• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
বইমেলা প্রতিদিন

এখনো হুমায়ূন আহমেদ


নিজস্ব প্রতিবেদক ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০১৯, ০৬:০৯ পিএম
এখনো হুমায়ূন আহমেদ

ঢাকা : প্রায় সাত বছর হতে চলল হুমায়ূন আহমেদ লোকান্তর হয়েছেন। কিন্তু তার পাঠকপ্রিয়তা এতটুকু কমেনি। কমেনি যে তা বোঝা যায় বইমেলায় হুমায়ূন আহমেদের বই বিক্রেতা প্রকাশনীগুলোর ভিড় দেখে। হুমায়ূন আহমেদের সর্বাধিক বই প্রকাশ করা প্রতিষ্ঠান অন্যপ্রকাশে গত সাত বছরই পাঠকের সর্বাধিক ভিড়। অবশ্যই হুমায়ূনের বই কেনার জন্যই। এর বাইরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বই প্রকাশকারী প্রতিষ্ঠান কাকলী প্রকাশনীতেও হুমায়ূনের বইয়ের সর্বাধিক বিক্রি।

অমর একুশে বইমেলা প্রথমার্ধ পার করল শুক্রবার (১৫ ফেব্রুয়ারি)। এই পনেরো দিনের বেচাকেনা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, হুমায়ূন আহমেদের জনপ্রিয়তার ধারেকাছে কেউ এখনো আসতে পারেনি। পাঠকের মণিকোঠায় এখনো রাজত্ব করছেন তিনি। গতকাল অন্যপ্রকাশের প্যাভিলিয়নে হুমায়ূনের বই কিনতে আসা মধ্যবয়সি নারী তাসলিমা হাবিব জানালেন, তিনি তার মেয়ের জন্য উপন্যাস কিনতে এসেছেন। তিনি নিজে হুমায়ূনের লেখার ভক্ত ছিলেন। এখন পরের প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ করছেন হুমায়ূনের লেখা পড়তে। তাসলিমা হাবিব বলেন, আমার মেয়েটা কলেজ পার করল মাত্র। হুমায়ূন আহমেদের কিছু গল্প ও পড়েছে। ওর ভালো লেগেছে। তাই নতুন কিছু উপন্যাস নিয়ে যাব ওর  জন্য।

এভাবেই প্রজন্মের পর প্রজন্ম হুমায়ূনে আচ্ছন্ন হয়ে আছে। প্রতিবছর বইমেলা এলেই সেটা নতুন করে টের পাওয়া যায়। পাশাপাশি একটা প্রশ্ন জেগে ওঠে, হুমায়ূন-পরবর্তী বাংলা সাহিত্যের হাল ধরতে কে আসছেন? কার দিকে বছরজুড়ে তাকিয়ে থাকবেন পাঠক? সময় সে প্রশ্নেরও হয়তো উত্তর জানিয়ে দেবে। সে পর্যন্ত হুমায়ূন আহমেদের যে বিকল্প নেই, তা প্রমাণিত।

শুক্রবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) গ্রন্থমেলায় ছিল শিশুমেলা। মেলা ঘুরে দেখা গেল, শিশুদের জন্য লেখা হুমায়ূন আহমেদের বইগুলো শিশুদের হাতে হাতে ঘুরছে। এখানেও রাজত্ব করছেন হুমায়ূন আহমেদ।

বাংলা একাডেমির দেওয়া তথ্যমতে, গতকাল মেলায় নতুন বই এসেছে ২৭২টি। এর মধ্যে গল্প ৫৫, উপন্যাস ৪১, প্রবন্ধ ৯, কবিতা ৯৪ ও অন্যান্য বিষয়ক গ্রন্থ ৭৩টি।

এদিন সকাল ১০টায় অমর একুশে গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয়ে শিশুকিশোর সঙ্গীত প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত নির্বাচন। এতে ক-শাখায় ১৬ জন খ-শাখায় ১৫ জন প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করে। প্রতিযোগিতায় বিচারক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সঙ্গীতশিল্পী কল্যাণী ঘোষ, সুজিত মোস্তফা এবং চন্দনা মজুমদার। আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি এ প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা এবং পুরস্কার বিতরণ করা হবে।

বিকাল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয়  ‘কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী: শ্রদ্ধাঞ্জলি’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক বেগম আকতার কামাল। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন কবি মোহাম্মদ সাদিক ও সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক সৈয়দ আকরম হোসেন।

প্রাবন্ধিক বলেন, নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর বাস্তব জগৎ শুধু প্রকৃতি নয়, মূলত মানুষকে ঘিরে; সময়ের মধ্যে হাঁটেন তিনি, মানুষময় ভাবনায় মগ্ন থাকেন। এই মানুষের সঙ্গে আসে সমাজের ক্ষত-ক্ষতি-তমসা, মানবতার সংকট ও বিকৃতি। নীরেন্দ্রনাথ সেই কবি যিনি সন্ধ্যায় প্রত্যেককে তার নিজস্ব নারীর কাছে ফিরে আসার অমোঘ সত্য উচ্চারণ করেন। জীবন আর কবিতার মাঝখানে তিনি কোনো ব্যবধান রাখেন না। বলা হয়েছে, তিনি ছন্দকে চাবুক করে তুলেছেন, অক্ষরবৃত্ত-মাত্রাবৃত্ত-স্বরবৃত্তের বাঁধনে নিজেকে বাঁধেননি। কেননা নীরেন্দ্রনাথ নিত্য খুঁজে গেছেন, ছেঁকে তুলেছেন সেই জীবনকে সেই বাস্তবের মানুষ ও চারপাশকে যা ধারণ করে আছে নিহিত মানবিক সত্তা আর সেই সত্তার কথায়নে তিনি নান্দনিকতা বিনির্মাণ করেছেন। তার দীর্ঘ আয়ু, সৃষ্টিশীলতা আর যেন মৃত্যুও গেঁথে তুলেছে দীর্ঘ আলোর মতো হাহাকার আর প্রেমময় বহুস্তরগামিতাকে। এটাই তো কবিতার আরাধ্য।

আলোচকরা বলেন, নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী বাংলা কবিতাকে দিয়েছেন নতুন দিশা। দৈনন্দিন কথ্য বুলিকে তিনি অনায়াসে যেমন কবিতা করে তোলেন তেমনি জীবন ও জগতের নিগূঢ় দর্শনকে কবিতার মধ্য দিয়ে বাঙ্ময় করেছেন। পূর্ববাংলার মানুষ নীরেন্দ্রনাথ তার আপন মৃত্তিকাকে কখনো বিস্মৃত হননি। তার কবিতায় এবং অন্যান্য লেখায় বার বার ফিরে এসেছে পূর্ববাংলার মাটি ও মানুষের কথা। তারা বলেন, কবিতাকে একই সঙ্গে শৈল্পিক মানসম্পন্ন এবং সাধারণ মানুষের যোগাযোগক্ষম করে তুলতে নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর সাধনা বাংলা কবিতার পাঠক চিরকাল শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে।

সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক সৈয়দ আকরম হোসেন বলেন, নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর কবিতা বাংলা কবিতার ভুবনে এক বিশেষ মাত্রা-সংযোজক। অতি সাধারণ বক্তব্য-বিষয়কে তিনি প্রায় আটপৌরে ভঙ্গিতে যেভাবে কবিতা করে তুলেছেন, তা সত্যি বিস্ময়কর। এ ছাড়া কবিতা নিয়ে তার গদ্যও পাঠকের কাছে বিশেষ তাৎপর্য বহন করে।

লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন প্রকাশিত গ্রন্থ বিষয়ে আলোচনায় অংশ নেন গোলাম কিবরিয়া পিনু, আসলাম সানী, জুলফিয়া ইসলাম, ফারুক আহমেদ ও পলাশ মাহবুব।

কবিকণ্ঠে কবিতাপাঠ করেন কবি ইকবাল আজিজ ও হারিসুল হক। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী মাসকুর-এ-সাত্তার কল্লোল ও রূপা চক্রবর্তী। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ছিল হাসান আব্দুল্লাহ’র পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘ঘাসফুল শিশুকিশোর সংগঠন’ এবং আতিকুর রহমান উজ্জ্বলের পরিচালনায় ‘ভোরের পাখি নৃত্যকলা কেন্দ্র’-এর নৃত্যশিল্পীদের পরিবেশনা।

আজকের অনুষ্ঠান : শনিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) মেলা চলবে সকাল ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। আজো মেলায় থাকবে শিশুপ্রহর। সকাল ১১টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত শিশুপ্রহর ঘোষণা করা হয়েছে।

এ ছাড়া সকাল ১০টায় অমর একুশে গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে শিশু-কিশোর সাধারণ জ্ঞান ও উপস্থিত বক্তৃতা প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত নির্বাচন।

বিকালের নিয়মিত আয়োজনে ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘চিত্রশিল্পী সৈয়দ জাহাঙ্গীর : শ্রদ্ধাঞ্জলি’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন মইনুদ্দীন খালেদ। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন ফরিদা জামান, নিসার হোসেন ও মলয় বালা। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন  চিত্রশিল্পী হাশেম খান। সন্ধ্যায় রয়েছে কবিকণ্ঠে কবিতাপাঠ, কবিতা-আবৃত্তি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!