-বিয়োগ হতে পারে শরিক সংখ্যা। রাজনীতির মঞ্চে চলতি পর্বে বিয়োগের আলোচনায় এসেছে জামায়াতের নাম। আর যোগের তালিকায় ইসলামী ও বামপন্থি কয়েকটি দল।

ঐক্যফ্রন্টের একাধিক শরিক সূত্রের খবর, নতুন-পুরনো শরিকদের নিয়ে রাজপথে নামার পরিকল্পনা নিয়েছেন জোটটির শীর্ষ নেতারা। তাদের দাবি, ‘একাদশ সংসদ নির্বাচন বাতিলসহ শিগগিরই আরেকটি নির্বাচন। বদলাতে হবে নির্বাচন কমিশনও।’

এই দাবি নিয়ে চলতি মাসেই আন্তর্জাতিক আদালতের দ্বারস্থ হবেন ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন ও মুখপাত্র মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তারা বিশ্ব দরবারে অভিযোগ করতে চান, গত ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের নামে এই দেশে ‘ভোট ডাকাতি’ হয়েছে।  জনগণের মৌলিক অধিকার হরণ করা হয়েছে।

শনিবার (১২ জানুয়ারি) গণফোরাম প্রধান ড. কামাল হোসেন ২-৩ মাসের মধ্যে আরেকটি নির্বাচনের দাবি করেছেন। তিনি বলেন, সরকারি দল ছাড়া কেউ বলছে না যে, দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দেশের মানুষের ভোটাধিকার রক্ষায় গণতান্ত্রিক দলগুলো অবশ্যই এক কাতারে আসবে। সেদিন বেশি দূরে নয়।
তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, সবার অংশগ্রহণমূলক এবং বিশ্বাসযোগ্য দেখতে গত ১২ ডিসেম্বর মার্কিন কংগ্রেসের ফ্লোরে সর্বসম্মতিক্রমে একটি বিল পাস হয়। কিন্তু এই নির্বাচনে দেশের মানুষের কোনো অংশগ্রহণ, ভোটাধিকার ছিল না। নিশ্চয় কংগ্রেসসহ বিদেশি বন্ধুরা বিষয়টি অবলোকন করেছেন।  

এদিকে নিজ দল ও জোটের সিনিয়র নেতারা মহানগর ও জেলা সফরে নামবেন। স্থানীয় নেতা ছাড়াও সুশীল সমাজের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন। এজন্য তিন মাসের কর্মকৌশল ঠিক করেছে ফ্রন্ট।

গত ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটসহ আরো চারটি দল নিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করে। ইসিতে নিবন্ধন হারালেও জোটে আছে জামায়াতে ইসলামী। এই নির্বাচনে ঐক্যফ্রন্ট অংশ নেয়। ২৯৮টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয় পেয়েছে ৮টিতে। তবে ওই নির্বাচনের আগের রাতে ব্যালটে সিল মেরে পরের রাতে ফল প্রকাশ করা হয়েছে বলে দাবি করে তা প্রত্যাখ্যান করেছে। তাই বিজয়ীরা এখন পর্যন্ত শপথেও অংশ নেননি।

জোটের শরিক সূত্রের খবর, বিজয়ীর সংখ্যা স্বল্প হলেও তাদের শপথ নেওয়ার পক্ষে চাপ ও যুক্তি উপস্থাপন করেছে বেশ কয়েকজন পরামর্শক। যদিও এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি ঐক্যফ্রন্ট।

নির্বাচনের পর থেকেই বিএনপিসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের হাইকমান্ড তাদের পরাজিত প্রার্থীদের কাছে ‘ভোট কারচুপির’ অভিযোগের সপক্ষে তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করার নির্দেশ দেয়। ইতোমধ্যে বিএনপির দুই শতাধিক প্রার্থী তাদের স্থানীয় ভোটকেন্দ্রের নানামুখী অনিয়মের চিত্র কেন্দ্রের কাছে উপস্থাপন করেছে। সহযোগিতা নেওয়া হয়েছে দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমের। ‘ভোট ডাকাতি’ অনিয়মের নানা চিত্র এবার ডকুমেন্ট আকারে আদালত ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তুলে ধরবে নতুন জোট।

এদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট ও বিএনপি নেতৃত্বাধীন ঐক্যফ্রন্টের বাইরে বেশ কয়েকটি ইসলামিক দলসহ বাম রাজনৈতিক জোট নামের একটি জোট নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল।

আওয়ামী লীগ ও বিএনপি মিত্র জোটের বাইরের দলগুলো বিজয় তো দূরের কথা তাদের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। তাই তারাও নির্বাচনকে ‘ভোট ডাকাতি’ আখ্যা দিয়ে ফের নির্বাচন দাবি করেছে। সরকারবিরোধী ওইসব দলের সঙ্গে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির দুই নেতা যোগাযোগ করছেন। একই দাবিতে একমঞ্চে আন্দোলনে শরিক হওয়ার আহ্বানও জানানো হয়েছে। আলোচনা রসালো তবে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে জামায়াতকে নিয়ে। বামপন্থিরা সাফ জানিয়েছে স্বাধীনতাবিরোধীদের বর্জন করে জোট গঠন করলে সেই মঞ্চে উঠতে রাজি।

বিষয়টি ড. কামালের কাছে আসার পর বিএনপির মহাসচিব বরাবর জানানো হয়েছে। তবে বিএনপির দাবি জামায়াত এখন বায়বীয় রাজনীতিক সংগঠন।

সরকারবিরোধী দলগুলোর মধ্যে যোগসূত্র স্থাপনকারী বিএনপি ও গণফোরামের সিনিয়র দুই নেতা জানান, বড় ধরনের ত্যাগ স্বীকার করে সরকারবিরোধীরা একাট্টা হতে যাচ্ছে। শীতল রাজপথ অচিরেই তপ্ত হয়ে উঠবে। বিদেশি বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্রের সঙ্গে ‘প্রশ্নবিদ্ধ’ নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে। ঢাকায় নিযুক্ত কূটনীতিকরাও এ বিষয়ে জোরালো ভূমিকা পালন করছেন। কূটনীতিকদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছে ড. কামালসহ বিএনপির কূটনীতিক কোর কমিটি। আলোচনা রয়েছে, দেশের বিচার পৌঁছতে পারে বিদেশের মাটিতে।  

এ বিষয়ে বিএনপিপন্থি আইনজীবী অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন জানান, একাদশ জাতীয় নির্বাচন বাতিলের আবেদন জানিয়ে শিগগিরই মামলা করা হবে। দেশীয় উচ্চ ও নিম্ন আদালতে নির্বাচনে নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলে ধরা হবে।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম বলেন, সদ্য অনুষ্ঠিত নির্বাচন নিয়ে পাহাড়সম অভিযোগ আছে। স্বাধীনতার পর এটি নজিরবিহীন একটি ভুয়া ভোটের নির্বাচন। নির্বাচনের আগের দিন রাতেই নৌকা/লাঙ্গল প্রতীকে সিল মেরে ব্যালট বাক্স ভরে ফেলা হয়েছে। ভোটাররা ভোট দিতে পারেনি। আবার মৃত ব্যক্তির ভোটটিও কাস্ট দেখানো হয়েছে। সরকারবিরোধীরা এক সারিতে দাঁড়াচ্ছেন বলে আভাস দিয়েছেন এই বাম নেতা।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!